–হ্যাঁ, কারো চোখে পড়া সম্ভব ছিল না। বললেন মিস ব্ল্যাকক।
–হ্যাঁ। আলো নিভে যেতেই সকলে এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে পড়ে কথা বলতে শুরু করে। এরপর তাদের চোখে এসে পড়ে টর্চের জোরাল আলো।
–মনে করতে পারছি সবই। কিন্তু আপনি বিশ্বাস করেন যে আমার পড়শীদের মধ্যে কেউ চুপিসারে বেরিয়ে এসে আমাকে খুনের চেষ্টা করেছিল? কিন্তু কেন খুন করতে চাইবে আমাকে? সেটাই তো আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।
–এর উত্তর তো একমাত্র আপনিই জানেন মিস ব্ল্যাকলক।
–কিন্তু, বিশ্বাস করুন, ইনসপেক্টর, সত্যিই আমি জানি না।
–কিন্তু আমাদের সে কথাটাই জানতে হবে। বেশ, একটু আলোচনা করে দেখা যাক। আপনি মারা গেলে আপনার টাকাকড়ি কে পাবেন?
মিস ব্ল্যাকলক একমুহূর্ত ইতস্তত করলেন। পরে বললেন, প্যাট্রিক আর জুলিয়া। আর বানি পাবে বাড়ির আসবাবপত্র আর সামান্য মাসোহারা। আসলে আমার মূলধন খুবই সামান্য। তার জন্য আমার খুন হবার সম্ভাবনা সম্পূর্ণ অবাস্তব।
যাইহোক, যেটুকুই আছে, তা আপার বোনপো আর বোনঝি পাচ্ছেন।
–আপনি বলতে চাইছেন ওরা আমাকে খুনের পরিকল্পনা করবে? এ আমি কখনোই বিশ্বাস করি না। তারা এমন কিছু অনটনে পড়েনি।
–তাদের আর্থিক অবস্থার কথা আপনি জানেন?
–ওরা যা বলেছে, তাই জানি। তবে ওদের সন্দেহ করা আমার পক্ষে অসম্ভব।
একমুহূর্ত থেমে তিনি ফের বললেন, আমি খুন হওয়ার পর্যায়ে আসতে পারি, হয়তো একদিন, তবে এখন নয়।
ক্র্যাডক তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন মিস ব্ল্যাকলকের দিকে। বললেন, আপনার একথার অর্থ মিস ব্ল্যাকলক?
-আমি বলতে চাইছি, হয়তো শিগগিরই আমি অনেক টাকার মালিক হতে পারি।
ব্যাপারটা খুলে বলবেন?
-বলব অবশ্যই। আপনি হয়ত জানেন না যে আমি কুড়ি বছর একজন বিখ্যাত ধনী ব্যক্তির সেক্রেটারি ছিলাম। র্যাণ্ডাল গোয়েডলারের নাম নিশ্চয়ই আপনার অজানা নয়। ১৯৩৮ সালে তিনি মারা যান।
ক্র্যাডক বললেন, হ্যাঁ একজন, দুঃসাহসিক বিনিয়োগকারী বলে অর্থনৈতিক জগতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। কোটিপতি মানুষ।
–কেবল কোটিপতি বললে সামান্যই বলা হবে। কেন না বিনিয়োগের সঙ্গে সঙ্গে তার অর্থের পরিমাণ ওঠা নামা করত। নতুন ঝুঁকিতে অর্থ বিনিয়োগ করা, বলতে পারেন তার নেশার মত ছিল।
যাইহোক, ধনী অবস্থাতেই তিনি মারা যান। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। তাই ট্রাস্টের মাধ্যমে তার জীবদ্দশাতেই সব স্ত্রীকে দিয়ে যান। আর তাঁর মৃত্যুর পর সবেরই মালিক হব আমি।
একটা খবর ক্র্যাডকের স্মরণে এলো–শিরোনাম ছিল এরকম, বিশ্বস্ত সেক্রেটারির বিপুল সৌভাগ্যবা এরকম কিছু।
মিস ব্ল্যাকলক বলে চললেন, এ ঘটনা বছর বারো আগের। সেই সময় মিসেস গোয়েডলারকে খুন করার একটা মোটিভ আমার থাকতে পারত।
–মাপ করবেন, মিঃ গোয়েডলার তাঁর সম্পত্তি এভাবে দান করলেন, এটা তার স্ত্রীর মেনে নিয়েছিলেন?
আপনি অনেকটা রেখেঢেকেই বললেন, বললেন মিস ব্ল্যাকলক, আপনি বলতে চাইছেন, আমার সঙ্গে মিঃ গোয়েডলারের কোন গূঢ় সম্পর্ক ছিল কিনা। না, তেমন সম্পর্ক ছিল না। তিনি স্ত্রী বেলকে মৃত্যু পর্যন্ত গভীরভাবে ভালবাসতেন। আমি বুঝতে পেরেছিলাম, কৃতজ্ঞতা থেকেই তিনি ওই উইল করেছিলেন।
ইনসপেক্টর, মানুষের অবস্থা সবসময় এক রকম থাকে না। মিঃ গোয়েডলারও প্রথম দিকে বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে ছিলেন। সেই সময় আমি তাকে একটু সাহায্য করেছিলাম। খুবই সামান্য মাত্র কয়েক হাজার টাকা।
স্বভাববশে অত্যন্ত ঝুঁকির কাজেই তিনি আমার সেই সামান্য পুঁজি লাগিয়েছিলেন। আর একসপ্তাহ পরেই তিনি অবিশ্বাস্য ধনী হয়ে যান।
অতীতের স্মৃতিচারণ করতে করতে যেন তন্ময় হয়ে গিয়েছিলেন মিস ব্ল্যাকলক। পরে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
–সেই দিনগুলি কী উত্তেজনাময় আর উপভোগ্যই ছিল। এরপর আমার বাবা মারা গেলেন। আমার এক পঙ্গু বোন ছিল। সে খুবই অসহায় হয়ে পড়ল। আমাকে তাই সব ছেড়ে তাকে দেখার জন্য যেতে হল। এর একবছর পরেই মিঃ গোয়েডলার মারা যান।
কাজের সময় যথেষ্ট টাকা পেতাম আমি। তাই তিনি আমাকে কিছু দিয়ে যাবেন আশা করিনি। যখন শুনলাম তার স্ত্রী বেন মারা গেলে সব সম্পত্তি আমিই পাব, খুবই আনন্দ হয়েছিল।
র্যাণ্ডালের স্ত্রী ছিল রোগেভোগা, বেশিদিন বাঁচার আশা ছিল না। সে খুবই চমৎকার মানুষ আমাকে পছন্দ করত। আমার ধারণা, সব জেনে সে খুবই খুশি হয়েছে।
বেন এখন থাকে স্কটল্যাণ্ডে। যুদ্ধের আগে আমার বোনকে নিয়ে সুইজারল্যাণ্ডে এক স্বাস্থ্যনিবাসে গিয়েছিলাম। সেখনেই সে মারা যায়।
কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থাকলেই মিস ব্ল্যাকলক। পরে বললেন, মাত্র এক বছর আগে আমি ইংলণ্ডে এসেছি।
গভীর মনোযোগের সঙ্গে তার কথা শুনছিলেন ক্র্যাডক, এবারে বললেন, আপনি বললেন খুব শিগগিরই ধনী হতে পারেন–কত শিগগির মনে করেন আপনি?
–বোনকে যে নার্স দেখাশোনা করে তার কাছ থেকে শুনেছি, বোনের শরীর খুবই জীর্ণ হয়ে পড়েছে। হয়তো কয়েক সপ্তাহ আর বেঁচে থাকবে। কিন্তু ওই বিপুল পরিমাণ অর্থের কোন সার্থকতা আমার কাছে নেই। আমার সরল জীবনযাত্রার জন্য যেটুকু দরকার তা আমার আছে। আমার বয়সও হয়েছে। তবু আমাকে যদি প্যাট্রিক আর জুলিয়া খুন করতে চায় তাদের এখনও কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।