দ্রুতপায়ে দৌড়ে সরে গেল খুনি। মিনিটখানেক বাদেই নিচে শাসার দিকে তাকালেন ব্লেইন।
“দাঁড়াও!” হাঁপাতে হাঁপাতে ট্রাউজার থেকে মোটা চামড়ার বেল্ট খুলে শাসার দিকে বাড়িয়ে ধরলেন ব্লেইন।
তারপর পেট পেতে শুয়ে পড়লেন খাদের কিনারে। পোলো প্র্যাকটিস থাকাতে এই বয়সেও যথেষ্ট ফিট ব্লেইন। তারপরেও শাসাকে তুলতে বেশ কয়েক মিনিট ব্যয় করতে হল।
পাশাপাশি কিছুক্ষণ শুয়ে দম নিল দু’জনে। তারপর টলতে টলতে কোনো রকমে উঠে দাঁড়াল শাসা। ধাতস্থ হতেই আবার দৌড় দিল। একটু পরেই ওকে ধরে ফেললেন ব্লেইন। তাঁকে দেখে আরো প্রত্যয়ী হয়ে উঠল শাসা। দৌড়ানোর মাঝখানেই ব্লেইন বললেন,
“রক্ত” পথের উপরে পড়ে থাকা পাথরের গায়ে ছোট ছোট ছিটে দেখে জানালেন, “তুমি ওকে গুলিটা লাগাতে পেরেছো!”
ঘোড়া চলার উপযুক্ত চওড়া রাস্তাটাতে পৌঁছে গেল দুজনে। কিন্তু মোড়ের মাথায় পৌঁছাবার আগেই কানে এল নিচে ইঞ্জিন স্টার্ট নেয়ার শব্দ।
“ওর কাছে গাড়ি আছে!” হাঁপাতে হাঁপাতে কোনো মতে বললেন ব্লেইন। দ্রুত হয়ে উঠল ইঞ্জিনের গর্জন, অন্যদিকে শাসার পা দুটোও আর শরীরের ভার বইতে পারছে না। রাস্তার মাঝখানেই ভেঙেচুরে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল শাসা।
খানিক বাদে সিসিলিয়া ফরেস্ট্রি স্টেশনের টেলিফোন থেকে সিআইডি হেড কোয়ার্টারে নেলকে ফোন দিল শাসা। খুনির বর্ণনা দিয়ে জানাল,
“আপনাকে অনেক তাড়াতাড়ি করতে হবে। নিশ্চয়ই ওর পালানোর পুরো প্ল্যান করা আছে।”
প্রতি বছর এ পাহাড়ে বেশ কিছু শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে তাই ফরেস্ট্রি স্টেশনে লাইটওয়েট স্ট্রেচার থাকে। ছয়জন কৃষ্ণাঙ্গ কর্মচারী ব্লেইনদের সাথে চলে এল স্কোলিটন গর্জে।
মেয়েরা সবাই ওখানেই অপেক্ষা করেছে এতক্ষণ। একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন সেনটেইন আর অ্যানা পাতলা একটা কার্পেট দিয়ে ঢেকে রেখেছেন মৃতদেহ।
হাঁটু গেড়ে বসে কার্পেটের এক কোনা তুলে স্যার গ্যারি কোর্টনির শবদেহ দেখল শাসা। পড়ে যাওয়াতে নাক ভেঙে গেলেও সারা মুখে অত্যন্ত প্রশান্তির এক ছাপ থাকায় মনে হচ্ছে যেন কোনো মৃত সিজারের মুখ।
দাদুর ঠাণ্ডা, ভেলভেটের মত মসৃণ কপালে চুমু দিল, তারপর উঠে দাঁড়াতেই ওর কাঁধে হাত রাখলেন ফিল্ড মার্শাল স্যুটস। “আয়্যাম সরি, মাই বয়” বলে উঠলেন বর্ষীয়ান প্রধানমন্ত্রী, “এই বুলেটটা আমার দিকে লাগার কথা ছিল।”
***
এক হাতে স্টিয়ারিং ধরে গাড়ি চালাচ্ছে ম্যানফ্রেড ডি লা রে। মরিসের ইঞ্জিন চালু অবস্থাতেই খুলে ফেলল ওভারঅলের সামনের বোতাম। বাহুমূলের ঠিক নিচে ঢুকে গেছে বুলেট। অন্য কোন ক্ষত না থাকায় বোঝা গেল গুলি এখনো ভেতরেই আছে। আস্তে করে হাত পেছনে নিয়ে কাঁধ ছুঁতেই ফোলা জায়গাটায় : ব্যথা পেয়ে আর্তচিৎকার করে উঠল ম্যানি।
চামড়ার ঠিক নিচে আঘাত করলেও মনে হচ্ছে বুকের কোথাও কোনো ক্ষতি করেনি বুলেট। তাই রুমাল চেপে বাহুমূলের, ক্ষত ঢেকে ওভারঅলের বোতামগুলো আবার লাগিয়ে নিল। ঘড়িতে এখনো এগারোটা বাজতে কয়েক মিনিট বাকি আছে। মাত্র তেইশ মিনিট আগেই ওর ছোঁড়া গুলিতে এবার মুক্তির স্বাদ পাবে তার দেশবাসী।
বিজয়ের আনন্দে আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠায় ব্যথা ভুলে গেল ম্যানফ্রেড। উডস্টকের ভেতর দিয়ে মরিস চালিয়ে সোজা রেলওয়ে ইয়ার্ডে চলে এল।
সিটের নিচে রেখে দিল মসার। অন্যরা সরিয়ে নিবে গাড়ি আর রাইফেল। তাড়াতাড়ি রেস্টরুমে গিয়ে ঢুকতেই দেখল বাকিরাও অপেক্ষা করছে।
নীল ওভারঅলে রক্ত দেখেই উদ্বিগ্ন মুখে ছুটে এল রুলফ।
“তুমি ঠিক আছে তো? কী হয়েছিল?”
“স্মুটস মারা গেছে।” জানাল ম্যানফ্রেড আর সাথে সাথে যেন তার আনন্দও অন্যদের মাঝে সঞ্চারিত হয়ে গেল। কেউ কোনো কথা বলছে না কিংবা নড়েওনি। তারপরেও বোঝা গেল যেন বদলে গেছে ইতিহাস; কয়েক সেকেন্ড বাদে নীরবতা ভাঙল রুলফ।
“তুমি আহত হয়েছে।”
দলের একজন গিয়ে মরিসটাকে দূরে সরিয়ে রেখে এল। রুলফ ম্যানফ্রেডকে নোংরা ওভারঅল খুলে ফেলতে সাহায্য করল তারপর ক্ষত পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিল।
ম্যানফ্রেড যেহেতু বাম হাত নড়াচড়াই করতে পারছে না তাই ওর কালো দাড়ি কেটে শেভ করে দিল রুলফ। আবারো নিজের সুদর্শন চেহারা ফিরে পেল তরুণ ম্যানি। তবে রক্ত যাওয়াতে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
“আমরা শীঘ্রই আবার দেখা করব আর তোমার বন্ধু হতে পেরে সত্যিই খুব গর্ব বোধ হচ্ছে। খন থেকে সবাই কেবল তোমার প্রশংসা করবে।”
এগিয়ে এল ইঞ্জিন ড্রাইভার, “আমাদের যাওয়া উচিত।” রুলফের সাথে হাত মিলিয়ে বাইরে অপেক্ষমাণ লোকোমাটিভের উদ্দেশে পা বাড়াল ম্যানফ্রেড।
ওরচেস্টার স্টেশনে উত্তরগামী ট্রেনটাকে থামিয়ে জোর তল্লাশি চালাল পুলিশ। ক্যাবে ঢুকতেই তাই ইঞ্জিন ড্রাইভার জানতে চাইল,
“কী হয়েছে?”
“আজ সকালেই টেবিল মাউন্টেনে অত্যন্ত গণ্যমান্য এক ব্যক্তি খুন হয়েছেন। আমাদের কাছে খুনির বর্ণনাও আছে। প্রতিটা রাস্তায় পুলিশ সতর্ক পাহারা বসিয়েছে; জাহাজ আর ট্রেনও চেক করা হচ্ছে”।
“কে মারা গেছে?” ম্যানফ্রেড জানতে চাইলে কাঁধ ঝাঁকাল কনস্টেশন, “জানি না বন্ধু, তবে নিশ্চয়ই বেশ গুরুত্বপূর্ণ কেউ।” ক্যাবে থেকে নেমে গেল পুলিশ। সবুজ সিগন্যাল পেয়ে উত্তরে ছুটল ট্রেন।