- বইয়ের নামঃ কাউন্ট অব মন্টিক্রিষ্টো
- লেখকের নামঃ আলেকজান্ডার ডুমা
- প্রকাশনাঃ দেব সাহিত্য কুটীর প্রাইভেট লিমিটেড (ভারত)
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রচনাবলী
কাউন্ট অব মন্টিক্রিষ্টো
০১-৫. মার্সেঈ বন্দর
কাউন্ট অব মন্টিক্রিষ্টো – আলেকজাণ্ডার ডুমা
অনুবাদ : হেমেন্দ্রকুমার রায়
পৃথিবীতে অনেক কিছু আশ্চর্য জিনিস দেখা যায় কিন্তু পিতা ও পুত্র দুজনেই বড় সাহিত্যিক হয়ে উঠেছেন এটা বড় একটা শোনা যায় না। এ ঘটনারও ব্যতিক্রম দেখা যায় আলেকজাণ্ডার ডুমার জীবনে। তাদের দুজনের নামও এক। এখানে বাবার কথাই বলব। তিনিই ‘কাউন্ট অব মন্টিক্রিষ্টোর’ বিখ্যাত ফরাসী লেখক।
১৮০২ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে জুলাই এই লেখকের জন্ম হয়। তাঁর জন্মের চার বৎসর পরেই দুর্ভাগ্যবশত তাঁর পিতার মৃত্যু হয়। কাজেই অতিশয় দুঃখ কষ্টের ভিতর দিয়েই তার বাল্যজীবন কাটে। কিন্তু এই দুঃখ কষ্টের অনুভূতি তার বাল্যকালেই সাহিত্যরচনার অনুপ্রেরণা যোগায়। প্রথম জীবনে তিনি নাটক রচনা করতে শুরু করেন, পরে উপন্যাস রচনায় হাত দেন। ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে তার যুগান্তকারী রচনা ‘থ্রি মাস্কেটিয়ার্স’ প্রকাশিত হয়।
ডুমা তার জীবদ্দশাতেই অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। লোকে তার লেখা পড়বার জন্য ব্যগ্র উৎসুক হয়ে থাকত। তিনি একবার এক ভ্রমণ কাহিনী লেখার বায়না হিসাবে এক কাগজওয়ালার কাছ থেকে বিস্তর টাকা আগাম নেন। স্থির হল তিনি সিসিলি যাবেন বেড়াতে এবং সেখান থেকেই যেমন যেমন দেখবেন, তেমনি তেমনি লিখে পাঠাবেন। কথা ছিল তার সঙ্গে তার শিল্পী বন্ধু জাদিন যাবেন।
আর যাবে জাদিনের নিত্য সঙ্গী কুকুর। কিন্তু কোন কারণে সেই বন্ধুর যাওয়া হল না। ডুমাকে একাই রওনা হতে হল। ডুমা পড়লেন মহা বিপদে। তিনি কাগজওয়ালাদের কাছ থেকে টাকা নিতেন শব্দের সংখ্যা হিসাবে। যত বাড়িয়ে লিখতে পারবেন ততই তাঁর লাভ। ডুমা আর কি করবেন, শিল্পী বন্ধুকে ও তাঁর কুকুরকে কল্পনা করেই তিনি দিনের পর দিন মনগড়া ভ্রমণ কাহিনী লিখে পাঠাতে লাগলেন।
সেই কাহিনী খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠল। কিন্তু এদিকে শিল্পী বন্ধু জাদিন পড়লেন মহা বিপদে। কেউ তাকে আর জাদিন বলে স্বীকার করে না। কারণ সবাই জানে জাদিন ডুমার সাথে সিসিলিতে আছেন।
এমন শক্তিশালী ছিল আলেকজাণ্ডার ডুমার রচনা। কল্পনাকে তিনি বাস্তবের চেয়েও সত্য করে তুলতেন লেখনীর গুণে।
১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে আলেকজাণ্ডার ডুমার মহাজীবনের অবসান ঘটে।
০৬-১০. নিকষকালো আঁধার
নিকষকালো আঁধার-ঘেরা রাত্রি।
দুই দিকে দুইজন বন্দুকধারী সৈনিক এডমন্ডের হাত ধরে একখানা ঘোড়ার গাড়ির ভিতর টেনে তুললো। গাড়ি চলতে আরম্ভ করলো।
এডমন্ড গাড়ির জানালার দিকে তাকালো। প্রত্যেক জানালায় লোহার গরাদে। কয়েদীবাহী গাড়ি। এই গাড়িতে উঠেও কিন্তু এডমন্ডের মনে হলো যে মাসিয়ে ভিলেফোর্ট তাকে নিশ্চয়ই ছেড়ে দেবেন। মঁসিয়ে ভিলেফোর্ট দয়ালু। তিনি তো স্পষ্টই বলেছেন, আমাকে কেবল কয়েকদিনের জন্য পুলিশের হেপাজতে থাকতে হবে।
সমুদ্রের ধারে এসে গাড়িখানা থামলো।
এডমন্ড উঁকি মেরে দেখলো, সামনেই রয়েছে একদল সৈনিক। একজন সৈনিক বন্দুক কাঁধে করে গাড়ির সামনে এগিয়ে এসে বন্দীকে নামিয়ে আনতে বললো।
গাড়ি থেকে নামতে নামতে এডমন্ড অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো–এত সৈন্য কেন এখানে?
সৈন্যেরা তাকে নিয়ে একটা জেটির ধারে গিয়ে পঁড়ালো। সেখানে একখানা নৌকো বাঁধা ছিল। সেই নৌকোয় তোলা হলো এডমন্ডকে। নৌকো ছেড়ে দিল। সমুদ্রের ঠাণ্ডা হাওয়ায় এডমন্ডের তপ্ত মাথা খানিকটা ঠাণ্ডা হলো। কৌতূহলী হয়ে একজন রক্ষীকে সে জিজ্ঞাসা করলো–আমাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?
–একটু পরেই দেখতে পাবে।
–তবু…
–উপরওয়ালার নিষেধ, তোমার সঙ্গে আমরা কথা কইতে পারবো না।
এরপর কিছুক্ষণ আর কারো মুখে কোন কথা নেই। নৌকো এগিয়ে চলেছে ধীর গতিতে। একটা বাতিঘর দেখা গেল। সেটাকে পিছনে রেখে নৌকো চলতে লাগলো।
আবার কৌতূহল জাগলো। এডমন্ড আবার জিজ্ঞাসা করলো –এখনি যা জানতে পারব তা একটু আগে আমাকে জানালে এমন কি ক্ষতি হবে? আমাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?
এডমন্ডের এই প্রশ্নের উত্তরে রক্ষীদের ভিতর থেকে একজন বলে উঠলো–শুনেছি তুমি নাবিক। মার্সেঈ-এ থাকো। এখনো কি তুমি বুঝতে পারছ না, কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তোমাকে?
–না।
–সে কি! তুমি কি অন্ধ নাকি? ভালো করে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখ দেখি।
মিটমিটে তারকাকিরণে রহস্যময় নিশ্চন্দ্র আকাশ! খুব কাছেই অন্ধকারের মধ্যে সাগর-দানবের মত মাথা উঁচু করে পঁড়িয়ে একটা পর্বত-দুর্গ। স্যাতো-দ্য-ইফ। দুৰ্গটাকে এখন কারাগারে পরিবর্তিত করা হয়েছে। এডমন্ড জানতো যে ঐ কারাগারে যাদের রাখা হয়, তারা আর জীবিত অবস্থায় ফিরে আসতে পারে না। বহু হতভাগ্যের বন্দী-জীবনের অবসান ঘটেছে ঐ কুখ্যাত কারাগারে।
মনে মনে শিউরে উঠে এডমন্ড বললো–স্যাতো-দ্য-ইফ! ওখানে আমায় নিয়ে যাচ্ছো কেন? আমি তো কোন অপরাধ করিনি।
রক্ষীরা মুখ টিপে হাসলো।
–এখানে কি আমার বিচার হবে? এখানে কি কোন বিচারক আছেন?
–না। এখানে আছে শুধু কারাধ্যক্ষ, প্রহরী ও তোমার মত কয়েদীর দল–আর আছে খুব চওড়া পাথরের প্রাচীর।