লেটিসিয়ার নিরাপত্তার দিক থেকে আসল ভয়ের ব্যাপার ঘটল রয়্যাল স্পা হোটেলে, যখন রুডি সার্জ তাকে চিনতে পেরে এগিয়ে এসে কথা বলল।তবে এই সুইস ছোকরা যে শার্লটকে ব্ল্যাকমেল করার উদ্দেশ্য নিয়ে তার কাছে টাকা চেয়েছিল, একথা আমি বিশ্বাস করি না। ইনসপেক্টর ক্র্যাডকও বিশ্বাস করেন না। কেন না, ভেতরের লুকোচুরির ব্যাপার-স্যাপার তার জানা ছিল না।
-হ্যাঁ, ব্ল্যাকমেলের কোন ধারণাই রুডি সার্জের মাথায় ছিল না। একজন বয়স্কা মহিলার কাছে নিজের দুরবস্থার কথা বলে সাহায্য আদায় করা যেতে পারে এর বেশি সে ধারণা করেনি। বললেন ক্র্যাডক।
তবে রুডি সার্জের সঙ্গে দেখা হবার পর থেকেই নিজেকে নিরাপদ করার স্বার্থে ছক কষতে শুরু করেছিল শার্লট। আমার ধারণা হোটেলের তছরুপ করা টাকা মিটিয়ে দেবার টাকাটা শার্লটের কাছ থেকেই পেয়েছিল সে।
শার্লট ব্ল্যাকলকের অপরাধী মন। সে এই দেখাসাক্ষাতের বা টাকা চাওয়ার ব্যাপারটাকে অন্যভাবেই দেখেছিল। তার ধারণা হয়, রুডি সার্জ কিছু সন্দেহ করেছে, তাই ব্ল্যাকমেলের উদ্দেশ্যে তার দিকে হাত বাড়িয়েছে।
শার্লট আরো ভেবে নেয়, কিছুদিন পরে বেল গোয়েডলারের মৃত্যু সংবাদ খবরের কাগজে প্রকাশিত হবার পর স্বাভাবিক ভাবেই তাকে তার স্থায়ী রোজগারের উৎস করে নিতে পারে।
নিজেকে সে ইতিমধ্যেই জালিয়াতিতে ভাল রকমেই জড়িয়ে ফেলেছিল। সে নিজেকে লেটিসিয়া ব্ল্যাকলক বলেই পরিচিত করে তুলেছিল। বিশেষ করে ব্যাঙ্কে ও বেল গোয়েডলারের কাছে। কাজেই আসল পরিচয় প্রকাশ হয়ে পড়বে আশংকা তার শতগুণ বেড়ে গেল হোটেলের কেরানী সন্দেহজনক চরিত্রের রুডি সার্জের সঙ্গে সাক্ষাতের পর থেকেই। পথ নিষ্কণ্টক করে নিশ্চিন্ত হবার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হল তাকে।
শার্লট রুডি সার্জকে মজা করার উদ্দেশ্যে একটা ডাকাতির মহড়ার কথা জানাল। এজন্য অচেনা কাউকে প্রচুর অর্থ দেবার ইচ্ছাও প্রকাশ করল।
রুডি সার্জ নিজেও ছিল একজন অপরাধী। সে অর্থের লোভে সহজেই টোপ গিলল। সে খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেবার টাকা পেল। লিটল প্যাডকসে ঘুরিয়ে দেখিয়ে আঁটঘাটও তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হল। কোথায় তার সঙ্গে দেখা করবে রুডি সার্জ সেই জায়গাও শার্লট তাকে দেখিয়ে দিল।
এই সব কিছুই কিন্তু করা হয়েছিল ডোরা বানারের অজ্ঞাতে। তিনি বিন্দুবিসর্গ জানতে পারেননি।
একনাগাড়ে কথা বলে হাঁপ ধরে গিয়েছিল। তাই দম নেবার জন্য কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে বললেন, এবারে এসে গেল আসল দিন।
–হ্যাঁ। বললেন মিস মারপল, মতলব পুরোপুরি সফল হবে কিনা এ নিয়ে একটা ভয় অবশ্যই ছিল, তাই ডাকাতির ঘটনার দিন গোড়া থেকে সে বিমর্ষ হয়ে ছিল।
ডোরা বানার আমাদের বলেছিল, লোটি সেদিন বেশ ভীত ছিল।
এখনো ঘটনার সূত্রপাত হয়নি, শার্লটের পিছিয়ে আসার সুযোগ ছিল। পিছিয়ে আসার কোন ভয় ছিল না।
উপযুক্ত সময়ে কাজে ব্যবহারের জন্য ইতিমধ্যে কর্নেল ইস্টারব্রুকের রিভলবার অলক্ষিতে সরিয়ে নিয়েছিল শার্ট। সম্ভবত ফাঁকা বাড়িতে ডিম, জ্যাম বা এমনি কিছু নিয়ে ঢুকেছিল। সুযোগ মত বন্ধ দরজায় তেল ঢালার কাজও সেরে রেখেছিল যাতে খোলার সময় শব্দ না হয়। দরজার গায়ে ঠেস দিয়ে যে টেবিলটা রাখা ছিল ফিলিপিয়ার ফুল সাজাবার ব্যবস্থার অজুহাতে সেটাও সরিয়ে রাখা হয়েছিল। সবটাই ছিল একটা মজার খেলার মত। কিন্তু শেষটা আর খেলার মত থাকবার কথা নয়। শার্লটের মনে তাই ভয় বাসা বেঁধেছিল-মতলব ভেস্তে যাবার ভয়।
–পরিকল্পনা ছিল নিখুঁত, বললেন ক্র্যাডক, ঠিক সন্ধ্যা ছটার পর শার্লট বাড়ির হাঁসদের ঘর বন্ধ করতে বেরলো। তখনই রুডি সার্জকে গোপনে ভেতরে ঢুকিয়ে নিয়ে টর্চ, মুখোশ, দস্তানা দিয়ে দেয়।
টেবিলের ঘড়িতে সাড়ে ছটার ঘণ্টা বাজতেই সিগারেট হাতে নিয়ে টেবিলের কাছে দাঁড়াল। সবই হতে লাগল পরিকল্পনা মাফিক। অতিথিদের জন্য সিগারেট নেওয়ার ব্যাপারটা ছিল খুবই স্বাভাবিক। সেই সময় প্যাট্রিকও গেল পানীয় আনতে।
শার্লট জানত, সকলেরই নজর থাকবে ঘড়ির দিকে। ছিলও তাই। তবে একজন ছিলেন ব্যতিক্রম। ডোরা বানার–তার চোখ লেটির পেছনে লেগে ছিল। তিনি আমাদের বলেন, সকলেই যখন ঘড়ির দিকে চোখ রেখেছেন, তখন শার্লট ফুলদানীটা তুলে নেয়।
ল্যাম্পের তারের ওপরের অংশ আগেই এমন ভাবে ছিঁড়ে রেখেছিল যাতে ভেতরের তার বেরিয়ে থাকে। এরপর কেবল সামান্য জল ঢেলে দিলেই হল তারের সেই খোলা অংশে। চোখের নিমেষে তাই করল শার্লট আর সুইট টিপে দিল। জল বিদ্যুতের সুপরিবাহকসঙ্গে সঙ্গে লাইন ফিউজ হয়ে গেল।
সেদিন ভিকারেজে যেমন হয়েছিল, বললেন বাঞ্চ, এজন্যেই সেদিন তুমি চমকে উঠেছিলে জেন মাসী?
-হ্যাঁ, প্রিয় বাঞ্চ। আলোর ওই ব্যাপারটা আমাকে ধাঁধায় ফেলে দিয়েছিল। বিদ্যুতের ব্যাপার স্যাপার আমার ভাল জানা ছিল না। আমি তাই খুঁজছিলাম দুটো ল্যাম্প, যার একটা ড্রইংরুমের ল্যাম্প বদলে রাখা হয়েছিল রাত্রিবেলা।
-সেকারণেই পরদিন ফ্লেচার ল্যাম্পটা পরীক্ষা করে কোন ত্রুটি দেখতে পায়নি। লাইনে কোন ফিউজও ছিল না।
–তার পরেই আমার কাছে ডোরা বানারের বলা চাষীবউ-ল্যাম্পের কথাটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল, বললেন মিস মারপল, তবে তার কথা শুনে প্যাট্রিকের ওপরেই আমার সন্দেহ পড়েছিল গোড়ায়। তবে তার কথায় পারম্পর্য ছিল না বলে পুরোপুরি নির্ভর করাও কষ্টকর ছিল।