- বইয়ের নামঃ এ মার্ডার ইজ অ্যানাউনসড
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- প্রকাশনাঃ সমতট
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর, রহস্য, গোয়েন্দা কাহিনী
এ মার্ডার ইজ অ্যানাউনসড
১. বিজ্ঞাপন ছাপা হল
এ মার্ডার ইজ অ্যানাউনসড (১৯৫০) – আগাথা ক্রিস্টি
অনুবাদ : নচিকেতা ঘোষ
০১.
রীতিমত চমকে দেবার মত একটা বিজ্ঞাপন ছাপা হল চিপিং ক্লেগহর্ন গেজেটের বিজ্ঞাপন কলমে।
…একটি খুন হবে শুক্রবার ২৯শে অক্টোবর, সন্ধ্যা সাড়ে ছটায়, লিটল প্যাডকস-এ। বন্ধুরা অনুগ্রহ করে একমাত্র ঘোষণাটি লক্ষ্য করবেন।
লিটল প্যাডকস হল ভিক্টোরিয়া যুগের আদলে মাঝারি আকারের একটি বাড়ি। বাড়িতে সবার আগে চোখে পড়ে দীর্ঘ বারান্দা আর সবুজ পাল্লার জানালা।
বিরাট দীর্ঘ ড্রইংরুম। একসময়ে এই ঘরখানায় দুটো দরজা ছিল। ঘরের একদিকে জানালা সহ একটা ছোট ঘর। অনেক আগে দুটো আলাদা ঘর হিসেবেই এটি ব্যবহৃত হত। বর্তমানে মাঝখানের বাধা সরিয়ে দুটো ঘরকে একটা ঘরেই বদলে নেয়া হয়েছে।
ঘরের মধ্যে দুপাশে দুটি চুল্লী। তবে এগুলো ব্যবহার করা হয় কম। কেননা বাড়িতে কেন্দ্রীয় তাপচুল্লী রয়েছে।
লিটল প্যাডকস-এর বর্তমান কর্তী মিস ব্ল্যাকলক। তাঁর বয়স ষাট ছুঁয়েছে। তাঁর দূর সম্পর্কের এক ভাইঝি জুলিয়া সিমন্স ও ভাইপো প্যাট্রিক সিমন্স থাকে তার সঙ্গে।
আর আছেন মিস ডোরা বানার-মিস ব্ল্যাকলকের স্কুল জীবনের বান্ধবী। দুজনেই সমবয়স্কা। এই অনাথা বান্ধবীটিকে দেখাশোনার কেউ ছিল না। বৃদ্ধ বয়সের পেনসনেই তার দিন কাটত।
স্কুল জীবনের বান্ধবী। নিতান্ত আবেগ তাড়িত হয়েই মিস ব্ল্যাকলক তাকে নিজের কাছে নিয়ে এসেছিলেন। বলেছিলেন, এতবড় বাড়ি সামলানোর জন্য তার বিশেষ সাহায্যের দরকার ছিল।
বেচারী ডোরা একটু ভুলো মনের মানুষ। সবসময় সব ব্যাপার খেয়াল রাখতে পারেন না। তার জন্য মাঝে মাঝে বেশ সমস্যায় পড়ে যেতে হয় মিস ব্ল্যাকককে। তবে তাদের উভয়ের মধ্যে স্নেহ প্রীতি আনুগত্য অক্ষুণ্ণই ছিল।
.
সরকারী ভাবে ঘটনাটার তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছিল ডিটেকটিভ ইনসপেক্টর ডারমট ক্র্যাডকের ওপরে।
এই মুহূর্তে তার কাছেই ঘটনার বিবরণ শুনছিলেন মিডলসায়ারের চিফ কনস্টেবল জর্জ রাইডেসডেল।
ক্র্যাডক জানালেন, কনস্টেবল লেগ ফোন করেছিল স্যার। সে ঠিক মতই কাজ করে চলেছে। অবস্থার পর্যালোচনা করছে দ্রুত।
নিহত ব্যক্তির পরিচয় জানা গেছে? জানতে চাইলেন রাইডেসডেল।
-হ্যাঁ স্যর, রুডি সার্জ। জাতিতে সুইস। মেডেনহ্যাম ওয়েলসে স্পা হোটেলে রিসেপসানিস্টের কাজ করত। সার্জেন্ট ফ্লেচার সেখানে গেছে। সে বাসের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করে সেখানে যাবে।
এমনি সময় দরজা খুলে ঘরের ঢুকলেন স্যার হেনরি ক্লিদারিং। দীর্ঘ চেহারার সুপুরুষ চেহারার বয়স্ক মানুষ। ইনি স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের প্রাক্তন পুলিস কমিশনার।
-ক্র্যাডক নর্থ বেনহ্যাম নিউজ আর চিপিং ক্লেগহন গেজেটে আধ ইঞ্চি পরিমাণ বিজ্ঞাপনটা পড়ে শোনালেন।
-বেশ আগ্রহ জাগানো বিজ্ঞাপন। বলনেল স্যার হেনরি।
–বিজ্ঞাপনটা কে দিয়েছিল? জানতে চাইলেন রাইডেসডেল।
বর্ণনা যা পাওয়া যায় তাতে জানা যায়, রুডি সার্জ নিজেই দেয় বুধবার।
–এর উদ্দেশ্য কি হতে পারে? স্যর হেনরি প্রশ্ন করলেন।
–কি আর উদ্দেশ্য–স্থানীয় মানুষের কৌতূহল জাগানোর চেষ্টা আর কি। রাইডেসডেল বললেন।
–চিপিং ক্লেগহর্ন জায়গাটা কি রকম? স্যর হেনরি প্রশ্ন করলেন।
-বেশ বড় এলাকা। প্রাকৃতিক দৃশ্যময় গ্রাম। কৃষি শ্রমিকদের জন্য ওখানে যেসব কটেজ বানানো হয়েছিল বর্তমানে সেখানে কিছু বয়স্কা অবিবাহিতা মহিলা আর কিছু অবসরপ্রাপ্ত দম্পতির বাস। ভিক্টোরিয় যুগের কিছু বাড়িও আছে।
বোঝা যাচ্ছে, বিজ্ঞাপনটা দেখে স্থানীয় সকলেই যে সন্ধ্যা ছটায় সেখানে ব্যাপার জানতে হাজির হবে তাতে সন্দেহ নেই। সেই বৃদ্ধা মহিলাটি যদি হাজির থাকতেন তাহলে তিনিও নির্ঘাৎ মাথা গলাতেন। বললেন স্যর হেনরি।
-বৃদ্ধা মহিলাটি কে?
–তিনি ঈশ্বরের বিশেষ সৃষ্টি একজন গোয়েন্দা। অসাধারণ প্রতিভাময়ী। সারাক্ষণ এই বয়স্কা অবিবাহিতাকে শুধু সেলাই করতেই দেখা যায়। তিনি তোমাকে অবলীলায় বলে দেবেন কি ঘটতে পারত, আর সত্যিই কি ঘটেছিল। আর এটাও তিনি বলতে পারবেন কেন এটা ঘটেছিল।
–কথাটা মনে রাখব স্যর। বললেন ইনসপেক্টর ক্র্যাডক।
এরপর রাইডেসডেল তাঁর বন্ধু স্যর হেনরিকে ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিলেন।
–তোমার অনুমানই ঠিক। পড়শীরা সবাই সেখানে হাজির হয় ৬-৩০ মিনিটে। কিন্তু ওই সুইডিস ছোকরা কি জানত যে তারা সেখানে হাজির হবেই? তাছাড়া লুঠ করে নেবার মত যথেষ্ট জিনিস তাদের কাছে সেই সময় থাকা কি সম্ভব?
স্যার হেনরি বললেন, এটা কোন লুঠ করার ঘটনা নয়। সিনেমার মত ভয় দেখানোর মজা করাই হয়তো উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু লোকটা নিজেকে গুলি করল কি ভাবে?
রাইডেসডেল একটা কাগজ টেনে নিয়ে একপলকে দেখে নিয়ে বললেন, ডাক্তারের প্রাথমিক রিপোর্ট হল রিভলভার ছোঁড়া হয় খুব কাছে থেকে–এটা আত্মহত্যা না খুন বোঝার উপায় নেই।
–রিভলভার সম্পর্কে রিপোর্ট কি?
–বিদেশে বানানো। এর জন্য সার্জের কোন অনুমতিপত্র ছিল না।
–তাহলে তো ছোকরা দেখছি সুবিধের ছিল না। বললেন স্যর হেনরি।