বাঞ্চ কাগজটা এগিয়ে দিলেন। ক্র্যাডক সেটা টেবিলে বিছিয়ে পড়তে চেষ্টা করলেন।
প্রথম শব্দ ল্যাম্প
তারপর, বেগুনী ফুল, অ্যা
সপিরিনের বোতল কোথায় গেল?
রমনীর মৃত্যু?
মিৎসি…চেক…উনি খোঁজখবর করছিলেন…দারুণ দুঃখ সহ্য করেছেন…আয়োডিন… মুক্তো …লেটি…বেন।
সব শব্দের অর্থ ক্র্যাডকের কাছে বোধগম্য হল না। তিনি বাঞ্চের দিকে তাকিয়ে বললেন, উনি মুক্তোর উল্লেখ করলেন কেন? আচ্ছা, মিস ব্ল্যাকলক কি ওই তিন সারি মুক্তোর মালা সবসময় ব্যবহার করেন?
-হ্যাঁ। সবসময় গলায় থাকে। ওঁর ধারণা তাকে ভাল দেখায়। তবে নকল
–অন্য কোন কারণ…
–আপনি বলতে চাইছেন ওগুলো আসল?
-ওই আকারের মুক্তো তো দুলমবার্ড মিসেস হারসন। যাক এখন আসল কাজ হল মিস মারপল–তাকে খুঁজে পেতে হবে।
ক্র্যাডক মিস মারপলের পেন্সিলের লেখা দেখে বুঝতে পেরেছিলেন, তিনি পরের পর সূত্র অনুসরণ করছিলেন। সেটাই তার বিপদ ডেকে আনেনি তো? তার মনে হল, একবার ফ্লেচারের সঙ্গে যোগাযোগ করা দরকার।
ক্র্যাডক ভিকারেজ থেকে বেরিয়ে তার গাড়ির দিকে এগোলেন। এমনি সময় লরেল ঝোপের আড়াল থেকে সার্জেন্ট ফ্লেচার বেরিয়ে এল।
–স্যার…
৪. লিটল প্যাডকসে রাতের খাওয়া
১৬.
লিটল প্যাডকসে রাতের খাওয়া শেষ হল নিতান্ত নিরানন্দময় পরিবেশে, নিঃশব্দে।
মিস ব্ল্যাকলক। প্যাট্রিক আর জুলিয়া সিমন্স, ফিলিপা হেমস, মিৎসি কারোর মুখেই হাসি ছিল না। কেউ কেউ দু-একবার কথা বলার চেষ্টা করলেও জমেনি।
ইনসপেক্টর ক্র্যাডক জানিয়েছিলেন তিনি সকলকে নিয়ে আধঘন্টার মধ্যেই উপস্থিত হচ্ছেন। মিস মারপলের নিখোঁজ হওয়া মিস মারগাটরয়েডের মৃত্যু-সমস্যাগুলো আলোচনার দরকার।
সকলে ড্রইংরুমে অপেক্ষায় রয়েছেন। বাড়ির সব আলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
একটা গাড়ির শব্দ পাওয়া গেল বাইরে। পরক্ষণেই ঘরে ঢুকলেন ক্র্যাডক। তার সঙ্গে কর্নেল আর মিসেস ইস্টারব্রুক, মিসেস সোয়েটেনহ্যাম আর তার ছেলে এডমণ্ড সবার শেষে মিস হিনচক্লিফ ঢুকলেন ঘরে। প্রত্যেকেই ম্রিয়মান।
সকলে আসন গ্রহণ করলে ক্র্যাডক দরজার পাশে দাঁড়ালেন। তার প্রায় মুখোমুখি রয়েছেন তিন মহিলা–জুলিয়া আর মিসেস সোয়েটেনহ্যাম সোফায় বসে, মিসেস ইস্টারব্রুক স্বামীর চেয়ারের হাতলে।
মিস ব্ল্যাকক আর মিস হিনচ বসেছিলেন আগুনের সামনে। এডমণ্ড ছিল তাদের পাশে। একটু দূরে বসেছিল জুলিয়া।
কোনরকম ভূমিকা না করেই ক্র্যাডক বলতে শুরু করলেন, মিস মারগাটরয়েড খুন হয়েছে, আপনারা সকলেই জানেন। তাকে যে খুন করেছে, আমাদের ধারণা সে একজন স্ত্রীলোক। বিশেষ কারণেই তাই আমাদের তদন্তের গণ্ডিও ছোট হয়ে গেছে। ওখানে উপস্থিত মহিলাদের কাছ থেকে আমি জানতে চাই তারা বিকেল চারটে থেকে চারটে কুড়ি মিনিট পর্যন্ত কোথায় ছিলেন, কি করেছেন।
মিস সিমন্স অবশ্য আমাকে আগেই তার বক্তব্য শুনিয়েছেন। তবু তাকে আর একবার তা শোনাতে বলছি। কনস্টেবল এডওয়ার্ড শর্টহ্যাণ্ডে আপনাদের বক্তব্য লিখে নেবে।
জুলিয়া বলল, বলতে যখন হচ্ছে, আমি আবারও বলছি, চারটে থেকে সাড়ে চারটে পর্যন্ত আমি নদীর ধারে পথ ধরে হাঁটছিলাম। অবশ্য পথে কারও সঙ্গে আমার দেখা হয়নি।
–এবারে বলুন মিসেস সোয়েটেনহ্যাম। বললেন ক্র্যাডক।
-বলছি, একটু ভেবে নিতে দিন। বললেন মিসেস সোয়েটেনহ্যাম, যতদূর মনে পড়ছে, বৃষ্টি আসার আগে আমি শুকনো ক্রিসেন থিমাম ফুলের গন্ধ শুঁকে দেখছিলাম।
–ঠিক চারটে দশ মিনিটে বৃষ্টি নেমেছিল। বললেন ক্র্যাডক।
–বোধহয় তাই, আমি সে সময় ওপরে বারান্দায় একটা হাত ধোয়ার বেসিন রেখেছিলাম। বারান্দায় জল আসছিল বলে বর্ষাতি আর জুতো নিয়ে নিচে নেমে যাই। এডমণ্ডকে ডেকেছিলাম, ও কোন সাড়া দেয়নি, বোধহয় বই লিখছিল কিংবা ঘুমোচ্ছিল। এরপর আঁটা দিয়ে নর্দমা সাফ করতে থাকি। পাতা বোঝাই হয়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
–আপনাকে নর্দমা সাফ করতে কেউ দেখেছে?
–না, কেউ দেখেনি।
–মিঃ সোয়েটেনহ্যাম, আপনি আপনার মায়ের ডাক শুনতে পেয়েছিলেন?
–না, এডমণ্ড উত্তর দিল, আমি ঘুমুচ্ছিলাম।
–এবারে মিসেস ইস্টারব্রুক বলুন।
মিসেস ইস্টারব্রুক বললেন, আর্চির সঙ্গে স্টাডিতে বসে রেডিও শুনছিলাম।
কর্নেল ইস্টারব্রুক স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি ঠিক বলছ না, এ ধরনের তদন্তে সেটা জরুরী। আমি বলছি ইনসপেক্টর, আমার স্ত্রীর স্নায়ুর ওপরে এঘটনায় প্রচণ্ড চাপ পড়েছে, সে ঠিকভাবে বলতে পারছে না। আমি ল্যাম্পিয়নের সঙ্গে মুরগীর খাবার বিষয়ে কথা বলছিলাম। তখন প্রায় সোয়া চারটে। বৃষ্টি থামার আগে ফেরা হয়নি।
–আপনিও কি বাইরে গিয়েছিলেন মিসেস ইস্টারব্রুক? প্রশ্ন করলেন ক্র্যাডক।
ফাঁদে পড়া ইঁদুরের মত মুখ হয়ে গিয়েছিল মিসেস ইস্টারব্রুকের। তিনি বললেন, না আমি বাইরে যাইনি রেডিও শুনছিলাম।
-ঠিক আছে আপাতত এতেই চলবে। আপনাদের বক্তব্য টাইপ করে সকলকে দেখানো হবে, আপনারা পড়ে ঠিক আছে কিনা দেখে সই করে দেবেন।
মিসেস ইস্টারব্রুক বললেন, অন্যদের কাছে তো কিছু জানতে চাইলেন না ইনসপেক্টর, ওই এডমণ্ড সোয়েটেনহ্যাম আর জুলিয়া সিমন্স মেয়েটা?
ইনসপেক্টর ক্র্যাডক বললেন, মিস মারগাটরয়েড মারা যাবার আগে বলেছিলেন এমন একজনের কথা যিনি ডাকাতির ঘটনার সময়ে ঘরে অনুপস্থিত ছিলেন, কিন্তু তার ঘরে থাকারই কথা ছিল। তিনি তার বন্ধুকে জানিয়েছিলেন সে রাতে একজন স্ত্রীলোক ঘরে ছিলেন না।