- বইয়ের নামঃ স্বর্গদ্বীপ
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রোমাঞ্চকর গল্প
স্বর্গদ্বীপ
০১.
উজ্জ্বল নিওন আলোয় লেখা ওয়েলকাম টু নর্থ ক্যারোলিনা সাইনটা যখন চোখে পড়ল ওদের, মধ্যরাত পেরিয়ে গেছে তখন।
খিদেয় পেট জ্বলে যাচ্ছে আমার, ঘোষণা করল মুসা। দুই হাত স্টিয়ারিঙে। চোখ সামনের রাস্তায় নিবদ্ধ। না খেয়ে দুর্বল হয়ে পড়লে জিনার কোন উপকার করতে পারব না।
ম্যাপ দেখে রবিন জানাল, সামনে আর মাইল দশেক গেলেই খাবার পাওয়া যাবে।
দারুণ! বলল উচ্ছ্বসিত মুসা। সারাদিনের মধ্যে সবচেয়ে ভাল খবরটা দিলে। গাড়িটারও পেট্রল দরকার। আমাদেরও স্ট্রেল দরকার।
কটা বাজে? হাই তুলতে তুলতে জিজ্ঞেস করল কিশোর। দুহাত টান টান করে ছড়িয়ে দিয়ে আড়মোড়া ভাঙল।
নাস্তার সময় হয়ে গেছে, মুসা জানাল। ঘুমিয়ে গেছিলে তো, তাই জানো না। তোমাদের দুজনকেই একটা সংবাদ দিই। ভার্জিনিয়া থেকেই আমাদের অনুসরণ করে আসছে একটা ট্রাক।
নাম্বার দেখেছ? সতর্ক হয়ে উঠল কিশোর। মুহূর্তে ঘুম উধাও হয়ে গেল চোখ থেকে।
না, রিয়ারভিউ মিররের দিকে তাকিয়ে জবাব দিল মুসা। বেশি দূরে। দেখা যাচ্ছে না।
মাথাটা সামান্য উঁচু করে সাবধানে তাকাল পেছনে বসা রবিন। আমিও কিছু দেখতে পাচ্ছি না। হতে পারে আমাদের মতই সে-ও ফ্লোরিডা থেকেই আসছে। কাকতালীয় ব্যাপার।
উঁহু, মুসা মানতে চাইল না। আমি গতি বাড়ালেই সে-ও বাড়ায়, কমালে কমায়। অনুসরণ যদি না করে থাকে, তাহলে কি খেলছে আমাদের সঙ্গে?
এসিট র্যাম্পের শেষ মাথায় এসে একটা গ্যাস স্টেশনে গাড়ি ঢুকিয়ে দিল মুসা। পাম্পের লাগোয়া একটা বড় রেস্টুরেন্ট। খামারবাড়ির মত চেহারা। গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে তেল ভরতে লাগল কিশোর। মুসা আর রবিন নজর রাখল রাস্তার দিকে।
ওই যে, মুসা বলল।
গ্যাস স্টেশনের পাশ দিয়ে দ্রুত সরে গেল ট্রাকটা। উজ্জ্বল আলোয় স্পষ্ট দেখা গেল ওটাকে।
লোক তো মনে হলো দুজন, তাই না? কিশোর বলল।
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকাল মুসা। কিন্তু গতি তো কমাল না একবিন্দু। তারমানে আমারই ভুল ছিল। আমাদের অনুসরণ করেনি ওরা।
তেল ভরা শেষ করে রেস্টুরেন্টের সামনে এনে গাড়িটা রাখল ওরা। তারপর রেস্টুরেন্টে ঢুকল। একটা টেবিল বেছে নিয়ে বসে পড়ল। রাত দুটো বাজে। কিন্তু এখনও টিন-এজ ওয়েইট্রেসের মুখের হাসি মলিন হয়নি। হাসিমুখে স্বাগত জানাল ওদের। কথায় দক্ষিণাঞ্চলীয় টান। একটা করে মেন্যু তুলে দিল প্রত্যেকের হাতে।
ডিনার পাওয়া যাবে এত রাতে? জিজ্ঞেস করল মুসা।
যাবে, হাসিটা উজ্জ্বল হলো আরও। দিনে-রাতে যখন খুশি যে কোন খাবার চাও, দিতে পারব আমরা।
তাই নাকি! খুশিতে দাঁত বেরিয়ে পড়ল মুসার।
খাবারের অর্ডার দেয়া হলো। এনে দিল ওয়েইট্রেস। নীরবে খেয়ে চলল ওরা। রাত জেগে, একটানা গাড়িতে বসে থেকে ক্লান্ত। কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। খাওয়া শেষ করে বিল দিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এল।
ভাবছি, গাড়ির দিকে এগোতে এগোতে বলল কিশোর, আমাদের ট্রাকের বন্ধুরা না এসে হাজির হয় আবার এখন।
চলেই তো গেল, জবাব দিল রবিন। আর আসবে কি?
সে আর মুসা আগে আগে হাঁটছে।
খাইছে! বলে হঠাৎ গুঙিয়ে উঠল মুসা।
দুজনে তাকিয়ে আছে ভ্যানটার দিকে।
কি দেখে থমকাল ওরা, পেছনে থাকায় বুঝতে পারল না প্রথমে কিশোর। তারপর লক্ষ করল, স্বাভাবিকের তুলনায় নিচু হয়ে আছে গাড়িটার ছাত। এর কারণ, চার চাকার রিমের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এখন ওটা। চারটে টায়ারই কেটে ফালা ফালা করে দেয়া হয়েছে।
কাটা রবারগুলোর দিকে দীর্ঘ একটা মুহূর্ত স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল মুসা। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলল, এরজন্যে পস্তাতে হবে ওদের!
পস্তানো তো পরে, কিশোর বলল। আগে ওদের নাগাল তো পেতে হবে। তার জন্যে গাড়িটা সচল করা দরকার। রাস্তার ধারে চব্বিশ ঘণ্টা খোলা চাকা মেরামতের দোকান দেখেছি। দেখি, চারটে টায়ারের জন্যে কি পরিমাণ খসায় পকেট থেকে।
চার নয়, পঁচটা, শুধরে দিল মুসা। বাড়তি চাকাটাও খতম করে দিয়ে গেছে। ওই দেখো। ভ্যানের পেছনে দরজার ফ্রেমে আটকে রাখা চাকাটা দেখাল সে। কিন্তু কে করল শয়তানিটা?
রাত দুপুরে রসিকতা করতে আসেনি কেউ, কিশোর বলল। ইচ্ছে করে করেছে। ভয় দেখিয়ে আমাদের রকি বীচে ফেরত পাঠানোর জন্যে।
সামান্য কয়খান চাকা কেটে আমাদের ফেরত পাঠাবে? ভুরু নাচাল রবিন। জিনাকে না নিয়ে ফেরত যাচ্ছি না আমরা, এটা ওদের বুঝিয়ে দেয়া দরকার।
সময় হলে আপনি বুঝবে, কিশোর বলল।
শতিনেক ডলার আর পঁয়তাল্লিশটা মিনিট গচ্চা দিয়ে আবার এসে রাস্তায় নামল ওরা। ভোর রাতের নীরবতা। ঘুমন্ত পরিবেশ। কিন্তু ওদের চোখে ঘুম নেই।
কখন যে গিয়ে পৌঁছাতে পারব, নিজেকেই যেন প্রশ্নটা করল মুসা।
ম্যাপ দেখে বলল রবিন, আরও তিনশো মাইল গেলে পাওয়া যাবে ফ্লোরিডার সীমান্ত।
তারপর? ফ্লোরিডা থেকে গাল আইল্যান্ড?
আজ রাত নটা-দশটা নাগাদ পৌঁছে যাব, রবিন বলল। বর্ণনা পড়ে মনে হচ্ছে দারুণ হবে জায়গাটা। গাল আইল্যান্ড, লোকসংখ্যা পাঁচশো সাঁইত্রিশ, গাড়িটা যেখান থেকে ভাড়া নিয়েছে, তারা একটা ছোট বই দিয়েছে। তথ্যগুলো লেখা আছে তাতে। ফ্লোরিডার দক্ষিণ পশ্চিম উপকূল থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের পথ, সারাসোটা আর নেপসের মাঝামাঝি। বোটে করে যাওয়া যায়, আবার গাড়ি নিয়েও যাওয়া যায়। গাড়িতে করে যেতে হলে সীভিউ থেকে ফ্ল্যামিঙ্গো পাসের ভেতর দিয়ে আইল্যান্ড কজওয়ে পেরিয়ে যেতে হবে। দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে চমৎকার একটা সাদা বালির সৈকত আছে…।