“মাই ফ্রেন্ডস” শুরু করলেও এগোতে পারল না শাসা; হাততালি দিয়ে উঠল পুরো হল। থামাতে না পেরে বাধ্য হয়ে উঁচু গলায় শুরু করল নিজের বক্তৃতা।
হলের পেছন দিকে বসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে শ তিনেক লোক। ওরা যে ন্যাশনালিস্ট পার্টির সমর্থক তা হাতের ব্যানার আর ম্যানফ্রেড ডি লা রে’র পোস্টার দেখেই স্পষ্ট বোঝা গেল।
প্রথম কয়েক মিনিট কাটতে না কাটতেই ঝামেলা হবে বুঝতে পেরে স্ত্রীদেরকে নিয়ে পাশের দরজা দিয়ে একে একে বেরিয়ে গেলেন বয়স্ক আর মধ্যবয়সী ভোটারগণ।
হঠাৎ করে উঠে দাঁড়াল তারা। ভয়ংকর রেগেমেগে দাঁড়াল শাসার সামনে। ওর সৌন্দর্য দেখে চুপ করে গেল পিছনের সারির দাঙ্গাবাজেরা।
কিন্তু ওদেরকে আবার উত্তেজিত করে উঠল স্থানীয় এক ন্যাশনাল পার্টির কর্মী। এ লোকটাকে শাসা চেনে। ১৯৩৬ সালের অলিম্পিক টিমে থাকলেও যুদ্ধে কারাগারে কাটিয়েছে। এখন স্টিলেনবশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ল’র লেকচারার।
“রুলফ স্ট্যান্ডার কি আইনের শাসন আর বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না? সরাসরি লোকটাকে উদ্দেশে করে বলে উঠল শাসা।
আর সাথে সাথে হলের পেছন থেকে ঠিক তারার সামনের টেবিলে পড়ল কুকুরের মলভর্তি প্যাকেট। একের পর এক এরপর এল পচা ফল, টয়লেটের রোল, মরা মাছ আর মুরগি।
নরক শুরু হয়ে গেল চারপাশে। দুই পক্ষের সমর্থকরা লেগে গেছে, চেয়ার উল্টে যে যেভাবে পারছে ছুটছে, মেয়েরা চিৎকার করছে; সব মিলিয়ে পুরোপুরি বিশৃঙ্খল অবস্থা।
“আমার পেছন পেছন আসো” বলেই তারাকে নিয়ে দরজার দিকে দৌড় দিল শাসা। সামনে যেই পড়েছে ওর ঘুষি খেয়েছে। তারপর সোজা প্যাকাডে চড়ে গাড়ি স্টার্ট দিল। মেইন রোডে ওঠা পর্যন্ত আর কেউই কোনো কথা বলল না।
১৯৪৮ সালের নির্বাচনে স্পষ্ট হয়ে উঠল যে দক্ষিণ আফ্রিকা রাষ্ট্রে কতটা বিভাজন দেখা দিয়েছিল।
আফ্রিকানদের মাঝে ন্যাশনালিস্ট পার্টি কতটা প্রভাব বিস্তার করেছে তা বুঝতে দেরি করে ফেলল স্যুটসের পার্টি।
শেষতক ইংরেজিভাষী শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকান আর কিছু কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারকে পেলেও নির্বাচনের দিন যত কাছে এগিয়ে এল ততই বাড়ল ন্যাশনাল পার্টির প্রতি মানুষের উন্মাদনা। ফলে ইউনাইটেড পার্টিরও ভরাডুবি হল।
***
নির্বাচনের ঠিক তিনদিন আগে নতুন বাগানে দাঁড়িয়ে আরো শ’খানেক বাড়তি হলুদ গোলাপের ঝড় তদারক করছেন সেনটেইন, এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এল তাঁর সেক্রেটারি।
“মি. ডুগান এসেছেন ম্যাম।” সম্পাদক এডু ডুগান সেনটেইনের ভালো বন্ধু হিসেবে সবসময় এ বাড়িতে যাতায়াত করতেন; কিন্তু উস্কুখুস্কু চুল আর ঘামে ভেজা মেকআপহীন চেহারার কথা ভেবে সেনটেইন তার সাথে দেখা করতে চাইলেন না। আদেশ দিলেন,– “বলো আমি বাসায় নেই।”
“মি. ডুগান আগেই ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন এরকম হঠাৎ আসার জন্য। কিন্তু বলেছেন ব্যাপারটা নাকি এতই জরুরি যে জীবন আর মৃত্যুর ব্যাপার।
“ওহ! ঠিক আছে। বলো আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসছি।”
সোয়েটার বদলে মুখে হালকা পাউডার দিয়ে মিটিংরুমে এলেন সেনটেইন। ডুগান তাড়াতাড়ি বলে উঠলেন, “আসলে আপনাকে যা বলতে চাইছি তা ফোনে বলা সম্ভব নয়। তাই হুট করে চলে এলাম।”
হেসে ফেললেন সেনটেইন, “ঠিক আছে। এত ক্ষমা চাইতে হবে না। বসুন চায়ের কথা বলছি।” তারপর চা দিয়ে জানতে চাইলেন, “জীবন আর মৃত্যু?”
“তারচেয়েও শুদ্ধভাবে বললেন, জীবন আর জন্ম।
“মানে?”
“আমার হাতে এমন কিছু ডকুমেন্টস এসেছে যা পুরোপুরি জেনুইন। আর যদি সত্যিই তাই হয় তাহলে আমাকে গল্পটা ছাপতেই হবে। অভিযোগটা আপনার আর বিশেষ করে শাসার উপর অত্যন্ত খারাপ প্রতিক্রিয়া করবে।” থেমে গেলেন এডু।
“বলে যান প্লিজ।” ঠাণ্ডা স্বরে জানালেন সেনটেইন।
“কোনো রকম বাহুল্যভাবে যদি বলতে হয় তো আমাকে জানানো হয়েছে। যে, ব্লেইনের সাথেই আপনার প্রথম এবং একমাত্র বিয়ে হয়েছে-” সাথে সাথে চমকে উঠলেন সেনটেইন, “যার মানে শাসা অবৈধ সন্তান।”
হাত তুলে সম্পাদককে থামালেন সেনটেইন, “তার আগে আমাকে আরেকটা প্রশ্নের উত্তর দিন, এই খবরের সংবাদদাতা হল ন্যাশনালিস্ট পার্টির হটেনটট ক্যান্ডিডেট তাই না?”
মাথা সামান্য ঝুঁকিয়ে অ্যান্ড্রু বললেন, “আমরা আমাদের সোর্সের নাম কখনো বলি না।”
এরপর দুজনেই চুপ করে গেলেন। সেনটেইনের চেহারার দিকে তাকিয়ে ওর মনোভাব বোঝার চেষ্টা করলেন ডুগান। এও ভাবতে খারাপ লাগল যে, এই মহাশক্তিধর রমণীর স্বপ্ন তার হাতেই চুরমার হয়ে যাবে। তাছাড়া শাসা কোর্টনি নিজেও জাতিকে সুযোগ্য নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা রাখে।
“আপনার কাছে ডকুমেন্টস আছে নিশ্চয়ই?” সেনটেইনের প্রশ্নটা শুনে আলতো করে কেবল মাথা নাড়লেন অ্যাণ্ডু। “নির্বাচনের আগের দিন ছাপা হবে যদি না এর বিরুদ্ধে আপনি কোনো প্রমাণ দিতে পারেন। কারণ জনগণ এতে সত্যিই আগ্রহ দেখাবে।”
“আমাকে কাল সকাল পর্যন্ত সময় দিন।” সেনটেইনের কথা শুনে দ্বিধায় পড়ে গেল অ্যান্ড্রু। তারপর দোনোমোনো করেও মত দিল, “ঠিক আছে। এটুকু আপনার জন্য করতেই পারি। আর অ্যায়াম সরি সেনটেইন। আপনার অনেকটুকু সময় নষ্ট করলাম।”
***
অ্যান্ড্রু ডুগান চলে যাওয়ার সাথে সাথে বাড়ির উপরের তলাতে গিয়ে স্নান সেরে কাপড় বদলে নিলেন সেনটেইন। আধা ঘন্টার মধ্যে ডেইমলার ছুটল স্টিলেনবশের দিকে।