তার সঙ্গে আপনার দ্বিতীয়বার কোথায় দেখা হয়?
–প্রায় দিন দশেক আগে। হঠাৎ এখানে এসে হাজির হয়। কিছু টাকা চায় আমার কাছে। জানায় তার মা অসুস্থ, সুইজারল্যাণ্ডে ফিরে যাবার জন্য তার ভীষণ টাকার দরকার।
-লেটি ওকে টাকা দেয়নি। মিস বানার বলে উঠলেন।
-হ্যাঁ; বললেন মিস ব্ল্যাকলক, তখন আমার ধারণা হয়েছিল, ছেলেটি ধাপ্পাবাজ। কেননা তার বাবা স্বচ্ছন্দেই এখানে তার করে তার ফেরার ব্যবস্থা করতে পারতেন। আমার সন্দেহ হয় হোটেলের টাকা তছরুপ করেছিল সে।
একটু থেমে তিনি আবার বললেন, টাকা না পেয়ে বিনা প্রতিবাদেই চলে গিয়েছিল সে। যেন টাকা পাবে না সে জানত।
–আপনার কি মনে হয়, টাকার অছিলা নিয়ে সে এবাড়ির খোঁজখবর নিতেই এসেছিল? অর্থাৎ গুপ্তচরবৃত্তি
-হ্যাঁ, কথাটা আমারও মনে হয়েছে। কেন না চলে যাওয়ার মুখে সে ঘরগুলো সম্পর্কে কিছু মন্তব্য করেছিল–তারপরই হঠাৎ সামনে লাফিয়ে সদর দরজা খুলে দেয়। সম্ভবতঃ দরজার খিল দেখতে চেয়েছিল।
-শুনেছি বাগানের দিকে একটা পাশের দরজা আছে।
–হ্যাঁ।
–যখন বাইরে যান তখন ওটা বন্ধ ছিল?
–ভেতরে ঢোকার পর বন্ধ করি।
–সময়টা কি ছটার পরে?
–ওরকমই হবে আন্দাজ।
–আর সদর দরজা?
–ওটা পরেই বন্ধ হয়।
-সার্জের ঢোকার ওটাই ছিল সহজ পথ। হ্যাঁ…পরিষ্কার লুকিয়ে থাকার কোন জায়গা দেখে নেয়াই তার উদ্দেশ্য ছিল।
কিন্তু ইনসপেক্টর, কেউ এ ধরনের পরিশ্রম কেন করবে–এ বাড়িতে চুরি বা ছিনতাই করবার চেষ্টা কেনই বা করবে?
–এটা কোন চুরির ব্যাপার নয়, মিস বানার বলে উঠলেন, তোমাকে আগেও বলেছি; এ হল প্রতিশোধ। তুমি টাকা দাওনি বলে সে তোমাকে দুবার গুলি ছুঁড়েছিল।
–আচ্ছা, গতরাতে ঠিক কি ঘটেছিল মিস ব্ল্যাকলক?
একটু ভাবলেন মিস ব্ল্যাকলক। পরে বললেন, পড়শীরা অনেকেই উপস্থিত হয়েছিলেন–কিছু ঘটবে বলে সকলেই উদগ্রীব হয়ে ছিল। টেবিলের ঘড়িটা বেজে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই আলো নিভে গেল।
–কোন্ কোন্ আলো জ্বলছিল?
দেয়ালের ব্রাকেটে আর ঘরের শেষে।
–তারপর?
–আচমকা দরজাটা খুলে গেল।
–কোন্ দরজা? এ ঘরে তো দরজা দুটো।
-এ ঘরের দরজা। অন্য ঘরের দরজা খোলে না। দরজা খুলে গেলে নজরে পড়ল রিভলভার হাতে একজন লোক। সে কিছু বলে উঠেছিল–
-হাত তুলুন না হলে গুলি করব–আমি স্পষ্ট শুনতে পেয়েছি। বলে উঠলেন মিস বানার।
–আপনারা সবাই হাত তুললেন?
–হ্যাঁ, আমরা সবাই তাই করি। বললেন মিস বানার।
–আমি তুলিনি। পরক্ষণেই আমার কানের পাশ দিয়ে একটা বুলেট বেরিয়ে গিয়ে পেছনের দেয়ালে গেঁথে গেল। কেউ কেউ আর্তনাদ করে উঠেছিল। আমার কানে ভীষণ জ্বালা বোধ করছিলাম।
পরেই কানে এলো দ্বিতীয় গুলির শব্দ। অসহ্য যন্ত্রণায় আমি অস্থির হয়েছিলাম। মুখোস পরা মূর্তিটা কাত হয়ে পড়ে যায়…পরক্ষণেই আর একটা গুলির শব্দ শুনি। টর্চ নিভে যায়। ঘরে হুলুস্থুলু পড়ে যায়।
–আপনি কোথায় দাঁড়িয়েছিলেন মিস ব্ল্যাকলক?
–ওই টেবিলটার ওপাশে। খিলানের নিচে। আমার হাতে ছিল সিগারেটের বাক্স।
ক্র্যাডক উঠে গিয়ে দেয়ালটা পরীক্ষা করলেন। বুলেটের দুটো গর্ত পরিষ্কার দেখা গেল। রিভলভারের সঙ্গে মিলিয়ে দেখার জন্য গুলি দুটো বের করে নেয়া হয়েছিল।
-বরাতজোরে আপনি রক্ষা পেয়ে গেছেন। শান্তস্বরে বললেন ক্র্যাডক।
–লোকটা ওকে গুলি করেছিল, মিঃ বানার বললেন, আমি দেখেছি, লোকটা টর্চের আলোয় সকলকে দেখে নিয়ে ওর ওপর আলোটা ধরে আর গুলি করে তারপর না পেরে নিজেকেই গুলি করে।
–আমার মনে হয় না সে নিজেকে গুলি করতে চেয়েছিল। বললেন মিস ব্ল্যাকলক। আসলে গুলি ছোঁড়ার আগে পর্যন্ত সব ব্যাপারটাই আমার কাছে তামাশা বলে মনে হয়েছিল।
–আপনার এরকম মনে হবার কারণ? এমন অভিনব তামাশাটা কে করতে পারে বলে আপনার মনে হয়েছিল? বললেন ক্র্যাডক।
–প্যাট্রিকের কথাই প্রথমে তুমি মনে করেছিলে লেটি। বললেন মিস বানার।
–কে প্যাট্রিক? তীব্রস্বরে বলে উঠলেন ক্র্যাডক।
-আমার ভাইপো–প্যাট্রিক সীমন্স। বিজ্ঞাপনটা প্রথম দেখে মনে হয়েছিল, সেই মজা করার উদ্দেশ্যে করেছে। তবে সে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছিল।
–একটা খুন হবে পড়ে তুমি খুবই চিন্তিত হয়েছিলে লেটি, বললেন মিস বানার, তার গলার স্বর রীতিমত কাঁপছিল।
-আর কিছু জানতে চান ইনসপেক্টর?
-এবারে আমার জানার দরকার আপনার বাড়িতে ঠিক কতজন আছেন, তাদের সম্পর্কে কিছু কথা।
-হ্যাঁ, আমি আর ডোরা–এই তো দেখছেন। এ ছাড়া রয়েছে দূর সম্পর্কের দুজন বোনপো বোনঝি–প্যাট্রিক আর সীমন্স। ওদের মা ছিলেন আমার মাসতুতো বোন। ওরা আমাকে লেটি মাসী বলে ডাকে।
-ওরা বরাবর আপনার কাছেই আছে?
না, মাত্র দুমাস হল ওরা এসেছে। যুদ্ধের আগে ওরা দক্ষিণ ফ্রান্সে থাকত। প্যাট্রিক নৌবাহিনীতে যোগ দিয়েছিল। যুদ্ধের পর ওদের মা আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিল। পেয়িং গেস্ট হিসেবে আছে। থাকা-খাওয়ার জন্য সামান্য টাকা দেয়। প্যাট্রিক মিলচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে আর জুলিয়া মিলচেস্টার জেনারেল হাসপাতালে ডিসপেনসারের কাজ শিখছে।
–শুনেছি ওরা ছাড়াও একজন মিসেস হেমস বলে কে আছেন?
-হ্যাঁ। সে ডায়াস হলে মিসেস লুকাসের বাড়িতে বাগান পরিচর্যার কাজ করে। আমার এখানে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকে। ও খুবই ভাল মেয়ে। ওর স্বামী ইটালিতে মারা যায়। বছর আটেকের একটি ছেলে আছে, স্কুলে পড়ে।