রাইডেসডেল বললেন, ক্র্যাডক, সার্জ সম্পর্কে আর কিছু জানা যায় কিনা একবার রয়্যাল স্পা হোটেলে গিয়ে খোঁজ নাও।
.
রয়্যাল স্পা হোটেলে পৌঁছে ক্র্যাডক ম্যানেজার মিঃ রোল্যাণ্ডসনের ঘরে উপস্থিত হলেন।
ইনসপেক্টরের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানলেন, সার্জ অতি সাধারণ হাসিখুশি তরুণ বলেই মনে হয়েছে। এ ধরনের ডাকাতি করবার মত তাকে মনে হয়নি।
–আপনার এখানে সে কতদিন ছিল?
–তিন মাসের কিছু বেশি। প্রশংসাপত্র ভালই ছিল।
–মানে-ইয়ে–বলতে
–বোঝা যাচ্ছে কোথাও গোলমাল ছিল। কি সেটা?
–অনেকটা তাই মানে দুই একবার বিল নিয়ে একটু ঝামেলা হয়। এমন কিছু জিনিসের দাম ধরা হয়েছিল যা হোটেলে ছিল না। আর বিলের টাকা মিটিয়ে দেবার সময় সে সেই বাড়তি টাকা আত্মসাৎ করেছিল। এই রকমই কিছু…
–তার জীবনে কোন মেয়ে ছিল?
–হ্যাঁ, মার্না হ্যারিস-গ্রিলের একজন ওয়েট্রেস।
তার সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই। বললেন ক্র্যাডক।
.
মেয়েটি এককথায় সুন্দরী। চমৎকার মুখের গড়ন। রক্তিম চুল আর তীক্ষ্ণ নাক।
পুলিস দেখে সে বেশ ভীত আর সতর্ক হয়ে পড়েছিল।
–আমি কখনওই ভাবতে পারিনি রুডি এই ধরনের লোক। রিসেপশানে কাজ করতো বলে ভাল বলেই মনে করেছিলাম। এখন দেখছি বিদেশীদের বিশ্বাস করা যায় না। তবে ও খুব শান্ত আর ভদ্র ছিল।
-আপনি তাকে ভাল জানতেন?
-তা বলা যাবে না। তবে আমরা বন্ধু ছিলাম। ওর বেশি কিছু নয়। একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছি রুডি খুব বড় বড় কথা বলতে চাইত।
–কি রকম বড় বড় কথা? জানতে চাইলেন ক্র্যাডক।
–যেমন সুইজারল্যাণ্ডে ওর আত্মীয়রা সকলেই বড়লোক…অর্থকরী লেনদেনের বাধা-নিষেধের জন্যই সে দেশ থেকে টাকা আনাতে পারে না। আমি অবশ্য কোন গুরুত্ব দিতাম না এসব কথায়। আরও বলত, আল্পস পর্বতে ওঠার কথা…হিমবাহের কাছে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর সব গল্প…
–মিস ব্ল্যাকলকের কথা আপনাকে কখনও বলেছিল?
-না, রুডি তার নাম আমার কাছে কখনও করেনি। তবে জানতাম তিনি এই হোটেলে মাঝে মাঝে মধ্যাহ্ন ভোজ করেন। একবার এখানে থেকেও ছিলেন। আমি জানতাম রুডি তাকে চেনে।
–চিপিং ক্রেগহর্নের কথা কিছু বলেছিল?
–মনে করতে পারছি না।
মার্না হ্যারিসের কাছ থেকে আর কিছু জানা গেল না। তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ইনসপেক্টর উঠে দাঁড়ালেন।
.
০২.
লিটল প্যাডকস-এর সদর দরজায় এসে দাঁড়াল ক্র্যাডকের গাড়ি। সঙ্গে সঙ্গে সার্জেন্ট ফ্লেচার বাড়ির আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো।
–তুমি রয়েছে ফ্লেচার, বলার মত আছে কিছু?
-বাড়িতে খোঁজ নিয়েছি স্যর। সার্জের হাতের নিদর্শন কোথাও পাওয়া যায় নি। বাড়ির দরজা জানালা জোর করে ভেঙে ঢোকার কোথাও চেষ্টা করা হয়নি। মনে হচ্ছে, সে ছটার সময় মেডেনহ্যাম থেকে বাসে এখানে আসে।
শুনলাম বাড়ির পাশের দরজা সাড়ে পাঁচটায় বন্ধ করা হয়। সে সামনের দরজা দিয়েই ঢুকেছিল–বাড়ির পরিচারিকা কিন্তু জানিয়েছে সারা বিকেল দরজা বন্ধ ছিল। মেয়েটা একটু পাগলাটে-ইউরোপীয় উদ্বাস্তুরা যেমন হয়ে থাকে।
-আর কিছু? হাসলেন ক্র্যাডক।
–আলোর ব্যবস্থায় কোথাও কোন গোলমাল দেখা যায়নি। কেবল ড্রইংরুম আর হলঘরের সার্কিটটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল। আলোর কারচুপিটা সে কি ভাবে করে বুঝতে পারা যাচ্ছে না। ফিউজবক্সে কিছু করতে হলে রান্নাঘরের সামনে দিয়ে যেতে হত তাহলে পরিচারিকার চোখে পড়ত।
–সে সার্জের লোক হতে পারে।
–খুবই সম্ভব স্যর। দুজনেই বিদেশী। তাছাড়া পরিচারিকাটি মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।
ফ্লেচার তার বক্তব্য শেষ করলে ক্র্যাডক সদর দরজায় ঘন্টা বাজালেন।
স্বর্ণকেশী সুন্দরী এক তরুণী দরজা খুলে তাকে ভেতরে নিয়ে গেল।
লিটল প্যাডকস-এর কত্রী মিস ব্ল্যাকলককে নিজের পরিচয় দিলেন ক্র্যাডক। তিনি লক্ষ্য করলেন, মাহিলার বয়স ষাটের কাছাকাছি। বেশ বুদ্ধিমতী আর দৃঢ়তাব্যঞ্জক চেহারা। তাঁর বাঁ কানে ব্যাণ্ডেজ লাগানো।
মহিলার পাশেই বসেছিলেন গোলাকৃতি মুখের প্রায় একই বয়সের একজন স্ত্রীলোক। ক্র্যাডক বুঝলেন ইনিই মিস ডোরা বানার-কনস্টেবল লেগ তার সম্পর্কেই একটা বিশেষণ ব্যবহার করেছিল–খ্যাপাটে।
প্রাথমিক সৌজন্য বিনিময়ের সুযোগে ক্র্যাডক ঘরটা জরিপ করে নিলেন।
ভিক্টোরিয় যুগের আদলে তৈরি জোড়া ড্রইংরুম। দুটো বড় চেয়ার, সোফা। মাঝখানের টেবিলে বড় পাত্রে রাখা হয়েছে ক্রিসানথিমাম-টাটকা আর সজীব।
–দুঃখজনক ঘটনাটা কি এই ঘরেই ঘটেছিল মিস ব্ল্যাকলক?
–হ্যাঁ।
গতরাত্রে এইঘর একেবারে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল। বলে উঠলেন মিস বানার। –গতরাতের ঘটনার কথায় আসার আগে আমি একটা কথা জানতে চাই, রুডি সার্জকে আপনি কখন প্রথম দেখেছিলেন?
-রুডি সার্জ…লোকটার ওই নাম? মেডেনহ্যামের স্পা হোটেলে তার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল?
-কতদিন আগে?
–প্রায় তিন সপ্তাহ আগে। আমি আর আমার বন্ধু এই ডোরা সেখানে সেদিন মধ্যাহ্নভোজ করছিলাম।
-কোন কথা হয়েছিল।
–আমরা যখন চলে আসি তখন এক তরুণ এগিয়ে এসে বলল, আপনি মিস ব্ল্যাকলক, তাই না? তারপর সে বলল, সে হল মট্রিউর হোটেল দ্য আলপসের মালিকের ছেলে। আমি আর আমার বোন যুদ্ধের সময় সেখানে একমাস ছিলাম।
-ওকে আপনি চিনতে পেরেছিলেন?
-না, চিনতে পারিনি। তবে হোটেলের মালিক অমায়িক মানুষ ছিলেন, তাই তার ছেলের প্রতি সৌজন্য দেখিয়ে বলি, ইংলণ্ডে তার কেমন লাগছে। সে জানায় তার বাবা তাকে ছমাসের জন্য হোটেল ব্যবসা শিখতে পাঠিয়েছে।