ঠিক এই সময়ে শহরে এক শ্রেণীর নীতিবাগিশ গজিয়ে উঠল। তারা প্রচার করতে শুরু করল, মহামারীর বিরুদ্ধে করার কিছুই নেই, এটাকে মেনে নিতে হবে। জাঁ তারিউ, রিও এবং ওদের বন্ধু বান্ধবরা অবশ্য অটল রইল নিজেদের সিদ্ধান্তে। সে-সময়ের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কাজ হয়ে উঠল, আসন্ন মৃত্যুর হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করা, আর খুব বেশি লোক যাতে তাদের প্রিয়জনদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে না পারে তার উপযোগী ব্যবস্থা নেয়া। এবং ওরা তাই করে চলল।
ডাক্তার ক্যাসেলও ওই অবস্থায় সবচেয়ে স্বাভাবিক কাজটি। করতে এগিয়ে এল। হাতের কাছে যেসব যন্ত্রপাতি পেল সেগুলো দিয়েই অটল বিশ্বাসে প্রস্তুত করতে লাগল সিরাম, নিজের শরীরের দিকে ক্রুক্ষেপ না করে।
গ্রাঁদও সোৎসাহে স্যানিটারি স্কোয়াডে সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করতে এগিয়ে এল। এতটুকু ইতস্তত করতে দেখা গেল না ওকে। শুধু একটাই অনুরোধ করল সে, একটু হালকা ধরনের কাজ যেন দেয়া হয় তাকে, কারণ এই বয়েসে কঠিন কাজ করা ওর পক্ষে সম্ভব নয়। ওকে কাজ দেয়া হলো রিপোর্ট প্রস্তুত করা এবং পরিসংখ্যান রাখার। * কোন কোন দিন সন্ধ্যায় রিপোর্ট প্রস্তুত করা এবং পরিসংখ্যানের কাজ শেষ হয়ে যায়। তখন গ্রাঁদ আর রিও গল্প জুড়ে দেয়। কিছুদিন পরে তারিউও ওদের গল্পে যোগ দিতে লাগল নিয়মিতভাবে। এখন আগের চেয়ে অনেক সহজভাবে এ দুই বন্ধুর কাছে জীবনের সুখ-দুঃখের গল্প করে গ্রাঁদ।
আপনার সেই অশ্বারোহিণী ভদ্রমহিলা কতদূর এগুলো? তারিউ মাঝেমাঝে জিজ্ঞেস করে গ্রাঁদকে। গ্রাঁদ হেসে জবাব দেয়, ঘোড়া কদমে চলেছে। সত্যিই। একদিন সন্ধ্যায় গ্রাঁদ ঘোষণা করল, আমি আমার অশ্বারোহিণী নায়িকার আগে রুচিসম্পন্না এক যুবতী শব্দগুলো ব্যবহার না করে তন্বী শব্দটি ব্যবহার করব।
কিছুদিন পর প্রকাশ পেল, অফিসের কাজে অমনোযোগী হয়ে, উঠেছে গ্রাঁদ। একদিন, দফতরের প্রধান ওকে ডেকে ভীষণ ধমকালেন। আসলে গ্ৰাঁদ ক্রমেই পরিশ্রান্ত এবং দুর্বল হয়ে পড়ছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও ও স্যানিটারি স্কোয়াডের জন্যে পরিসংখ্যান সংগ্রহ করা, অফিসের হিসেবপত্র ঠিক রাখা, এসব কাজগুলো ঠিকমত করে। যাচ্ছিল।
.
২.০৯
র্যাঁবেয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কিছুতেই প্লেগের কাছে পরাভব মানবে না। এবং তার জন্যে সংগ্রামও করছিল ও। যখন বুঝতে পারল ও বৈধ উপায়ে শহরের বাইরে যাওয়া সম্ভব হবে না, তখন ঠিক করল ভিন্ন রাস্তায় চেষ্টা করতে হবে।
প্রথমে ও যোগাযোগ করল বিভিন্ন কাফের ওয়েটারদের সঙ্গে। প্রতি শহরেই দৃষ্টির আড়ালে কোথায় কী ঘটছে তার খবর রাখে কাপের ওয়েটাররা।
প্রথমে যার সঙ্গে ওর কথা হলো সে জানাল পালাবার চেষ্টা করলে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। পরে অন্য একটা কাফের ওয়েটাররা ওকে চর ভেবে বসল, এবং বের করে দিল কাফে থেকে।
একদিন রিও-র বাসায় এ নিয়ে কথা বলছে র্যাঁবেয়া, এমন সময় সেখানে এল কার্ড। ওদের কথাবার্তা শুনে ফেলল ও। এই ঘটনার বেশ কিছুদিন পর হঠাৎ কটার্ড-এর সঙ্গে রাস্তায় দেখা হলো স্নাবেয়া-র। বেশ আন্তরিকতার সাথে ওকে অভ্যর্থনা জানাল কটার্ড।
এই বইটি বাংলাপিডিএফ-নেট এর সৌজন্যে নির্মিত। বইটি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই এর একটি কপি আপনার নিকটবর্তী বুকস্টল অথবা হকারের কাছ থেকে আজই সংগ্রহ করবেন। লেখক অথবা প্রকাশনা সংস্থার কোন ক্ষতি হোক, তা আমরা চাই না।
আরে র্যাঁবেয়া যে। এখনও কিছু করতে পারেননি মনে হচ্ছে।
না, কিছুই না।
এরপর কটার্ড যা বলল তাতে থ হয়ে গেল র্যাঁবেয়া। কিছুদিন হলো শহরের বিভিন্ন কাফেতে ঢু মেরে বেড়ানোই কটার্ড-এর একমাত্র কাজ হয়ে উঠেছে। এতে বেশ কিছু লোকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে ওর। তাদের কাছ থেকে ও জানতে পেরেছে লোক পাচার করার একটা সংস্থা নাকি শহরে আছে।
সত্যিই আপনি খবর দিতে পারবেন? জিজ্ঞেস করল র্যাঁবেয়া।
অবশ্যই। এরকম একটা প্রস্তাব এসেছিল আমার কাছে।
ওদের সাথে যোগাযোগ করার উপায় কী?
সেটা অবশ্য খুব সহজ নয়। আচ্ছা, আসুন দেখি আমার সঙ্গে।
তখন বিকেল চারটা। মাথার ওপর গুমোট আকাশ। অসহ্য গরম পড়েছে। পথেঘাটে, কোথাও প্রাণের চিহ্নমাত্র নেই। দোকানপাটের সামনে পর্দা টানানো। ছায়াঘেরা একটা রাস্তা ধরে বেশ কিছুদূর নীরবে হাঁটল ওরা দুজন।
র্যাঁবেয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে কটার্ড বলল, রাস্তায় কুকুর। চোখে পড়ছে না। সাধারণত এ-সময় কুকুরগুলোকে দেখা যায় দরজার সামনে ক্লান্তভাবে গড়াতে, এবং লম্বা জিভ বের করে হাঁফাতে,
দুজনে বুলেভার্দে দ্য পালামিয়ার সামনে দিয়ে এগিয়ে, প্যালেস দ্য আর্মসকে পিছনে ফেলে আরও কিছুদূর হাঁটার পর মোড় নিল ডকইয়ার্ডের দিকে। বাঁ হাতে পড়ল সবুজ রঙের একটা কাফে। সামনে একটা হলুদ রঙের সামিয়ানা টানানো। একেবারে রাস্তা পর্যন্ত চলে এসেছে সামিয়ানাটা।
ভেতরে ঢুকে কপালের ঘাম মুছল ওরা। চারপাশে কয়েকটা টেবিল। সেগুলোও সবুজ রঙের। ভেতরে কোন লোক নেই। ভনভন করছে, মাছি। মদ বিক্রির কাউন্টারে বসে আছে একটা তোতা পাখি। দেয়ালে ঝুলছে মাকড়সার জালে ঢাকা কতকগুলো পুরানো ছবি।
প্রত্যেকটা টেবিলে পাখির শুকনো বিষ্ঠা ছড়ানো। র্যাঁবেয়া ভাবছে এগুলো এল কোত্থেকে, এই সময়ে ঘরের এক অন্ধকার কোণ থেকে ডানা ঝাঁপটিয়ে লাফাতে লাফাতে ওর সামনে এসে দাঁড়াল সুন্দর একটা মোরগ।