সেকারণেই তুমি লিখেছিলে লোটি? বলল বাঞ্চ।
–হ্যাঁ, আমি জানতাম, লেটিসিয়ার বোনের নাম ছিল শার্লট যাকে ডোরা বানার ডাকতেন লোটি বলে। কয়েকবার তিনি আমার সামনেই মিস ব্ল্যাকলককে লোটি বলে ডেকে ফেলেছিলেন। আর প্রতিবারেই তিনি লোটি বলার পরেই কেমন অপ্রস্তুত হয়ে ওঠেন।
–বের্নের কথা লিখেছিলে কেন? বললেন বাঞ্চ।
–ওখানে হাসপাতালেই রুডি সার্জ বয়ের কাজ করত। নিচু স্বরে বললেন মিস মারপল। যাই হোক মারগাটরয়েডের আকস্মিক মৃত্যু ঘটলে বুঝতে পারলাম, আরে দেরি করা ঠিক হবে না। যা করবার দ্রুত তা করে ফেলতে হবে। অথচ হাতে জুৎসই প্রমাণও ছিল না। তাই কাজের একটা ছক করে নিয়ে সার্জেন্ট ফ্লেচারের সঙ্গে কথা বললাম।
ইনসপেক্টরের সঙ্গে আগে কথা না বলে ফ্লেচার কিছু করতে রাজি হচ্ছিল না। অনেক বলে কয়ে আমি তাকে রাজি করিয়েছিলাম। তারপর দুজনে মিলে লিটল প্যাডকসে গিয়ে মিৎসিকে ধরে তালিম দিলাম।
আগে ওকে বুঝিয়ে দিলাম কি করতে হবে। বারবার মহড়া দিয়ে ও নিজেকে তৈরি করে নিল। যা যা করতে হবে আমাদের করে দেখাল। তারপর ইনসপেক্টর ক্র্যাডক এলে ওকে ওপরে পাঠিয়ে দিলাম।
–মিৎসি যা করেছে এক কথায় অপূর্ব। বলল জুলিয়া।
–কিন্তু এতসব করার কি দরকার ছিল তা তো বুঝলাম না। বাঞ্চ বলল।
–একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাবে, বললেন মিস মারপল, ব্যাপারটা জটিল অবশ্য। আমার পরিকল্পনা ছিল, মিৎসি স্বীকার করবে যে তার ব্ল্যাকমেল করারই ইচ্ছে ছিল। সে স্বীকার করবে যে ডাইনিং ঘরের চাবির গর্ত দিয়ে দেখেছে, মিস ব্ল্যাকলক একটা রিভলবার হাতে নিয়ে রুডি সার্জের পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। যা যা ঘটেছিল ও সবই পরিষ্কার দেখেছে।
একটা ভয় ছিল শার্লট না বুঝে যায় চাবির ফুটো দিয়ে কিছু দেখা মিৎসির পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু আচমকা চমকে গেলে মানুষ যুক্তিবুদ্ধি হারিয়ে ফেলে। তাই এই ভরসাতেই আমরা ঝুঁকি নিয়েছিলাম।
ব্যাপারটা খুবই ফলপ্রসূ হয়, বললেন ক্র্যাডক, আমিও একেবারে অন্য দিক থেকেই আক্রমণ করি এডমণ্ডকে, যদিও ভাল করে জানতাম সে কখনওই একাজ করতে পারে না। সরাসরি তাকে অভিযোগ করি।
–আমার অংশের অভিনয়ও নিশ্চয় যথাযথ হয়েছিল, বলল উল্লসিত ক্র্যাডক, আমি দৃঢ়ভাবেই অভিযোগ অস্বীকার করলাম। একেবারে পরিকল্পনার ছক ধরে। তবে আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে যা ছিল না তা হল, জুলিয়া আচমকা নিজে থেকেই বলে ওঠে সেই হল পিপ। ভেবেছিলাম পিপ আমিই হব।
জুলিয়ার কথা শুনে আমার মত ইনসপেক্টর ক্র্যাডকও হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তবে সঙ্গে সঙ্গেই তিনি এই ব্যাপারটা সুন্দরভাবে সামলে নেন। তিনি বলেন, কোন অর্থবতী মহিলাকে বিয়ে করাই আমার অভিপ্রায়।
–এতসবের কি দরকার ছিল? বলল জুলিয়া।
দরকার ছিল এজন্য যাতে শার্লট বিশ্বাস করে মিৎসি সত্যি সত্যি কিছু দেখে থাকবে। আর মিৎসিও একই কথা বারবার বলতে থাকে যাতে তার কথা সকলে শুনতে বাধ্য হয়। এরকম না হলে তাকে চুপ করাবার দরকার হবে না। ক্র্যাডক বললেন।
এরপর বললেন যেমন তাকে তালিম দেওয়া হয়েছিল, সেভাবেই মিৎসি ঘর ছেড়ে রান্না ঘরে চলে যায়। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শার্লটও বেরিয়ে গেল।
রান্নাঘরে মিৎসি একা হলেও আসলে একা ছিল না। সার্জেন্ট ফ্লেচার ছিলেন রান্নাঘরের পাশে বাসনমাজার ঘরের দরজার পেছনে। আর আমি ছিলাম রান্নাঘরে ঝটা বুরুশ রাখার আলমারির মধ্যে।
–ঘটনা কি ঘটবে তা তুমি ভাবতে পেরেছিলে জেন মাসী? বললেন বাঞ্চ।
দুটো ব্যাপার আমি ভেবেছিলাম। হয় মিৎসির মুখ বন্ধ রাখার জন্য শার্লট তাকে টাকা দিতে চাইবে। তা হলে সার্জেন্ট ফ্লেচারই এই ঘটনার সাক্ষী থাকবেন।
তা না করলে, আমি ধরে নিয়েছিলাম, শার্লট মিৎসিকে খুন করতে চাইবে।
শার্লটের মানসিক অবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। নিজেকে ধরে রাখার শক্তি আর তার ছিল না।
মিস হিনচক্লিফ আর মারগাটরয়েডের ঘটনাটার পর থেকে সে বেসামাল হয়ে পড়েছিল।
মিস হিনচক্লিফ পুলিশ স্টেশনে চলে গেলেন। তিনি ফিরে এলেই মারগাটরয়েড তাকে বলে দেবেন সে-রাতে শার্লট যে ঘরটায় যেখানে থাকার কথা ছিল সেখানে ছিলেন না।
জানালার আড়ালে থেকে, এই পরিস্থিতিতে, শার্লট বুঝে গিয়েছিল, মারগাটরয়েডের মুখ তখনই বন্ধ করার ব্যবস্থা করা দরকার যাতে মিস বাঞ্চ কিছু জানতে না পারেন।
মাত্র কয়েক মিনিট সময় ছিল হাতে। কোন পরিকল্পনা নেবার মত সময় ছিল ন। সরাসরি খুন ছাড়া কিছু করার ছিল না। এক মিনিট সময় নষ্ট না করে শার্লট গলায় ফাঁস এঁটে বেচারী মারগাটরয়েডকে হত্যা করে।
তারপর দ্রুত বাড়িতে ফিরে এসে পোশাক পাল্টে নেয়।
শার্লটের ভাগ্য খারাপ হল, এর পরেই ঘটল মুক্তোর মালা ছেঁড়ার ঘটনা। অপারেশনের দাগটা পাছে কেউ দেখে ফেলে এই ভেবে নিদারুণ ভয় পেয়ে গেল।
পরে পরেই ইনসপেক্টর ফোনে জানালেন, তিনি সকলকে নিয়ে আসছেন–মারগাটরয়েডের মৃত্যুর ঘটনাটা তদন্তের জন্য।
পর পর ধাক্কা আসতে লাগল। চিন্তা করবারও সময় ছিল না। মিৎসি এবারে ঘটালো নতুন বিপদ। ভয়ে দিশাহারা অবস্থায় একটা হিংস্র পশুতে পরিণত হল শার্লট।
আমি তার মনের অবস্থাটা বুঝতে পারছিলাম। সে কারণেই বঁটা রাখার আলমারিতে থেকে ডোরা বানারের গলা নকল করে আমি তাকে একেবারে গুঁড়িয়ে দিতে চেয়েছিলাম।