মিস মারপল অন্যমনস্ক ভাবে চিঠিটা ফিরিয়ে দিলে ক্র্যাডক বললেন, সোনিয়া সম্পর্কে আপনার কি ধারণা হল বলুন, মিস মারপল।
–দেখুন ইনসপেক্টর, অন্য একজনের মনের কথা থেকে কারো সম্পর্কে কোন ধারণা গড়ে নেয়া সহজ নয়।
-তাকে রাগী বেড়ালের মত লাগছে, প্রচণ্ড রেগে গেছে। তাকে না খুন করে বসে…এসব মন্তব্য থেকেও…
মিস মারপল কোন উত্তর করলেন না। কেবল অন্যমনস্কভাবে তাকিয়ে রইলেন ক্র্যাডকের দিকে।
–ওই রিভলভারটা…ওটা রুডি সার্জের নয় জানা গেছে। ওটা কোথা থেকে আসে তা এখনও জানা সম্ভব হয়নি। চিপিং ক্লেগহনে কার রিভলবার আছে জানা দরকার। বললেন ক্র্যাডক।
-কর্নেল ইস্টারব্রুকের একটা আছে। বললেন বাঞ্চ। সেটা তার কলার রাখার ড্রয়ারে রাখা থাকে।–আপনি তা কি করে জানলেন মিসেস হারসন?
–মিসেস বাট বলেছেন তিনি সপ্তাহে দুদিন আমার কাজ করে দিয়ে যান। তিনিই বলেছেন, চোরডাকাতের ভয়ে কর্নেল অস্ত্রটা হাতের কাছে রাখেন।
–একথা কবে বলেছিলেন তিনি?
–অনেক দিন আগে, কয়েক মাস হবে।
-কর্নেল ইস্টারব্রুক, ভদ্রলোক একটা বই দিতে একদিন লিটল, প্যাডকসে গিয়েছিলেন। তাঁর পক্ষে দরজায় তেল লাগান অসম্ভব নয়।
মিস মারপল বাঞ্চকে লক্ষ্য করে বললেন, তুমি মিস ব্ল্যাকলকের লেখা কাগজটা ইনসপেক্টরকে দেখাও।
বাঞ্চ কাগজটা ক্র্যাডকের হাতে তুলে দিলেন।
আমি খোঁজ নিয়েছি প্রতি বৃহস্পতিবার তিনটের পর যে কোন সময়। আমার জন্য যদি কিছু থাকে যেখানে সাধারণত থাকে, সেখানেই রেখে যাবেন।
লেখাটা পড়ে কিছুই বুঝতে পারলেন না ক্র্যাডক। তার মুখভাব লক্ষ্য করে বাঞ্চ হারসন হাসলেন।
ব্যাখ্যা করে বললেন, একটা খামারে প্রতি বৃহস্পতিবার মাখন তৈরি হয়। যার দরকার নিয়ে আসে। মিস হিনচক্লিফই সবার হয়ে মাখন নিয়ে আসেন। এর মধ্যে একটা বদলাবদলির ব্যাপারও রয়েছে। কেউ মাখন পেয়ে পাঠিয়ে দেয়। কেউ শুয়োর মারা হলে মাংস। এমনি আর কি। এক জিনিসের বদলে অন্য জিনিস কিছুটা মনে হয় বেআইনী কাজ।
–আমাকে এসব কথা না শোনানোই ভাল, এরকম বদলাবদলির কাজ সবটাই বেআইনী।
একটু থেমে তিনি হতাশ স্বরে বললেন, আমি আপাতত পিপ আর এমাকে নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি। পর পর দুটো খুন হল, একজন পুরুষ একজন মহিলা, আরও একজন মহিলা সম্ভবত খুন হতে চলেছেন। নির্দিষ্ট করে কিছুই জানা সম্ভব হচ্ছে না। সোনিয়াকে সামনে রেখে আপাতত এগুবার চেষ্টা করছি। তিনি দেখতে কেমন ছিলেন জানতে পারলে ভাল হত। চিঠিতে এসম্পর্কে কিছুই জানা গেল না।
–চিঠিতে যে তার ছবি নেই কিভাবে জানলেন?
–মিস ব্ল্যাকলক বলেছেন, তিনি ছিলেন বেশ গাঢ় বর্ণের ছোটখাট চেহারার।
–তাই বলেছেন? মিস মারপল আগ্রহ প্রকাশ করলেন।
–অ্যালবামেও এমন ছবি পাওয়া যায়নি যাকে দেখে ওরকম মনে হতে পারে। মিসেস সোয়েটেনহ্যাম অল্প বয়সে গাঢ় রঙের ছিলেন, আপনার মনে হয়?
বাঞ্চ বললেন, খুব গাঢ় রঙ ছিল না। চোখের তারা নীল ছিল।
–ডিমিট্রি স্ট্যামফোরডিসের একটা ছবি পেলেও কিছুটা সাহায্য হত। যাই হোক, চিঠিটা পকেটে ঢুকিয়ে বললেন ক্র্যাডক, চিঠিটা থেকে বলছেন আপনার মনে কোন ধারণা জন্মায়নি?
–হয়েছে বৈকি, মিস মারপল বললেন, সেই জায়গাটা আবার পড়ে দেখুন–র্যাণ্ডাল গোয়েডলার ডিমিট্রি স্ট্যামফোরডিসের সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছিলেন।
ক্র্যাডক অবাক হয়ে তাকালেন। ঠিক এই সময়ই টেলিফোন বেজে উঠল।
বাঞ্চ উঠে গিয়ে টেলিফোন ধরলেন। তিনি ফিরে এসে ক্র্যাডককে জানালেন, আপনার ফোন।
ক্র্যাডক উঠে গিয়ে রিসিভার তুলে নিলেন। ওপাশে কথা বলছিলেন চিফ কন্সটেবল রাইডেসডেল।
–ফিলিপ হেমসের সঙ্গে তোমার কথাবার্তার রিপোর্ট দেখলাম। সে জোর দিয়ে জানিয়েছে দীর্ঘদিন স্বামীর সঙ্গে তার দেখা হয়নি। তোমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছি, দিন দশেক আগে একটা দুর্ঘটনা ঘটেছিল–একটা লোক লরিচাপা পড়েছিল। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ আর মেরুদণ্ড ভাঙা অবস্থায় তাকে মেলচেস্টার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
মনে পড়েছে স্যার, একটা বাচ্চাকে লরির প্রায় নিচ থেকে উদ্ধার করেছিল লোকটি। কিন্তু নিজেই শেষে চাপা পড়েছিল।
–হ্যাঁ, সেই ঘটনাটার কথাই বলছি। লোকটি গতরাতে মারা গিয়েছে, তাকে সনাক্ত করতে কেউ আসেনি। তবে তাকে সনাক্ত করা হয়েছে–সে সেনাবাহিনী থেকে পলাতক, লোকটির নাম রোলাণ্ড হেমস, দক্ষিণ লোমসায়ারের প্রাক্তন ক্যাপ্টেন।
–ফিলিপা হেমসের স্বামী?
-হ্যাঁ, তার পকেটে চিপিং ক্লেগহনের বাসের টিকিট আর বেশ কিছু টাকা ছিল। সম্ভবত স্ত্রীর কাছ থেকেই টাকা পেয়েছিল।
লোকটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ২৮ তারিখ। লিটল প্যাডকসের ডাকাতির ঘটনা ঘটে ২৯শে। এতে দেখা যাচ্ছে ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে তার যোগ থাকা সম্ভব নয়। তার স্ত্রী দুর্ঘটনার বিষয়ে কিছু জানত না। তার হয়ত ধারণা হয়েছিল, ওই ঘটনার সঙ্গে তার স্বামী জড়িত, তাই ওরকম মুখ বন্ধ করেছিল।
–কিন্তু স্যর, তার কাজটি কিন্তু বীরত্বের।
–হ্যাঁ, লরি দুর্ঘটনা থেকে শিশুটিকে বাঁচানো বীরত্বের কাজ বৈকি। সেকারণেই মনে হয় না কাপুরুষতার জন্য হেমস পলাতক ছিল। শোন, এই কেসটা গোড়া থেকে তোমারই তদন্তে রয়েছে। খবরটা তুমিই তাকে জানিও।
–তাই করব স্যর। তিনি লিটল প্যাডকসে ফিরে এলেই বলব। তবে তার আগে একজনের সঙ্গে কথা বলে নেব ভাবছি।