পরের দিন খুব সকালে রিও-র বাসায় গেল ও। জানতে চাইল কটার্ডকে কোথায় পাওয়া যাবে।
কাল রাত দশটায় কটার্ড-এর এখানে আসার কথা। তারিউ আসতে বলেছে। আপনি সাড়ে দশটায় আসুন, বলল রিও।
পরের দিন রাতে কটার্ড পৌঁছে দেখে রিও এবং তারিউ একজন রোগীর ব্যাপারে আলাপ করছে। ওরা ভেবেছিল লোকটা মারা : যাবে, কিন্তু সে বেঁচে আছে এখনও। রিও এরপর বিভিন্ন রিপোর্ট। নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তারিউ ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকাল কার্ড-এর দিকে।
মঁসিয়ে কটার্ড, বলুন তো, আপনি কেন এখনও আমাদের দলে যোগ দিচ্ছেন না?
কটার্ড টুপি হাতে উঠে দাঁড়াল চেয়ার ছেড়ে। বোঝাই যায় আঁতে ঘা লেগেছে তার। এগুলো আমার কাজ বলে আমি মনে করি না। আর তাছাড়া, প্লেগের ফলে আমার কিছু সুবিধাই হয়েছে। তাই আমি একে বাধা দিতে চাই না।
হ্যাঁ, তা তো বটেই। প্লেগ শুরু না হলে আপনাকে অনেক আগেই হাজতে যেতে হত।
ভীষণ চমকে উঠল কটার্ড। চেয়ারের পিছনটা ধরে সামলে নিল নিজেকে। কে বলেছে আপনাকে এ-কথা?
কেন, আপনি নিজেই বলেছিলেন। ভুলে গেছেন এরই মধ্যে?
মানসিক ভারসাম্য হারাল কটার্ড। অশ্রাব্য গালিগালাজ আরম্ভ করল ও।
দেখুন, অত উত্তেজিত হবার কিছু নেই, শান্ত গলায় বলল তারিউ, আমি কিংবা রিও, আমরা কেউই পুলিসের কাছে আপনার কথা জানাব, না। আর আপনি কী করেন না করেন তা নিয়েও আমাদের মাথাব্যথা নেই। শান্ত হন, বসুন।
ইতস্তত করে বসে পড়ল কটার্ড। সঙ্গে সঙ্গে ওর বুক চিরে বেরিয়ে এল দীর্ঘনিশ্বাস।
আমার একটা পুরনো ব্যাপার আবার খুঁচিয়ে তোলা হয়েছে। ভেবেছিলাম সবাই এতদিনে ভুলে গেছে ওটা। থানা থেকে কয়েকদিন আগে আমাকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। আমাকে জানানো হয়, ব্যাপারটার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি যেন এক পা-ও না নড়ি কোথাও। শেষ পর্যন্ত ওরা আমাকে ধরবেই।
গুরুতর কিছু? জানতে চাইল, তারিউ।
গুরুতর বলতে আপনি কী বোঝেন সেটা না জানলে কী বলব বলুন? তবে খুন বা ওই ধরনের কিছু নয়।
কটার্ডকে দেখে রিও আর তারিউ উভয়েরই করুণা হলো ভীষণ। ভাগ্য ভাল হলে শুধু হাজতবাসের ওপর দিয়েই পার পেয়ে যেতে পারি। হঠাৎ আবার উত্তেজিত হয়ে উঠল ও। একটা ভুলের জন্যে ব্যাপারটা ঘটেছিল। ভুল তো সবাই করে, করে না? কিন্তু তারই জন্যে শাস্তি পেতে হবে আমাকে?
তাহলে এজন্যেই আপনি গলায় দড়ি দিয়েছিলেন? আবার প্রশ্ন করল তারিউ।
হ্যাঁ। তবে সেটাও একটা ভুল ছিল।
কটার্ডকে আশ্বাস দিল রিও। বলল, আপনার ব্যাপারটা এতদিনে বুঝতে পারলাম। আমার বিশ্বাস আপনার কোন বিপদ, হবে না।
তা আমিও জানি। এ-মুহূর্তে আমার ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এতক্ষণে বুঝলাম কেন আপনি আমাদের কাজে যোগ দিচ্ছেন না, বলল তারিউ।
মঁসিয়ে তারিউ, আমার বিরুদ্ধে নিশ্চয় আপনার কোন আক্রোশ নেই?
অবশ্যই না। তবে একটাই অনুরোধ, চারদিকে এই রোগের জীবাণু ছড়িয়ে বেড়াবেন না।
কটার্ড প্রতিবাদ জানিয়ে বলল, আমি নিজে কোন দিন এটা চাইনি। প্লেগ শুরু হয়েছে, সেটা দৈব ব্যাপার। এর জন্যে কিছু ব্যক্তিগত সুবিধা আমার হয়েছে সত্যি, কিন্তু সেটা আমার বরাত। তাই বলে প্লেগের জন্যে আমাকে দায়ী করা উচিত নয়। কথাবার্তায় মনে হলো ইতিমধ্যে বেশ সাহস সঞ্চয় করে ফেলেছে ও। এমন সময় ওখানে ঢুকল র্যাঁবেয়া। ওকে দেখে আবার ফুঁসে উঠল কটার্ড। রীতিমত চিৎকার করে বলল, আমি বিশ্বাস করি না, আপনারা যে-সব ব্যবস্থা নিয়েছেন তাতে কোন ফল হবে।
র্যাঁবেয়া কটার্ডকে প্রশ্ন করে জানল, গনজালেস-এর ঠিকানা ও জানে না। শুনে বিরক্তি আর হতাশায় ভরে উঠল ওর মন। এরপর কটার্ডকে সে বলল, সেই ছোট্ট কাফেটাতে আমরা আর একবার গেলে কেমন হয়? ঠিক হলো পরের দিন ওরা যাবে সেখানে।
রিও র্যাঁবেয়াকে বলল, আপনার কী হলো সে-খবর কিন্তু আমাকে দিতে ভুলবেন না।
র্যাঁবেয়া জানাল, আপনি এবং তারিউ যদি এ-সপ্তাহের শেষে হোটেলে এসে আমার খোঁজ নেন, তাহলে সবচেয়ে ভাল হয়। বেশি, রাত হলেও অসুবিধে হবে না, আমি আমার ঘরেই থাকব।
পরের দিন সকালে সেই ছোট্ট কাফেটাতে গেল র্যাঁবেয়া এবং কটার্ড বলে এল, আজ সন্ধ্যায় অথবা কাল সকালে যেন গ্রাসিয়া ওদের সঙ্গে কাফেতে দেখা করে। সেদিন সন্ধ্যায় ওদের অপেক্ষা বৃথা গেল। পরের দিন এল গ্রাসিয়া। সবকিছু শুনে বলল, কী ঘটেছে আমি ঠিক জানি না। শুনেছিলাম, শহরের কয়েকটা অঞ্চল ঘেরাও করা হয়েছিল। প্রতিটা বাড়ি তন্নতন্ন করে খোঁজা হয়েছে। হয়তো ওরা এই ঘেরাও থেকে ঠিকমত পালাতে পারেনি। আমি রাউল-এর সঙ্গে আবার আপনাদের দেখা করিয়ে দিতে পারি। তবে পরশুর আগে সময় করে উঠতে পারব না।
পরের দিন এক রাস্তার মোড়ে হঠাৎ করেই রাউল-এর সঙ্গে দেখা হলো র্যাঁবেয়ার। শুনল, গ্রাসিয়ার অনুমান ঠিক। শহরের নিচু এলাকাগুলো এখনও ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। এরপর ওদের কাজ হলো গনজালেস-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা। দুদিন পর স্প্যানিশ রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাওয়ার সময় ফুটবলারের সঙ্গে দেখা হলো : র্যাঁবেয়া-র।
না, এটা বোকামি হয়ে গেছে, গনজালেস জানাল, আপনার অবশ্যই উচিত ছিল ওদের সঙ্গে যোগাযোগের একটা ব্যবস্থা ঠিক করে রাখা।
নিজের ভুল স্বীকার করল র্যাঁবেয়া। যেভাবে হোক কাল সকালে ছোকরা দুটোকে খুঁজে বের করব, বলল গনজালেস, তারপর দেখা যাবে কী করা যায়।