- বইয়ের নামঃ দ্য কর্সিকান ব্রাদার্স
- লেখকের নামঃ আলেকজান্ডার ডুমা
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, গোয়েন্দা কাহিনী
দ্য কর্সিকান ব্রাদার্স
১. কর্সিকা ভ্রমণ
১.
১৮৪১ সাল। মার্চ মাসের শুরু। কর্সিকা ভ্রমণে আমি বেরিয়ে পড়লাম। ছবির মতোই সুন্দর দেশ কর্সিকা। এ দেশে পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো অনেক কিছুই আছে।
কর্সিকা যেতে হলে ঠুলো থেকে জাহাজে চাপবেন। আজাইচো পৌঁছে যাবেন বিশ ঘণ্টার মধ্যে, বাস্তিয়ায় পরের দিন।
বাস্তিয়ায় পৌঁছে চলাচলের সুবিধার্থে একশো ফ্রা খরচ করে ঘোড়া কিনতে পারেন। আবার ঘোড়া ভাড়াও করতে পারেন। পাঁচ ফ্রা ভাড়া প্রতিদিন। দাম কম মনে হলেও ঘোড়াগুলো ফেলে দেবার মতো নয়। দুর্গম পাহাড় বা নড়বড়ে সেতু, কোনো কিছুই ওই ঘোড়াদের অজানা নয়। আরোহীরা নিশ্চিন্তে ওদের পিঠে চাপতে পারেন। তাদের পিঠে চাপলে আরোহীদের আর অন্যকিছু করার দরকার নেই। রাশ আলগা করে, চোখ বুজে থাকলেই হলো। ভয়ডর গ্রাহ্য না করে বাহন আপনাকে ঠিক পৌঁছে দেবে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। আর শক্তিশালী ঘোড়াগুলো টানা পঁয়তাল্লিশ মাইল চলতে পারে কোনো রকম খাবার ছাড়াই।
যাবার পথে চোখে পড়বে কোনো ভাঙা দুর্গ, মনে চাইলে ঘোড়া থামিয়ে কিছুক্ষণের জন্যে ঘুরে আসতে পারেন দুর্গ থেকে। অথবা মন চাইলে দুর্গের বাইরের ছবিও আঁকতে পারেন। ঘোড়ার জন্য দুশ্চিন্তা করতে হবে না। ওটা ছাড়া পেলেও পালিয়ে যাবে না। আশপাশেই ঘুরবে। ঘাসটাস পেলে খাবে, নয়তো চিবোবে ঝোঁপঝাড়ের পাতা, আর তাও না মিললে পাথরের শ্যাওলা চেটেই খুশি সে।
পথে যেতে যেতে রাতের আঁধার ঘনিয়ে এলেও ভয় নেই। দুশ্চিন্তা করতে হবে না রাত কাটাবার। কারণ খুবই অতিথিপরায়ণ কর্সিকার মানুষ। যে কোনো গ্রামের যে কোনো বাড়িতে গিয়ে রাত কাটানোর জন্য আশ্রয় চাইলে পাবেনই। আপনার যে বাড়িটা পছন্দ হয় সে বাড়ির সামনে নেমে কড়া নাড়লেই হলো, আদর অভ্যর্থনা করে গৃহস্বামী নিয়ে যাবে ঘরে। খাবার কিছু থাকলে সেটুকু অতিথিকে দিয়ে আপ্যায়িত করবে। আর একটি মাত্র বিছানা থাকলে তাতে শোবার বন্দোবস্ত করে দেবে। পরের দিন অতিথিকে ঘোড়ায় তুলে দেয়ার সময় বিনীত ভঙ্গিতে বলবে, ‘আমার বাড়িতে এসে আমাকে ধন্য করে গেলেন। এ অনুগ্রহ মনে রাখব আমি।’
ভুলেও আতিথ্যের বিনিময়ে টাকা দিতে যাবেন না। গৃহস্থ খুবই অপমান বোধ করবে তাহলে, মনে চাইলে বাড়ির চাকরানীকে একটা রঙিন রুমাল দিতে পারেন, সে সালাম করবে ওটা মাথায় বেঁধে। যদি চাকর থাকে তাকে চাকু বা ভেজোনি দিতে পারেন। শত্রু ঘায়েল করতে কাজে লাগবে।
চাকর চাকরানীকে উপহার দেয়ার আগে একটা ব্যাপার জেনে নেয়া দরকার–গৃহকর্তার সাথে ওদের কোনোরকম আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে কি না। যদি থাকে উপহার দেয়া চলবে না।
কর্সিকায় ধনী আত্মীয়ের কাছে গরিব আত্মীয়রা এসে আশ্রয় নেয়। তবুও গলগ্রহ হয়ে থাকে না। ঘর সংসারের কাজ করে দেয়। বিনিময়ে থাকা-খাওয়া ছাড়াও পারিশ্রমিক কিছু পায়। কিন্তু কারও কাছ থেকে বকশিস নেবে না। কাজেই বকশিস দেয়া যাবে না ওদেরকে।
চাকরের কাজ করলেও আত্মীয়রা কখনও কাজে ফাঁকি দেয় না। ফরাসি দেশ নয় কর্সিকা দেশটা, যদিও দুটো দেশই আজ রাজনীতি সূত্রে বর্তমানে এক সাথে গাঁথা।
পথ চলার কথা বলছিলাম। পথে চোর ডাকাতের কোনও ভয় নেই। ঘোড়ার জিনেই সোনার মোহর ঝুলিয়ে নিয়ে যেতে পারেন আজাইচো থেকে বাস্তিয়া পর্যন্ত। সম্পূর্ণ দ্বীপ এলাকা ঘুরতে পারেন নিশ্চিন্তে। শুধু খেয়াল রাখতে হবে দ্বীপের বাসিন্দা কারো সাথে আপনার বংশগত বিবাদ না থাকে।
যদি সেটা থেকেই থাকে, আপনি সেডাকো থেকে ওশিয়ানা এ পথটুকুও নিরাপদে চলতে পারবেন না। যদিও মাত্র ছয় মাইল এর দূরত্ব।
আমার কর্সিকা ভ্রমণের কথাই এবার বলি। মার্চ মাসের শুরু। আমি একা বন্ধু সারাদিন রোমেই থেকে গেছে।
এলবা থেকে আসছি আমি। একটা ঘোড়া কিনেছি বাস্তিয়া থেকে নির্দিষ্ট দামে, কোটে, আজাইচো দেখে এগিয়ে যাচ্ছি সার্টেন অঞ্চল দিয়ে। এবার সুন্না কারো যাব আমি।
সার্টেন থেকে মাত্র ত্রিশ মাইল দূরত্ব সুন্না কারোর। দ্বীপের মধ্য দিয়েও পাহাড়গুলোর মাঝখান দিয়ে সোজা যাওয়া গেলে পথ অনেক কম হতো। একজন গাইড নিয়েছি সাথে, পাহাড় অঞ্চলে পথ হারানোর ভয় থাকে। বিকেল ৫টার সময় পাহাড়ের মাথায় উঠলাম। সেখান থেকে দেখা যাচ্ছে অলমোটা আর সুল্লাকারো।
এখানে বিশ্রাম নেবার সময় গাইড জানতে চাইল–আমি রাতে কোথায় থাকবো। নিচের সমতলে গ্রামগুলো একবার দেখে নিলাম।
গ্রামের পথ দেখা যাচ্ছে, কিন্তু মানুষ দেখা যাচ্ছে না। ভয়ার্ত ভাবভঙ্গির কয়েকজন মহিলা শুধু চোখে পড়ল।
মনে হলো গ্রামে বাড়ির সংখ্যা হবে একশো থেকে একশো বিশটার মতো। দেশের নিয়ম অনুযায়ী এর যে কোনো বাড়িতে আমি আশ্রয় নিতে পারি। সুতরাং আমার এখন কাজ হলো এর মধ্যে থেকে এমন একটা ঘর বেছে নেয়া যাতে একটু আরামের পরিমাণ বেশি থাকবে।
নজর কাড়ল একটা পাথুরে বাড়ি। একটা ছোট কেল্লার মতো দেখতে চারদিকে উঁচু দেয়াল, তার গায়ে বন্দুক চালাবার ছিদ্র।
সাধারণ বাড়িকে দুর্গের মতো করার চেষ্টা আমি এই প্রথম দেখলাম। অবাক হলাম না, কারণ আমার জানা আছে, বংশগত মারামারির মূল হচ্ছে সার্টেন প্রদেশ এই কর্সিকা দ্বীপে।