-বাড়ির কাজের লোকজন
–প্রতি মঙ্গলবার শুক্রবার একজন মালী আসে। সপ্তাহের পাঁচদিন গ্রাম থেকে আসে এক মিসেস হাগিন্স। এছাড়া একজন বিদেশিনী উদ্বাস্তু, মিৎসি তার নাম-সে রান্নার কাজ দেখে। বেচারী, আমার বিশ্বাস জীবনে বড় কোন আঘাত পেয়েছে, তাই সব সময়ই কেমন খ্যাপাটে মনে হয়। ওর ধারণা, সবাই ওকে অপমান করতে চায়। তবে রান্নাটা মোটামুটি করে।
-আমাকে যিনি দরজা খুলে দিয়েছিলেন তিনিই মিস জুলিয়া সিমন্স?
–হ্যাঁ। কথা বলতে পারেন ইচ্ছে করলে। প্যাট্রিক একটু বাইরে গেছে। ফিলিপিয়া হেমসকে ডায়াস হলে পাবেন।
.
০৩.
মিস ব্ল্যাকলক ঘর ছেড়ে চলে গেলেন। জুলিয়া ঘরে ঢুকে তার খালি চেয়ারে এসে বসল।
–গত রাতের কথাটা আপনার কাছে জানতে চাই মিস সিমন্স। প্রশ্ন করলেন ক্র্যাডক।
–ওহ, গতকাল? একদল মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন। কর্নেল আর মিসেস ইস্টারব্রুক, মিস হিনচক্লিফ আর মিস মারগাটরয়েড। মিসেস সোয়েটেনহ্যাম আর এডমণ্ড সোয়েটেনহ্যাম এবং মিসেস হারমন, মানে ভিকারের স্ত্রী। এভাবেই পর পর তারা এসেছিলেন।
এরা সবাই ভাব দেখাচ্ছিলেন যেন হঠাৎ এসে পড়েছেন। তারপরেই ঘড়ি বেজে ওঠে আর আলো নিভে যায়।
দরজা খুলে একজন মুখোশধারী বলে ওঠে–সবাই মাথার ওপর হাত তুলুন। একদম ফিল্মের ব্যাপার যেন। তারপরেই সেই মুখোশধারী গুলি ছুঁড়ল লেটি মাসীর দিকে।
–ঘটনার সময় সকলে কোথায় ছিলেন?
–সকলে দাঁড়িয়েছিলেন।
–আপনারা সকলে এই ঘরটায়ই ছিলেন না দূরের ঘরটায়?
মনে হয় বেশিরভাগই এই ঘরে। প্যাট্রিক অন্য ঘরে শেরি আনতে গিয়েছিল।
–আপনি কোথায় ছিলেন?
–মনে হয় জানালার কাছে ছিলাম।
–লোকটার হাতে টর্চ ছিল, সে সেটা দিয়ে কি করছিল?
–সে আমাদের সকলের ওপর আলো ফেলে। আমাদের সকলেরই চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছিল।
–লোকটা আলো এক জায়গায় ফেলেছিল না ঘোরাচ্ছিল?
একটু ভেবে নিল জুলিয়া। পরে বলল, ঘোরাতে চাইছিল আলোটা। আমার চোখে এসে পড়েছিল, তারপরই গুলির শব্দ হয় পর পর দুবার।
-তারপর?
-তারপর? লোকটা ঘুরে দাঁড়াল। মিৎসি সাইরেনের মত শব্দ করে আর্তনাদ শুরু করল। টর্চটা নিভে গেল, আবার গুলির শব্দ শোনা গেল। তারপরই দরজাটা কাচ কাচ শব্দ করে আস্তে আস্তে বন্ধ হতে লাগল।
–লোকটা কি ইচ্ছে করেই নিজেকে গুলি করেছিল বলে আপনার মনে হয়?
–আমার কোনই ধারণা নেই। আমি সবই তামাসা বলে ভাবছিলাম তখনও
–ধন্যবাদ মিস সিমন্স। এবারে মিৎসির সঙ্গে দেখা করতে চাই।
রান্নাঘরেই পাওয়া গেল মিৎসিকে। সে প্যাস্ট্রি তৈরি করছিল। ক্র্যাডককে দেখেই বলে উঠল, এখানে আপনার কি দরকার মিঃ পুলিসম্যান? আপনি কি জানতে চান?
–গত সন্ধ্যায় এ বাড়িতে যা ঘটেছে, সেটাই তোমার কাছে শুনতে চাই।
–সারা সন্ধ্যাই আমার খুবই খারাপ লাগছিল। একবার মনে হল চুপিচুপি কেউ যেন হলঘরে চলাফেরা করছে।
–ঘটনা কি ঘটেছিল তাই বল।
-তাইতো বলছি। আমি শেরী আর গ্লাসগুলো নিয়ে ড্রইংরুমে যাই। তখনই পরপর দরজা খুলে দিতে হচ্ছিল–একে একে সবাই আসছিল। তারপর আমি রান্নাঘরে চলে যাই। খুবই ভয় করছিল আমার।
-হ্যাঁ, তারপর?
–আমি গুলির শব্দ শুনতে পেলাম। অমনি ডাইনিং রুমের দিকে ছুটতে থাকি–তখনই আবার গুলির শব্দ আর ধপ করে শব্দ করে হল ঘরে যেন কিছু পড়ল। আমি দরজার হাতলটা ঘোরাতে গিয়ে দেখি সেটা বাইরে থেকে বন্ধ। আমি ঘরের ভেতরে আটকে যাই। পরে ওরাই আমাকে হাতল ঘুরিয়ে বাইরে আসতে দেয়। ঘর অন্ধকার–আমি মোমবাতি নিয়ে এসে দেখি-উরে ব্বাপস-রক্ত-কেবল রক্ত।
–ঠিক আছে। আপাতত এই থাক মিৎসি।
.
হলঘর পার হয়ে সদর দরজার কাছে আসতেই ক্র্যাডক আর ফ্লেচারের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল এক সুদর্শন তরুণের।
যথারীতি নিয়ম ধরেই ক্র্যাডক তার নাম, বয়স, তার যুদ্ধের কাজের খুঁটিনাটি দিয়ে কথা শুরু করলেন। তারপর বললেন, মিঃ সিমন্স, গত সন্ধ্যার ঘটনা যদি দয়া করে একটু বলেন
–গত সন্ধ্যার কথা, সে আর কি বলব সবাই নার্ভাস হয়ে পড়েছিল–বানি তো সারাদিন ধরে ভয় ধরানো কথা বলে চলেছিল।
-মিস বানার কিছু কি আশঙ্কা করছিলেন?
–মনে হচ্ছিল বেশ আনন্দ পাচ্ছিলেন।
–বিজ্ঞাপনটা দেখে মিস ব্ল্যাকক প্রথমে বোধহয় ওটা আপনার কাজ বলেই অনুমান করেছিলেন?
-ওহ, যাই ঘটুক, সবাই আমাকেই দায়ী করে।
মিঃ সিমন্স, এ ঘটনায় সত্যিই কি আপনার হাত ছিল?
–আমার–কখনই না।
–ওই রুডি সার্জকে আপনি আগে দেখেছিলেন?
–জীবনে কোনদিন না।
–এবারে দয়া করে বলুন, ঠিক কি ঘটেছিল?
-আমি পানীয় আনতে ছোট ড্রইংরুমে ঢুকেছিলাম, তখনই ঝপ করে আলো নিভে গেল। ঘুরে তাকাতেই চোখে পড়ল, একটা লোক দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলছে–সবাই হাত তুলুন। অমনি অন্ধকার ঘরে চেঁচামেচি শুরু হয়ে গেল। তখনই লোকটা রিভলভার ছুঁড়তে শুরু করল, তারপর নিজেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল, তার হাতের টর্চ নিভে গেল। আর সবাই আমরা অন্ধকারে ডুবে গেলাম।
–লোকটা মিস ব্ল্যাকলককেই তাক করছিল বলে আপনার মনে হয়?
–ওসব কিছুই না। লোকটা মজা করতেই চেয়েছিল। যখন দেখল বাড়াবাড়ি করে । ফেলেছে–
-তখন বলছেন নিজেকেই গুলি করে?
–অসম্ভব মনে হয় না।
–আপনি নিশ্চিত যে রুডি সার্জকে কখনও দেখেননি?
–বলছি তো কোনদিন না।
ধন্যবাদ মিঃ সিমন্স, আপনাকে আর বিরক্ত করব না। গতরাতে যারা উপস্থিত ছিলেন, তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাই। কিভাবে শুরু করলে সুবিধা হবে?