হ্যাঁ, ডিউক অফ অরলিয়ন্সের দেয়া নাচের আসরে।
কোন্ নাচের আসর?
কেন, গতকালেরটা? অনেকদিন আগের কথা তো নয়।
ওহ, গতকালেরটা? তোমার রূপে মুগ্ধ হচ্ছিলাম।
তাই বুঝি, কিন্তু আমি তো সেখানে ছিলাম না।
তোমার রূপে মুগ্ধ হওয়ার জন্য তোমার থাকাটা কি জরুরি? মনের চোখে তোমাকে দেখে কি আমি মুগ্ধ হতে পারি না? তুলনা করতে গেলে, না গিয়েও তো তুমি জিতে গেছ।
সেই তুলনার সর্বোচ্চ চূড়াটা কী, মাদাম দু বোনোইয়ের সাথে চারবার নাচা? চড়া সাজগোজ করা কালো মেয়েগুলো দেখতে খুব সুন্দর, তাই না?
ওই চারটা নাচে আমরা কী নিয়ে কথা বলেছি জানো?
তাহলে স্বীকার করছ চারবার নেচ্ছে?
তুমি যখন বলছ তখন কোন সন্দেহ নেই এটা সত্যি।
এটা কি ভাল উত্তর হলো?
আর কী উত্তর দেব? এমন সুন্দর একটা মুখের কথা কেউ অস্বীকার করতে পারে? এই মুখ আমার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করলেও, আমার পক্ষে সম্ভব না।
কথাটা বলেই থিবল্ট কাউন্টেসের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। আর তখনই দরজা ঠেলে ঢুকল লিযেট।
মঁসিয়ে, মঁসিয়ে, নিজেকে বাঁচান! লর্ড কাউন্ট চলে এসেছেন।
কাউন্টেস বিস্মিত হলো, কাউন্ট!
সাথে ওঁর শিকারি লেস্টকও আছে।
অসম্ভব!
বিশ্বাস করুন, মাদাম; খামোজি, নিজের চোখে দেখেছে। ভয়ে ও ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।
তারমানে শিকারের ব্যাপারটা ভান ছিল। আমাকে ফাঁদে ফেলার জন্য?
কে জানে, মাদাম? পুরুষেরা এত প্রবঞ্চনা করতে পারে!
এখন কী করা যায়?
আবার সৌভাগ্য হাতের মুঠোয় এসে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে দেখে ক্ষেপে গেল থিবল্ট। কাউন্টের জন্য অপেক্ষা করি, তারপর ওকে মেরে ফেলব!
মেরে ফেলবে, কাউন্টকে? রাউল, তুমি কি পাগল হয়েছ? না না, তুমি পালাও, নিজেকে বাঁচাও। লিযেটা ব্যারনকে আমার ড্রেসিংরুম দিয়ে বাইরে নিয়ে যাও। অনিচ্ছা সত্ত্বেও লিফেটের হাত ধরে নিরাপদে বেরিয়ে এল থিবল্ট। অল্পের জন্য রক্ষা পেল ও। অন্যদিকে কাউন্টেস তার শোবার ঘরে ঢুকে পড়ল। অনেক ঘর ঘুরে যে সিঁড়ি দিয়ে প্রাসাদে উঠেছিল সেখানে চলে এল থিবল্ট। দোতলার অফিসের মতো একটা ঘরের জানালার কাছে নিয়ে গেল ওকে লিযেট। লাফ দিয়ে নিচে নামল থিবল্ট।
ঘোড়া কোথায় আছে তা তো জানেনই। ভোপাফো না পৌঁছানো পর্যন্ত থামবেন না।
আস্তাবলের কাছে এসে ঘোড়ার আওয়াজ পেল থিবল্ট। জটার পিঠে উঠে বসল ও। কিন্তু ঘোড়াটা খোঁড়াতে লাগল। ও তাড়া দিতে সোজা হওয়ার চেষ্টা করেও কাত হয়ে পড়ে গেল ওটা। কিন্তু ও নেমে যেতেই ঘোড়াটা আবার দাঁড়াতে পারল। কোন সন্দেহ নেই, ব্যারন যাতে পালাতে না পারে তাই ঘোড়ার পা খোঁড়া করে দিয়েছে মঁসিয়ে কোঁত দু মন-গুবে। থিবল্ট প্রতিজ্ঞা করল, যদি আপনার সাথে কখনও দেখা হয়, যেভাবে এই অসহায় প্রাণীটাকে খোঁড়া করেছেন, সেভাবে আপনাকেও খোঁড়া করে দেব আমি!
যে পথে ঢুকেছিল সেদিক দিয়েই বেরিয়ে এল ও। আর বেরিয়েই দেখল কোঁত দু মন-গুবে ওর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। কাউন্টও ওকে রাউল দু ভোপাফো বলে চিনতে পারল।
তলোয়ার হাতে নাও, ব্যারন! আহবান জানাল কাউন্ট। প্রতিশোধের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ক্ষিপ্ত থিবল্টও হাতে শিকারের ছুরি তুলে নিল। শুরু হলো অস্ত্রের ঝনঝনানি।
থিবল্ট তলোয়ারবাজি জানে না। কিন্তু দেখা গেল দিব্যি তলোয়ার চালাতে পারছে ও। এবং বেশ ভালই লড়ছে।
দাঁতে দাঁত চেপে কাউন্ট বলল, শুনেছিলাম, সেইন্ট-জর্জেসকে ধুলোয় গড়াগড়ি খাইয়েছিলে তুমি!
জর্জেস কে থিবল্ট জানে না। তবে এই মুহূর্তে নিজের কব্জির শক্তি আর ক্ষিপ্রতা সম্বন্ধে ও ওয়াকিবহাল। স্বয়ং শয়তানের মুখোমুখি দাঁড়াতে পারবে। সুযোগমতো ফাঁক পেয়ে কাউন্টের কাঁধে ছুরি বিধিয়ে দিল ও। কাঁধ চেপে ধরে তলোয়ার ফেলে দিল কাউন্ট। হাঁটু মুড়ে বসে চিৎকার করে উঠল, লেস্টক, বচাও!
তখন ছুরিটা ঢুকিয়ে রেখে পালিয়ে গেলেই ভাল করত থিবল্ট। কিন্তু অবলা খোঁড়া ঘোড়াটার কথা মনে পড়ে গেল ওর। মনে পড়ে গেল প্রতিশোধের প্রতিজ্ঞার কথা। অস্ত্র ধরা হাতটা কাউন্টের ভাঁজ করা হাঁটুর নিচে ঢুকিয়ে টান দিল ও। ব্যথায় আর্ত-চিৎকার ছাড়ল কাউন্ট। কিন্তু উঠে দাঁড়াতেই থিবল্টও পিঠে তীব্র ব্যথার অস্তিত্ব টের পেল। বুকে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা অনুভব করল। ওর বুক ভেদ করে একটা অস্ত্রের মাথা বেরিয়ে এসেছে। প্রচুর রক্ত বেরোচ্ছে। তারপর আর কিছু মনে নেই। মনিবের ডাক শুনে লেস্টক ছুটে এসেছিল। থিবকে উঠে দাঁড়াতে দেখে ওর পিঠে শিকারের ছুরি বসিয়ে দিয়েছে ভৃত্য।
অষ্টাদশ অধ্যায় – মৃত্যু এবং পুনরুত্থান
সকালের ঠাণ্ডা বাতাসে জ্ঞান ফেরার পর প্রথমে কিছুই মনে পড়ল না থিবল্টের। শুধু অনুভব করল তীব্র ব্যথা, আর দেখল মাটিতে প্রচুর রক্ত। দেয়ালের ফাঁকটা চোখে পড়ল তারপর ধীরে ধীরে আগের ঘটনা সব মনে পড়ে গেল। কাউন্টকে আশেপাশে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। কোন সন্দেহ নেই লেস্টক তার মনিবকে নিয়ে গেছে। ওকে ফেলে রেখে গেছে মরার জন্য। চাইলে একটা ইচছার জোরে ওদের শেষ করে দিতে পারে থিবল্ট। কিন্তু করল না। কারণ যা-ই করে থাকুক, সেটা ওরা থিবল্টের সাথে করেনি, করেছে রাউলের সাথে।
ওর হাতে নটা পর্যন্ত সময় আছে। কিন্তু ততক্ষণ টিকবে তত? তার আগেই যদি ও মারা যায়, তাহলে আসলে কে মারা যাবে? ও, না ব্যারন? সম্ভবত ব্যারনের শরীর আর ওর আত্মা মারা যাবে। এই দুর্ভাগ্যের জন্য আসলে ও-ই দায়ী। চব্বিশ ঘণ্টার জন্য পাল্টাপাল্টির আগের ইচ্ছাটার পরিণাম ছিল কাউন্টের হাতে ব্যারনের ধরা পড়া এবং দ্বন্দ্বযুদ্ধ।