কিছুক্ষণ পরেই ড্রইংরুমে ঢুকল জুলিয়া। ওর চোখ ঝকঝক করছিল।
-তোমাকে যেমন ভেবেছিলাম, দেখছি তুমি তা নও ফিলিপিয়া। খেলা বেশ ভালই খেলেছ, কি বল?
-তুমি তাহলে শুনেছ?
–আমাকে শোনাতে চাওয়া হয়েছিল বলেই শুনেছি।
–এ কথার মানে?
–ভালই বুঝতে পারছ তুমি। লেটি মাসী বোকা নয়, তুমিও জাল ভালই বিছিয়েছ।
–ওহ জুলিয়া…আমি এসব কখনো ভাবিনি।
-কেন ভাববে না। টাকা কার না দরকার। তবে ভুলে যেও না, লেটি মাসীর কিছু হলে সবার সন্দেহ তোমার ওপরেই পড়বে।
–তা কখনোই হবে না। তাকে এখন মারলে খুবই বোকামি হবে–
-তুমি দেখছি মিসেস গোয়েডলার স্কটল্যাণ্ডে মরতে বসেছেন সে খবর ঠিকই রাখ। অবাক করলে ফিলিপিয়া।
–তোমাকে আর প্যাট্রিককে আমি বঞ্চিত করতে চাই না। আর্তস্বরে বলে উঠল ফিলিপিয়া।
–কিন্তু আমি তোমাকে বিশ্বাস করি না।
৩. মিলচেস্টারে পৌঁছে
১১.
মিলচেস্টারে পৌঁছে ক্র্যাডক চিফ কনস্টেবল রাইডেসডেলের কাছে তার ভ্রমণের রিপোর্ট পেশ করলেন।
-তাহলে মিস ব্ল্যাকলক যা বলেছেন তা প্রমাণিত হল। পিপ আর–এমা! বললেন তিনি।
-প্যাট্রিক আর জুলিয়া সিমন্স প্রায় ওদেরই বয়সী। যদি প্রমাণ করা যায় মিস ব্ল্যাকলক বাচ্চা বয়সে ওদের দেখেননি
তাকে বাধা দিয়ে রাইডেসডেল বললেন, আমাদের হয়ে সেই কাজ ইতিমধ্যে মিস মারপলই করেছেন। মিস ব্ল্যাকলক দুমাস আগেই তাদের প্রথম দেখেন।
–তাহলে তো স্যার।
–না, ক্র্যাডক, তা হবার নয়। অনেক যাচাই বাছাইয়ের ব্যাপার রয়েছে। যতদূর জানা যাচ্ছে, প্যাট্রিক আর জুলিয়া এসবের মধ্যে নেই। প্যাট্রিক নৌবাহিনীতে ছিল, তার রেকর্ডেও ত্রুটি নেই। ক্যানেতে মিসেস সিমন্সের সঙ্গেও আমরা যোগাযোগ করেছি। তিনি পরিষ্কার জানিয়েছেন, তার দুই ছেলে মেয়ে চিপিং ক্লেগহর্ন তার আত্মীয়া মিস ব্ল্যাকলকের কাছে আছে।
-কিন্তু আমার ধারণা
রাইডেসডেল একটা কাগজ বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, পড়ে দেখ মিসেস ইস্টারব্রুক সম্পর্কে এটা জানা গেছে।
কাগজের ওপর চোখ বুলিয়ে ক্র্যাডকের ভ্রূ উঠে গেল।
কিন্তু এ ঘটনার সঙ্গে এর সম্বন্ধ তো পাচ্ছি না।
–আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে নেই–মিসেস হেমস সম্পর্কেও এরকম আছে।
-তাহলে ভদ্রমহিলার সঙ্গে আর একবার কথা বলতে হবে স্যার। এ খবর প্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে। স্যর, ফ্লেচার কি রকম করেছে–
–সে তো কাজ করে চলেছে। মিস ব্লকব্লকের অনুমতি নিয়ে সমস্ত বাড়ি সার্চ করে দেখেছে। এটাও পরীক্ষা করে দেখেছে, বাড়িতে কেউ না থাকার সময় যে কেউ বাড়িতে ঢুকে দরজায় তেল লাগাতে পারে।
–ফ্লেচার কি বলছে, সকলেই কি খাবার সময়েই বাড়িতে ঢুকেছিল। জানতে চাইলেন ক্র্যাডক।
–প্রায় সবাই। এরপর তিনি যে বিবরণ শোনালেন তা এরকম–একটা মুরগী নিয়ে মিস মারগাটরয়েড ঢুকেছিলেন ডিমে তা দেওয়ানোর জন্য।
এরপর আসেন মিসেস সোয়েটেনহ্যাম। মিস ব্ল্যাকলক বরাবর তার জন্য ঘোড়ার মাংস এনে দেন। সেটা থাকে রান্নাঘরের টেবিলে, মিৎসির অনুপস্থিতিতে মিসেস সোয়েটেনহ্যাম নিয়ে যান। মিৎসিকে তিনি সহ্য করতে পারেন না বলে এরকমই বরাবর চলছে।
মিস বলেছেন ইদানীং ওদিকে যাননি, কিংবা গেলেও মনে করতে পারছে না। কিন্তু মিৎসি তাকে পাশের দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসতে দেখেছিল। মিসেস বাট বলে স্থানীয় একজনও দেখেছেন সেটা।
মিসেস ইস্টারব্রুক কুকুর নিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, সেই সময় একবার ঢুকেছিলেন মিস ব্ল্যাকলকের কাছে সেলাইয়ের নক্সা জানতে। তবে তিনি বাড়ি ছিলেন না।
-আর কর্নেল?
–বিবরণ শুনতে শুনতে জিজ্ঞেস করলেন ক্র্যাডক।
–ভারতের ওপরে লেখা একটা বই মিস ব্ল্যাকলক চেয়েছিলেন, তিনি সেটা নিয়ে গিয়েছিলেন।
-আমাদের সহযোগিনী মিস মারপলও কাজ করেছেন বলে ফ্লেচার জানিয়েছে। উনি ব্লুবার্ড কাফেতে সকালে কফি পান করতে গেছেন, আর লিটল প্যাডকসে চা পান করতে।
মিসেস সোয়েটেনহ্যামের বাগান দেখে প্রশংসা করেছেন, কর্নেল ইস্টারব্রুকের ভারতীয় কিউরিও সংগ্রহও দেখেছেন।
-কর্নেল ইস্টারব্রুক প্রকৃতই কর্নেল কিনা তিনি জেনেছেন?
-না জেনে থাকলেও জানবেন নিশ্চয়ই। তাছাড়া প্রাচ্যের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেই যাচাই করে নেওয়া যাবে।
–ইতিমধ্যে মিস ব্ল্যাকলকের ক্লেগহর্ন থেকে সরে থাকাই মঙ্গল। উনি কি রাজি হবেন বলে মনে হয়, স্যার? মিস বানারকে সঙ্গে নিয়ে তিনি স্কটল্যাণ্ডে মিসেস গোয়েডলারের কাছেই গিয়ে কিছুদিন থাকতে পারেন।
মিসেস গোয়েডলারের মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকা? এ ব্যাপারে মনে হয় রাজি হবেন না।
-কিন্তু ব্যাপারটা খুবই গুরুতর, তাঁর জীবন রক্ষার প্রশ্ন। সময়ের ব্যাপারটাও তো মাথায় রাখা দরকার।
–কথাটা অবশ্য ঠিকই বলেছে ক্র্যাডক।
-মিসেস গোয়েডলারের অবস্থা এখন তখন। খুনীর পক্ষে সময় বড়ই কম। সে জানে, আমরাও কেউ বসে নেই। সবকিছুই পরীক্ষা করে দেখছি।
রাইডেসডেলকে চিন্তাগ্রস্ত দেখাল।-হ্যাঁ, যাচাইয়ের ব্যাপারটা ভারতে করতে হবে-সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
-একারণেই বলছি স্যার বিপদ আমাদের ঘাড়ের ওপর। বহু টাকা যেখানে জড়িত
–এই সময়, একজন কনস্টেবল ঘরে ঢুকে জানাল, চিপিং ক্রেগহন থেকে কনস্টেবল ফোনে কথা বলতে চাইছেন।
চিফ কনস্টেবল লাইনটা ধরে কথা বললেন। তাঁর মুখ ভাব কঠিন হয়ে উঠেছে।
–একটা দুঃসংবাদ পাওয়া গেল ক্র্যাডক। মিস বানার–নিজের অ্যাসপিরিনের বোতল খুঁজে না পেয়ে মিস ব্ল্যাকলকের বোতল থেকেই দুটো নিয়ে খেয়েছিলেন। বোতলে মোট তিনটে ছিল। সেটা পরীক্ষার জন্য ডাক্তারের কাছে পাঠানো হয়েছিল, তিনি জানিয়েছেন কিছুতেই অ্যাসপিরিন না।