এরপরে, স্যর, বুঝতেই পারছেন, কাগজ পড়ে সবই জানতে পারলাম। রুডি একজনকে গুলি করে পরে নিজেই আত্মহত্যা করে। খবরটা পড়ে আমি খুবই বিব্রত হয়ে পড়েছিলাম। ব্যাপারটা আগেই জানতাম বলে নিজেকেও এর সঙ্গে জড়িত মনে হচ্ছিল।
রুডি আমাকে এমনভাবে কথাটা বলেছিল যে সত্যিই একটা কৌতুকের ব্যাপার বলেই মনে হয়েছিল আমার। তবে ওর যে একটা রিভলভার ছিল, সেকথা আমি জানতাম না।
–ওই পার্টি কে ঠিক করেছিল সেসব কিছু জানিয়েছিল সে?
প্রশ্নটা করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মান্নার মুখের দিকে তাকালেন ক্র্যাডক।
-না, এসব কিছু বলেনি।
–সবই কেমন অস্বাভাবিক ঠেকছে।
মেডেন হ্যাম ফেরার পথে রাইডেসডেল বললেন, একজন অজানা লোক অন্ধকারে সুইস ছোকরার পেছনে হাজির হল, কোথায় ছিল সে, কে লোকটা?
–সে পাশের দরজা দিয়ে আসতে পারে, বললেন ক্র্যাডক।
–রান্নাঘরের মধ্য দিয়ে এসেছিল বলছ?
–হ্যাঁ স্যর। ওই মেয়েটিকে আমার গোড়া থেকেই সন্দেহজনক মনে হয়েছে। সেই হয়তো ওই লোকটিকে ঠিক মুহূর্তে ঢুকতে সাহায্য করেছিল। পরে সন্দেহমুক্ত থাকবার জন্য ডাইনিং রুমের দরজা বন্ধ করে পরিত্রাহি চিৎকার জুড়েছিল।
কিন্তু ওই যে কি নাম…এডমণ্ড সোয়েটেনহ্যাম, সে তো দেখলাম বলেছে দরজায় চাবি দেওয়া ছিল বাইরে থেকে। সে দরজা খুলে মেয়েটাকে বাইরে এনেছিল। বাড়ির ওই অংশে আর কোন দরজা আছে?
হ্যাঁ। পেছনের সিঁড়ির নিচে রান্নাঘরের দিকে একটা দরজা আছে। তবে ওটার হাতল নাকি তিন সপ্তাহ আগে খুলে যায়। সেটা এখনও লাগান হয়নি। দরজাটা তাই বন্ধই ছিল। হাতলের জায়গায় বেশ পুরু ধুলো জমে ছিল।
যাই হোক, মেয়েটার রেকর্ড ভাল করে দেখে নিও। যদিও পুরো ব্যাপারটাই আমার কাছে একটা থিওরি বলেই মনে হচ্ছে।
একটু থেমে তিনি আবার বললেন, ওই রিভলভারটা–যদি এই থিওরি সঠিক হয় তাহলে ধরতে হবে ওটা সার্জের নয়। তার যে কোন রিভলভার ছিল সেকথাও কেউ বলেনি।
-তদন্তের আর অন্য কোন দিক, স্যার
যদি থিওরি ঠিক হয় তাহলে কোথাও একটা মোটিভ পাওয়া যাবে। ঠাণ্ডা মাথায় হত্যার পরিকল্পনা বিনা কারণে হয় না। কিন্তু বুঝতে পারছি না মিস ব্ল্যাকলককে কে খুন করার চেষ্টা করতে পারে? একথার উত্তর দিতে পারেন একমাত্র মিস ব্ল্যাকলক নিজে।
–কিন্তু তিনি তো জোরের সঙ্গে এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন।
–হ্যাঁ স্যার। রুডি সার্জ তাকে কেন খুন করতে চাইবে এটা তিনি বিশ্বাসই করতে চাননি। তাছাড়া অন্য একটা ব্যাপারও আছে।
–সেটা কি?
–এই চেষ্টা আবার হতে পারে স্যার।
–তাহলে থিওরির সত্যতা প্রমাণ হবে। মিস মারপলের ওপরেও তুমি নজর রেখো। বললেন রাইডেসডেল।
–তিনি কেন, স্যার?
–আমি শুনেছি তিনি ক্রেগহর্নের ভিকারেজে আছেন। চিকিৎসার জন্য সপ্তাহে দুদিন মেডেনহ্যাম ওয়েলসে আসতে হয় তাঁকে। ভিকারের স্ত্রী সম্ভবত তাঁর বান্ধবীর মেয়ে। বুড়ি উত্তেজনার খোরাক খুঁজতে আনন্দ পায়।
.
০৫.
–আপনাকে আর একটু বিরক্ত করতে এলাম মিস ব্ল্যাকলক।
–শুনলাম ইনকোয়েস্ট সাতদিন পিছিয়ে গেছে?
–হ্যাঁ। সেজন্যই নতুন কোন সূত্রের সন্ধান করতে হচ্ছে, বললেন ক্র্যাডককে, রুডি সার্জ সম্পর্কে জানা গেছে, মন্ট্রির হোটেল কেম আলপসের মালিকের ছেলে নয়। সে আর্দালির কাজ করত বের্ন-এর হাসপাতালে। সেই সময় অনেক রুগীরই অলঙ্কার খোয়া যেত। এক রেস্তোরাঁয় ওয়েটারের কাজও করেছিল। সেখানে ডুপ্লিকেট বিল করে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নিত।
এরপর জুরিখের এক ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কিছুদিন কাজ করে। সেখানেও যতদিন ছিল মালপত্র চুরি হত।
–ছিঁচকে চুরিতে ভালই হাত পাকিয়েছিল। তাকে আমার চেনা মনে হয়নি।
–হ্যাঁ, রয়্যাল স্পা হোটেলে সে আপনাকে চিনতে পারার ভাঁওতা দিয়েছিল। সুইজারল্যাণ্ডে পুলিসের তাড়া খেয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জাল করে এদেশে পাড়ি জমিয়েছিল।
–কিন্তু চিপিং ক্লেগহর্নে সে এসেছিল কেন?
–বাড়িতে আপনার সত্যিই কি কোন মূল্যবান জিনিস নেই বলছেন?
–আমি শপথ করে বলতে পারি ইনসপেক্টর।
–তাহলে বুঝতে হয়, আপনাকে আক্রমণ করার জন্যই এখানে এসেছিল।
–আমিও তোমাকে একথাই বলেছিলাম, লেটি। মিস বানার বলে উঠলেন।
–ওকথার কোন অর্থই হয় না। বললেন মিস ব্ল্যাকলক।
-এমন হতে পারে সে এরকম ঘটনা ঘটাতে চায়নি, বললেন মিস বানার, তোমাকে ভয়ঙ্কর কোন ইঙ্গিত করতেই চেয়েছিল হয়তো। বিজ্ঞাপনটা দেখেই আমার ভয় ধরেছিল। মিৎসি দেখনি, কেমন ভয় পেয়েছিল।
-হ্যাঁ, ওই মেয়েটির সম্পর্কেও আরও কিছু আমাকে জানতে হবে। বললেন ক্র্যাডক।
–ওর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যথাযথই ছিল। বললেন মিস ব্ল্যাকলক।
–ওসবে আমি সন্দেহ করছি না, রুডি সার্জের কাগজপত্রও ত্রুটি হীন বলেই মনে হয়েছিল।
–কিন্তু এটা কিছুতেই বুঝতে পারছি না, রুডি সার্জ আমাকে খুন করতে চাইবে কেন?
–তাকে দিয়ে একাজ কেউ করাতে পারে একথা ভেবে দেখেছেন?
ধীরে ধীরে বললেন ক্র্যাডক। কিন্তু এ কথায় মিস ব্ল্যাকলকের কোন প্রতিক্রিয়া তার চোখে পড়ল না।
–এই উত্তরও আমার জানা নেই। কেউ আমাকে খুন করতে চাইবে কেন?
–এর উত্তর আপনার কাছ থেকেই আশা করছি মিস ব্ল্যাকক।
–আমি এটুকুই বলতে পারি–আমার কোন শত্রু নেই। আর মিৎসি মেয়েটিকেও এর সঙ্গে জড়িত ভাবা একেবারেই হাস্যকর। গেজেটে বিজ্ঞাপন দেখেই ও ভয়ে আধমরা হয়ে ছুটে এসেছিল-মালপত্র নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার অনুমতি চেয়েছিল।