তৃতীয়বারের মতো ডাকবাক্সের কাছে ফিরে গেল সোফি। ডাকপিয়ন মাত্র কিছুক্ষণ আগে দিয়ে গেছে আজকের ডাক। বাক্সের ভেতর হাতড়ে জাংক মেইলের একটা বড়োসড়ো তাড়া, কিছু সাময়িকপত্র আর তার মায়ের কাছে আসা গোটা দুয়েক চিঠি বের করল সোফি। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এক সমুদ্র-সৈকতের ছবিঅলা একটা পোস্টকার্ডও ছিল ওখানে। কার্ডটা ওল্টাল সে। সেটার গায়ে নরওয়ের একটা ডাকটিকেট আর জাতিসংঘ বাহিনীর একটা পোস্টমার্ক। বাবার কাছ থেকে আসেনি তো চিঠিটা? কিন্তু তিনি তো রয়েছেন একেবারেই ভিন্ন একটা জায়গায়, তাই না? তাছাড়া হাতের লেখাটাও তাঁর নয়।
পোস্টকার্ডটা কার নামে এসেছে তাই দেখে সোফির নাড়ির গতি বেড়ে গেল খানিকটা: হিল্ডা মোলার ন্যাগ, প্রযত্নে সোফি অ্যামুন্ডসেন, ৩ ক্লোভার ক্লোজ…। ঠিকানার বাকি অংশে কোনো ভুল নেই। কার্ডটাতে লেখা:
প্রিয় হিল্ডা, শুভ ১৫শ জন্মদিন। আশা করি তুই বুঝতে পারবি, আমি তোকে এমন একটা উপহার দিতে চাই যা তোকে বড় হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। সোফির প্রযত্নে কার্ডটা পাঠানোর জন্যে দুঃখিত। কিন্তু এটাই ছিল সবচেয়ে সহজ পথ। বাবার শুভেচ্ছা রইল।
এক ছুটে বাড়ির ভেতরে, রান্নাঘরে গিয়ে ঢুকল সোফি। তার মনের মধ্যে ঝড় বইছে। কে এই হিল্ডা যার জন্মদিন ওর নিজের জন্মদিনের ঠিক এক মাস আগে?
টেলিফোনের বইটা বের করল সোফি। মেলার নামে অনেক লোক আছে ওখানে, ন্যাগ নামেও আছে বেশ কয়েকজন। কিন্তু গোটা ডিরেক্টরিতে মোলার ন্যাগ নামে কেউ নেই।
রহস্যময় কার্ডটা আরো একবার খুঁটিয়ে দেখল সোফি। মোটেই জাল মনে হচ্ছে না ওটাকে একটা ডাকটিকেট আর পোস্টমার্ক আছে খামটার গায়ে।
জন্মদিনের একটা কার্ড একজন বাবা সোফির নামে পাঠাবেন কেন, যখন সেটা নিশ্চিতভাবেই অন্য জায়গায় যাওয়ার কথা? এ আবার কেমনতর বাবা যিনি তাঁর নিজের মেয়েকে ধোঁকা দেন তার জন্মদিনের কার্ডটা ইচ্ছে করে ভুল ঠিকানায় পাঠিয়ে? এটা কী করে সবচেয়ে সহজ পথ হয়? আর সবচেয়ে বড় কথা, সে কী করে খুঁজে পাবে হিল্ডা নামের এই মেয়েটিকে?
কাজেই সোফিকে এখন আরেকটা সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাতে হচ্ছে। সে তার চিন্তা-ভাবনাগুলোকে গুছিয়ে নেয়ার চেষ্টা করল:
আজ বিকেলে, মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে, তিনটে সমস্যা উপহার দেয়া হয়েছে তাকে। প্রথম সমস্যা হচ্ছে কে তার চিঠির বাক্সে দুটো সাদা খাম রেখেছে। এই খামগুলোর মধ্যে কঠিন যে প্রশ্নগুলো আছে সেটা দ্বিতীয় সমস্যা। আর তৃতীয়টি হচ্ছে, এই হিল্ডা মোলার ন্যাগ কে হতে পারে আর তার জন্মদিনের কার্ড সোফির নামে পাঠানো হলো কেন। সে নিশ্চিত, এই তিনটে সমস্যার মধ্যে একটা যোগাযোগ আছে, তার কারণ, আজকের আগ পর্যন্ত সে নিতান্তই সাদামাটা একটা জীবন কাটিয়েছে।