এরপর বাই ইলেকশনেও ন্যাশনালিস্ট প্রতিপক্ষকে অল্পের জন্য হারিয়ে ইউনাইটেড পার্টির ক্যান্ডিডেট হিসেবে জিতে গেল শাসা। আর এদিকে খুশিতে আত্মহারা হলেন সেনটেইন। ছেলেকে নিয়ে তার সকল স্বপ্ন বুঝি সত্যি হতে চলেছে। সাধারণ নির্বাচনে নিশ্চয় আরো বড় কোনো পদ পাবে শাসা। তারপর কেবিনেট সিট আর তারপর, ওহ! তিনি আর ভাবতে পারছেন না।
শাসার চোখে পট্টি থাকলেও চমৎকার ব্যক্তিত্ব, স্পষ্ট ভাষা আর মানুষকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার ক্ষমতা আছে। এছাড়া বুদ্ধিমান আর উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও। ফলে ওর দ্বারা সবই সম্ভব।
আর অন্যদিকে তারা ওয়েল্টেভ্রেদেনের চাকচিক্য বজায় রাখার পাশাপাশি ঘুরে বেড়ায় কেপটাউনের ক্লিনিক আর দারিদ্রপীরিত অঞ্চলে; সাথে থাকে বিপুল অংকের ডোনেশন।
একই সাথে কোর্টনি পরিবারকে দিয়েছে স্বাস্থ্যবান তিন পুত্র সন্তান আর চতুর্থবার প্রসব বেদনায় খানিকটা বেশি কষ্ট ভোগ করলেও পৃথিবীতে এসেছে ইসাবেলা। বড় তিনজন হল শন, গ্যারিক, মাইকেল।
খুব সতর্ক আর যত্ন সহকারে তারা শাসার নারী আসক্তিকে ঠেকিয়ে রাখলেও এবারে ইসাবেলা ডি থাইরি ম্যালকমস কোর্টনির আগমনে যেন পুরোপুরি বদলে গেল শাসা। আর তার মাও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।
ওয়েল্টেভ্রেদেনের পোলো প্র্যাকটিস গ্রাউন্ডের পাশে ওক গাছের নিচে বসে আছেন সেনটেইন। বাচ্চাদের দেখাশোনা করছে কৃষ্ণাঙ্গ ন্যানির দল।
মাঠে খেলা করছে শন। বাবার সাথে ঘোড়ায় চড়ে বেড়ারনায় খুশি। উত্তেজনায় চিৎকার করছে সমানে।
অন্যদিকে সেনটেইনের হাঁটু জড়িয়ে ধরে বায়না জুড়ে দিল গ্যারিক, “এবার আমি!”
ঘোড়া নিয়ে শনকে রেখে গেল শাসা। দাদীর কাছ থেকে নেমে গেল গ্যারিক। বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, “এবার আমি ড্যাডি, আমার পালা।
ঘোড়ার উপর বসেই খানিকটা ঝুঁকে বড় ছেলেকে তুলে নিল শাসা। পিতা পুত্র কারোরই যেন কোনো ক্লান্তি নেই এ খেলায়। অথচ লাঞ্চের আগেই মুখ থুবড়ে পড়ল দুইটা ঘোড়া।
দূর থেকে একটা গাড়ির আওয়াজ শুনতেই আনমনে উঠে দাঁড়ালেন সেনটেইন। বেন্টলির গর্জন ঠিকই চিনেছেন। যাই হোক, নিজের উদ্বেগকে সংযত করে আস্তে আস্তে ব্লেইনের দিকে এগিয়ে গেলেও স্বামীর চেহারা দেখে দমে গেল তার মন। তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে জানতে চাইলেন, “কী হয়েছে ব্লেইন?” স্বামীর গালে কিস্ করে বললেন, “কোথাও কোনো সমস্যা হয়েছে?”
“না, না, তা না।” স্ত্রীকে আশ্বস্ত করলেন ব্লেইন। “ন্যাশনালিস্ট পার্টি তাদের ক্যান্ডিডেটের নাম প্রকাশ করেছে।”
“তোমার বিরুদ্ধে কে দাঁড়াচ্ছে?” অখন্ড মনোযোগে তাকালেন সেনটেইন, “বুড়ো ভ্যান স্কুর?”
|“না, ডিয়ার, একেবারে নতুন। তুমি হয়ত তার নামও কখনো শোননি, দাঈদ ভ্যান নির্বাক।”
“হটেনটটস হল্যান্ডের জন্য কাকে নামিনেশন দিয়েছে?” ব্লেইন ইতস্তত করছেন দেখে ক্ষেপে গেলেন সেনটেইন, “বলো না কাকে?”।
স্ত্রীর হাত ধরে আস্তে আস্তে ওক গাছের নিচে টি টেবিলের ধারে নিয়ে আসলেন ব্লেইন, “জীবন বড় অদ্ভুত, বুঝলে!”
“ব্লেইন ম্যালকম্স, আমি তোমার কাছে একটা উত্তর জানতে চাইছি। দর্শনের কচকচানি না। বলল, ওর নাম কী?”
“অ্যায়াম সরি, মাই ডিয়ার” বিষণ্ণ ভঙ্গিতে বিড়বিড় করে উঠলেন ব্লেইন, “ওরা আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যানফ্রেড ডি লা রে’কে নামিনেশন দিয়েছে।”
সাথে সাথে সেনটেইনের চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। যেন একটা লাশ। কেঁপে উঠতেই তাকে ধরে ফেললেন ব্লেইন। সেই যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দ্বিতীয় পুত্রের আর কোনো খবরই পাননি সেনটেইন।
***
সমারসেট ওয়েস্টের বয় স্কাউৰ্টস হলের মিটিংয়ের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করল শাসা। কেপ টাউন থেকে প্রায় ত্রিশ মাইল ভ্রমণ করে এখানে পৌঁছেছে সে আর তারা। পুরনো প্যাকার্ড নিয়েই পাড়ি দিয়েছে এতদূর। কারণ শাসার নতুন রোলস রয়েস নিয়ে আসতে চায়নি তারা বলেছে, “শ’খানেক কৃষ্ণাঙ্গ শিশুর সারা জীবনের খাবার, শিক্ষা আর পোশাকের ব্যয় বহনের জন্য যথেষ্ট, এতটা দামি একটা গাড়ি নিয়ে তুমি কীভাবে ঘুরে বেড়াবে?”
এই প্রথমবারের মত সমর্থকদের চোখে নিজের বিত্তের হিসাব না দেয়ার পক্ষে রায় দিল শাসা। মনে মনে স্ত্রীর রূপ আর মেধার প্রশংসা না করেও পারল না। যাই হোক স্ত্রীর সামনে বক্তৃতার রিহার্সালও করতে হল। নিখুঁত না হলেই এটা-ওটা শিখিয়ে দিল তারা। যেমন : শাসাকে বলল “আমি হয়ত এখানে আরেকটু লম্বা বিরতি দিতাম”, “চোখে-মুখে আরও আত্মপ্রত্যয়ীর ভাব আনো” কিংবা “সাম্রাজ্য নিয়ে এখন আর কেউ এত কথা বলে না” ইত্যাদি।
হলের প্রবেশমুখেই শাসার বিশাল বড় একটা পোস্টার। ভেতরেও প্রতিটা আসন কানায় কানায় পূর্ণ। এমনকি পেছন দিকেও প্রায় ডজনখানেকের মত তরুণ দাঁড়িয়ে আছে।
স্থানীয় ইউনাইটেড পার্টির সংগঠিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলল, “গত শর্ট টার্মে শাসা যা করেছে দেশের জন্যে; সেটাই তার পরিচয় দেয়ার জন্য যথেষ্ট। অর্থাৎ এবারে ওকে উঠে দাঁড়াতে হবে।
লম্বা আর সদানন্দ শাসার পরনে গাঢ় নীল রঙা স্যুট, সাদা শার্ট আর এয়ারফোর্সের টাই। যা দর্শককে তার রেকর্ডের কথা মনে করিয়ে দেবে আর চোখের পট্টিটাই তো দেশের জন্য তার আত্মদানের জ্বলজ্বল প্রমাণ।