না না, তেমন কিছু হয়নি। বরং উল্টো, পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। ভুট্টার দানার বদলে আমার হৃদয় মিলের চাকার নিচে পড়েছে। এখন শুধু কিছু ঔড়ো অবশিষ্ট আছে।
আচ্ছা! মিলে তাহলে তুমি খুশি নও?
প্রথম যেদিন মিলে পা রেখেছি, সেদিন থেকেই আমি চাকার নিচে চাপা পড়েছি।
ল্যাড্রি, তুমি আমাকে ভয় পাইয়ে দিচ্ছ। সমস্যাটা কী খুলে বলল তো!
ল্যান্ড্রি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
দেখো ভাই, টাকা দিয়ে তোমাকে সাহায্য করার সঙ্গতি হয়তো আমার নেই। কিন্তু দুটো ভাল কথা বলে তোমার দুঃখ ভোলানোর চেষ্টা তো করতে পারি।
অনেক ধন্যবাদ, থিবল্ট। কিন্তু অর্থ বা উপদেশ-কোনটাই আমার কোন কাজে আসবে না।
যা-ই হোক, আমাকে বলো। বললে নিজেকে হালকা লাগবে।
আমি কিছু বলব না। বলে কোন লাভ নেই।
থিবল্ট হাসতে শুরু করল।
তুমি হাসছ? ল্যান্ড্রি কে বিস্মিত এবং রাগান্বিত মনে হলো। আমার বিপদ দেখে তোমার হাসি পাচ্ছে?
তোমার বিপদ দেখে হাসছি না, ল্যান্ড্রি। হাসছি কারণ তোমার ধারণা তুমি আমার কাছ থেকে সমস্যাটা লুকিয়ে রাখতে পারবে। কী সমস্যা হতে পারে সেটা তো আন্দাজ করাই যায়।
আন্দাজ করো তাহলে।
বাজি ধরতে পারি তুমি প্রেমে পড়েছ।
আমি, প্রেমে! কে তোমাকে এসব বাজে কথা বলেছে?
বাজে নয়, সত্যি কথা।
আগেরবারের চাইতেও দীর্ঘ একটা শ্বাস ছাড়ল ল্যাড্রি।
বেশ। ঠিকই ধরেছ, আমি প্রেমে পড়েছি!
যাক! অবশেষে স্বীকার করলে! ওর হৃৎস্পন্দন একটু বেড়ে গেল কাজিনের মধ্যে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীর ছায়া দেখে। তো, কার প্রেমে পড়েছ?
কার?
হ্যাঁ, জিজ্ঞেস করেছি কার প্রেমে পড়েছ?
তুমি যদি আমার বুক থেকে হৃদপিণ্ডটাও বের করে ফেলো তা-ও আমি বলব না।
এরইমধ্যে বলে দিয়েছ।
কী? বলে দিয়েছি? বিস্মিত চোখে থিবল্টের দিকে তাকাল ল্যান্ড্রি।
অবশ্যই।
তুমি বানিয়ে বলছ!
প্রথম যেদিন মাদাম পুলের মিলে পা রেখেছ, সেদিন থেকেই মিলের চাকায় তুমি আটকা পড়ে গেছ। তারপর তার ডান হাত হয়েছ। মিলে তুমি অসুখী কারণ তুমি প্রেমে পড়েছ। সুতরাং, মিল মালকিনের প্রেমে পড়েছ, তাই তুমি অসুখী।
থিবল্ট, চুপ! যদি ও শুনে ফেলে।
কীভাবে শুনবে? নাকি তোমার ধারণা সে অদৃশ্য হতে পারে, অথবা প্রজাপতি বা ফুলের রূপ ধরতে পারে।
যা-ই হোক, থিবল্ট, চুপ থাকো।
মিল মালকিন তাহলে কঠিন হৃদয়ের মহিলা? তোমার দুর্দশা দেখেও কোন দয়া দেখান না? যদিও সান্ত্বনাসূচক কথা, কিন্তু ভেতরে ভেতরে বিল্ট খুশি।
কঠিন হৃদয়! তা বলা যায়। প্রথমদিকে বোকার মতো ভাবতাম আমার ভালবাসাটাকে খারাপ চোখে দেখবে না। সারাদিন কাজ করতাম আর ওকে দেখতাম। ও-ও মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকাত। তারপর হাসত। সেই দৃষ্টি আর হাসিতে যে কী সুখ ছিল, থিবল্ট। তাতেই কেন যে সন্তুষ্ট থাকতে পারলাম ্না?
থিবল্ট দার্শনিক উত্তর দিল, কিছুই করার নেই, পুরুষেরা এমনই।
আমার মনের কথা বলার সময় ভুলেই গিয়েছিলাম আমার অবস্থানের উপরের কারও সাথে কথা বলছি। মাদাম পুলে ভয়ংকর ক্ষেপে গেল। আমাকে ভিক্ষুক বলে গাল দিল। হুমকি দিল পরের সপ্তাহেই আমাকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেবে।
হুম, কদিন আগের ঘটনা এটা?
প্রায় তিন সপ্তাহ।
সেই পরের সপ্তাহ আসতে এখনও বাকি আছে? প্রশ্নটা করার পর থেকেই একটা অস্বস্তি হতে থাকল থিবল্টের। ল্যান্ড্রির চেয়ে মেয়েদের ও ভাল বোঝে। একমিনিট চুপ থেকে বলল, দেখে যতটা মনে হয়েছিল, ততটা অসুখী তুমি আসলে নও।
ততটা অসুখী নই?
না।
যদি দেখতে কীভাবে দিন কাটাচ্ছি। তাকায় না, হাসে না। আমাকে দেখলেই উল্টো ঘুরে যায়। কাজের কথা বলতে গেলেও এত অবহেলার ভাব দেখায়, আমি সব ভুলে কাঁদতে শুরু করি। তখন আমাকে সামলে নিতে বলে। আমি দৌড়ে পালিয়ে আসি।
তোমার মালকিনের পেছনেই পড়ে থাকতে হবে কেন? আরও তো অনেক মেয়ে আছে, যারা তোমার মতো ছেলে পেলে বর্তে যাবে।
ওকে আমি ভালবাসি। ওকে ছাড়া আমার পক্ষে থাকা সম্ভব না।
আমি হলে ওর পেছনে আর সময় নষ্ট করতাম না। অন্য কাউ নাও।
আমি পারব না।
অন্তত চেষ্টা তো করো। যদি সে দেখে তুমি অন্য কারও প্রতি ঝুঁকেছ, ঈর্ষাবোধ করতে পারে। এখন যেমন তুমি তার পেছনে ছুটছ, তখন হয়তো সে তোমার পেছনে ছুটবে। মেয়েরা খুব অদ্ভুত।
যদি জানতাম তাতে কাজ হবে, তাহলে চেষ্টা অবশ্যই করতাম। কিন্তু এখন…
এখন কী?
যা কিছু ঘটেছে তারপর এসব করে আর কোন লাভ নেই।
কী ঘটেছে? সব তথ্য জানার তাগিদ বোধ করল থিবল্ট।
সে কথা আমার বলার সাহস নেই।
কেন?
ওই যে একটা কথা আছে না, ঘুমন্ত কুকুরকে জাগিও না।
ওরা মিলের কাছে চলে এসেছে, কথা শুরু হলেও শেষ করা যেত না, তাই আর ল্যান্দ্রিকে জোরাজুরি করল না থিবল্ট। ল্যান্ড্রি ভালবাসলেও ওই মহিলা ওকে ভালবাসে না। অল্প বয়সী, সাধারণ চেহারার ল্যান্ড্রি ওর কাছে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পাত্তাই পাবে না। সামান্যতম রুচিবোধ থাকলেও মহিলা ওকেই পছন্দ করবে। নিজের সাফল্যের ব্যাপারে তাই মোটামুটি নিশ্চয়তা বোধ করতে লাগল ও। সবুজ উপত্যকার একেবারে গোড়ায় মিলটার অবস্থান। ঝরনার স্রোত এখানে একটা পুকুর তৈরি করেছে। তার আশেপাশে রয়েছে বিশাল সব গাছের সারি। মিলের বিশাল চাকা ছোট ছোট শাখা নদী তৈরি করেছে। নুড়ি ছড়ানো পথে মিষ্টি শব্দ তুলে শাখাগুলো ছুটে যাচ্ছে অনবরত।