কিন্তু ব্লুয়েফন্টেনে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ম্যানফ্রেডের কাধ ফুলে গোল হয়ে গেল; প্রচণ্ড ব্যথাও করছে। ক্যাবের এক কোনায় গুটি গুটি হয়ে ব্যথায় কাতরাতে লাগল প্রায় অচেতন ম্যানি।
রুলফ আগেই ফোন করে রাখায় বন্ধুরা এসে ওকে রেলওয়ে ইয়ার্ডে নিয়ে গেল।
“আমরা কোথায় যাচ্ছি?”
“ডাক্তারের কাছে।” উত্তরটা শোনার পরপরই জ্ঞান হারাল ম্যানফ্রেড।
আবার যখন জ্ঞান ফিরল দেখা গেল অত্যন্ত আলোকিত আর সুসজ্জিত একটা রুমে শুয়ে আছে সে। কাঁধে সাদা ব্যান্ডেজ আর চেতনানাশকের ঘোর সত্ত্বেও তেমন খারাপ লাগছে না।
ম্যানফ্রেড জেগে গেছে বুঝতে পেরেই জানালার পাশের চেয়ার থেকে এগিয়ে এল এক লোক।
“এখন কেমন লাগছে?”
“খারাপ না। বিপ্লব ঘটে গেছে?”
কিন্তু অবাক হয়ে লোকটা ওর দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি জানো না?”
“আমি শুধু জানি যে আমরা সফল হয়েছি” ম্যানফ্রেডের কথা শেষ হওয়ার আগেই সংবাদপত্র বাড়িয়ে দিল লোকটা। হেড লাইনে লেখা :
টেবিল মাউন্টেনে নৃশংস গুপ্তহত্যা বিখ্যাত ইতিহাসবিদকে হত্যার জন্য ওবি’কে দায়ী করা হয়েছে, ৬০০ জনকে গ্রেফতারের আদেশ দিয়েছেন সুটস্।
ম্যানফ্রেডের হতবিহ্বল চেহারা দেখে লোকটা এবারে জানাল, “তুমি ভুল লোককে খুন করেছে। তবে স্মুটস তার অজুহাত পেয়ে গেছে। আমাদের সমস্ত লিভারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন তোমাকে খুঁজছে। হয়ত এখানেও যেকোনো মুহূর্তে এসে পড়বে পুলিশ। তুমি এখানে আর নিরাপদ নও।”
ট্রাকের পিঠে চড়ে শহর থেকে বেরিয়ে এল ম্যানফ্রেড। ওবির বাকি নেতারাও আত্মগোপনে গেছেন। কেউই তাকে রাখতে রাজি হচ্ছে না।
সফল এক বিদ্রোহের হিরো হওয়ার বদলে দুর্বল শরীরে পালিয়ে বেড়াতে হল এ ডেরা থেকে ও ডেরায়। গ্রেফতারকৃতদের তালিকায় রুলফ আর ট্রম্প বিয়ারম্যানের নাম দেখে মুষড়ে পড়ল ম্যানফ্রেড। সারাহ, ট্রুডি আন্টির কথা চিন্তা করে আহত পশুর মত গুঙ্গিয়ে উঠল। কিন্তু ওকে রাখার ঝুঁকি আর কেউ নিতে চাইছে না।
আটদিন বাদে জোহানেসবার্গ এল ম্যানি। ঘটনাক্রমে এসে পড়ল উইটওয়াটারস্রান্তে। ব্রাদার্স হুডের সবশেষ এক আস্তানার ঠিকানা পেয়ে ট্রামে চড়ে সেদিকেই ছুটল। এখন দরকার ৩৬ নম্বর রাস্তা। কিন্তু নীল ইউনিফর্মের পুলিশ দেখে ৩৬ নং পেয়েও নামার সাহস করল না ম্যানডে।
অগত্যা টার্মিনালে নেমে বসল গিয়ে এক কফি শপে। শেষ কয়েকটা কয়েন দিয়ে বিল মিটিয়ে ভাবতে লাগল যে এরপর কী করা যায়। ভাগ্য বুঝি এখন তাকে আর সহায়তা করবে না।
ঠিক তখনই ক্যাফের তেলতেলে কাঁচ দিয়ে বাইরে তাকাতেই রাস্তার ওপাশের স্ট্রিট সাইনটা চোখে পড়ল। সাথে সাথে কেঁপে উঠল স্মৃতি। কী যেন একটা মনে পড়ি পড়ি করেও পড়ছে না। আর সেই মুহূর্তেই খুঁজে পেল নতুন আশার ঝলক।
ক্যাফে থেকে বেরিয়ে রাস্তাটা ধরে হাঁটা শুরু করল ম্যানি। খানিক বাদেই ভাঙাচোরা একটা গলিতে পৌঁছে গেল যেখানে কোনো শ্বেতাঙ্গ নজরে আসছে না। যা খুঁজছে তা পেয়েও গেল।
ছোট্ট একটা জেনারেল ডিলারস্ স্টোর। কৃষ্ণাঙ্গ কাস্ট্রোমাররা হাসি-ঠাট্টা আর কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকলেও ওকে দেখেই পথ ছেড়ে দিল।
ওয়েস্টার্ন স্টাইলের সুট পরিহিত মালিক এক বয়স্ক জুলু। মুখে সাদা দাড়ি। ম্যানফ্রেডের অনুরোধ শুনে বলল, “আমার সাথে এসো নাকোমি।”
তারপর দোকানের পিছনের স্টোররুমে নিয়ে গিয়ে বলল, “তোমাকে হয়ত অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে।”
একগাদা চিনির বস্তার ওপর বসে পড়ল ম্যানফ্রেড। ক্ষুধায় ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তাছাড়া কাধও ব্যথা করছে। তাই সেভাবে বসেই ঘুমিয়ে পড়ল। বহুক্ষণ বাদে ঘুম ভাঙ্গল কাঁধে কারো স্পর্শ আর গম্ভীর এক কণ্ঠ শুনে।
“আমাকে কোথায় খুঁজতে হবে সেটা কীভাবে জানলে?”
টলতে টলতে উঠে দাঁড়াল ম্যানফ্রেড, “বাবা বলেছে। হ্যালো সোয়ার্ট হেনড্রিক।”
“কত বছর পার হয়ে গেছে। ম্যানি।” ফোকলা দাঁত দেখিয়ে হেসে ফেলল ওভাষো, “অনেক বছর। কিন্তু কেন যেন সব সময় মনে হত যে আমাদের আবার দেখা হবে। মরুভূমির দেবতা আমাদেরকে একসাথে বেঁধে রেখেছে। লিটল ম্যানি, আমি জানতাম তুমি আসবে।”
***
ড্রেকস ফার্মের অল্প কয়েকটা ইটের বাড়ির একটা সোয়াট হেনড্রিকের ঘরে একত্রে বসে আছে দু’জন। বিয়ার খেতে খেতে সিরিয়াস আলোচনা চললেও ছোট্ট শিশু সন্তানকে কোলে নিয়েও সমান তালে আদর করছেন হেনড্রিক। বললেন, “তো লিটল ম্যানি, দু’জন তো দুজনের সব কথা শুনলাম। কিন্তু সমস্যা আসলে সেই একটাই।” বিয়ারের পাত্র তুলে মুখভর্তি সাদা ফেনা গিলে ফেললেন হেনড্রিক, “আর তা হল, প্রতিটি রেলওয়ে স্টেশন আর প্রতিটি রাস্তায় শ্বেতাঙ্গ পুলিশ তোমাকে খুঁজছে। তোমার মাথার দামও ঘোষণা করেছে লিটল ম্যানি। পুরো পাঁচ হাজার পাউন্ড। এই টাকা দিয়ে কতগুলো স্ত্রী আর বাছুর কেনা যাবে?” আপন মনেই প্রশ্নের উত্তরটা ভেবে বিস্মিত হয়ে গেলেন ওভাষ্যে, “তুমি চাইছো যেন তোমাকে উত্তরের নদী পেরোতে সাহায্য করি কিন্তু শ্বেতাঙ্গ পুলিশ যদি জানতে পারে দুজনকে একই গাছে ফাঁসিতে লটকে দিবে অথবা স্মাটসের কারাগারে পাথর ভাঙতে পাঠিয়ে দিবে” দীর্ঘশ্বাস ফেলে নাটকীয়ভাবে দুঃখের ভান করলেন হেনড্রিক, “ভাবো তো লিটল ম্যানি, এর উত্তর কী হবে?”