ম্যানফ্রেডকে আরেকটা সিট দেয়ার কথা উঠলেও সে নিজেই এ আসন বেছে নিয়েছে শাসা কোর্টনিকে আরেকবার মোকাবিলা করার জন্য। ওয়ালবিস বে’তে তাদের প্রথম সাক্ষাতের কথা তার এখনো স্পষ্ট মনে আছে। তারপর থেকেই যেন অদৃশ্য এক সুতায় বাধা পড়েছে তাদের ভাগ্য।
নির্বাচনের ক্যাম্পেইন শুরু করার আগে তাই কোর্টনি পরিবার বিশেষ করে শাসা ও সেনটেইন কোর্টনির ওপর তদন্তে নামল ম্যানফ্রেড। এই নারীর অতীত নিয়ে আবিষ্কার করল এক রহস্যময় অধ্যায়। ব্যাপারটা নিয়ে ও এতই বিচলিত হয়ে উঠল যে প্যারিসে থেকে আগত এক প্রাইভেট গোয়েন্দাও নিযুক্ত করল এই রহস্য উদঘাটনের জন্য।
প্রিটোরিয়া সেন্ট্রাল কারাগারে প্রতি মাসে বাবাকে দেখতে যায়। তাই পিতার কাছেও জানতে চাইল কোর্টনিদের আদ্যোপান্ত।
প্রচারাভিযানের শুরুতেই তাই নিজের তদন্তের সুফল পেয়ে গেল ম্যানফ্রেড { জানে গুরুত্বপূর্ণ এই সুযোগ তার পক্ষেই যাবে।
***
টেবিল মাউন্টেনের উপরে বাকি দলটা থেকে খানিকটা তফাতে দাঁড়িয়ে আছেন সেনটেইন কোর্টনি। স্যার গ্যারি মারা যাওয়ার পর থেকেই পাহাড়টা তাকে বিষণ্ণ করে তোলে। কেবলমাত্র অফিসিয়াল পার্টনার হওয়ার অভিনয় করার জন্য ব্লেইনের অনুরোধ ফেলতে না পেরেই আজ এখানে আবার আসতে বাধ্য হয়েছেন।
রাজা জর্জের সাথে কথা বলছেন ওড বাস; রাজকুমারীদের ছোট্ট দলটার সাথে দাঁড়িয়ে আছেন ব্লেইন। আড়চোখে তার দিকে তাকিয়ে ভালোবাসার মানুষকে পরীক্ষা করে দেখছেন সেনটেইন। কানের কাছে চকচক করছে রুপালি আভা। রোদে পোড়া চেহারাতেও গভীর কয়েকটা আঁচড়। কিন্তু দৌড় আর ঘোড়া চালানোর অভ্যাস থাকাতে পেট এখনো মেদহীন আর শরীরটাও শক্তপোক্ত। তারপরেও বয়স যে হচ্ছে তা স্পষ্ট বোঝা যায়।
“ওহ গড” মনে মনে আঁতকে উঠলেন সেনটেইন, কয়েক মাসের ভেতরে আমার নিজের বয়সও আটচল্লিশ হয়ে যাবে।” হাত বাড়িয়ে নিজের মাথাও স্পর্শ করলেন; কয়েকটা রুপালি চুল থাকলেও রোদে পুড়ে লালচে দেখায়।
“হাতে না জানি আর কতটুকু সময় আছে ডালিং” আপন মনেই ভাবতে গিয়ে বিষণও হয়ে উঠলেন, “গতকালও নিজেকে তরুণী আর অবিনশ্বর ভাবতাম। কিন্তু এখন মনে হয়, না সবকিছুই ক্ষয় হয়।”
ঠিক সেই মুহূর্তে চোখ তুলে সেনটেইনের দিকে তাকালেন ব্লেইন। আবার অন্যদের কাছ থেকে জামা চেয়ে নিয়ে এদিকে এলেন, “অত সুন্দর একটা দিনে এত সিরিয়াস চেহারা করে আছো কেন?” হেসে ফেললেন ব্লেইন।
“ভাবছি তুমি কীভাবে এতটা বেশরম হলে ব্লেইন ম্যালকম?”
“মানে?” মুছে গেল তার হাসি। “রাজা-রানির সামনে নিজের মিসট্রেস নিয়ে হাঁটছো! জানো এটা কতবড় অপরাধ। টাওয়ার গ্রিনের সাথে তোমাকে ফাঁসিতে লটকে রাখার কথা।”
খানিক হাঁ করে তাকিয়ে থেকেই কিশোরদের মত উচ্ছল হয়ে উঠলেন আনন্দিত ব্লেইন, “মাই ডিয়ার লেডি, এ ভাগ্য বদলানো আমার পক্ষে অসম্ভব কিছু না। তোমার পদমর্যাদা বদলে দিলে কেমন হয়?”
খিকখিক করে হেসে ফেললেন সেনটেইন, “বিয়ের প্রস্তাব পাওয়ার জন্য কত অদ্ভুত এক সময় আর পরিবেশ, তাই না।”
“তোমার কি মনে হয়, এখন যদি ওদের সামনেই তোমাকে কিস্ করি তাহলে রাজা-রানির দল কী ভাববেন?”
“পাগল কোথাকার, রাখো! আজকে বাসায় গিয়ে তোমাকে কী করি দেখো!”
সব শুনে সেনটেইনের হাত ধরে সামনে নিয়ে গেলেন ব্লেইন।
***
“কেপের সবচেয়ে সুন্দর বাড়িগুলোর একটা হল ওয়েস্টেভেদেন, নিজের মতামত দিলেন ব্লেইন, “কিন্তু এটা তো আমার নয়। আমি আমার বধূকে নিজের কুটিরেই নিয়ে যেতে চাই।”
“আমরা নিউল্যান্ডের বাড়িতে একসাথে থাকতে পারব না।” আর কিছু বললেন না সেনটেইন। ক্ষণিকের তরে যেন তাদের মাঝে দিয়ে হেঁটে গেল ইসাবেলার ছায়া।
“তাহলে সেই কটেজ?” ইসাবেলার স্মৃতিকে তাড়িয়ে দেয়ার জন্যে হেসে ফেললেন ব্লেইন?” বিশাল রাজকীয় একটা বেড আছে, আর কী চাই বলো?”
“সেটাও থাকবে। মন চাইলেই আমরা সেখানে যাবো।”
“ডার্টি উইকেন্ডস, ওহ!”
“তুমি একটা কামুক জানো তো?”
“তাহলে আমরা কোথায় থাকব?”
“আরেকটা জায়গা খুঁজে নিব। আমাদের জন্যে বিশেষ একটা জায়গা।”
সবশেষে বিস্তৃত জায়গা নিয়ে গত শতকের শেষ দিকে তৈরি এক ভিক্টোরিয়া ম্যানসন খুঁজে নিলেন সেনটেইন, যেখান থেকে দেখা যায় পাঁচশ একর পাহাড়, সৈকত আর শান্ত সবুজ আটলান্টিকের জল। নাম দিলেন রোড হিল। এখান থেকে মাত্র বিশ মিনিট গাড়ি চালালেই ওয়েল্টোত্রেদেনেও পৌঁছে যাওয়া যাবে।
যুদ্ধ শেষে কোর্টনী মাইনিং অ্যান্ড ফিন্যান্সের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেল শাসা। এবার ওয়েল্টেভ্রদেনে উঠে যাবে শাসা আর তারা। কিন্তু তার ফেলে আসা ফার্নিচার বদলে বাগান আর লটাকেও নতুন করে সাজিয়েছে মেয়েটা; যা দেখে বহুকষ্টে নিজেকে সামলালেন সেনটেইন।
উইন্ডহকের ডেভিড আব্রাহামসকে নিয়ে কোর্টনি মাইনিং কোম্পানির অ্যাডভেঞ্চারে ঝাঁপ দিল শাসা। যদিও ওর অতীব সাহসী কোনো প্রজেক্টে বাদ সাধার জন্যে পুরাতন অ্যাবি আর টুয়েন্টিম্যান জোনস্ও আছেন। তারপরেও বলা চলে দিনকে দিন উন্নতির শিখরে উঠে যাচ্ছে সেনটেইনের পরিশ্রমের ফসল। এমনকি সর্বদা সংশয়বাদী টুয়েন্টিম্যানও বিড়বিড় করে প্রায়ই বলেন যে, “নাহ ছেলেটার কাঁধের উপর একটা মাথা আছে বটে।”