ক্র্যাডকের উদ্দেশ্যে বললেন মিস মারপল। তাকে খুবই চিন্তিত লাগছিল।
ডিটেকটিভ ইনসপেক্টর বললেন, তার কাছ থেকে আরও কিছু জানতে পারা যাবে বলছেন?
–সে হয়তো তাকে বলে থাকতে পারে লোকটি কে ছিল। বললেন মিস মারপল।
–লোকটি?
–হ্যাঁ, যে ছেলেটিকে কাজে লাগাতে চেয়েছি তার কথাই বলছি।
–এর পেছনে দ্বিতীয় কেউ ছিল বলছেন?
-হ্যাঁ। একজন সুদর্শন যুবক, বললেন মিস মারপল, চেক ইত্যাদি জাল করা এমনি ছোটখাট চুরিতে ও বেশ দক্ষ। আচমকা সে একটা রিভলভার নিয়ে খুনোখুনিতে নেমে পড়বে ব্যাপারটা বেশ অসংলগ্ন বলেই মনে হয়।
-আসলে তখন কি ঘটেছিল, সম্ভবত আপনিই বলতে পারবেন মিস মারপল। ক্র্যাডক বললেন।
মিস মারপলের মুখে লাল আভা দেখা গেল। তিনি বললেন, কিন্তু আমি জানব কি করে? খবরের কাগজে ঘটনার বিবরণ যা ছাপা হয়েছে তার বেশি কিছু চোখে পড়েনি।
–চিপিং ক্লেগহনে ক্র্যাডক যে সাক্ষাৎকার নিয়েছে, সেটা মিস মারপলকে একবার দেখিয়ে নেওয়া যেতে পারে। বললেন স্যার হেনরি।
-হ্যাঁ, উনি দেখতে পারেন। তাঁর মতামত জানার জন্য আমারও আগ্রহ রয়েছে। বললেন রাইডেসডেল।
বলে তিনি টাইপকরা রিপোের্ট এগিয়ে দিলেন।
–বেশি সময় লাগবে না, আমাদের চোখে যা এড়িয়ে গেছে, আপনি তা পেতে পারেন। প্রসঙ্গত বলি, ক্র্যাডকেরও আপনার মতই মত–চিত্রটা অন্য রকম।
মিস মারপল কাগজগুলোতে চোখ বুলিয়ে নামিয়ে রাখলেন।
–মানুষ কত রকমই চিন্তা করে, বলেও আবোল তাবোল। বেশির ভাগই তুচ্ছ।
ক্র্যাডক কিছুটা হতাশই হল মিস মারপলের মন্তব্যে। কিছুটা বিরক্তিও জমল তার মনে। তিনি বললেন, যে যাই বলে থাকুক, একটা ব্যাপার পরিষ্কার, তারা সকলেই দেখেছিল রিভলবার হাতে একজন লোক টর্চ জ্বেলে দরজা খুলে ঘরে ঢুকেছিল। সে হুকুম করেছিল, মাথার ওপরে হাত তুলবার জন্য।
–কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হল, মিস মারপল বললেন, তাদের কিছুই দেখবার সুযোগ ছিল না। হলঘরে কোন আলোই ছিল না, ওপরের চাতালেও না।
-হ্যাঁ, তা ঠিক। বললেন ক্র্যাডক।
-একটা লোক যদি অন্ধকার ঘরে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে টর্চের জোরালো আলো ঘরের মধ্যে ফেলে তাহলে কেবল আলো ছাড়া কোন লোকের পক্ষেই আর কিছু দেখা সম্ভব নয়।
হ্যাঁ, আমি পরীক্ষা করে দেখেছি। বললেন ক্র্যাডক।
–এই অবস্থায় যদি কেউ বলে মুখোশপরা একজন মানুষ দেখেছে, তাহলে বোঝা যায়; এটা হল, তাদের আলো ফিরে আসার পরের চিন্তাধারারই ফল। সামনে রুডি সার্জ রয়েছে এটাই সকলে পরে দেখেছিল।
-আপনি বলতে চাইছেন, কারোর নির্দেশেই রুডি সার্জ ঘরভর্তি মানুষকে রিভলভার তুলে ভয় দেখিয়েছিল?
–আমার ধারণা তাকে একটু মজা করার কথাই বলা হয়েছিল, বললেন মিস মারপল, এজন্য তাকে টাকাও দেওয়া হয়েছিল। খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেবার জন্যও টাকা পেয়েছিল সে।
বলা হয়েছিল নির্দিষ্ট রাতে মুখোশ আর কাল পোশাক পরে দরজা খুলে দাঁড়াতে, আর টর্চ জ্বালিয়ে চিৎকার করে বলতে–মাথার ওপরে হাত তুলুন।
-কিন্তু রিভলভার ছোঁড়ার ব্যাপারটা?
-ওহ, না তার কাছে কোন রিভলভার ছিল না।
–কিন্তু প্রত্যেকেই বলেছে
–হ্যাঁ, জানি। কিন্তু তার হাতে রিভলভার থাকলে সেটা কারোর দেখার কথা নয়। আমার ধারণা, সে হাত তুলুন বলার সঙ্গে সঙ্গেই কেউ তার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছিল, আর তার কাঁধের ওপর দিয়ে পর পর দুবার গুলি ছুঁড়েছিল। রুডি সার্জ আচমকা গুলির শব্দে ভয় পেয়ে দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করতেই পেছনের লোক তাকে গুলি করে। পরে রিভলভারটা তার পাশেই ফেলে দেয়।
উপস্থিত তিন জনেই বিস্ফারিত চোখে মিস মারপলের দিকে তাকালেন।
-কিন্তু ওই অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়ে এসেছিল–লোকটি কে? রাইডেসডেল বললেন।
–সেটাই আপনাদের খুঁজে বার করতে হবে–সেই অজানা লোকটি কে যে মিস ব্ল্যাকলককে খুন করার উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিল।
–তাহলে এটাকে ইচ্ছাকৃত আক্রমণ বলেই বলছেন আপনি?
–আপাতদৃষ্টিতে তাই মনে হয়। তবে এ বিষয়ে আমার সন্দেহ নেই যে, যে লোক এই পরিকল্পনা ছকেছিল রুডি সার্জ তাকে জানত। তার মুখ বন্ধ রাখার ব্যবস্থাও নিশ্চিত করেছিল। রুডি যদি কিছু বলে থাকে তাহলে ওই মার্না হ্যারিসকেই বলা সম্ভব।
–আমি এখনই তার সঙ্গে দেখা করছি। উঠে দাঁড়ালেন ক্র্যাডক।
–হ্যাঁ, তাহলে কিছুটা আলো অন্তত পাওয়া যাবে।
ক্র্যাডক ঘর ছেড়ে চলে গেলে রাইডেসডেল বললেন, আপনি আমাদের কিছু নতুন চিন্তার খোরাক দিলেন মিস মারপল।
.
সামান্য কয়েক কথাতেই ক্র্যাডক মানা হ্যারিসের প্রতিরোধ ভেঙ্গে দিতে সক্ষম হলেন। তাঁর কণ্ঠস্বর সতর্ক ও সহানুভূতিপূর্ণ ছিল।
–আপনাকে সবই আমি বলব। অনুগ্রহ করে আমাকে কেবল এসবের বাইরে রাখবেন।
একটু থেমে মার্না হ্যারিস আবার বলতে শুরু করল, ছবি দেখতে যাবার প্রস্তাব ও একদিন নিজেই করেছিল। ঠিক হয়েছিল ওই দিন সন্ধ্যার সময় যাব। কিন্তু পরে আমাকে জানাল ও আসতে পারছে না। কারণ সেদিন রাতে ও একটা মজার খেলায় যোগ দেবে, অবশ্য এতে পকেটেও কিছু আসবে।
একজন বিদেশীর কাছ থেকে এরকম ব্যবহার আমি মেনে নিতে পারিনি। তারপর থেকে আমি একরকম তাকে এড়িয়ে থাকবারই চেষ্টা করেছি।
মনে পড়ছে, ও বলেছিল ওই দিন রাতে কোন বাড়িতে একটা পার্টি হবে, সেখানে তাকে একটা ডাকাতের অভিনয় করতে হবে। তারপর কাগজের একটা বিজ্ঞাপনও আমাকে দেখাল।