এর চাইতে বেশি কিছু জানতে পারিনি আমি, ক্ষমা প্রার্থনার ভঙ্গিতে বলল সে।
এই তথ্যগুলোর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য এই মুহূর্তে গুপ্তচর পাঠাতে চাই আমি। এই চরদেরকে অবশ্যই বিশ্বাসী এবং সৎ লোক হতে হবে। আলাদা আলাদাভাবে কাজ করবে তারা, যাতে উটেরিকের লোকদের হাতে কেউ ধরা পড়ে গেলেও বাকিরা সব খবর নিয়ে এখানে ফিরে আসার সুযোগ পায়, ওয়েনেগকে বললাম আমি। মাথা ঝাঁকাল সে।
আমাদের হাতে যে তথ্যগুলো আছে সেগুলো আসলেই যাচাই করে নেওয়া দরকার, প্রভু টাইটা।
আবু নাসকোস থেকে অত্যন্ত দক্ষ এবং বিশ্বাসী দুজন লোককে নিয়ে এসেছি। তাদের নাম বাতুর এবং নাসলা, আপন দুই ভাই। আমি চাই বিশেষভাবে ওদেরকেই এ কাজের জন্য পাঠাও তুমি।
তাই হবে, প্রভু টাইটা। তবে একটা সমস্যা আছে। ঘাদাকা পর্যন্ত গিয়ে সব খবর সংগ্রহ করে আবার এখান পর্যন্ত ফিরে আসতে কয়েক দিন সময় লেগে যাবে ওদের।
তাহলে আর দেরি কোরো না, এখনই ওদেরকে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করো, জরুরি গলায় বললাম আমি। তারপর তাকালাম সেরেনার দিকে। মহামান্য রানি, উটেরিক আমাদের বিরুদ্ধে কত ব্যাপক আকারে আক্রমণ পরিচালনা করতে পারে সে ব্যাপারে তো শুনলে তুমি। এখন তোমার সাহায্য চাই আমার। ঘাদাকায় উটেরিকের আস্তানায় হামলা করার আগে আমাদের হাতে যত সৈন্য এবং রথ আছে তাদের সবাইকে সম্পূর্ণ প্রস্তুত রাখতে হবে আমাদের, এবং এই কাজে আমাকে সাহায্য করবে তুমি।
অবশ্যই। এটা বলার কোনো প্রয়োজন ছিল না, টাইটা।
ধন্যবাদ, সেরেনা। এই বলে ওর হাত ধরে প্রাচীরের ওপর দিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম আমি। আমার ধারণা, উটেরিকের সৈন্যসংখ্যার সম্পর্কে ওয়েনেগ যা শুনেছে তা স্বাভাবিকের চাইতে অনেক বেশি ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তোলা হয়েছে। তা ছাড়া লোহিত সাগরের তীরে এক বিশাল দুর্গ গড়ে তুলল সে অথচ আমরা কিছুই জানতে পারলাম না- এটাও একেবারেই অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে আমার কাছে। এমন একটা দুর্গ তৈরি করতে কয়েক দশক সময় লেগে যাবে, হাজার হাজার শ্রমিকের শ্রম দেওয়ার প্রয়োজন হবে। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, এমন একটা দুর্গের অস্তিত্ব যদি সত্যিই থাকত তাহলে অনেক বছর আগেই তার কথা আমার কানে আসত। এমনিতেও ঘটনার সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে আমার খুব বেশি সময় লাগবে না। আর এর মাঝেই উটেরিকের মুখোমুখি হওয়ার জন্য আমাদের সাধ্য অনুযায়ী সবচেয়ে শক্তিশালী বাহিনী সাজিয়ে ফেলব আমরা।
*
হুরোতাস এবং রামেসিসের সাথে সংঘর্ষের শুরুতে লুক্সর থেকে সরে গিয়েছিল উটেরিক। তার উদ্দেশ্য ছিল নীলনদ ধরে সামনে এগিয়ে গিয়ে আবু নাসকোসে চলে যাওয়া এবং সেখানকার দুর্গ দখলে রাখা। যাওয়ার সময় লুক্সর থেকে বেশির ভাগ রথ এবং তীরন্দাজকে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সে। শুধু তার অবর্তমানে শহরের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য জেনারেল পানমাসির জন্য যে সামরিক শক্তি দরকার ছিল তার বেশি কিছুই রেখে যায়নি। তাই আবু নাসকোস ছেড়ে আসার সময় রাজা হুরোতাসের কাছ থেকে যে রথগুলো আমরা পেয়েছিলাম সেগুলোর সাথে লুক্সরের রথগুলো যোগ করে সব মিলিয়ে আমাদের রথসংখ্যা দাঁড়াল এক শ এগারোতে।
লোহিত সাগরের তীরে ঘাদাকায় অবস্থিত উটেরিকের তথাকথিত বিশাল এবং দুর্ভেদ্য দুর্গ এবং তার লাখখানেক সৈন্যকে আক্রমণ করার জন্য এ রথগুলোই এখন আমাদের একমাত্র সম্বল। সেই রাতে লুক্সর শহরের প্রাচীরের ওপর রানি সেরেনা ক্লিওপেট্রার সাথে বসে ছিলাম আমি। একপাশে আগুন জ্বলছে, তাতে শক্ত পনির গলিয়ে নরম করে খাচ্ছিলাম দুজন। একই আগুনের তাপে গরম করে নিয়েছি এক বোতল লাল মদ, মাঝে মাঝে চুমুক দিচ্ছি সেটাতে।
তার মানে, তোমার মনে হয় আমার মাথায় কিছুটা ছিট আছে? সেরেনাকে প্রশ্ন করলাম আমি।
আমি তো সেটা বলিনি, টাটা, দ্রুত মাথা নাড়ল সেরেনা। আমি বলেছি, আমার ধারণা তুমি একজন বদ্ধ উন্মাদ!
শুধু আমার সিদ্ধান্ত বদল করেছি বলেই এই কথা বলছ তুমি?
না, কথাটা আমি বলছি কারণ একমাত্র কোনো উন্মাদের পক্ষেই মাত্র শ খানেক রথ নিয়ে একটা দুর্ভেদ্য দুর্গের ওপর হামলা চালানোর কথা চিন্তা করা। সম্ভব। বিশেষ করে যখন তার কাছে অবরোধের জন্য প্রয়োজনীয় কিছুই নেই। তোমাকে যে আমার সাথে আসতেই হবে এমন কিন্তু নয়, বললাম আমি।
তুমি যেতে না চাইলে জোর করব না আমি। মরে গেলেও তোমাকে একলা ছেড়ে দেব না আমি, হেসে উঠল সেরেনা। বলা তো যায় না, তুমি সফলও হতে পারো। আর তাহলে আমি জীবনেও নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না।
পরদিন সকালে অন্ধকার থাকতে থাকতেই লুক্সর ছেড়ে রওনা দিলাম আমরা। বিশাল উপত্যকার মুখে পৌঁছতে তিনটে দিন প্রাণপণে ঘোড়া ছোটাতে হলো আমাদের। এই উপত্যকারই অন্য পাশে শুরু হয়েছে লোহিত সাগর, পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলের দিকে এগোতে গেলে যাকে পেরিয়ে যেতে হয়। সাগরের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য প্রাণ ভরে দেখলাম আমরা। এই সাগরের রং আসলে কিছুটা ফ্যাকাশে নীল। পুব পাশের সৈকতগুলো কুচকুচে কালো রঙের, কেন কে জানে। হয়তো এ কারণেই লোকে এই সাগরের নাম দিয়েছে লোহিত সাগর। সাধারণ মানুষের বুদ্ধি যে কতটা নিচু স্তরের হতে পারে তা নিয়ে চিন্তা করলে মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যেতে হয়।