হঠাৎ করেই ছোটখাট কুঁড়েঘরের সমান বড়সড় একটা পাথরের ওপর উঠে বসল বেবুনটা। ঠিক মানুষের মতই হাঁটুর ওপর কনুই রেখে বসল। হাঁ করতেই স্পষ্ট দেখা গেল হলুদ রঙা বিষদাঁতের সারি।
আস্তে আস্তে রাইফেল তুলে বেবুনের কপাল বরাবর ট্রিগার টিপে দিল ম্যানফ্রেড। মেঘের মত গুরগুর শব্দ করে উপত্যকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল সেই আওয়াজ।
পাথরের উপর থেকে ডিগবাজি খেয়ে ওপাড়ে পড়ে গেল বেবুনটা, বাকি দল আতঙ্কে কিচকিচ করতে করতে ঢালু পেরিয়ে পালিয়ে গেল।
কাঁধে ব্যাগ তুলে উঠে দাঁড়াল ম্যানফ্রেড। কাছে গিয়ে দেখে যে তুলোর প্রলেপের মত দলামোচড়া হয়ে পড়ে আছে মৃত বেবুন। অসহায় জানোয়ারটার মাথার উপরের অংশ পুরো নাই হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে যেন কেউ এক কোপে আলাদা করে দিয়েছে। পা দিয়ে গড়িয়ে বেবুনটাকে ফেলে দিল ম্যানি। সন্তুষ্ট হয়ে মাথা নাড়ল। বিশেষ করে বানানো এই বুলেট পরিষ্কারভাবে মানুষের মাথা কেটে দিতে সক্ষম। এবার আমি পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত।” বিড়বিড় করতে করতে লোকালয়ে ফিরে এল ম্যানফ্রেড।
***
ব্লেইনের সাথে প্রিটোরিয়া থেকে ফেরার পর শাসা নিজের বাড়িতেও আসেনি। কিংবা তারার সাথেও দেখা করেনি। এমনকি সি আই ডি হেড কোয়ার্টারের বাইরেও যায়নি। ক্যান্টিনে খেয়ে অপারেশনরুমের উপরকার ডরমেটরিতে ঘুমিয়েছে। বাকি সময়টা পুলিশি রেইডের প্ল্যান নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে।
রবিবারে ইচ্ছে করেই সবাইকে গ্রেফতারের দিন ধার্য হয়েছে যেন রিফমর্ড চার্চের অনুসারী হিসেবে গির্জায় প্রার্থনাকালে সবাইকে পাওয়া যায় আর অ্যারেস্ট করতে গেলে পুলিশদেরকেও তেমন বাধা না দেয়।
শুক্রবার দুপুরবেলা, পরদিন দাদুর জন্মদিনের কথা মনে পড়তেই সেনটেইনকে ফোন দিল শাসা;
“ওহ, সোনা, স্যার গ্যারি শুনলে বেশ মন খারাপ করে ফেলবেন। আসার পর থেকে প্রতিদিনই কেবল তোমার কথা জিজ্ঞেস করছেন।”
“অ্যায়াম সরি, মা।”
“এক ঘণ্টার জন্যও আসতে পারবে না?”
“না, মা। বিশ্বাস করো কিছুতেই সম্ভব না। আমারও খুব খারাপ লাগছে।”
“পাহাড়ে উঠতে হবে না শাসা। শুধু আমরা যাওয়ার আগে একসাথে এক গ্লাস শ্যাম্পেন খেয়ে যেও। আমার দোহাই সোনা, একবার চেষ্টা করে দেখো না বাবু?”
ছেলে দ্বিধায় ভুগছে বুঝতে পেরে সেনটেইন বললেন, “ব্লেইন আর স্মুটস সাহেবও আসবেন। তুমি যদি আটটায় এসে দাদুকে উইশ করো, কথা দিচ্ছি সাড়ে আটটায় আবার তোমার কাজে পৌঁছে যেতে পারবে।”
“ওহ! অল রাইট মা” তারপর ফোন কানে রেখেই হেসে ফেলল শাসা, “সবাই সবসময় তোমার কথা শুনে ব্যাপারটা মাঝে মাঝে তোমার বোরিং লাগে না?
“আমার সহ্য হয়ে গেছে বাবু।” পাল্টা হাসি দিলেন সেনটেইন।
মাকে কথা দিলেও মনে মনে অপরাধবোধে ভুগতে লাগল শাসা, এমন সময় সার্জেন্টদের একজন এসে ওকে ডাক দিল।
“স্কোয়াড্রন লিডার কোর্টনি, আপনার একটা ফোন এসেছে।”
“কে?”
“নাম বলেনি তবে এক মেয়ে।” হাসিমুখে ফোন ধরতে গেল শাসা। নিশ্চয় তারা!
“হ্যালো, তারা?” মাউথপিসে কেবল কারো নার্ভাস নিঃশ্বাসের নরম আওয়াজ পেল শাসা। সাথে সাথে ওর শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেল এক শীতল স্রোত। আফ্রিকান ভাষায় পরিস্থিতি যতটা সম্ভব সহজ করার জন্য বলল,
“স্কোয়াড্রন লিডার কোর্টনি বলছি, আমি কি আগেও আপনার সাথে কথা বলেছি?”
“হ্যাঁ।” কম বয়সী নারীকণ্ঠের ভয়ার্ত ভাব ঠিকই টের পেল শাসা। “আমি আপনার কাছে অসম্ভব কৃতজ্ঞ। অসংখ্য সাধারণ মানুষের জীবন বাঁচিয়েছেন আপনি।”
“সংবাদপত্রে তো অস্ত্রগুলো সম্পর্কে কিছু পেলাম না।” ফিসফিস করে বলে উঠল সেই অচেনা নারী। “যা করেছেন সেটাও অনেক গর্বের ব্যাপার।” উৎসাহ দেয়ার জন্য শাসা যোগ করল, “নয়ত অনেক নারী আর ছোট শিশুদের প্রাণ যেতে পারত।”
“ছোট শিশু” শব্দটা শুনেই নাকি কে জানে তাড়াতাড়ি মেয়েটা বলে উঠল, “এখনো আরো বড় বিপদ রয়ে গেছে। ওরা অনেক ভয়ংকর কিছু একটার প্ল্যান করছে। আমি হোয়াইট সোর্ডকে বলতে শুনেছি যে এই সিগনালে নাকি সারা দেশ নড়ে উঠবে
“এটা কী তা বলতে পারবেন? মেয়েটা যাতে ভয় পায় এমনভাবে আস্তে আস্তে শাসা জানতে চাইল, ওর প্ল্যানটা কী?
“আমি জানি না। শুধু জানি শিঘ্ন ঘটবে।”
“খুঁজে বের করতে পারবেন?”
“জানি না, চেষ্টা করতে পারি।”
“সকলের মঙ্গলের জন্য, নারী আর ছোট ছোট শিশুদের জন্য চেষ্টা। করবেন না?”
“ইয়েস। আই উইল ট্রাই।”
“আমাকে এই নাম্বারেই পাবেন” তারপর হঠাৎ করে মায়ের কাছে প্রতিজ্ঞার কথা মনে হতেই “অথবা এই নাম্বারে—” ওয়েল্টেজেদেনের নাম্বার দিল শাসা।
“ঠিক আছে।”
“হোয়াইট সোর্ড কে, তা কি আমাকে বলতে পারবেন?” খানিকটা ঝুঁকি নিল শাসা, বলল, “ওর সত্যিকারের নাম?” সাথে সাথে কেটে গেল লাইন। শেষ প্রশ্নটা যে কেন করল তা ভেবে আফসোসে মরে যেতে মন চাইলেও মাথার ভেতর ঘুরছে মেয়েটার সেই লাইন, “সারা দেশ নড়ে উঠবে” অজানা আশঙ্কায় কেঁপে উঠল শাসা।
***
নেশাগ্রস্তের মত ইউনিভার্সিটি বিল্ডিং পেরিয়ে ডি ওয়াল ড্রাইভ ধরে গাড়ি চালাচ্ছে ম্যানফ্রেড। মাঝরাতও পেরিয়ে যাওয়ায় রাস্তা প্রায় জনশূন্য। বৈশিষ্ট্যহীন মরিস গাড়িটার বুটে তেরপল দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে ওর রাইফেল। রেলওয়ে কর্মীদের নীল ওভারগুলোর উপর নাবিকদের জার্সি আর ভারি ওভারকোট গায়ে দিয়েছে ম্যানি।