গাড়িতে আসতে আসতে মিস হিনচক্লিফ বললেন, আমি আর মারগাটরয়েড সেদিনের ওই খুনের ব্যাপারটা বিশ্লেষণ করছিলাম…সেই সময় থানা থেকে ফোন পেলাম…
গাড়ি এসে বাড়ির সামনে দাঁড়াল। কুকুরটা লাফিয়ে নেমে দৌড়ে ভেতরে ঢুকে গেল। পরক্ষণেই তার চিৎকার শোনা গেল।
মিস হিনচক্লিফ ভেতরে এসে দেখতে পেলেন ঝুলতে থাকা কিছু পোশাকের নিচে কিছু শুঁকতে চেষ্টা করছে তার কুকুর বিউটি।
-কি হল ওখানে—
তিনি দ্রুত এগিয়ে গেলেন সেদিকে। মিস মারপলও তার পেছনে গেলেন।
বৃষ্টি সমানে পড়ছে। তার মধ্যে এগিয়ে গিয়ে দুজনে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন। সামনে পড়ে থাকা প্রাণহীন দেহটা নীলাভ হয়ে উঠেছে।
–মেয়েমানুষটাকে একবার পেলে আমি খুন করব। চাপা ক্রুদ্ধ কাতর স্বরে বলে উঠলেন মিস হিনচক্লিফ।
–মেয়ে মানুষ। প্রশ্ন করলেন মিস মারপল। অসহায় ভঙ্গীতে তার দিকে তাকালেন মিস হিনচক্লিফ।
-হ্যাঁ, মেয়েমানুষ..আমি প্রায় জেনে…ফেলেছিলাম।
কিছুক্ষণ মৃতা বান্ধবীর দিকে তাকিয়ে থেকে তিনি বাড়ির দিকে পা বাড়ালেন।
–পুলিসকে এখুনি জানাতে হবে। ও খুন হল আমারই জন্য। ব্যাপারটা আমি খেলার ছলেই নিয়েছিলাম…
ভেতরে এসে ফোন তুলে তিনি সবকথা পুলিসকে জানালেন।
এরপর মিস মারপলের দিকে ঘুরে বললেন, কুকুরটাকে আনার জন্য থানায় যাবার আগে আমি আর মারগাটরয়েড সেই ঘটনা নিয়ে কথা বলছিলাম। ও কিছু বললে আমি বুঝতে পেরেছিলাম–ওই মহিলা এখানে ছিল না। ব্যাপারটা বুঝতে পারছেন, মিস মারপল, তিনজন মহিলা, মিসেস সোয়েটেনহ্যাম, মিসেস ইস্টারব্রুক, জুলিয়া সিমন্স। ওদের বাদ দিতে পারিনি। এদেরই একজন ড্রইংরুমে ছিল না…তার মানে যে ছিল না সে নিশ্চয়ই অন্য দরজা দিয়ে বেরিয়ে হল ঘরে চলে যায়।
-হ্যাঁ, ব্যাপারটা বুঝতে পারছি।
–ওই তিনজনের মধ্যে একজন…তবে কে ঠিক জানা হল না।
মিস মারপল চিন্তিত ভাবে বললেন, এটা সন্দেহজনক ইঙ্গিত বলেই মনে হচ্ছে…হ্যাঁ, এতে ব্যাপারটা অনেকখানিই বদলে যেতে পারে।
.
১৫.
বাইরে গাড়ির শব্দ হল। মিৎসি ভেতরে খবরটা পৌঁছে দিল, আবার পুলিস এসেছে।
ক্র্যাডক অসম্ভব গম্ভীর মুখে ঘরে ঢুকলেন। তিনি মিস ব্ল্যাকলককে বললেন, মিস মারগাটরয়েড খুন হয়েছে। মাত্র একঘন্টা আগে শ্বাসরুদ্ধ করে তাকে মারা হয়েছে।
জুলিয়া আর প্যাট্রিক সিমন্স সবে মাত্র বাইরে থেকে ফিরেছিল। তারাও সেখানে উপস্থিত ছিল।
–মিস সিমন্স, আপনি আজ সারাদিন কোথায় ছিলেন? জিজ্ঞেস করলেন ক্র্যাডক।
–মেলচেস্টারে, এইমাত্র ফিরলাম।
–আর প্যাট্রিক আপনি?
–আমি আগের বাসেই এখানে ফিরেছি।
–তারপর কি করেন?
–মাঠের দিকে একটু হাঁটতে যাই।
এমনি সময়ে টেলিফোন বেজে উঠল। মিস ব্ল্যাকলক রিসিভার তুললেন।
-হ্যাঁ-কে, বাঞ্চ? কি বলছ…না উনি আসেননি। আমার জানা নেই…হ্যাঁ, এখানে আছেন।
মিস ব্ল্যাকলক ক্র্যাডকের দিকে রিসিভার এগিয়ে দিয়ে বললেন, মিস হারসন আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান। মিস মারপল ভিকারেজে ফেরেননি, তাই চিন্তায় পড়েছেন।
ক্র্যাডক রিসিভার তুলে বললেন ক্র্যাডক বলছি
–খুবই দুশ্চিন্তায় পড়েছি ইনসপেক্টর, জেন মাসী কোথায় গেছেন জানি না। শুনলাম মিস মারগাটরয়েড মারা গেছেন
-হ্যাঁ, মিস হারসন। মিস মারপল তো ঘটনাস্থলেই ছিলেন। আধঘণ্টা আগে বেরিয়ে যান। এখনও ফিরে না থাকলে হয়তো পড়শীদের কারও বাড়িতে গেছেন।
-না, আমি সবাইকেই ফোন করেছি। কি হবে ইনসপেক্টর, আমার ভয় লাগছে।
–আমি আসছি আপনার ওখানে।
–আসুন। একটা কাগজ পেয়েছি, জেন মাসি বেরুবার আগে লিখেছিলেন। কিছু বুঝতে পারছি না অবশ্য
ক্র্যাডক রিসিভার নামিয়ে রাখলেন চিন্তিত মুখে।
মিস মারপলের কিছু হয়নি তো? উদ্বিগ্ন স্বরে জিজ্ঞেস করলেন মিস ব্ল্যাকলক।
–আমিও তাই আশা করছি। বললেন ক্র্যাডক।
মিস ব্ল্যাকলক তার গলায় ঝোলানো মুক্তোর মালা নাড়াচাড়া করছিলেন। চাপা গলায় বললেন, ক্রমশই অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে ইনসপেক্টর। কোন উন্মাদই এসব করে চলেছে
চিন্তাচ্ছন্ন চোখে তার দিকে তাকালেন ক্র্যাডক। মিস ব্ল্যাকলককে খুবই উত্তেজিত মনে হচ্ছিল। তার অসতর্ক টানে হঠাৎ গলার মালা ছিঁড়ে গোলাকার মুক্তোগুলো মেঝেয় ছড়িয়ে পড়ল।
-আমার মুক্তো, মিস ব্ল্যাকলক কাতরে উঠলেন, পরক্ষণে একটা যন্ত্রণাময় শব্দ করে দাঁড়ালেন। গলায় হাত চেপে ঘর থেকে ছিটকে বেরিয়ে গেলেন।
ফিলিপা মুক্তোগুলো কুড়িয়ে নিচ্ছিল। বলল, সব সময় এটা পড়তেন। কেউ দিয়েছিল হয়তো। তাই এমন ভেঙ্গে পড়লেন।
–হতে পারে। ক্র্যাডক বললেন।
–এগুলো কি আসল মুক্তো? একটা মুক্তোদানা হাতে তুলে নিয়ে পরীক্ষা করলেন। তার মনে হল এতবড় মুক্তো আসল হওয়া শক্ত। কিন্তু যদি কোনভাবে আসল হয় তাহলে, অবশ্যই অমূল্য। র্যাণ্ডাল গোয়েডলারের দেওয়া যদি হয় তাহলে তো এর দাম
ক্র্যাডকের মাথায় ঘুরতে থাকে–মিস ব্ল্যাকলক বলেছিলেন, এ বাড়িতে কোন মূল্যবান জিনিস নেই। যদি মুক্তোগুলো আসল হয়…আর এর সন্ধান যে জানে সে অনায়াসে খুনের ঝুঁকি নিতে পারে।
মিস মারপলের কথা মনে হল, বাস্তবে ফিরে এলেন ক্র্যাডক। তিনি নিখোঁজ। এখনই তাকে ভিকারেজে যেতে হবে।
.
বাঞ্চ আর তার স্বামী জুলিয়ান চিন্তিত মুখে বসেছিলেন। ক্র্যাডক বললেন, উনি এখনও ফেরেন নি? কোন কাগজের লেখার কথা বলছিলেন।