“আপনিই কি ডাওজারের মাস্টার?”
“জোসিয়াহ ইঞ্চবার্ড।” লোকটা ফাইটিং ককের ধ্বংসাবশেষের দিকে মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, টুকরো গুলো বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। “জাহাজটা আর ওটার ডাকাতগুলো দুটোর জন্যেই পরিণতিটা ভালোই হয়েছে বলবো।”
টম লড়াই সম্পর্কে লোকটার মন্তব্য শোনার অপেক্ষায় চুপ করে থাকলো, আশা করলো, ওরা যে সাহায্য করেছে সে জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। কিন্তু ইঞ্চবার্ড আর কিছুই বললো না।
“ভাগ্য ভালো যে দস্যুরা যখন আক্রমণ করেছিলো তখন আমরা কাছেই ছিলাম,” টম মনে করিয়ে দিলো। “আমরা আপনার জাহাজটাকে বাঁচিয়েছি।”
ইঞ্চবার্ড ওর কথার অর্থ সাথে সাথেই ধরতে পারলো। “দুঃখিত, আপনারা এজন্যে কিছু পাবেন না। কড়া ভাষায় জানিয়ে দিলো ইঞ্চবার্ড।
“আপনার জাহাজটা দস্যুরা দখল করে নিয়েছিলো। আপনি আত্মসমর্পণ করেছিলেন,” জানালো ডোরিয়ান।
“আমি আত্মসমর্পণ করিনি।”
“কিন্তু সব দেখে কিন্তু সেটাই মনে হয়েছে।”
“আপনাদের যদি সেরকম মনে হয় তাহলে লন্ডনের নৌ আদালতে অভিযোগ করতে পারেন।”
টম আর কিছু বললো না। পনের বছর আগে একজন ফেরারি হিসেবে ইংল্যান্ড থেকে পালিয়ে এসেছিলো ও। ওর বড় ভাই বিলিকে হত্যার অভিযোগ আছে ওর বিরুদ্ধে। বিলি ছিলো একজন আপাদমস্তক শয়তান লোক। প্রচণ্ড রগচটা। টেমস নদীর ঘাটে, এক মধ্যরাতে ও টমকে আক্রমণ করে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। অন্ধকারে চিনতে না পেরে টম নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে তাকে খুন করে বসে। কিন্তু একথা বলে আদালতে পার পাওয়া যাবে না। ও যদি আবার ফিরে যায়, তাহলে নিশ্চিত ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলতে হবে।
ইঞ্চবার্ডের সেটা জানার কথা না। তবে ও টমের দুর্বলতাটা ধরতে পারলো। “আপনি যদি মামলা করতে চান তো কোনো সমস্যা নেই। আমি সানন্দে আমার জাহাজে করেই আপনাকে লন্ডনে নিয়ে যাবো।”
“আমি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আপনার জাহাজটা রক্ষা করেছি।” ডেক-এর লোকদের মাঝে উত্তেজিত কোলাহল শোনা গেলো। সেন্টারাস পাশাপাশি চলে এসেছে। আবোলি, সারাহ আর ইয়াসমিনিকে ধরে ডাওজারে চড়তে সাহায্য করলো। আমি আমার লোকজন, এমনকি আমার পরিবারের জীবনের ঝুঁকিও নিয়েছি,” টম আবার বললো।
ইঞ্চবার্ডের কণ্ঠ নরম হলো কিছুটা। “আমার হাত-পা বাঁধা, স্যার। ব্যাপারটা একটু বুঝতে চেষ্টা করুন। আমি যদি আমার মালিকদের না জানিয়ে কিছু করি তাহলে আর কোনোদিন সমুদ্রের মুখ দেখা হবে না। আপনারা যা করেছেন, সেটার জন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে যা চান তা-ই দিয়ে দিতে প্রস্তুত। কিন্তু সেজন্যে আপনাকে আগে কর্তৃপক্ষকে বলতে হবে।”
টম মাথা ঝাঁকালো। মাস্টার এই জাহাজের দায়িত্বে আছে, কিন্তু এতে যা আছে সেসবের মালিক অন্য কেউ। “তাহলে আমি বরং তার সাথেই কথা বলি।”
সারাহ আর ইয়াসমিনি মই বেয়ে উপরে উঠে এলো। সারাহ নিজের পিছনে হাত বেঁধে ডেক জুড়ে ধ্বংসস্তূপ দেখতে লাগলো।
“পরুষ মানুষ মিয়ে আর পারা যায় না,” ইয়াসমিনিকে বললো ও। “কখনো কিছু এলোমেলো ছাড়া গুছিয়ে রাখতে জানে না।” তারপর ইঞ্চবার্ডের দিকে ফিরে বললো। “আমার স্বামী আপনার জাহাজের কোনো ক্ষয়ক্ষতি করে থাকলে দুঃখিত।”
ইঞ্চবাৰ্ড অদ্ভুত ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকালো। “আমরাও ঠিক সেটা নিয়েই আলাপ করছিলাম।”
“আপনার স্বামী আমাদের সবাইকে রক্ষা করেছেন, আর একটা কণ্ঠ বলে উঠলো। লেগ্রাঞ্জের হাত থেকে যে মহিলাটাকে টম বাঁচিয়েছিলো সে এগিয়ে এলো ওদের দিকে। কণ্ঠ নিচু আর কেমন ফ্যাসফেসে হয়ে আছে। এমন এক টানে কথা কথা বলছে যেটা টম ধরতে পারলো না। ছেঁড়া কাপড়টা পাল্টে সে নতুন একটা পোশাক পরেছে। একটা নীল রঙ্গা সূতি কাপড়, ঠিক তার বুকের উপর এসে শেষ হয়েছে। মনে হচ্ছে গোটা সমুদ্রই বুঝি মেয়েটার গায়ে এসে জুটেছে। চুল একটা ফিতেয় বাঁধা, তবে কয়েকটা ঠিকই ছুটে এসে ওর খোলা গলায় খেলা করছে। বয়স মোটেও বিশের বেশি না, কিন্তু চেহারা দেখে বোঝা যায় সেই তুলনায় সাহস আর শক্তিতে অনেক বেশি পরিপক্ক মেয়েটা। ডেক এর প্রতিটা লোক তাকিয়ে আছে তার দিকে। এক ঘণ্টা আগেও এরা সবাই মেয়েটার সবচে গোপনীয় অঙ্গটাও দেখেছে, কিন্তু এই মুহূর্তে কারো মনে মোটেও কামভাব জাগছে না।
“ক্যাপ্টেন ইঞ্চবার্ড, আশা করি আপনি ভদ্রতা ভুলে যাননি,” মহিলা বললো। “এই লোকগুলো আমাদের জীবন বাঁচিয়েছে আর আমি এমনকি এদের নামটা পর্যন্ত জানি না।”
টম সামান্য মাথা ঝাঁকালো। “আমার নাম টম,” বললো ও। “আমার ভাই, ডোরিয়ান; ওর স্ত্রী, ইয়াসমিন; আর আমার স্ত্রী, সারাহ। আপনাদের সাহায্য করতে পেরে আমরা খুব খুশি।”
“আমি অ্যানা দুয়ার্তে। ঐ দস্যুগুলো আমাদের সব লুট করে নিতে চেয়েছিলো।” অ্যানার শরীরে মৃদু কাঁপুনি বয়ে গেলো। “আমি জানি ক্যাপ্টেন ইঞ্চবার্ড কেননা তার জাহাজ রক্ষা করার জন্যে বিনিময়ে কিছু দিতে পারছেন না। কিন্তু দয়া করে আমাদেরকে অকৃতজ্ঞ ভাববেন না। দস্যুরা আমাদের মালপত্রের যেটুকু রেখে গিয়েছে তার থেকে যতো ইচ্ছে নিয়ে নিন।”
টম আশা করলো ইঞ্চবার্ড প্রতিবাদ করবে। কিন্তু ক্যাপ্টেন একটা কথা-ও বললো না।
“আপনি আমাদের দিকটা ভাবছেন বলে খুশি হলাম ম্যাম, কিন্তু আমার মনে হয় এভাবে আমাদেরকে ইচ্ছে মতো সব দিয়ে দিলে কর্তৃপক্ষ বেজার হতে পারে। বিশেষ করে উনিও যদি ইঞ্চবার্ডের মতো হন, তাহলেতো কথাই নেই।”