–এটা একটা কৌশলও হতে পারে। আপনি তাকে যেতে দেবেন না সে জানত।
-ওসব ভাবনা আপনার, উত্তরও আপনি নিজেই পেয়ে যাবেন। আমি এটুকু বলতে পারি, আমার প্রতি কোন রকম আক্রোশ থাকলে মিৎসি অনেক সহজ উপায়ে আমাকে বিষ খাওয়াতে পারত। সমস্ত ব্যাপারটাই অবাস্তব। বিদেশী বলেই তাকে ঠাণ্ডা মাথার খুনী ভাবা ঠিক নয়। দরকার হলে তাকে আবার জেরা করতে পারেন।
ক্র্যাডক এবারেও সহজ উত্তরই পেলেন মিৎসির কাছে। বিজ্ঞাপনটা পড়ে সে খুবই ভয় পেয়ে গিয়েছিল। তাই চারটের পরেই সদর দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল।
ক্র্যাডক তাকে প্রশ্ন করলেন, কিন্তু মিসেস হেমস বলেছেন, কাজ সেরে ওই দরজা দিয়েই ৫-৩০ মিঃ বাড়িতে ঢোকেন। তারপর দরজা বন্ধ করে দেন।
–বন্ধ করেননি, বলল মিৎসি, আমার ধারণা তিনি খেয়াল রেখেছিলেন যাতে দরজা বন্ধ হয়।
-তোমার এ কথার উদ্দেশ্য?
–ওই ছোকরা আঁটঘাট আগে থেকেই বেঁধে নিয়েছিল। সে জানত কোথায় আসতে হবে, আর তার জন্য দরজাটা খোলা থাকবে।
–আরও পরিষ্কার করে বল মিৎসি।
-আমি বলতে পারি, কিন্তু জানি আমার কথা বিশ্বাস করবেন না। তবু বলছি, এক সপ্তাহ আগে ওই ছোকরা টাকা চাইতে এলে তাকে মিস ব্ল্যাকলক ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। আমি তাকে দেখেছি, বাইরে এসে মিসেস হেমসের সঙ্গে কথা বলেছিল।
-কিন্তু সামার হাউসে ওদের কি কথা হয় তা তোমার শোনা সম্ভব ছিল না নিশ্চয়ই।
–কেন সম্ভব হবে না। আমি তরকারীর জন্য কচি বিছুটি পাতা আনতে বাগানে গিয়েছিলাম। তখন আমি ওদের কথা বলতে শুনেছি। ছোকরা তাকে বলল, আমি কোথায় লুকোব? মিসেস হেমস বলেছিল, আমি দেখিয়ে দেব। ঠিক সওয়া ছটার সময়।
আমি ভেবেছিলাম ভালবাসার ব্যাপার–এখন বুঝতে পেরেছি ওরা দুজনে মিলে খুনের আর ডাকাতির মতলব করেছিল।
–আর কি দেখেছ তুমি?
–তাকে সামার হাউস থেকে বেরিয়ে যেতে দেখেছিলাম।
–এসবকথা সেদিন আমাকে বলনি কেন? সন্দিগ্ধভাবে প্রশ্ন করলেন ক্র্যাডক।
–ওদের মতলবটা তখনও বুঝে উঠতে পারিনি।
–কিন্তু ধর, কেউ যদি বলে, তোমাকে রুডি সার্জের সঙ্গে কথা বলতে দেখেছে—
মিথ্যে মিথ্যে, একদম মিথ্যে কথা।
মিৎসির কথাগুলো ক্র্যাডকের মনে আলোড়ন তুলেছিল। মিসেস হেমস সম্পর্কে কথাগুলো সে বেশ জোর দিয়েই বলেছে।
ফিলিপিয়া হেমসের সঙ্গে কথা বলবেন স্থির করে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন তিনি।
হলঘর থেকে বেরিয়ে আসার সময় একটা ভুল দরজার সামনে এসে দাঁড়ালেন ক্র্যাডক।
সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় দেখতে পেয়ে মিস বানার তাকে ঠিক দরজাটা দেখিয়েছিলেন।
–ওই দরজাটা খোলে না। বাঁদিকে পরের দরজাটা। আমারও প্রায়ই ভুল হয়ে যায়। ওটাতে ঠেস রেখে হলঘরে টেবিল রাখা হত। পরে সেটা দেয়ালের দিকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
ক্র্যাডক সচকিত হয়ে উঠলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, টেবিলটা সরানো হয়েছে? কতদিন আগে?
–দিন দশ-পনেরো হবে
বললেন মিস বানার।
–টেবিলটা সরানোর দরকার হল কেন?
–ঠিক মনে পড়ছে না। মনে হয় ফিলিপিয়া বড় একটা ফুলদানী তৈরি করেছিল। রঙবেরঙের ফুল ডাল পাতা সুন্দরভাবে সাজাতে পারে ও। ফুলগুলো দরজার সামনে না রেখে দেয়ালের দিকে রাখলে বেশি ভাল দেখাবে এজন্যই টেবিলটা সরিয়ে নিয়েছিল।
ক্র্যাডক লক্ষ করলেন, যে-দরজা তিনি খোলার চেষ্টা করছিলেন তার মাঝামাঝি সরু সরলরেখার মত একটা দাগ। টেবিলটা এখানে রাখা ছিল, এটা তারই দাগ, তিনি বুঝতে পারলেন।
দরাজাটা কি পেরেক এঁটে বন্ধ করা হয়েছিল? প্রশ্ন করলেন ক্র্যাডক।
–খুব সম্ভব তালা লাগিয়ে, খিলও আঁটা হয়েছিল। বললেন মিস বানার।
ক্র্যাডক হাত বাড়িয়ে খিলটা দেখতে চাইলেন, খিলটা সহজেই সরে এল।
-দরজাটা শেষ কবে খোলা হয়েছিল, মিস বানার?
–অনেক বছর হয়েছে, বললেন মিস বানার, আমি এখানে আসার পর ও দরজা খোেলা হয়নি।
-তালার চাবি কোথায় থাকে আপনি বলতে পারবেন?
–হলঘরের ড্রয়ারে অনেক চাবি আছে। তার মধ্যেই আছে নিশ্চয়।
ক্র্যাডক মিস বানারের সঙ্গে গিয়ে ড্রয়ারের অনেক চাবি নেড়েচেড়ে দেখলেন। একটা চাবি একটু অন্য রকম মনে হল তার। সেটা তুলে নিয়ে দরজার কাছে এলেন। চাবিটা সহজেই তালায় ঢুকে গেল। তারপর একটু ঠেলতেই দরজা খুলে গেল।
ক্র্যাডকের মুখ গম্ভীর হয়ে উঠল। তিনি দরজাটা তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে খুঁটিয়ে দেখলেন।
–মিস বানার, দরজাটা সম্প্রতি ভোলা হয়েছে দেখছি। কজায় তেল দেওয়াও হয়েছে। মিস বানার বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইলেন। তিনি যেন ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।
বিস্ময়ের ঘোর কাটলে বললেন, কিন্তু এ কাজ কে করতে পারে? দরজাটা তো খোলা যায় না জানতাম।
ক্র্যাডক বুঝতে পারলেন, অজানা যে লোকের সন্ধান তিনি করছেন, সে লোক–এখানে এই ড্রয়ংরুমেই ছিল সেই রাতে।
২. ইঙ্গিত
০৬.
মিস ব্ল্যাকলককে সবকথা জানালেন ক্র্যাডক। তার ইঙ্গিতও বুঝতে অসুবিধা হল না।
ধীর শান্ত কণ্ঠে তিনি বললেন, গোটা ব্যাপারটাই বদলে যাচ্ছে দেখছি। কিন্তু আমাদের চোখের আড়ালে দরজায় এমন কারচুপি কে করল বুঝতে তো পারছি না।
ব্যাপারটা নিশ্চয় পরিষ্কার হয়েছে আপনার কাছে। সেদিন যখন আলো নিভে গিয়েছিল, যে কেউ গা ঢাকা দিয়ে এই দরজা দিয়ে রুডি সার্জের পেছনে গিয়ে দাঁড়াতে পারত, আর আপনাকে গুলি করাও তার পক্ষে অসম্ভব ছিল না।