–আমার কিছু বলার নেই ইনসপেক্টর, বহু বছর আমার স্বামীকে আমি দেখিনি।
–এই তাহলে আপনার শেষ কথা, মিসেস হেমস।
–আমি দুঃখিত।
.
রাগ হলেও নিজেকে সংযত রাখলেন ক্র্যাডক। তবে কিছুটা বাঁধা পড়লেন তিনি। ফিলিপা মিথ্যা বলছেন তিনি বুঝতে পারছিলেন। কিন্তু প্রাক্তন ক্যাপ্টেন হেমস সম্পর্কে আরও খবর কি করে বার করা যায় তা বুঝতে পারছিলেন না।
নানা কথা যখন ভাবছিলেন ক্র্যাডক অকস্মাৎ তার মনে পড়ে গেল জুলিয়া চিলেকুঠিতে ছিল বলেছে, সে ওখানে কি করছিল?
কথাটা মনে হতেই তিনি উঠে দাঁড়ালেন। কাছে ধারে কেউ ছিল না। যে ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে জুলিয়া নেমে এসেছিল সেই সিঁড়ি ধরেই ওপরে উঠে গেলেন তিনি।
ছোট্ট চিলেকুঠিতে বাতিল আসবাব, ভাঙ্গা ট্রাঙ্ক, সুটকেস ভঁই হয়ে আছে। তার মধ্যে অনেক টুকিটাকি জিনিস, ভাঙ্গা চেয়ারের হাতল, ছেঁড়া পাপোস, কাপ ডিস, একটা চীনামাটির ল্যাম্প। কয়েকটা ট্রাঙ্ক খুলে কিছু পুরনো মেয়েদের কাপড়, পরদার কাপড় ছাড়া কিছু পেলেন না।
এটা সেটা হাটকে পরে একটা স্যুটকেস খুলে কাগজপত্র আর অনেক চিঠিপত্র পাওয়া গেল।
চিঠিগুলো লেটিসিয়া ব্ল্যাকলকের বোন শার্লটের। কয়েকটা চিঠিতে দ্রুত চোখ বোলালেন ক্র্যাডক।
মিস ব্ল্যাকলকও পঙ্গু বোনটিকে কিছু চিঠি লিখেছেন। বোনের জন্য তার মানসিক দুশ্চিন্তা। আর ভাবনার ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
ক্র্যাডক আশান্বিত হলেন, এখানেই কোন সূত্র পেয়ে যাবেন তিনি। অজানা অনেক কিছু। কয়েকটা ফটোও রয়েছে। যে অ্যালবামের ছবি সরিয়েছে, এখানে সোনিয়ার ছবি থেকে থাকলে নিশ্চয় তার সন্ধান সে পায়নি।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন ছবি পাওয়া গেল না। কয়েকটা চিঠি পকেটস্থ করে ক্র্যাডক নিচে নেমে এলেন।
সিঁড়ির গোড়াতেই মিস ব্ল্যাকলকের সঙ্গে তার দেখা হয়ে গেল।
-ওহ, আপনি চিলে কোঠায় ছিলেন? শব্দ পেয়ে আমি দেখতে যাচ্ছিলাম কে–
মিস ব্ল্যাকলক, বহুবছর আগে অসুস্থ বোন শার্লটকে লেখা আপনার কয়েকটা চিঠি খুঁজে পেয়েছি। এগুলো নিয়ে গিয়ে আমাকে পড়তে হবে।
প্রচণ্ড ক্রোধ অনেক কষ্টে সংবরণ করলেন মিস ব্ল্যাকলক। তিনি কোনক্রমে বলতে পারলেন, এগুলো সব ব্যক্তিগত চিঠি ইনসপেক্টর। আপনি যা খুঁজছেন, এতে কিছুই পাবেন না। এগুলো নিয়ে যাবার ক্ষমতা হয়তো আছে, কিন্তু এ ধরনের কাজ
–আপনার নিরাপত্তার কথা ভেবেই আমার সব কিছু ঘেঁটে দেখা দরকার মিস ব্ল্যাকলক। বিপদটাকে আপনি অস্বীকার করতে পারেন না, এগুলোতে হয়তো কিছু পাওয়া যেতে পারে সোনিয়ার বিষয়ে।
একমুহূর্ত চুপ করে রইলেন মিস ব্ল্যাকলক। তার চোখ ছলছল করতে লাগল। নিজেকে সংবরণ করে বললেন, বিপদের কথা আমি জানি ইনসপেক্টর। বনি আমার জন্য রাখা অ্যাসপিরিনের বড়ি খেয়ে মারা গেছে। এরপর হয়তো আমার জন্য রাখা চকোলেট বা পানীয় খেয়ে মারা যাবে আর কেউ। প্যাট্রিক বা জুলিয়া কিংবা মিৎসি বা ফিলিপা। তবু আমি বলছি সোনিয়ার কোন বিষয় চিঠিগুলো থেকে আপনি পাবেন না। নিয়ে যান আপনি চিঠি। শার্লট আর আমার কাছে ছাড়া এগুলোর কোন দাম নেই। পড়া হয়ে গেলে পুড়িয়ে ফেলবেন। শেষ হয়ে যাক অতীতের সব স্মৃতি।
গলায় ঝোলানো চমৎকার কৃত্রিম মুক্তোগুলো নাড়াচাড়া করতে করতে বললেন মিস ব্ল্যাকলক।
পরদিন বিকেলে ভিকারেজে মিস মারপলের সঙ্গে দেখা করলেন ক্র্যাডক। বাঞ্চ পাশেই ছিলেন।
ক্র্যাডক একটা চিঠি মিস মারপলের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে সেটা কিভাবে পেলেন সেই বিবরণ শোনালেন।
–এই চিঠিটা আপনি পড়ে দেখুন মিস মারপল। জীর্ণ হয়ে আসা কাগজের চিঠিটা মিস মারপল চোখের সামনে তুলে ধরলেন। প্রিয় শার্লট,
এখানে প্রচণ্ড এক পারিবারিক জটিলতায় জড়িয়ে যাওয়ার জন্য দুদিন তোমাকে চিঠি লিখতে পারিনি। তোমার নিশ্চয় মনে আছে র্যাণ্ডালের বোন সোনিয়া একবার তোমাকে গাড়িতে বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিল। ডিমিট্রি স্ট্যামফোরডিস নামে একজনকে সোনিয়া বিয়ে করবে মনস্থ করেছে। কিন্তু র্যাণ্ডাল সেই লোকটিকে একেবারে সহ্য করতে পারেন না। এই নিয়ে দুজনে প্রচণ্ড রাগারাগি হয়ে গেছে।
আমাকেও এ নিয়ে ওদের দুজনের সঙ্গে কথা বলতে হয়েছে। কিন্তু র্যাণ্ডাল লোকটির সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছে। যত দূর জানা গেছে সে গ্রহণযোগ্য নয়।
র্যাণ্ডাল আমার কাজে খুবই সন্তুষ্ট। নির্ভর করেন। কথায় কথায় সে কথা জানাতেও ভুল করেন না। মাঝে মাঝে বলেন, তুমি আমাকে সবসময়েই সোজা পথে চলতে সাহায্য কর ব্ল্যাকি। আইনের বাইরে কোন কাজ র্যাণ্ডাল করেন না।
বেলও সোনিয়ার ব্যাপার নিয়ে চিন্তা করেছে। সে বলেছে, তার টাকা আছে, যাকে সে ভালবাসে তাকে কেন বিয়ে করতে পারবে না? এর মধ্যে কোন ভুল নেই–পরে অনুশোচনা করতে হলেও। র্যাণ্ডাল আর সোনিয়ার মধ্যে হয়তো আর বনিবনা হবে না।
বাবা কেমন আছেন? তাকে আমার ভালবাসা জানিও। তুমি মনমরা হয়ে থেকো না। লোকজনের সঙ্গে কথা বলো।
সোনিয়া বলেছে তোমাকে জানাতে, তাকে মনে রেখো। ওকে একটা রাগী বিড়ালের মত মনে হচ্ছে। র্যাণ্ডালের ওপর সে খুবই রেগে গেছে। আমার ভয় হয় সে না র্যাণ্ডালকে খুন করে বসে।
অনেক ভালবাসা রইল। আমি খোঁজ নিয়েছি, আয়োডিন চিকিৎসায় বেশ ভাল ফল পাওয়া যাবে। –তোমার প্রিয় বোন
লেটিসিয়া