–একেবারে নাগালের মধ্যে রয়েছে ফিলিপিয়া হেমস, তাকে দিয়েই শুরু করতে পারেন। উল্টো দিকের দরজাটাই ডায়াস হল। এরপর কাছাকাছি থাকে সোয়েটেনহ্যামরা–
.
০৪.
ইনসপেক্টর ক্র্যাডক তার গৃহীত সাক্ষাৎকারের বিবরণ যথারীতি চিফ কনস্টেবলকে পেশ করলেন।
রাইডেসডেল বললেন, সুইস পুলিসের কাছ থেকেও রিপোর্ট পাওয়া গেল। ছোকরা অলঙ্কার চুরি, চেক জাল, পরিচয় ভাড়ানো-নানা অসৎ কাজের সঙ্গেই যুক্ত ছিল। সবই অবশ্য ছোটখাট ব্যাপার।
কথা শেষ করে তিনি ক্র্যাডকের বিবরণ দ্রুত চোখ বোলাতে লাগলেন।
–খুবই সাধারণ ব্যাপার স্যর দেখছি। বিভিন্ন মানুষের বর্ণনা…বড্ড অসংলগ্ন আর পরস্পর-বিরোধিতা। তবে আসল ব্যাপারটা পরিষ্কারই পাওয়া যাচ্ছে।
-তবে স্যার, এটা একটা ভুল ছবি বলেই মনে হচ্ছে।
বেশ তো, ঘটনাটা আর একবার দেখে নেওয়া যাক। রুডি সার্জ মেডেনহ্যাম থেকে বাসে চেপেছিল ৫-২০ মিঃ। চিপিং ক্লেগহর্ন পৌঁছায় ছটার সময়। বাসের কণ্ডাক্টর আর দুজন যাত্রীর কাছ থেকে এই সাক্ষ্য পাওয়া গেছে।
বাসস্টপ থেকে হেঁটেই সে লিটল প্যাডকস-এ পৌঁছায়। সম্ভবত সদর দরজা দিয়েই বাড়ির ভেতরে ঢোকে।
সে সকলকে রিভলভার দেখায়, গুলি ছোঁড়ে, একটা গুলিতে মিস ব্ল্যাকলক সামান্য আহত হন। তৃতীয় গুলিটাতে সে আত্মহত্যা করে।
এই শেষের ব্যাপারটাই যা একটু গোলমেলে, সেটা হঠাৎ দুর্ঘটনা জনিত না ইচ্ছাকৃত কোনটারই নিশ্চিত প্রমাণ নেই।
এতসব কাণ্ড এই ছোকরা কেন করল তার বিশ্বাসযোগ্য কোন কারণ অবশ্য পাওয়া যাচ্ছে না। তবে করোনারের জুরিরা সম্ভবত এটাকে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনাজনিত একটা কিছু বলবে। যাই বলা হোক আমাদের কাছে তা সমান।…এই তো মামলা
-তবু আমার মনে হয় স্যার, পুরো চিত্রটাই ভুল।
তার মানে তুমি বলতে চাইছ, চিপিং ক্লেগহর্নের ঘটনায় যাদের পাওয়া যাচ্ছে তাদের কেউ তোমাকে মিথ্যা বলেছে?
-স্যার, ওই বিদেশী উদ্বাস্তু মেয়েটা, মনে হয় সে যা জানে সব বলেনি।
–তাকে লোকটার সঙ্গে জড়িত বলে মনে হচ্ছে তোমার? সে তাকে একাজে সাহায্য করেছিল?
-এরকম কিছু হবে বলেই মনে হচ্ছে। তবে সেখানেও গোলমাল থেকে যাচ্ছে বাড়িতে মূল্যবান কিছুই ছিল না। মিস ব্ল্যাকক একথা দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেছেন। আবার মিস বানার অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেছেন মিস ব্ল্যাকলককেই সরাসরি হত্যার চেষ্টা হয়েছিল। চিন্তিত ভাবে বললেন ক্র্যাডক।
–কিন্তু রুডি সার্জ মিস ব্ল্যাকলককে হত্যা করতে চাইবে কেন?
–এখানেই তো তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে স্যার। মিস ব্ল্যাকলকের কাছেও এটাই জিজ্ঞাস্য। অবশ্য যদি তিনি মিথ্যা বলে না থাকেন।
–ঠিক আছে–আরও একটু চেষ্টা করা যাক। আজ মেডেনহ্যামের হোটেলে তুমি আর স্যার হেনরির সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে যাবে।
-ধন্যবাদ স্যার। ক্র্যাডক অবাক হয়ে তাকালেন চিফ কনস্টেবলের দিকে।
–ঘটনা হল আমরা একটা চিঠি পেয়েছি
ঠিক এই সময়ে স্যার হেনরি ঘরে ঢুকলেন।
সুপ্রভাত ডারমট।
–তোমার জন্যই একটা জিনিস নিয়ে অপেক্ষা করছি। বললেন রাইডেসডেল।
ব্যাপারটা কি
রয়্যাল স্পা হোটেলে আছেন এমন একজন বয়স্কা মহিলার কাছ থেকে একটা চিঠি পাওয়া গেছে। চিপিং ক্রেগহনের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে এমন কিছু তাতে আছে। মহিলার নামটা হল…কি যেন..মারপল-হ্যাঁ জেন মারপল।
–এই তো আমার সেই প্রতিভাময়ী গোয়েন্দাটি–এঁর কথাই বলেছিলাম, সোল্লাসে বলে উঠলেন স্যর হেনরি, যেভাবেই হোক তিনি মেডেনহ্যাম ওয়েলসে হাজির ছিলেন আর স্বভাববশে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন।
-ঠিক আছে, বললেন রাইডেসডেল, রয়্যাল হোটেলে মধ্যাহ্নভোজের পর আমরা এই মহিলার সঙ্গে দেখা করব।
.
গোলাপী মুখে সামান্য বলিরেখা জেগেছে, মাথায় শ্বেতশুভ্রা চুল, নীলাভ চোখে কোমলতা মাখানেনা। সারা দেহে পশমী পোশাক জড়ান। বেশ বৃদ্ধা মনে হচ্ছিল তাকে। কোন বাচ্চার জন্য কিছু বুনে চলেছিলেন। অবিরাম।
স্যার হেনরিকে দেখেই নির্মল হাসি হাসলেন তিনি। চিফ কনস্টেবল আর ডিটেকটিভ ইনসপেক্টরের পরিচয় পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলেন।
-অনেক দিন পরে আপনার সঙ্গে দেখা হল স্যার হেনরি। আমার ভাইপো রেমণ্ড তার একটা বইয়ের জন্য বেশ কিছু অর্থ পেয়ে গেছে। তাই জোর করে হোটেলে পাঠিয়ে দিল।
চিফ কনস্টেবল দু-চার কথার পরই সরাসরি কাজের কথা পাড়লেন।
–আপনার কথাই শুনতে এলাম মিস মারপল। বলুন এবারে শোনা যাক।
–ওহ। একটা চেকের ব্যাপার। ওই রুডি সার্জ সেটার কিছু বদলে দিয়েছিল।
রুডি সার্জ। চমকে উঠলেন রাইডেসডেল। আপনার চেকের লেখা বদলে দিয়েছিল।
–হ্যাঁ, আজই সকালে ব্যাঙ্ক থেকে এসেছে। চেকটা ছিল সাত পাউণ্ডের, সে সেটাকে সতের পাউণ্ড করে দেয়। সাত সংখ্যার আগে একটা দাগ বসিয়েছে আর অক্ষর লেখার শেষে ইংরাজি টিন কথাটা যোগ করেছে–একই কালি দিয়ে লেখা। আমার সন্দেহ হচ্ছে, এরকম কাজ সে আগেও করেছে।
তার এরকম কিছু দুষ্কর্মের কথা আমরাও সুইস পুলিসের কাছ থেকে জানতে পেরেছি, বললেন রাইডেসডেল, পুলিসের খাতায় তার নাম আছে।
পুলিসের তাড়া খেয়েই হয়তো কাগজপত্র জুটিয়ে নিয়ে এদেশে চলে এসেছে, বললেন মিস মারপল।
–ঠিকই অনুমান করেছেন। সম্মতি জানালেন রাইডেসডেল।
মিস মারপল বললেন, ডাইনিংরুমের স্বর্ণকেশী মেয়েটির সঙ্গে সে মেলামেশা করতে চাইত। মেয়েটি বিশেষ সাড়া দিয়েছে বলে মনে হয় না। মেয়েটি সব কথা আপনাদের বলেছে?