কনস্টানশিয়া নেক পৌঁছে গাড়ির গতি কমিয়ে রিয়ারভিউ মিরর দেখে নিশ্চিত হয়ে নিল যে কেউ তার পিছু নেয়নি। তারপর হেডলাইট নিভিয়ে আবার তীক্ষ্ণ একটা মোড় নিয়ে চলে এল ফরেস্ট্রি ট্র্যাকে।
হাঁটার গতিতে গাড়ি চালিয়ে চলে এল গেইটের কাছে। ইঞ্জিন চালু রেখেই গাড়ি থেকে নেমে চাবি দিয়ে তালা খোলার চেষ্টা করল। চাবিটা দিয়েছে রুলফ। বলেছে বনকর্মী নাকি তার বন্ধু। তাই গেইটও সহজেই খুলে গেল। গাড়ি নিয়ে ভেতরে ঢুকে গেইট আবার আটকে দিল ম্যানফ্রেড। কিন্তু তালা লাগাল না।
খানিক বাদে চট করে যাতে চোখে না পড়ে এমনভাবে মরিস গাড়ি লুকিয়ে রাইফেল আর ফ্লাশ লাইট নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এল। বিশ মিনিটের ভেতরেই পেয়ে গেল স্কেলিটন গর্জে ওঠার রাস্তা। ফ্লাশ লাইটের আলোতে কংক্রিটের চারকোনা সাইনপোসটাও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
*
স্মুটস ট্যাক একটুও না থেমে দ্রুতপায়ে ১২০০ ফুট উপরে ঠিক ব্রেকফাস্ট রকে এসে থামল ম্যানফ্রেড। এবার পেছন ফিরে তাকাবার ফুরসত পেল। অনেক নিচে তারার আলোয় দেখা যাচ্ছে কনস্ট্যানশিয়া উপত্যকা। তাই ফাইনাল প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিল। দুদিন আগে এসেই কোথায় দাঁড়ালে রাইফেলের কাঙ্ক্ষিত একজ্যাক্ট রেঞ্জ পাওয়া যাবে তা দেখেও গেছে।
এখন সরাসরি নিজের সেই গোপন জায়গায় চলে এল। দুইটা বড় বড় পাথরের মাঝখানে খানিকটা ফাঁকা জায়গা। তেরপল বিছিয়ে শুয়ে পড়তেই আরাম দিল ঘাসের ম্যাট্রেস।
যেকোনো মুহূর্তে চাইলেই ব্যবহার করা যাবে এমনভাবে দাঁড় করিয়ে রাখল রাইফেল। সময় কাটাবার জন্যে মনে মনে ঝালাই করে নিল পুরো প্ল্যান। কাল সকাল সাড়ে দশটার আগে কিংবা একটু পরেই এসে যাবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।
জ্যান ক্রিশ্চিয়ান স্মুটের ইতিহাস পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে ঘেঁটে দেখেছে বার্লিন। গত দশ বছরে প্রতি বছর এই তারিখে এই পর্বতে এসে বন্ধুর জন্মদিন পালন করেছে ফিল্ড মার্শাল। আর এ বছর পুরো জাতির ভাগ্যই নির্ভর করছে তার। এখানে আসার ওপর।
***
ওয়েল্টেভ্রেদেনের দুর্গের বাইরে ডজনখানেক মোটরগাড়ির ভিড়ে ব্লেইনের বেন্টলিও দেখতে পেল শাসা। ঘড়িতে আটটা দশ বাজছে। তার মানে ক্ষেপে যাবে মা।
কিন্তু ডাইনিং টেবিল থেকে দৌড়ে এসে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে অবাক করে দিলেন সেনটেইন। ওয়েল্টেভ্রেদেনের সবচেয়ে চটকদার নাশতা করতে বসেছেন বিশজন অতিথি। শাসাকে দেখে সবাই বেশ খুশি হল। পরিচারকেরাও স্নেহের হাসি দিল। কেবল ডেভিড বাদে আজ তার একান্ত আপনজনদের প্রায় সবাই এখানে উপস্থিত হয়েছে। দাদু, অ্যানা, ব্লেইন, তারা, ম্যাটি, ওড় বাস্ আর অবশ্যই মা।
সবার সাথে হ্যান্ডশেক করে হাসিমুখে কুশল বিনিময় সেরে নিল শাসা। তারপর দাদুকে তার জন্মদিনের উপহার দিয়ে নাশতা করতে বসল। টেবিলের নিচে পা দিয়ে তারার সাথে খুনসুটিও চলল সমান তালে।
যাই হোক, ব্রেকফাস্ট শেষে মেয়েরা গেল কোট আনতে আর ছেলেরা গাড়ির কাছে। এমন সময় শাসাকে একপাশে টেনে নিয়ে গেলেন স্যার গ্যারি, “অ্যায়াম সরি, শাসা, ইচ্ছে ছিল তোমার সাথে অনেক গল্প করব; কিন্তু ব্লেইন বলল যে তুমি কত গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ করছে।”
“আমি কাল রাতেই এখানে চলে আসার চেষ্টা করব। ততক্ষণে কাজের চাপও অনেক কমে যাবে।”
“আমরা একসাথে একটু সময় না কাটানো পর্যন্ত আমি ন্যাটাল ফিরে যাব না। তোমাকেই তো আমার কোর্টনি নামটাকে বহন করে নিয়ে যেতে হবে, নাকি?
দাদুর প্রতি স্নেহে আর্দ্র হয়ে উঠল শাসার মন। একদিক থেকে দেখলে তারা দুজনেই অনেক বড় আত্মত্যাগ দিয়েছে; স্যার গ্যারি পা আর শাসা চোখ।
“কতদিন আমি থিউনিসক্রালে তোমার আর অ্যানার কাছে যাই না। কয়েক সপ্তাহ তোমাদের কাছে কাটানো যাবে না?” ছোট বাচ্চাদের মত জেদ ধরল শাসা।
“এর চেয়ে আর কোন কিছুই আমাদেরকে আনন্দ দিতে পারবে না।” নাতিকে জড়িয়ে ধরলেন সার গ্যারি। ঠিক সে সময় এগিয়ে এলেন ফিল্ড মার্শাল স্যুটস।
“তুমি এখনো কথা বলছো গ্যারি? এবার চল। আমাদেরকে পাহাড়ে চড়তে হবে। যে পরে চূড়ায় পৌঁছাবে তাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়া হবে।”
পরস্পরের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল দুই বন্ধু।
“ফরোয়ার্ড!” নিজের হাতের লাঠি ঠুকে বন্ধুর হাত ধরে সেনটেইনের হলুদ ডেইমলারের দিকে এগোলেন স্যার গ্যারি।
তাদের পিছু নিল ব্লেইনের বেন্টলি। সবাই চলে যেতেই ওয়েল্টেভ্রেদেনের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে নিজেকে বড় একা বোধ করল শাসা।
যাই হোক, আবার বাড়িতে ঢুকে নিজের রুমে এসে কয়েকটা পরিষ্কার শার্ট প্যান্ট তুলে নিল। তারপর সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামার সময় কি মনে করে সেনটেইনের স্টাডিতে যে টেলিফোন আছে সেখান থেকে সি আই ডি হেড কোয়ার্টারে ফোন দিল।
“হ্যালো, সার্জেন্ট, আমার জন্য কোনো মেসেজ আছে?”
“হোল্ড অন স্যার। দেখছি।” কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই ফিরে এল লোকটা, বলল, “দশ মিনিট আগে স্যার একটা মেয়ে ফোন বলেছিল, নাম বলেনি।”
ধন্যবাদ, সার্জেন্ট” তাড়াতাড়ি ফোন রেখে দিল শাসা! টের পাচ্ছে ওর হাত দুটো কাঁপছে। নিশ্চয়ই সেই মেয়েটা। তাহলে এখানে কেন ফোন দেয়নি?
সেখানেই স্থির দাঁড়িয়ে রইল শাসা। মন চাইছে ফোনটা বাজুক। কিন্তু কিছুই ঘটল না। পাঁচ মিনিট পর পায়চারি শুরু করল। তারপরেও নীরব হয়ে রইল ফোন। একবার ভাবল হেড কোয়ার্টারে ফিরে যাবে নাকি? অখবা সার্জেন্টকে আবারো ফোন দিবে, কিন্তু তাতে শুধু শুধু লাইন এনগেজ হয়ে যাবে।