তবে শার্লট ফুলদানী তুলে নিয়েছিল এই কথাটা ডোেরা ঠিক বলেছিলেন। আমি এই সূত্রেই জেনে গিয়েছিলাম, তারের ওপর ফুলদানীর জল ঢেকে শার্লটই ফিউজ করে থাকতে পারে।
টেবিলে পোড়া দাগটা আমি ধরতে পারিনি, ক্র্যাডক বললেন, ডোরা বানার বলেছিলেন, তিনি একটা ঝিলিক আর চড়চড় শব্দ শুনেছিলেন। তাতে টেবিলের ওপর যে পোড়া দাগ পড়েছিল আমি ভেবেছিলাম কেউ সিগারেট রাখতেই দাগটা হয়েছিল। অথচ আমারই বোঝার ভুল ছিল, সেই সন্ধ্যায় কেউই সিগারেট ধরাননি…আর ফুলদানীর ফুলগুলোও শুকিয়ে গিয়েছিল ফুলদানীতে জল ছিল না বলে। সদাসতর্ক শার্লট এখানে মস্ত ভুল করে ফেলেছিল, ফুলদানীতে জল দিলে এমনটা হত না। ড্ডারা বানার ভেবেছিলেন, তিনিই ফুলদানীতে জল দিতে ভুলে গেছেন।
–ডোরা বানরের কথা এলোমেলো হলেও তাতে অনেক সত্য ছিল, বললেন মিস মারপল, সেই কথাগুলো শার্লট অন্যভাবে কাজে লাগিয়েছিল। সে তার মনে প্যাট্রিক সম্পর্কে সন্দেহ জাগিয়ে দিতে পেরেছিল।
–এভাবে আমাকে বেছে নিয়েছিল কেন? ব্যথিত ভাবে বলল প্যাট্রিক।
–ব্যাপারটা যে ভেবেচিন্তে করা হয়েছিল তা আমার মনে হয় না, বললেন ক্র্যাডক।
যাই হোক, এরপরে ছকমতই কাজ এগিয়ে চলল। আলো নিভে যেতে নিয়মিত দরজা খুলে রুডি সার্জ টর্চ হাতে ঘরে ঢুকল। আর শার্লট নিঃশব্দে ছোট ঘরের তেল লাগান দরজা দিয়ে। ঢুকে রুডি সার্জের পেছনে গিয়ে দাঁড়াল। সে বুঝতেই পারেনি রিভলবার হাতে তার পেছনে একজন এসে দাঁড়িয়েছে।
টর্চের আলো ঘরে ঘুরছে, এমনি সময়ে শার্লট গুলি করল, পরপর দুবার। পরে ঘুরে কাছে থেকে রুডিকে গুলি করে অস্ত্রটা তার পাশে ফেলে দেয়। তারপর হলঘরের টেবিলে দস্তানা রেখে নিজের জায়গায় ফিরে যায়। এই সময় কিছু একটা দিয়ে নিজের কানে ক্ষতও করে নেয়া–
–নিজের নখ কাটার যন্ত্র দিয়ে, বললেন মিস মারপল, কানের লতিতে সামান্য আঘাতেই অনেক রক্ত ঝরতে থাকে। রক্ত দেখে সকলেই তাকে গুলির আঘাতে আহত ভেবে নেয়।
–নিখুঁতভাবে পরিকল্পনা সফল হয়েছিল, বললেন ক্র্যাডক, ডোরা বানার বারবার বলেছে, রুডি সার্জ মিস ব্ল্যাকলককেই গুলি করেছিল। শালর্টকে যে আহত হতে তিনি দেখেছিলেন, সেকথা বোঝাতে চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত রুডি সার্জের মৃত্যু আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা বলেই ধরে নেয়া হত, মিস মারপলের জন্যই এতবড় ভুলটা এড়ানো সম্ভব হয়েছিল।
-ওহ, না, না, আমার ব্যাপারটা ছিল নিছকই আকস্মিক। মিঃ ক্র্যাডক, তদন্তে আপনি সন্তুষ্ট হতে পারেন নি–সেজন্যই ভুলটা ধরা পড়েছিল।
–কোথাও একটা গরমিল রয়েছে বুঝতে পারছিলাম, ক্র্যাডক বললেন, কিন্তু ধরতে পারলাম আপনি দেখিয়ে দেবার পর। এরপর আবিষ্কার করলাম দরজার রহস্যটা। তদন্তও নতুন দিকে মোড় নিল। লেটিসিয়া ব্ল্যাকলকের খুনীকে খুঁজে বের করার জন্য আমরা উঠে পড়ে লাগলাম।
–তাকে খুন করবার মত আরও একজন যে কাছাকাছি ছিল তা শার্লটের আজানা ছিল না। বললেন মিস পারপল, আমার ধারণা তিনি ফিলিপাকে দেখেই চিনতে পেরেছিলেন। ফিলিপা হেমস অনেকটাই তাদের মায়ের মত দেখতে।
কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার হল, ফিলিপাকে দেখে তিনি আতঙ্কিত বা অখুশি হননি। বরং খুশিই হয়েছিলেন। সম্ভবত তিনি ঠিক করেছিলেন, টাকা দিয়ে ওকে বশ করবেন অথবা মেয়ের মতই কাছে টেনে নেবেন।
ইনসপেক্টর যখন পিপ আর এমার সম্পর্কে খোঁজখবর করতে শুরু করলেন, তখন দেখা গেল শার্লট ফিলিপাকে আড়াল করবারই ব্যবস্থা করল। সে তার পুরনো দিনের অ্যালবাম থেকে ফিলিপার মায়ের অর্থাৎ সোনিয়ার ছবি, লেটিসিয়ার ছবি–সব বেমালুম সরিয়ে ফেলল।
–এদিকে আমার মাথায় ঢোকেমিসেস সোয়েটেনহ্যামই হলেন সোনিয়া গোয়েডলার। বিরক্তির সঙ্গে বললেন ক্র্যাডক।
-শার্লট আসলে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছিল ডোরা বানারকে নিয়ে। তাঁর বকবক করা স্বভাব, তার আবার অনবরত ভুল করা–কখন কি বিপদ ঘটিয়ে বসে সেটাই হয়েছিল উদ্বেগের বিষয়।
ওদের ওখানে যত কয়দিনই চা খেতে গেছি, লক্ষ্য করেছি, ডোরা বানারকে শার্লট সতর্ক নজরে রেখেছে।
একদিন ডোরা বানার তাকে লেটি সম্বোধন করল কথায় কথায়, শার্লটের চোখে স্পষ্ট দেখতে পেলাম ভয়ের ছায়া। শব্দটা যে নিছকই কথার ভ্রম নয়, তখনই আমার মাথায় আসে।
এর আগে ব্লু বার্ড কাফেতে যেদিন ডোরার সঙ্গে বসে কফি খেলাম, সেদিনও তার কথায় পরস্পরবিরোধী ভাব ছিল। মনে হয়েছিল তিনি দুজনের কথা বলছেন।
বন্ধুর সম্পর্কে বলতে গিয়ে একবার তিনি লেটি খুব দৃঢ় চরিত্রের মেয়ে বলে বললেন। পরক্ষণেই মন্তব্য করলেন খুবই হাল্কা চরিত্রের মেয়ে সে। একবার বললেন সে ছিল বুদ্ধিমতী, আর সফল। কিন্তু পরক্ষণেই এমন কথা বললেন, লেটিসিয়া ব্ল্যাকলকের জীবনের সঙ্গে যার কোন মিলই ছিল না।
ডোরা বানার সেদিন যখন জোড়া ল্যাম্পের কথা বলছিল আর সন্দেহ প্রকাশ করেছিল, কৃষক বউয়ের ল্যাম্পটা কেউ রাতারাতি বদলে গিয়েছে, তখন শার্লট কাফেতে গিয়েছিল। আমার মনে হয় আমাদের সবকথাই সে শুনতে পায় আর বুঝতে পারে ডোরা বানার তার বিপদ ডেকে আনছে।
সেদিন আমাদের সেই কথাবার্তার পরিণামেই শার্লট তার পক্ষে চরম বিপজ্জনক হয়ে ওঠা বন্ধুটির সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিল। ডোরা বানারকে জীবিত রাখা কোন দিক থেকেই আর তার কাছে নিরাপদ মনে হচ্ছিল না।