- বইয়ের নামঃ সাগরে শঙ্কা
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী, রোমাঞ্চকর গল্প, অ্যাডভেঞ্চার
সাগরে শঙ্কা
এক
তুমি শিওর, গলাটা আঙ্কেল ডিকের? ভুরুজোড়া কুঁচকে জিজ্ঞেস করল মুসা।
না, জবাব দিল কিশোর। শিওর না। বলছি তো, মুখে রুমাল চেপে রেখেছিল লোকটা। ভালো করে বুঝে ওঠার আগেই, ওই কটা কথা বলে কেটে দিল লাইন।
আশ্চর্য! বলল জিনা।
সত্যি, খুবই রহস্যময় ব্যাপার! মন্তব্য করল রবিন। ঠিক কখন? বাসার, না সরাসরি হেডকোয়ার্টারের ফোনে?
এই তো, সন্ধের একটু আগে। ইয়ার্ডে ছিলাম। ওঅর্কশপের লাল বাতিটা জ্বলছে-নিভছে দেখে দৌড়ে এসে রিসিভার তুলতেই শুধু বলল, সহজ তিন দিয়ে আসব। রাত নয়টা। হেড-কোয়ার্টারে সবাই হাজির থাকবে। জরুরি!
তুমি কিছুই বলার সুযোগ পাওনি?
আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম: কে বলছেন? কিন্তু কোনও উত্তর না দিয়ে রেখে দিল রিসিভার। তখন তোমাদেরকে খবর দিলাম।
শুঁটকি টেরির শয়তানি না তো?
নাহ! এপাশ-ওপাশ মাথা নাড়ল কিশোর। বড় মানুষ।
তোমার কি মনে হয় সত্যি-সত্যিই কোনও বিপদে পড়েছেন আঙ্কেল? আবার জানতে চাইল মুসা।
আমার সেই রকমই ধারণা, বলল কিশোর। গত ছয়টা মাস একবারও যোগাযোগ করেননি, একটা টেলিফোনও না। এমন তো সাধারণত হয় না। শেষবার একটু আভাস পেয়েছিলাম, ভয়ঙ্কর একটা দস্যুদলের পিছনে লেগে বিপদে আছেন। উল্টে তারাই নাকি ধাওয়া শুরু করেছিল তাকে। কিন্তু এর বেশি আর কিছু জানাতে রাজি হলেন না।
মনে হচ্ছে আঙ্কেল ডিকই, বলল রবিন। উনি ছাড়া আমাদের সহজ তিনের কথা আর কেউ জানবে কী করে?
ভাগ্যিস আমাদের প্রোগ্রামটাবাতিল হয়ে গেছে, বলল জিনা। নইলে আজ এসে কাউকে পেতেন না আঙ্কেল ডিক।
বিখ্যাত পক্ষিবিশারদ ডক্টর জন গার্ডনারের সঙ্গে এবারের ছুটিতে প্রশান্ত মহাসাগরের চ্যানেল আয়ল্যান্ডস ন্যাশনাল পার্কে এক্সকারশনে যাওয়ার কথা। ছিল ওদের। জিনার বাবা ডক্টর জোনাথন পারকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। ওরা সোৎসাহে ক্যামেরা-বিনকিউলার সব ঝেড়ে-মুছে নিয়ে গুছিয়ে ফেলেছিল ব্যাগ। কিন্তু আজ সকালে খবর পাওয়া গেল ভণ্ডুল হয়ে গেছে সে-প্রোগ্রাম। ডক্টর গার্ডনার গতকাল সন্ধ্যায় গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করে এখন হাসপাতালে।
অপেক্ষার প্রহর আর কাটতে চায় না।
পেরিস্কোপটা তাক করে রেখেছে মুসা গেটের দিকে, মাঝে মাঝেই উঠে গিয়ে দেখে আসছে ওদের সবার প্রিয় আঙ্কেল ডিক এলেন কি না। নটা বাজার ঠিক একমিনিট যখন বাকি, হাঁসফাঁস আওয়াজ পেল সবাই। না, সহজ তিনের দিকটায় না; দুই সুড়ঙ্গের মুখে।
চমকে সবাই ফিরল দুই সুড়ঙ্গের দিকে। গ্যালভানাইযড পাইপের মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল চাপদাড়ি আর ইয়া বড় বাবরি চুলওয়ালা তাগড়া এক লোক।
লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল ওরা সবাই।
ছিহ্! আঙ্কেল ডিকের গলায় কথা বলে উঠল ষণ্ডা লোকটা। হামাগুড়ি দিতে দিতে কনুই দুটো গেছে আমার! মাঝখানে এসে তো মনে হচ্ছিল দম আটকে মারাই যাব বুঝি! সবার মুখের দিকে চেয়ে ওদের হতভম্ব ভাব দেখে বলল, এ-রকম হাঁ করে রইলে কেন সবাই? ও, আমাকে চেনা যাচ্ছে না বুঝি?
মাথার চুল ধরে টান দিতেই বেরিয়ে পড়ল বিরাট একখানা চকচকে টাক। দাড়িতে টান পড়তে খসে এল সেটাও। তারপর একটা হাত চলে গেল গলার কাছে-চড়চড় করে উঠে এল পাতলা রাবারের মুখোশ। একগাল হাসলেন। ডিটেকটিভ ইন্সপেক্টর ডিক কার্টার।
কী ব্যাপার, আঙ্কেল? একটা চেয়ার এগিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল। কিশোর। এ-রকম লুকোচুরি কীজন্যে?
বসের হুকুম, বললেন ডিক কার্টার। তোমাকে বোধহয় বলেছিলাম, একদল দুষ্কৃতকারীর পেছনে কাজ করছিলাম। অত্যন্ত শক্তিশালী, ভয়ঙ্কর একটা দল। কী করে যেন টের পেয়ে গিয়ে এখন ওরাই আমার পেছনে ধাওয়া করতে লেগেছে। সমস্ত তথ্য-প্রমাণ কেড়ে নিয়ে স্রেফ খুন করে ফেলতে চায়। আমাকে হারিয়ে যেতে বলা হয়েছে, গায়েব হয়ে যেতে বলা হয়েছে পৃথিবীর বুক থেকে। তাই যাব, তবে যাওয়ার আগে তোমাদের চারজনের কাছে চারটে জিনিস দিয়ে যাব। এগুলো যত্ন করে লুকিয়ে রাখতে হবে। আমি যদি আগামী ছয় মাসের মধ্যে ফেরত না নিই তা হলে কাউকে কিছু না বলে সব নষ্ট করে। ফেলতে হবে। পারবে?
খুবই সহজ কাজ, বলল কিশোর। আপনি নিজে কোথায় লুকাবেন বলে। ভাবছেন? দেশেই, না কি বাইরে কোথাও?
এখনও ঠিক করিনি। ভাবছি…।
এক কাজ করেন না, হঠাৎ করে বলে উঠল রবিন, চ্যানেল আয়ল্যান্ডস ন্যাশনাল পার্কে গিয়ে ক্যাম্প করলেই পারেন-ওখানে কেউ খুঁজে পাবে না আপনাকে। একদম বিরান এলাকা। আমাদেরও যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ডক্টর গার্ডনার হঠাৎ গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করে এখন হাসপাতালে। যেন হঠাৎ মাথায় খেলেছে কথাটা, এমনি ভঙ্গিতে বলে উঠল, আরে! আপনিই তো অরনিথলজিস্টের ভান করতে পারেন। পারেন না? যেন এক্সকারশনে নিয়ে যাচ্ছেন কয়েকজন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীকে?
আঙ্কেল! মুসার কণ্ঠের জরুরি ভাব খট করে কানে লাগল সবার। কে একজন চোরের মত ঢুকছে গেট দিয়ে। দেখেন তো চিনতে পারেন কি না।
চট করে পেরিস্কোপের কাছে চলে গেলেন ডিক কার্টার। এক নজর দেখেই দম আটকে ফেললেন। কিছুক্ষণ দেখবার পর চাপা গলায় বললেন, বাব্বা! এখান পর্যন্ত পৌঁছে গেছে!