ওর কথা শেষ হওয়ার পর সবাই বেশ নীরব আর গম্ভীর হয়ে গেল। তারপর অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জানালেন, “সমস্ত তথ্য-প্রমাণই এখন আমাদের সামনে আছে। তাই এবার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সরকার আমাদেরকে কারাগারে পাঠাবার আগেই পরিকল্পনাগুলোর বাস্তবায়ন করতে হবে।”
বর্তমান সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিয়ে জাতিকে মুক্তি আর ন্যায়ের পথে চালিত করতে হবে। এবার আপনারা একে একে হ্যাঁ’ কিংবা না বলুন।”
“ইয়েস”
“ইয়েস”
“ইয়েস”
তিনজনের রায় নিয়ে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জানালেন, তাহলে আমরা সবাই এ ব্যাপারে রাজি।” এবারে ম্যানফ্রেড ডি লা রের দিকে তাকালেন, “আপনি আমাদেরকে একটা সিগন্যাল দেয়ার কথা বলেছিলেন যার মাধ্যমে পুরো জাতি সক্রিয় হয়ে উঠবে। এবারে কি বলবেন কী সেই সিগন্যাল?”
“সেই সিগন্যাল হল বিশ্বাসঘাতক জ্যান ক্রিশ্চিয়ান স্মুটসকে মেরে ফেলা।” শান্ত গলায় ম্যানফ্রেড জানাতেই সবাই হাঁ করে একদৃষ্টে তার দিকে তাকিয়ে রইল। স্পষ্ট বোঝা গেল যে সবাই মনে মনে বিশেষ কিছু আশা করলেও এতটা ঔদ্ধত্বের জন্য প্রস্তুত ছিল না।
“রাজনৈতিক এই হত্যার সমস্ত খুঁটিনাটি বেশ সাবধানে প্ল্যান করা হয়েছে। বিভিন্ন তারিখে, ঘটনার ওপর নির্ভর করে বাস্তবায়নের জন্যে বার্লিনে পৃথক তিনটা প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। তবে, প্রথম প্ল্যানটাই আমাদের বর্তমান পরিস্থিতিকে চমৎকারভাবে সাহায্য করবে। আসছে শনিবারেই স্মুটসকে হত্যা করা হবে। আর মাত্র তিনদিন বাকি, আমাদের নেতাদেরকে গ্রেফতার করার আগের দিন।”
আরো কিছুক্ষণ মৌন থাকার পরে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জানতে চাইলেন, “কোথায়? কীভাবে করা হবে এ কাজ?”
“আপনার এটা জানার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি একাই সবকিছু করব। তবে সুটের মৃত্যুসংবাদ বের হওয়ার পর দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দায়িত্ব হল আপনার। তার শূন্যস্থান পূরণ করে ক্ষমতার রাশ আপনাকেই ধরে রাখতে হবে।”
“তবে তাই হোক।” আস্তে করে জানালেন অ্যাডমিনিট্রেটর। “আমরা সেই মুহূর্তের জন্য প্রস্তুত থাকব আর ঈশ্বর আমাদের লড়াইকে আশীর্বাদ করুন।”
কম্পার্টমেন্ট থেকে নেমে গেল আটজন। কেবল ম্যানফ্রেড একাই ট্রেনে চেপে চলে এল কেপটাউন।
***
“এস্টেটে বন্দুক রাখার জন্য আমার অনুমতি নেয়া আছে।” ম্যানফ্রেডাকে জানাল সাকি ভ্যান, “পর্বত থেকে আঙুর ক্ষেত আর ফলের বাগানে নেমে আসা বেবুনদেরকে গুলি করার জন্যই এ বন্দুক ব্যবহার করা হয়।”
ম্যানফ্রেডকে ঠাণ্ডা স্যাঁতস্যাঁতে সেলারে নিয়ে এল ওয়াইন ফ্যাক্টরির ম্যানেজার। “তাই যদি কেউ গুলির আওয়াজ শোনেও, ক্ৰক্ষেপ করে না। তবে যদি আপনাকে কেউ কিছু বলে তাহলে নিজেকে এস্টেটের কর্মী পরিচয় দিয়ে শুধু আমার নাম বলবেন।” ওয়াইনের পিপার ঢাকনা খুলে দিল ম্যানেজার।
প্রথমেই রেডিও ট্রান্সমিটার আর ব্যাটারি ক্যানভাসের ব্যাগে ভরে নিল ম্যানফ্রেড। তারপর ৯৮ মসার স্নাইপার রাইফেল, টেলিস্কোপিক সাইট লাগিয়ে ম্যাগাজিন ভরতেই তৈরি হয়ে গেল রাইফেল। বাকি গোলা-বারুদ আবার ক্যানিস্টারে ভরে ওয়াইনের পিপায় রেখে দিল।
ভাঙাচোরা হাফটনী একটা পুরনো ফোর্ডে চড়িয়ে ম্যানফ্রেডকে হটেনটস হল্যান্ট মাউন্টেনের এক উপত্যকায় নামিয়ে দিল ভ্যান।
ম্যানেজার চোখের আড়াল হতেই ব্যাগ আর রাইফেল নিয়ে উপরে উঠে গেল ম্যানফ্রেড। হাতে এখনো বেশ সময় আছে। তাড়াহুড়া করার কোনো দরকার নেই। তারপরেও শারীরিক পরিশ্রম তাকে আনন্দ দেয়। ঘাম ঝরিয়ে উপরে উঠে এল ম্যানি।
প্রধান পর্বত চূড়াগুলোর একটাতে পৌঁছেই গাছের মাথায় রেডিও সেট করে সাবধানে উত্তরদিকে ঘুরিয়ে দিল অ্যান্টেনার মাথা।
তারপর বড়সড় একটা পাথরে হেলান দিয়ে সারাহর দেয়া স্যান্ডউইচও খেয়ে নিল। অ্যাঙ্গোলা আরো ঘন্টাখানেক পর যোগাযোগ করবে তাই কোলের উপর রাইফেল নিয়ে আলতো করে ছুঁয়ে দেখল এর প্রতিটি অংশ। জার্মানিতে এ রাইফেল নিয়েই অনেকবার প্যাকটিস করলেও আরেকবার অভ্যাসটা ঝালাই করে নেয়া দরকার। কিন্তু আশপাশে মানব সদৃশ কোনো নিশানা নেই। রাইফেল একপাশে নামিয়ে তাই রেডিওর দিকেই মনোযোগ ঢেলে দিল।
মোর্স কী সেট করে নোটবুক দেখে দ্রুতহাতে টাইপ করে চলল ম্যানফ্রেন্ড। আশা করছে লুয়ান্ডার অপারেটর পরিচয় না বললেও ওর স্টাইল দেখেই ওকে চিনে নিবে।
“ঈগল বেস, হোয়াইট সোর্ড বলছি।” চারবারের বার পরিষ্কার উত্তর পেল ম্যানফ্রেড।
“গো অ্যাহেড, হোয়াইট সোর্ড।”
“প্ল্যান ওয়ানকেই বাস্তবায়নের স্বীকৃতি চাইছি, আবারো বলছি প্ল্যান ওয়ান।”
এর বেশি আর লম্বা মেসেজের প্রয়োজন নেই। কারণ বার্লিন ছাড়ার আগেই সমস্ত প্ল্যান হয়ে গেছে।
“বুঝতে পেরেছি প্ল্যান ওয়ান গুড লাক। ওভার অ্যান্ড আউট ঈগল বেস।”
“ওভার অ্যান্ড আউট, হোয়াইট সোর্ড।”
এরপর অ্যান্টেনা ভাজ করে ট্রান্সমিটার ব্যাগে ভরে যেই না ম্যানফেড় কাধ ঘোরাতে যাবে পেছনে আচমকা শোনা গেল ভয়ংকর পশুর গর্জন। পাহাড়ে পাহাড়ে প্রতিধ্বনি তুলল সেই আওয়াজ। তাই মসার নিয়ে পাথরের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল তাড়াতাড়ি।
এভাবে প্রায় আধঘণ্টা মরার মত পড়ে থাকার পর দেখতে পেল বেবুনদের দলটাকে। বাচ্চারা মা বেবুনদের পেটের নিচে খেলা করছে। দলের মাঝখানে তিনটা মদ্দা বেবুন। রাইফেলের পেরিস্কোপিক সাইট দিয়ে সবচেয়ে বড় বেবুনটাকে টার্গেট করল ম্যানফ্রেড। অপেক্ষা করল তিনশ’ মিটার রেঞ্জের ভেতরে আসবে পশুটা।