কিন্তু অন্ধকারে টর্চের আলোয় সকলের চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছিল। কারও কিছু দেখার সম্ভাবনা ছিল না। জুলিয়া বলে উঠল।
-মারগাটরয়েডের ছিল; বলে উঠলেন মিস হিনচক্লিফ, সে ছিল দরজার পেছনে, এখন ইনসপেক্টর যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন। সেদিন ঘরে কি ঘটছে একমাত্র মারগাটরয়েডের পক্ষেই দেখা সম্ভব ছিল।
এই সময় মিৎসি এসে ঘরে ঢুকল।
–এই যে বীরপুরুষ পুলিস, আমি রান্নাঘরে কাজ করি বলে ডাকার দরকার মনে করেন নি, তাই না? কিন্তু আমি মিৎসি, অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি দেখতে পায়, অনেক বেশি জানে। ডাকাতির দিন আমি অনেক কিছু দেখেছিলাম। বিশ্বাস করতে পারিনি তাই কাউকে বলতে চাইনি।
তুমি ভেবেছিলে সব শান্ত হয়ে গেলে বিশেষ একজনের কাছে টাকা চাইবে, তাই তো? বললেন ক্র্যাডক।
–কেন চাই না? ফোঁস করে উঠল মিৎসি, একদিন যখন অনেক টাকা আসবে জানি, আর জানি যখন কি সব চলছে, তখন টাকা আদায় করতে ছাড়ব কেন? এখন আমার ভয় করছে, তাই আর চুপ করে না থেকে যা জানি সব বলব।
বেশ, তাহলে তাই বল। বললেন ক্র্যাডক।
-বলব, সব বলব সেই রাতের ঘটনা। আমি পার্টিতে ছিলাম না। রান্নাঘরে বাসনপত্র গুছোচ্ছিলাম। ডাইনিং ঘরে এলে গুলির শব্দ হল। তখন হলঘর একদম অন্ধকার। আবার গুলির শব্দ হল আর টর্চটা পড়ে গেল। তখনই আমি স্ত্রীলোকটাকে দেখলাম। সেই লোকটার পাশে বন্দুক হাতে দাঁড়ান। আমি দেখলাম মিস ব্ল্যাকলক দাঁড়িয়ে আছেন।
-কি বলছ মিৎসি, তুমি পাগল হয়েছ? হতবাক মিস ব্ল্যাকলক বলে উঠলেন।
–সম্ভব, এডমণ্ড বলে উঠল, মিৎসি কখনই মিস ব্ল্যাকলককে দেখতে পারে না।
-তাই বুঝি মিঃ সোয়েটেনহ্যাম, তীব্র শ্লেষের স্বরে বলে উঠলেন ক্র্যাডক, আমিও জানি মিৎসি মিস ব্ল্যাকলককে দেখেননি, কেননা সেখানে তখন তিনি ছিলেন না, ছিলেন আপনি। তাই না?
-আমি?…কি বলছেন আপনি, কখনও না–
–আপনিই কর্নেল ইস্টারব্রুকের রিভলবার তাঁর ড্রয়ার থেকে সরিয়ে ছিলেন, মজা করার জন্য রুডি সার্জের সঙ্গে রফা করেছিলেন। প্যাট্রিক সিমন্সকে অনুসরণ করে আপনি অন্য ঘরে গিয়েছিলেন। তারপর আলো নিভে যেতেই তেল লাগানো দরজা দিয়ে বেরিয়ে যান। মিস ব্ল্যাকলককে গুলি করে আপনি রুডি সার্জকে গুলি করে হত্যা করেন। কয়েক মুহূর্ত পরেই কিছু না জানার ভান করে ড্রইংরুমে ঢুকে লাইটার জ্বালাবার চেষ্টা করেন।
এডমণ্ড একেবারে নীরব হয়ে গেল। পরক্ষণেই চিৎকার করে উঠল, আমার একাজ করার কি উদ্দেশ্য থাকতে পারে? কেন আমি করব? সবই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
ক্র্যাডক বললেন, মিসেস গোয়েডলারের আগে যদি মিস ব্ল্যাকলক মারা যান তাহলে দুজনেরই লাভবান হবার কথা। তারা হল পিপ আর এমা। আমরা জেনেছি জুলিয়া সিমন্সই এমা
-আপনি বলতে চাইছেন, আমি পিপ? চিৎকার করে বলল এডমণ্ড, একেবারে গাঁজাখুড়ি গল্প। হয়তো আমি কাছাকাছি বয়সের। কিন্তু মিঃ পুলিশ, আমার জন্মের সার্টিফিকেট, স্কুল, কলেজের সার্টিফিকেটই বলবে আমি এডমণ্ড সোয়েটেনহ্যাম।
এমন সময় অন্ধকারের ভেতর থেকে একটা গলা শোনা গেল, ও পিপ নয়, আমিই পিপ ইনসপেক্টর।
ফ্যাকাশে মুখে সামনে এগিয়ে এল ফিলিপা হেমস।
-আপনি, মিসেস হেমস?
-হ্যাঁ। পিপ ছেলে একথাই সকলে ধরে নিয়েছিল, কেবল জুলিয়া জানত তার যমজ এক মেয়ে। সে একথা কেন বলেনি আমি জানি না।
-আমি হঠাই জানতে পেরেছিলাম তুমি কে, বলল জুলিয়া।
–প্রথমে আমারও তাই মনে হয়েছিল, ফিলিপা বলল, আমার স্বামী মারা গেলে আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম না। মা আগেই মারা গিয়েছিলেন? গোয়েডলারের সঙ্গে আমার সম্পর্কের কথা জানতে পারি আমি। জেনেছিলাম, মিসেস গোয়েডলার মারা গেলে সব টাকাকড়ি পাবেন মিস ব্ল্যাকক নামে একজন। তার খোঁজ করে এখানে এসে মিসেস লুকাসের কাছে কাজ নিই। ভেবেছিলাম, মিস ব্ল্যাকলক নিশ্চয় আমার মত একজনকে সাহায্য করবেন। আমার হ্যারির শিক্ষার জন্য টাকার দরকার ছিল।
কিন্তু…দম নেবার জন্য কয়েক মুহূর্ত থামল ফিলিপা, ডাকাতির ঘটনাটাতে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। কেননা, আমি জানতাম, সকলে আমাকেই সন্দেহ করবে। কেন না। মিস ব্ল্যাকলককে খুন করার মোটিভ একমাত্র আমারই থাকার কথা। জুলিয়া কে আমার কোন ধারণাই ছিল না। আমরা যমজের মত দেখতেও একরকম ছিলাম না।
মিস ব্ল্যাকলক আমার সঙ্গে সদয় ব্যবহারই করেছিলেন। আমি তাকে কখনোই মারার চেষ্টা করিনি। তাহলেও আমিই পিপ। এডমণ্ডকে সন্দেহ করার কোনই কারণ নেই।
কথা শেষ করে হাঁপাতে লাগল ফিলিপা। তার হাত বারবার মুঠি পাকাতে লাগল।
নেই নয়, আছে। ঝাঁঝের সঙ্গে বললেন ক্র্যাডক, মিঃ সোয়েটেনহ্যাম তরুণ, তার টাকার প্রয়োজন। যে কোন ধনবতাঁকেই সে বিয়ে করতে চাইবে। অথচ মিসেস গোয়েডলারের আগে মিস ব্ল্যাকলক মারা না গেলে এরকম অর্থবতাঁকে বিয়ে কথা সম্ভব নয়। সেই কারণেই এডমণ্ড বুঝতে পেরেছিলেন, কিছু একটা করা প্রয়োজন। ঠিক বলছি তো মিঃ সোয়েটেনহ্যাম?
-সব বানানো গল্প। চিৎকার করে উঠল এডমণ্ড।
ঠিক এই সময়েই রান্নাঘর থেকে একটা দীর্ঘ কাতর ভয়ার্ত আর্তনাদ ভেসে এল।
-একার গলা–মিৎসি তো নয়। জুলিয়া বলে উঠল।
-না। বললেন ক্র্যাডক, তিনজন মানুষকে খুন করেছে, এমন একজনেরই কণ্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছি আমরা…
.
১৭.
ইনসপেক্টর ক্র্যাডক যখন এডমণ্ডকে ধরে পড়েছেন, সেই সময় নিঃশব্দে মিৎসি রান্নাঘরে চলে গিয়েছিল। সে যখন সিঙ্কে জল ছাড়ছিল, সেই সময় মিস ব্ল্যাকক ঢুকেছিলেন।