- বইয়ের নামঃ খাবারচোর
- লেখকের নামঃ শামসুদ্দীন নওয়াব
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ গোয়েন্দা কাহিনী, রোমাঞ্চকর গল্প
খাবারচোর
এক
কিশোর, মুসা আর রবিন বাঘাকে নিয়ে পিছন দিক দিয়ে বেরিয়ে এল। গেটের কাছে যখন ছিল ধূসরচুলো এক কিশোরকে দেখতে পায় ওরা। মুখে ফুটি-ফুটি দাগ। দাঁড়িয়ে রয়েছে।
ও এখানে কী করছে? প্রশ্ন করল রবিন।
শশশ, বলল কিশোর। ছেলেটার নাম জিম কেলি। কিশোরদের পাড়ায় থাকে। ফিফথ গ্রেডে পড়ে-তিন গোয়েন্দার চাইতে এক ক্লাস উপরে।
তোমার কুকুর আছে, আমার নেই, জিম বলল কিশোরকে। ওর কণ্ঠে বেদনা আর ঈর্ষার মিশ্র অনুভূতি। ওকে একটু আদর করতে দেবে?
নিশ্চয়ই।
আহা, আমার যদি একটা কুকুর থাকত তা হলে আর কিছুই চাইতাম না, বলল জিম।
একটা পুষলেই পারো, এত যখন পছন্দ, বলল মুসা।
মা রাজি নয়, বলে বাঘার গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করল জিম। ওকে কটা খেলা শেখাতে পারি? উঠে দাঁড়িয়েছে।
এখন নয়, কিশোর জবাব দেওয়ার আগেই বলে বসল রবিন। আমরা এখন ওর সাথে খেলব।
তা ছাড়া এত ছোট বয়সে খেলা শিখতে পারবে কিনা সন্দেহ, বলল কিশোর। কদিন পরে এসো, কেমন?…চকোলেট খাবে? জিমকে জিজ্ঞেস করে বন্ধুদের মধ্যে চকোলেট বিলি করল ও।
না, চকোলেটে আমার অ্যালার্জি আছে, বলল জিম।
তুমি তা হলে পরে এসো, বলল রবিন।
ঘাড় কাত করে সায় জানাল জিম। ধীর পায়ে চলে গেল।
ঘুরে দাঁড়াল কিলোর।
বাঘা কোথায়? জিজ্ঞেস করল। সিঁড়ির তলা থেকে বাঘা সহসা দৌড়ে এল ওর দিকে।
ব্যাকইয়ার্ডে বাঘাকে নিয়ে এল তিন বন্ধু। পরের আধঘণ্টা ওর সঙ্গে খেলা করল ওরা। একটা কাঠি চিবাল বাঘা। গোল হয়ে চক্কর কেটে দৌড়ে বেড়াল।
এবার কুকুরছানাটকে কোলে তুলে নিল কিশোর।
কিশোর! ড্রাইভওয়ে থেকে এসময় শাণিত এক কণ্ঠ ভেসে এল।
কিশোর মুখ তুলে চেয়ে দেখে মেরি চাচী কোমরে দুহাত রেখে, দাঁড়িয়ে। ভ্রূ কুঁচকানো।
তোরা কি মাফিনগুলো খেয়েছিস? জানতে চাইল।
তো, মাথা নেড়ে বলল কিশোর।
সত্যি করে বল, রেগে গেছে মেরি চাচী।
আমরা খাইনি, জানাল রবিন।
তা হলে কে খেল? প্রশ্ন করল মেরি চাচী। তিনটে মাফিন নেই!
দুই
মুখ লাল হয়ে গেল কিশোরের। চাচী কি খাবার চুরির দায় চাপাচ্ছে ওর উপরে?
আমরা ওগুলো খাইনি, বলতে গিয়ে প্রায় ককিয়ে উঠল কিশোর।
কেউ একজন নিয়েছে, বলল চাচী। বাঘা নিলেও আমি অবাক হব না।
না, জোর গলায় জানাল কিশোর। ও সারাক্ষণ আমাদের সাথেই ছিল।
খাইছে, কিন্তু ও তো একবার পালিয়ে গিয়ে সিঁড়ির তলায় লুকিয়ে ছিল, মনে নেই? বলল মুসা।
দেখলি? ও দরজা ঠেলে ঢুকে মাফিনগুলো তো খেয়েছেই কাগজের কাপগুলোও রাখেনি, বলে উঠল মেরি চাচী।
না! চেঁচিয়ে উঠল কিশোর।
ছানাদেরকে সব সময় চোখে চোখে রাখতে হয়, মৃদু তিরস্কার করল মেরি চাচী। এখন ও হয়তো অসুস্থ হয়ে পড়বে। তোকে আগেই বলে দেয়া উচিত ছিল-চকোলেট কুকুরছানাদের জন্যে ভাল নয়।
ভিতরে শশব্যস্তে ঢুকে পড়ল মেরি চাচী।
মনটা খারাপ হয়ে গেল কিশোরের। মেরি চাচী প্রথমে তিন গোয়েন্দাকে দোষী ভাবল, তারপর অপরাধী ঠাওরাল বাঘাকে!
চাচীর মাফিন কে নিল খুঁজে বের করতে হবে, বলল কিশোর।
রহস্য পাওয়া গেছে। সুপার্ব! বলে উঠল মুসা।
এসো, আমরা কু খুঁজি, বলল কিশোর।
বাঘার লাল কলারে একটা লাল ফিতে বাঁধল ও। এবার বাঘাকে নিয়ে ড্রাইভওয়ে ধরে হনহনিয়ে কিচেনের দরজার উদ্দেশে এগোল। ওকে অনুসরণ করল মুসা আর রবিন। স্ক্রীন ডোরের কাছে হঠাত্র থমকে দাঁড়াল কিলোর।
খাইছে, কী ব্যাপার! আরও মাফিন খোয়া গেছে? মুসার প্রশ্ন।
না বলে তর্জনী তাক করল কিশোর। দেখো, কু। বাঘার ফিতেটা রবিনের হাতে দিল ও। এবার ঝুঁকে পড়ল ভাল করে দেখার জন্য। স্ক্রীন ডোরের কিনারে কিছু একটা আটকে রয়েছে।
কী ওটা? কাছিয়ে এল মুসা।
জুতোর ফিতে, বলল কিশোর। সূত্রটা দরজার কাঠামো থেকে খুলে তুলে ধরল।
ফিতেটায় সাদা-কালো ডোরা। ছইঞ্চি লম্বা ফিতেটা ময়লা আর। ছেঁড়া।
হুম, এটা বোধহয় চোরের জুতোর, বলল কিশোর।
কী করে বুঝলে? রবিন জানতে চাইল।
কারণ আমার এ ধরনের কোন ফিতে নেই। চাচীরও নেই। এমনকী চাচারও, বলল কিশোর।
আচ্ছা, এটা জিমের নয় তো! প্রশ্ন করল মুসা। মাফিনগুলো হয়তো ও-ই নিয়েছে।
হতে পারে, বলল কিশোর। তবে আমার তা মনে হয় না। মনে নেই ও বলেছিল চকোলেটে ওর অ্যালার্জি আছে? মনে হয় না ও নিয়েছে।
কিচেনের চারধারে চকিতে নজর বুলিয়ে নিল কিশোর। ওখানে আর কোন সূত্র পেল না। তড়িঘড়ি বেরিয়ে এল বাইরে।
গুঁড়ো পাই কিনা খুঁজি এসো, বলল ও।
এই যে, একটা গুঁড়ো! চেঁচিয়ে উঠল মুসা। সাইডওয়কের দিকে ইশারা করল।
কোথায়? জিজ্ঞেস করল রবিন। বাঘার ফিতে চেপে দৌড়ে এল ড্রাইভওয়ে ধরে।
এসময় বাঘা জোরে টান দিল ফিতেয়। রবিনের হাত থেকে ছুটে দৌড়ে চলে এল কিশোরের কাছে। মাটি খুঁকে চাটতে লাগল গুঁড়ো।
খাইছে, ও কু সাবড়ে দিয়েছে, বলে উঠল মুসা।
রবিন, তোমার না ওকে ধরে থাকার কথা, বলল কিশোর। ধরছ না কেন?
কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। বাঘা কিশোরের পায়ের তলা দিয়ে তীরবেগে ছুটে চলে গেল।
তিন
ফিরে আয় বলছি! ডাক ছাড়ল কিশোর। বাঘার পিছু ধাওয়া করল।