.
১৪.
টেবিলের ল্যাম্পটা সরিয়ে মিস মারপলের সামনে এনে রাখলেন। বাঞ্চ মিস মারপল সেলাই করছিলেন।
–মনে হচ্ছে ঝড় উঠবে জেন মাসী। আলোটা তোমার কাছে এনে দিলাম।
টিগলথ পিলেজার নামের বাড়ির পোষা বেড়ালটা পায়ে পায়ে ঘুরছিল। হঠাৎ তড়াক করে লাফিয়ে টেবিলের ওপরে উঠে বসল। ল্যাম্পের তারগুলো চোখে পড়ায় সে আঁচড়াতে শুরু করল।
–এরকম করে না পিলেজার। ছিঁড়ে গেছে–শক লেগে যাবে-
-বলে মিস মারপল হাত বাড়িয়ে ল্যাম্পের সুইচ টিপতে গেলেন।
দাঁড়াও, ফুলগুলো সরিয়ে দি। সুইচটা তারের শেষে আছে। একটা ফুল দানি থেকে বাঞ্চ বড়দিনের কিছু লাল গোলাপ ফুল সরিয়ে নেবার জন্য হাত বাড়াল, অমনি পিলেজার ওর হাত আঁচড়ে দিল।
বাঞ্চের হাত কেঁপে গেল। আর ফুলদানি থেকে বেশকিছুটা জল ছিটকে পড়ল বৈদ্যুতিক তারের ছেঁড়া অংশে।
মিস মারপল এবারে লম্বাকৃতি সুইচটা টিপলেন। সঙ্গে সঙ্গে ফাঁশ করে একটা শব্দ আর আলোর ঝিলিক জেগে উঠল। আলো নিভে গেল।
-যাঃ ফিউস হয়ে গেল। বাঞ্চ বলে উঠল, সব অন্ধকার হয়ে গেছে, টেবিলের এ জায়গাটা পুড়েও গেছে–দুষ্টু টিগলাথের জন্য–কি হল জেন মাসী?
মিস মারপল হঠাৎ স্থির হয়ে গিয়েছিলেন। বললেন, না কিছু না। ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেল, আগেই এটা বোঝা উচিত ছিল।
বাঞ্চ ফিউজটা ঠিক করার কথা বললে, মিস মারপল বললেন, ব্যস্ত হয়ো না। আমাকে একটু চুপচাপ ভাবতে দাও।
বাঞ্চ তার কাজে চলে গেল। মিস মারপল একটি কাগজ টেনে নিলেন। তারপর প্রথমে লিখলেন, ল্যাম্প…তারপর একমিনিট চিন্তা করলেন, আর একটা কথা লিখলেন…তারপর লিখে চললেন…
.
বুলডার্সের শোবার ঘরে মিস হিনক্রিফ মিস মারগাটরয়েডের কাছ থেকে কিছু কথা উদ্ধার করবার চেষ্টা করছিলেন।
–আমার কিছুই মনে পড়ছে না। বললেন মারগাটরয়েড।
–তুমি মনে করবার চেষ্টা করো। শোন আমি দৃশ্যপটটা বলে যাচ্ছি। ছোটঘরের দরজায় আগেই কেউ তেল লাগিয়ে রেখেছিল যাতে খুলতে কোন শব্দ না হয়। ওই দরজাটা বরাবর বন্ধ থাকত।
যাক শোন, আলো নিভে গেল। অমনি নিয়মিত দরজা খুলে গেল, লোকটা টর্চ নিয়ে ঘরে ঢুকল। ঘরের ভেতরে আমরা হুল্লোড় শুরু করলাম। সেই সময় আমাদের অজানা একজন ছোট ঘরের দরজা দিয়ে ঢুকে নিঃশব্দে সুইস ছোকরার পেছনে এসে দাঁড়াল। তাকে গুলি করল। তারপর হাতের রিভলবারটা ছোকরার পাশে ফেলে দিল যাতে প্রমাণ হয় ওই সুইস ছোকরাই গুলি ছুঁড়েছে আর আলো জ্বলে ওঠার আগেই সেই অজ্ঞাত লোকটি আবার ছোট ঘরে ঢুকে পড়ল। ব্যাপারটা এবারে বুঝতে পেরেছ?
–পরিষ্কার বুঝতে পেরেছি….কিন্তু ওই লোকটি কে?
–কেবল তুমিই সে কথা বলতে পার মারগাটরয়েড। কেন না তুমি নিয়মিত দরজার পাল্লার পেছন দিকে ছিলে।
-হ্যাঁ, সেটা মনে আছে।
–আর সে সময় দূরে ড্রইংরুমে ছিল প্যাট্রিক সিমন্স, ফিলিপি হেমস আর কর্নেল ইস্টারবুক। তুমি ছিলে দরজার পেছনে। টর্চের আলো যেদিকে পড়েছিল, তুমি ছিলে তার বিপরীত দিকে। আমাদের সকলের চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছিল, তোমার তা হয়নি।
–কিন্তু…হ্যাঁ…টর্চের আলো ঘুরছিল–সবার মুখের ওপর পড়ছিল।
তাতে কি দেখা যাচ্ছিল—
-হ্যাঁ, মনে পড়ছে, মিস বানার বিহ্বল হয়ে তাকিয়েছিল, আর মিসেস হারসন একটা চেয়ারের হাতলের ওপরে বসেছিলেন। চোখ বন্ধ করে রেখেছিলেন
–হ্যাঁ, এই তো এতক্ষণে পথে এসে গেছ। কাদের তুমি দেখেছ, এটা মনে করতে পারলেই বেরিয়ে পড়বে সে সময় কাকে তুমি দেখতে পাওনি। অনেকেই ছিল যেমন জুলিয়া সিমন্স, মিসেস সোয়েটেনহ্যাম, মিস ইস্টারব্রুক…এরাই আরো। কিন্তু এদের মধ্যে এমন কেউ ছিল যে ওখানে ছিল না…মনে করার চেষ্টা কর মারগাটরয়েড
মিস মারগাটরয়েড চোখ বুজে ভাবতে লাগলেন। আর বিড়বিড় করে বলতে লাগলেন, টর্চের আলো পড়ল হ্যাঁ…মিসেস হারমান…ডোরা বানার…টেবিল…টেবিলল্যাম্প… খিলান… আচমকা রিভলবারের গুলি তারপর…তারপর…হা, ওই মহিলা ওখানে ছিলেন না…হা শোন…
এই সময় আচমকা টেলিফোন বেজে উঠল। মিস হিনচক্লিফ এগিয়ে গিয়ে টেলিফোন ধরলেন।
-হ্যাল্লো–কে–পুলিস স্টেশন–বলুন–মিস হিনচক্লিফ জানতে পারলেন সকাল থেকে তার কুকুরটা থানায় রয়েছে। একফোঁটা জলও মুখে তোলেনি। পুলিস তাকে ভুল করে নিয়ে গিয়েছিল। দুঃখ প্রকাশ করে পুলিস অনুরোধ করেছে কুকুরটাকে নিয়ে আসার জন্য।
মিস হিনচক্লিফ যখন মিস মারগাটরয়েডের দিকে ফিরলেন তখন তিনি বলে চলেছেন…ওই মহিলা…ওখানে ছিলেন না…
ফিরে আসার পর শুনব মারগাটরয়েড় আমি পুলিস স্টেশনে কুকুরটাকে আনতে যাচ্ছি, সকাল থেকে নাকি থানায় রয়েছে, একফোঁটা…
বলতে বলতে তিনি দ্রুত গতিতে গ্যারেজের কাছে পৌঁছে গেছেন।
গাড়িতে স্টার্ট দিতে দিতে মিস মারগাটরয়েডও ওখানে পৌঁছে গেলেন–কথাটা শুনে যাও হিনচ..ওই মহিলা ওখানে ছিলেন না…
গাড়ি চলতে শুরু করেছে ততক্ষণে।
মিস মারগাটরয়েড গাড়ির দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ বৃষ্টির ফোঁটা পড়তে শুরু করল। কিছু পশমী পোশাক রোদ্দুরে ছড়ান ছিল। সেগুলো তুলতে ছুটলেন তিনি।
মিস মারগাটরয়েড যখন ক্লিপ খুলে সোয়েটারগুলো তুলছেন এমন সময়…এমন সময় পেছনে কার পদশব্দ জাগল।
পর মুহূর্তেই একটা স্কার্ফ তার গলায় জড়িয়ে দিল কেউ, তারপর আচমকা টানে সেটা গলার ওপরে চেপে বসল…মিস মারগাটরয়েডের মুখ হাঁ হয়ে গেল..দম আটকে গেল স্কার্ফ আরও শক্ত হয়ে চেপে বসল… . থানা থেকে ফেরার পথে মিস হিনচক্লিফ রাস্তা থেকে মিস মারপলকে গাড়িতে তুলে নিলেন। কুকুরটা দেখে মিস মারপল প্রশংসা করলেন, ভারি সুন্দর কুকুর।