“আমি আপনার কথা বিশ্বাস করি না!” খানিকটা দমে গেল ম্যানফ্রেড। “মিথ্যা! মিথ্যা! এসব কিছুই মিথ্যা। আমার মা এক জার্মান অভিজাত নারী। আমার কাছে ওর ছবিও আছে। দেখুন, দেয়ালের দিকে তাকান!”
ছবিটার উপর চোখ বোলালেন সেনটেইন; তারপর সম্মতি দিয়ে বললেন, “হ্যাঁ, ও লোথারের স্ত্রী ছিল। কিন্তু তোমার জন্মেরও প্রায় দুই বছর আগে মারা গেছে।”
“না, এটা সত্যি না।”
“তাহলে তোমার বাবাকেই জিজ্ঞেস করো ম্যানফেড” নরম স্বরে জানালেন সেনটেইন; “উইন্ডহকে যাও সেখানকার রেজিস্টার কপি এবং ওর মৃত্যু তারিখ পাবে।”
কথাটা সত্য বুঝতে পেরে চেয়ারে বসে দুহাতে মুখ ঢাকল ম্যানফ্রেড।
“আপনি আমার মা হলে আমি কেন এত ঘৃণা করতাম আপনাকে?”
ম্যানফ্রেডের পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন সেনটেইন, “ততটা নয় যতটা তোমাকে ফেলে আসার জন্য আমি নিজেই নিজেকে করতাম।”
মুখ নামিয়ে পুত্রের মাথায় চুমু খেলেন সেনটেইন, “কেবল যদি ফিসফিস করে বললেন, “কিন্তু এখন যে অনেক দেরি হয়ে গেছে। তোমার কথাই ঠিক। আমরা এতটাই দূরে সরে শত্রু বনে গেছি যে এ দূরত্ব কখনো পার হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু আমি কখনোই তোমাকে ঘৃণা করিনি ম্যানফ্রেড, কখনো না মাই সান।”
ম্যানফ্রেডকে সে অবস্থায় রেখেই আস্তে আস্তে রুম থেকে বেরিয়ে এলেন সেনটেইন।
***
পরদিন দুপুরবেলা অ্যান্ডু ডুগান তাঁকে ফোন দিল, “আমার সংবাদদাতা তার অভিযোগ তুলে নিয়েছে সেনটেইন। এও জানিয়েছে যে কেসের সাথে সম্পর্কযুক্ত সমস্ত পেপার পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। মনে হচ্ছে কেউ একজন ওর উপর ভর করেছে, সেটা যে কে তাই মাথায় আসছে না।”
***
১৯৪৮ সালের পঁচিশে মে, সাধারণ নির্বাচনের আগের দিন স্টিলেনবশের ডাচ রিফর্মড চার্চের হলে এক বিশাল জনসভায় ভাষণ দিল ম্যানফ্রেড; রুলফ স্ট্যান্ডার আর তার স্কোয়াড খেয়াল রাখল যেন সেখানে কোনো প্রতিপক্ষ ঢুকতে না পারে।
তবে ম্যানফ্রেড নিজেও কিন্তু বক্তৃতা দিতে উঠে শান্তি পেল না। উত্তেজিত আর উৎফুল্ল দর্শকের সারি পুরো পাঁচ মিনিট হাততালি দিল। তারপর অবশ্য শান্ত হয়ে বসে গেল। ম্যানফ্রেডের মুখে শুনল তাদের সোনালি ভবিষ্যতের কথা।
“আপনারা সবাই জানেন যে, স্যুটস আমাদের এই ভূমিকে কফি দেহরঙা সংকরদের চিড়িয়াখানায় পরিণত করে তড়িঘড়ি আবার ইস্রায়েলকেও সমর্থন দেয়ার পায়তারা করছে।”
দর্শকরা আবার চিৎকার করে উঠতেই খানিক থেমে ম্যানফ্রেড বলল, “তাই এর বিপরীতে আমি একটা পরিকল্পনার প্রস্তাব করছি, এমন এক মহতী দৃষ্টিভঙ্গি যা আমাদের বিশুদ্ধ আফ্রিকান রক্তধারাকে দীর্ঘজীবী করে তুলবে। একই সাথে এই কেপে বসবাসরত অন্যান্য জাতিকেও রক্ষা করবে। আর এর রচয়িতা নিঃস্বার্থ আর দেশপ্রেমিক মেধাবী ড. থিওফিলিয়াস, ড. নিকোলস আর ড, হেনিড্রিক ভারউড।”
উল্লাসে চিৎকার করে নিজেদের সম্মতি দিল সবাই।
“আদর্শগতভাবে অত্যন্ত সাবধানে তৈরি করা এই পরিকল্পনা সমস্ত জাতিকে নিজ নিজ মর্যাদা আর শান্তি বজায় রেখে বসবাস করার পাশাপাশি স্বপরিচয় আর সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতেও সাহায্য করবে। তাই এই নীতির নাম হল “পৃথকাবস্থা।” তাই একে আমরা বলব অ্যাপার্টহেইড কিংবা বর্ণবাদ বা ইউরোপীয় ও বাকিদের পৃথকাবস্থা।”
সবাই মিলে আবার এত জোরে হাততালি শুরু করে দিল যে, চুপ করে গেল ম্যানফ্রেড। খানিক বাদে শান্ত হল পুরো মিলনায়তন।
“তাই সবার আগে আমাদের প্রয়োজন কৃষ্ণাঙ্গদের যারা ইতিমধ্যেই ভোট দেয়ার অধিকার পেয়েছে তাদের সেই সুবিধা কেড়ে নেয়া–”
এক ঘণ্টা পরে মনফ্রেড যখন বক্তব্য শেষ করল দেখা গেল সবাই তাকে কাঁধে নিয়ে নাচছে।
***
নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করার জন্য ভোট গুনছেন নির্বাচনী অফিসার। শাসার সাথেই দাঁড়িয়ে তাই অপেক্ষা করছে উদ্বিগ্ন তারা।
হলের মাঝে উপস্থিত দর্শকেরাও বেশ উত্তেজিত হয়ে আছে। হলের আরেক কোনায় লম্বা-চওড়া সোনালি চুলঅলা স্ত্রীকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ন্যাশনালিস্ট ক্যান্ডিডেট। পাশে তার সমর্থকরা।
ইউনাইটেড পার্টি অর্গানাইজারদের একজন ভিড়ের মধ্যে শাসাকে ডেকে কি যেন বলল। কিন্তু শাসা এক নারী সমর্থকের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত থাকায় এগিয়ে গেল তারা। কয়েক সেকেন্ড বাদেই আবার ফিরে এল। স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি কাছে এগিয়ে এল শাসা।
“কী হয়েছে ডার্লিং? মনে হচ্ছে তুমি ভূত দেখেছ?”
“উড বাস ফোন করেছিলেন” ফিসফিস করে জানাল তারা, “স্মটস স্ট্যান্ডারটনে হেরে গেছে। ন্যাশনালিস্টরা জিতে গেছে।”
“ওহ গড, না! গত পঁচিশ বছর ধরে এই সিট ওনারই ছিল।”
“ব্রিটিশরাও তো উইনস্টন চার্চিলকে নামিয়ে দিয়েছে। ওরাও আর কোনো হিরো চায় না।”
“তার মানে এটা একটা সংকেত।” বিড়বিড় করে উঠল শাসা, “স্যুট যাওয়া মানে আমরা সবাই ধ্বংস হয়ে গেছি।”
দশ মিনিট পরে আরেকটা খবর এল। এক হাজার ভোটে গার্ডেন হেরে গেছেন ব্লেইন ম্যালকম।
“এক হাজার ভোট–” নিজের কানকেও যেন বিশ্বাস করতে পারছে না শাসা, “এখন কী হবে তাহলে?”
হলের শেষ মাথায় মঞ্চে উঠে দাঁড়াল নির্বাচনী অফিসার। তার হাতে রেজাল্ট আছে জেনেই পুরোপুরি চুপ করে গেল উত্তেজিত জনতা। সাগ্রহে সবাই সামনে তাকিয়ে রইল।
লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান, হটেনটটস হলান্ড নির্বাচনের ফলাফল হল, ম্যানফ্রেড ডি লা রে ন্যাশনালিস্ট প্রার্থী পেয়েছেন ৩,১২৬ ভোট আর শাসা কোর্টনি, ইউনাইটেড পার্টি পেয়েছেন ২,০১২ ভোট।”