–সোনিয়াকে, চিন্তিতভাবে বললেন মিস ব্ল্যাকলক, অনেক দিনের কথা; প্রায় ত্রিশ বছর…তারও যথেষ্ট বয়স হয়েছে…মনে হচ্ছে চিনতে পারব না।
-যে সময় তাকে দেখেছিলেন, এখনকার তার চেহারাটা কি মনে আছে?
-সোনিয়া, একটু ভাবলেন মিস ব্ল্যাকলক, গাঢ় রঙ..ছোটখাট চেহারা…
কোন বিশেষত্ব মনে করতে পারেন…কোন মুদ্রাদোষ
–না, তেমন কিছু ছিল বলে মনে হয় না…তবে বেশ হাসিখুশি ছিল।
–তার কোন ফটোগ্রাফ আছে?
ফটোগ্রাফ..দাঁড়ান মনে করে দেখি…কোথাও একটা অ্যালবামের মধ্যে অন্তত একটা ছবিও থাকা উচিত। হ্যাঁ, আছে
-আছে, সেটা একবার দেখতে পারি?
নিশ্চয়ই। কিন্তু অ্যালবামটা…কোথায় রেখেছি দেখতে হবে।
–আচ্ছা মিস ব্ল্যাকলক, মিসেস সোয়েটেনহ্যাম কি আপনার মনে হয় সোনিয়া গোয়েডলার হতে পারেন?
–মিসেস সোয়েটেনহ্যাম? অবাক হয়ে ভাবতে লাগলেন মিস ব্ল্যাকলক, কিন্তু ওর স্বামী তো সরকারী চাকরি করতেন…প্রথমে ছিলেন ভারতে তারপরে হংকং-এ।
–সেটা তো সোনিয়ার বলা কথা–নিজে কি জেনেছেন?
–না, তা অবশ্য নয়…কিন্তু না…মিসে সোয়েটেনহ্যাম…অবাস্তব—
সোনিয়া গোয়েডলার কখনও অভিনয় করতেন? মানে অপেশাদার কোন অভিনয়?
–ওহ হ্যাঁ–হ্যাঁ ও ভালই করত।
–মিসেস হারমনের মুখে শুনেছি মিসেস সোয়েটেনহ্যাম পরচুলা পরেন।
–হ্যাঁ…ওরকম থোকা…পরচুলা হতে পারে–তবু ও খুব ভাল…সোনিয়া হওয়া অসম্ভব।
–আর একটা কথা। আরও দুজন রয়েছেন এরকম
মিস হিঞ্চক্লিফ আর মিস মারগাটরয়েড। ওদের কেউ
–তাহলে মিস মারগাটরয়েড?
–ওহ না…কোনোভাবে না
–আপনি তো চোখে ভাল দেখেন না, তাই না?
কাছের জিনিস দেখতে অসুবিধা হয়।
যাই হোক, সোনিয়া গোয়েডলারের ছবিখানা একবার দেখতে চাই। অনেকদিন আগের হলেও একটা আদল পাওয়া সম্ভব হবে।
–এখনই দেখবেন?
–হলে ভাল হয়।
সেদিন আলমারি সাফ করার সময় জুলিয়া সঙ্গে ছিল। জুলিয়া বোধহয়
–ঠিক আছে আমি তাকে ডেকে আনছি।
ক্র্যাডক সিঁড়ির মুখে দাঁড়িয়ে জুলিয়ার নাম ধরে বার কয়েক হাঁক পাড়লেন।
জুলিয়ার সাড়া পাওয়া গেল। সে একটা ঘোঘারানো সিঁড়ি বেয়ে নেমে এল।
–আমি চিলে কুঠিতে ছিলাম, কি হয়েছে?
ক্র্যাডক তাকে অ্যালবাম খোঁজার কথাটা জানালেন।
ও হ্যাঁ মনে পড়েছে, ঘরে ঢুকে সে বলল, স্টাডি রুমে সব রাখা আচ্ছে–এনে দিচ্ছি। কয়েকখানা পুরনো অ্যালবাম পাওয়া গেল।
ড্রইংরুমে ফিরে এসে ক্র্যাডক বললেন, এগুলো কি?
-হ্যাঁ। বললেন মিস ব্ল্যাকলক। এর মধ্যে ছিল একেবারেই খেয়াল ছিল না। ক্র্যাডক পাতা উল্টে অ্যালবামগুলো দেখতে লাগলেন। টুপি মাথায় টিলা পোশাকের মেয়েদের নানা আকারের ছবি। কালি দিয়ে তলায় বর্ণনা লেখা। অনেক লেখাই অস্পষ্ট হয়ে গেছে।
একটা অ্যালবামের তৃতীয় পাতা খুলে মিস ব্ল্যাকক বললেন, এখানে সোনিয়ার বিয়ের আগেকার ছবি থাকা উচিত।
কিন্তু ছবি খুঁজতে গিয়ে থমকে গেলেন তিনি। পাতায় কয়েকটা ফাঁকা জায়গা। অনেক কষ্টে ক্র্যাডক তলার অস্পষ্ট লেখার পাঠোদ্ধার করলেন।
সোনিয়া আর বেন সমুদ্রের তীরে, সোনিয়া ও আমি। শার্ট, আমি আর সোনিয়া।
লেখাগুলো পড়ে গম্ভীর হয়ে গেল ক্র্যাডকের মুখ। বললেন, ছবিগুলো এখানে ছিল, কিন্তু কেউ সরিয়েছে।
–সেদিন আমরা যখন দেখি তখন এত ফাঁকা জায়গা ছিল না তাই না লেটি মাসী।
সম্ভবত খুব শিগগিরই সরানো হয়েছে সোনিয়া গোয়েডলারের সমস্ত ছবি। চিন্তিত স্বরে বললেন ক্র্যাডক।
.
১৩.
স্টাডিরুমে আগুনের পাশে বসে ইনসপেক্টর ক্র্যাডক কথা বলছিলেন মিসেস হেমসের সঙ্গে।
-আপনাকে কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করতে এলাম মিসেস হেমস।
-বলুন।
-বলেছিলেন আপনার স্বামী ইতালিতে যুদ্ধে মারা গিয়েছিলেন। কিন্তু আসল সত্যটা সেদিন আমাদের জানালেই ভাল করতেন যে তিনি সেনাবাহিনী থেকে একজন পলাতক।
মুহূর্তে মিসেস হেমসের মুখ রক্তশূন্য হয়ে গেল। তিনি বারবার হাত মুঠো করতে লাগলেন।
–অতীতকে কি খুঁড়ে বার না করলেই নয় ইনসপেক্টর। তিক্তস্বরে বললেন ফিলিপা হেমস।
–নিজেদের সম্পর্কে সকলেরই উচিত সত্য কথা বলা। বললেন ক্র্যাডক।
–কিন্তু এসব কথা সকলে জানুক আমি চাই না।
–না, কেউ জানবে না।
–আমার ছেলে, হ্যারি, এসব জানে না। আমি চাই না সে জানুক।
–কিন্তু সেটা কি খুব ঝুঁকির ব্যাপার হয়ে যাবে না মিসেস হেমস। বড় হয়ে সে যদি কোন দিন নিজে জানতে পারে তার বাবার কথা, সেটা তার পক্ষে ভাল হবে মনে হয় না।
–তা করা আমার ইচ্ছে নয়। ওর বাবা যুদ্ধে মারা গেছে একথাই সে জানবে।
–কিন্তু আপনার স্বামী কি এখনো জীবিত? বললেন ক্র্যাডক।
–হয়তো। আমি কিছুই জানি না।
–তাকে শেষ কবে দেখেছেন?
বহু বচ্ছর তাকে দেখিনি।
–দিন পনেরো আগে তার সঙ্গে কি আপনার দেখা হয়েছে?
–আপনার একথার উদ্দেশ্য?
–সামার হাউসে রুডি সার্জের সঙ্গে দেখা করেছেন, একথা আপনি অস্বীকার করলেও মিৎসি জোর দিয়েই কথাটা বারবার বলেছে। আমি বলতে চাইছি, মিসেস হেমস, সেদিন সামার হাউসে আপনার স্বামীর সঙ্গেই কথা বলেছিলেন।
–না, সামার হাউসে কারো সঙ্গে আমার দেখা হয়নি।
–টাকার দরকারে হয়তো দেখা করতে এসেছিল।
–আমিতো বলছি আমার সঙ্গে কারো দেখা হয়নি।
–দেখুন পলাতকরা বড় দুঃসাহসিক হয়ে পড়ে। ছিনতাই ডাকাতি অনায়াসে তারা করে ফেলে। বিদেশী রিভলভারও তাদের কাছে থাকতে পারে।