- বইয়ের নামঃ দ্য প্লেগ
- লেখকের নামঃ আলবেয়ার কাম্যু
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, উপন্যাস
দ্য প্লেগ
১ম পর্ব : আলজেরিয়ার উপকূলে ওরাওঁ শহর
দ্য প্লেগ – আলবেয়ার কামু; রূপান্তর: বাবুল আলম
দুটি কথা
বহু সমালোচকের মতেই ‘দ্য প্লেগ’ আলবেয়ার কামুর শ্রেষ্ঠ। উপন্যাস। এ উপন্যাসের জন্য ১৯৪৭ সালে তিনি প্রি দেস ক্রিটিকে পুরস্কার লাভ করেন। ‘দ্য প্লেগ’ মূলত প্রতীকী উপন্যাস। এ প্রতীক দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়ে ফ্রান্সে নাৎসি আগ্রাসান। কাম্যু ওই যুদ্ধে স্বাধীনতার স্বপক্ষে বীরত্বপূর্ণ লড়াই করেছিলেন। দুটি কাহিনী কখনও সমান্তরালভাবে, আবার কখনও-বা মিলেমিশে এ উপন্যাসে এগিয়েছে। একটিতে বর্ণিত হয়েছে প্লেগ-কবলিত ওরাওঁ-বাসীদের ভয়-ভীতি, সঙ্কট ও দ্বন্দ্বের কথা, অন্যটিতে ডাক্তার বার্নাড রিও-র অসম সাহসী সংগ্রামের। দ্য প্লেগ দুরূহজটিল বৃহৎ উপন্যাস। পাঠকদের পকেট সাশ্রয় এবং প্রকাশনা ব্যয় সংকোচনের স্বার্থে, মূলভাব অক্ষুণ্ণ রেখেই, উপন্যাসটি কিঞ্চিৎ সংক্ষেপিত করা হয়েছে। পাঠকবর্গ বিশ্বমানের এ উপন্যাসটির রসাস্বাদনে সক্ষম হলে আমার শ্রম সার্থক হয়েছে বলে মনে করব।
– বাবুল আলম (অনুবাদক)
লেখক পরিচিত
আলবেয়ার কাম্যু ১৯১৩ সালে আলজেরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রথম জীবন কাটে উত্তর আফ্রিকায়। সেখানে পেশা হিসেবে অনেক ধরনের কাজ করেন তিনি। তার একটি হচ্ছে, আলজেরীয় ফুটবলদলের পক্ষে খেলা। এরপর তিনি চলে আসেন ফ্রান্সে, এবং শুরু করেন সাংবাদিকতা। জার্মান হামলার সময় কাম্যু সক্রিয়ভাবে প্রতিরোধ আন্দোলনে যোগ দেন। এ-সময়, তিনি একটি গোপন পত্রিকা-কম্বাট-সম্পদনা করেন। এরপর, রাজনীতি এবং সাংবাদিকতা ছেড়ে পুরোপুরিভাবে লেখায় মন দেন কামু। ১৯৫৮ সালে তাঁকে সাহিত্যের জন্যে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়। ১৯৬০ সালের জানুয়ারি মাসে এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন যশস্বী এই ঔপন্যাসিক।
.
প্রথম পর্ব
১.০১
আলজেরিয়ার উপকূলে ওরাওঁ শহর। একটা বড় ফরাসি বন্দর। জেলা সদর। ১৯৪-সালে এখানেই ঘটে ঘটনাটি।
ওরাওঁকে দেখলে মনে হয় অদ্ভুত এক চেহারার ভূখণ্ডের ওপর। দাঁড়িয়ে আছে শহরটা। উপসাগরের মুখ থেকে ওপরে উঠে গেছে বিস্তৃত উন্মুক্ত মালভূমি। চারদিকে ঝকঝকে পাহাড়। তারই মাঝখানে ওরাওঁ। সমুদ্রের দিকে পিঠ ফেরানো, তাই শহর থেকে সমুদ্র চোখে পড়ে না।
ওরাওঁ-এ শীত আর গ্রীষ্ম দুটোই প্রচণ্ড। প্রকৃতিও অত্যন্ত নির্মম আর প্রতিকূল। রাত নামে হঠাৎ করে। সৌন্দর্য বলতে কিছুই নেই শহরে। গাছে লতা নেই। পাতায় নেই মর্মর। কবুতর চোখে পড়ে না। শোনা যায় না পাখির ডানার ঝটপটানি। জিনিসপত্তরের অভাব লেগেই আছে। আর আছে মানুষের মনে অভাববোধ। এখানে কখন যে ঋতু বদল হয়, বুঝতে হলে তাকিয়ে দেখতে হয় আকাশের চেহারা। বসন্ত আসার আগে দুটো ঘটনা ঘটে। শরীরে লাগে মৃদু বাতাসের ছোঁয়া, আর শতরতলি থেকে ফেরিঅলারা ঝুড়ি ভরে ফুল নিয়ে আসে শহরে। গরমের দিনে, সূর্যের প্রখর তাপে জ্বলে পুড়ে হাড়ের মত ঠনঠনে হয়ে ওঠে বাড়িঘর। ধূসর ধুলোর আস্তর জমে দেয়ালে দেয়ালে। শরৎকালে চারদিকে থিকথিক করে কাদা। কেবল শীতে, আবহাওয়াটা সত্যি সত্যি মনোরম হয়ে ওঠে।
অন্যান্য শহরে যা হয়, এখানেও মানুষ কাজকর্ম করে, প্রেম করে, মারা যায়। এবং এসব তারা করে প্রায় একই ঢঙে। সবকিছুর মধ্যে থাকে কেমন একটা তড়িঘড়ি আর নির্লিপ্ত ভাব।
জীবন এখানে ভীষণ একঘেয়ে, অবসাদময়। সবাই শুধু অভ্যাস চর্চা করে। মানুষ কঠোর পরিশ্রম করে কেবলমাত্র বড়লোক হওয়ার জন্যে। এখানে জীবনের প্রধান লক্ষ্য বাণিজ্য।
এখানে মানুষ আনন্দ উপভোগ করে খুব সহজ উপায়ে–প্রেমলীলায়, সমুদ্র স্নানে, সিনেমা দেখে। তবে সেগুলো ওরা বরাদ্দ রাখে শনিবার বিকেল এবং রোববারের জন্যে। বাকি দিনগুলোয় শুধু টাকা উপার্জন। সন্ধের পর অফিস থেকে বেরিয়ে কেউ কাফেতে বসে, কেউ পায়চারি করে, কেউ-বা হাওয়া খায় ব্যালকনিতে বসে।
ওরাওঁ একটা আধুনিক শহর। প্রেমলীলা বলতে এখানে যা বোঝায়, নারী এবং পুরুষ খুব তাড়াতাড়ি পরস্পরকে নিঃশেষ করে ফেলে। আর নয়তো থিতিয়ে থাকে নিরুত্তেজ দাম্পত্য জীবনে। অবকাশ এবং চিন্তাশক্তির অভাবে সত্যিকার প্রেমের উপলব্ধি ছাড়াই নারী পুরুষ পরস্পরকে ভালবাসে। যুবক-যুবতীদের আবেগ যেমন তীব্র তেমনি ক্ষণস্থায়ী।
মৃত্যুর সময় মানুষকে এখানে ভীষণ কষ্ট পেতে হয়। তাপে ঝলসানো দেয়ালের মধ্যে আটকা পড়ে মুমূর্ষ মানুষ মৃত্যুর দিন গোনে। অসুস্থ হলেই মানুষ এখানে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সবকিছু থেকে।
.
১.০২
এপ্রিল ১৬। সকাল। নিজের অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে আসছে ডাক্তার রিও, হঠাৎ সিঁড়িতে, কী যেন নরম মত একটা পায়ে ঠেকল তার। পা সরিয়ে দেখে, একটা ইঁদুর পড়ে রয়েছে। কোনকিছু চিন্তা ভাবনা না করে, যেমন নামছিল তেমনি নেমে গেল ডাক্তার। একেবারে নিচে এসে খেয়াল হলো, আরে ইঁদুরটা ওখানে এল কী করে? দারোয়ান মিশেলকে ও বলল, এক্ষুণি ওটাকে সরিয়ে ফেলো।
খবরটা মিশেল-এর কাছে ভয়ঙ্কর বলে মনে হলো। ও জোর দিয়ে বলল, না, না। ইঁদুর আসবে কোত্থেকে।
রিও বলল, আমি নিজের চোখে দেখেছি। সম্ভবত মরা।