মিস বানার কি মারা গেছেন স্যার?
-হ্যাঁ আজ সকালে মৃত অবস্থায় তাকে বিছানায় পাওয়া গেছে। ডাক্তার জানিয়েছেন, ঘুমের মধ্যেই মৃত্যু হয়েছে। স্বাভাবিক মৃত্যু কিনা তার সন্দেহ রয়েছে। অবশ্য আজ রাতে ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়া যাবে।
–আমি দেখেছি মিস ব্ল্যাকলকের বিছানার কাছেই অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট রাখা থাকত। দু-একদিনের মধ্যে ওই বাড়িতে কেউ কি এসেছিল? জানতে চাইলেন ক্র্যাডক।
–আমাদের ছকের মধ্যে যারা রয়েছে তারা সকলেই গতকাল সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন। মিস বানারের জন্মদিনের পার্টি ছিল। ওদের যে কারোর পক্ষে ওপরে উঠে গিয়ে ট্যাবলেট বদলে রাখা অসম্ভব নয়। তাছাড়া বাড়ির লোকেদের পক্ষেও তা সম্ভব।
.
১২.
বাইরে বেরুবার আগে ভিকারেজের দরজার সামনে বাঞ্চ মিস মারপলের হাতে একটা লেখা দিলেন।
বললেন, মিস ব্ল্যাকলককে বলবে লেখাটা নিয়ে জুলিয়ান যেতে পারল না বলে দুঃখিত। একজন মরণাপন্ন মানুষকে এখনই তাকে দেখতে যেতে হবে। লেখাটা অন্ত্যেষ্টির জন্য। ইনকোয়েস্ট বুধবার হতে পারে। অন্যের জন্যে রাখা বিষাক্ত অ্যাসপিরিন খেয়ে বেচারা বানি মারা গেল। তোমার কষ্ট হবে যেতে, জেন মাসি, কিন্তু বাচ্চাটাকে নিয়ে এখুনি আমার হাসপাতালে না গেলেই নয়।
ঝড়ের মত কথাগুলো বলে বাঞ্চ চলে গেল। মিস মারপল ধীরে ধীরে হেঁটে মিস ব্ল্যাকলকের ড্রইংরুমে এসে উপস্থিত হলেন।
ওপরে খবর পাঠিয়ে তিনি ড্রইংরুমটা খুঁটিয়ে দেখতে লাগলেন।
ডোরা বানার একদিন ব্লুবার্ডে দেখা হলে বলতে চেয়েছিলেন, প্যাট্রিক ল্যাম্প নিয়ে কি কারসাজি করেছিল, যাতে আলো নিভে যায়।
ল্যাম্প নিয়ে প্যাট্রিক কি কারসাজি করেছিল মিস মারপল বুঝতে পারছিলেন না।
খিলানের কাছে টেবিলে ছোট একটা ল্যাম্প রয়েছে। ডোনা বানার বলেছিলেন ড্রেসডেনের চীনামাটির তৈরি ল্যাম্পটা। আগে সেটা বাতিদান ছিল। পরে বিদ্যুতের ল্যাম্প বানিয়ে নেয়া হয়।
মিস মারপলের মনে পড়ল, এক চাষী বউয়ের মূর্তির আকারের ল্যাম্প, ডোনা বলেছিলেন, মাথায় বড় শেড। ল্যাম্পটা জোড়ার একটা। তাহলে চাষী আর চাষী বউ। ঘটনার দিন টেবিলে ছিল চাষীবউ, তার পরদিন যেটা দেখা গেল, সেটা চাষীর মূর্তি। রাতের মধ্যেই ল্যাম্পটা বদলে দেওয়া হয়েছিল। ডোরা বানার সন্দেহ করেছিলেন, কাজটা করেছে প্যাট্রিক।
কিন্তু কাজটা প্যাট্রিক করল কি ভাবে? সামনে থাকা ল্যাম্পটা দেখতে দেখতে চিন্তা করতে লাগলেন মিস মারপল।
ল্যাম্পের তার প্লাগে লাগানো। তার টেবিলের ওপর দিয়ে গেছে। তারের মাঝে বরাবর একটা সুইচ। বিদ্যুতের ব্যাপারে কোন ধারণা নেই মিস মারপলের তাই এর কিছুই বুঝতে পারলেন না তিনি।
কিন্তু এটা তো দেখা যাচ্ছে চাষীর মূর্তি। চাষী বউ ল্যাম্পটা তাহলে কোথায়? গুদাম ঘরে কি থাকা সম্ভব? না অন্য কোথাও। তিনি ভাবলেন ব্যাপারটা ইনসপেক্টর ক্র্যাডককে জানানো দরকার।
প্যাট্রিকের ওপরে সন্দেহ মিস মারপলেরও ছিল। বিজ্ঞাপনটা দেখে সেই ওটা দিয়েছে বলে তিনি ভেবেছেন। প্যাট্রিকের এরকম মজা করার স্বভাবের ব্যাপারটা জানতেন বলেই তিনি এরকম ভেবেছিলেন।
সুদর্শন তরুণ যুবক প্যাট্রিক। তরুণীদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয় সন্দেহ নেই। প্যাট্রিকই কি তবে পিপ? যুদ্ধের সময় সে নৌবাহিনীতে ছিল। একবার যাচাই করা দরকার। ছদ্মবেশ হলে ধরা পড়বে।
এই সময় মিস ব্ল্যাকলক ঘরে ঢুকলেন। এই কদিনে তার বয়স যেন আরও বেড়ে গেছে।
মিস মারপল ঘুরে দাঁড়ালেন। বললেন, অসময়ে আপনাকে বিরক্ত করতে হল বলে দুঃখিত মিস ব্ল্যাকক।
বলে বাঞ্চের দেওয়া লেখা কাগজটা বাড়িয়ে দিলেন।
–এক মরণাপন্ন লোককে দেখতে গেছেন বলে ভিকার আসতে পারলেন না। বাঞ্চও একটা বাচ্চাকে নিয়ে হাসপাতালে গেছে। ভিকার কিছু লিখে পাঠিয়েছেন আপনাকে।
ধন্যবাদ জানিয়ে হাতবাড়িয়ে কাগজটা নিয়ে পড়লেন মিস ব্ল্যাকলক।
-ভাইকার খুবই সহৃদয়। বললেন তিনি, তাঁকে জানাবেন, তার ইচ্ছা মতই সব হবে।
বলতে বলতে তার চোখ অশ্রুসজল হয়ে এল। গলা বুজে এল।
অনেক কষ্টে তিনি নিজেকে সংযত করলেন। মুখ তুলে বললেন, ডোরাই ছিল অতীতের সঙ্গে আমার যোগসূত্র।
ও চলে গেছে–আমি একা হয়ে গেলাম।
মিস মারপল তাকে সহৃদয় সহানুভূতি জানালেন–যে মনে রাখে সে চলে গেলে মানুষ বড়ই একা হয়ে যায়।
এই সময় বাইরে পায়ের শব্দ শোনা গেল। ইনসপেক্টর ক্র্যাডক ঘরে প্রবেশ করলেন। মিস মারপলকে এসময়ে তিনি সেখানে আশা করেননি। বিরক্তির স্পষ্টে ছাপ পড়ল তার মুখে।
মিস মারপল বুঝতে পারলেন তার উপস্থিতি ক্র্যাডকের পছন্দ নয়। তিনি বিদায় জানিয়ে ঘরের বাইরে চলে গেলেন।
ক্র্যাডক ঘুরে দাঁড়িয়ে বললেন, আপনাকে সহানুভূতি জানিয়ে সময় নষ্ট করব না মিস ব্ল্যাকলক। মিস বানারের মৃত্যুতে নিজেকে অপরাধী বোধ করছি। আমাদের এটা ঠেকানো উচিত ছিল।
–আপনারা আর কি করতে পারতেন।
-হ্যাঁ, খুব সহজ হত না কাজটা। এখন আমাদের দ্রুত কাজ করতে হবে। আপনার ওপর দুবার আক্রমণ হল–যে আড়াল থেকে এসব করছে, সে সম্ভবত আবারও চেষ্টা করবে।
মিস ব্ল্যাকক নীরব দৃষ্টিতে অসহায় ভাবে তাকালেন ক্র্যাডকের দিকে।
–মিসেস গোয়েডলারের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। কিছু সাহায্য পাওয়া গেছে। পিপ ও এমা–এমন দুজন যারা আপনার মৃত্যুতে লাভবান হবে। একবয়সী প্যাট্রিক আর জুলিয়া সিমন্সের কথা স্বভাবতই মনে আসে, কিন্তু তাদের অতীত জীবন পরিষ্কার। তবু কেবল এই দুজনের ওপর নজর রাখলেই আমাদের চলবে না। মিস ব্ল্যাকক, আপনি এখন দেখলে সোনিয়া গোয়েডলারকে কি চিনতে পারবেন?