-তাহলে দারুণ কেক বানিয়ে দেব। ওপরে চকোলেট লাগিয়ে দেখবেন শুভ কামনা লিখে দেব।
মিৎসির মুখ উজ্জ্বল হতে হতে আবার অন্ধকার হয়ে গেল।
–কিন্তু আমায় ওই কেককে মিঃ প্যাট্রিক বলেন মধুর মরণ। আমার কেকের ওরকম নাম একদম সহ্য হয় না।
মিৎসিকে সান্ত্বনা দিয়ে মিস ব্ল্যাক বললেন, এটা বলে ও তোমার কেকের প্রশংসাই করে মিৎসি। তোমার ওই কেক প্যাট্রিকের খুব প্রিয়।
–কিন্তু ওই মরা কথাটা ভাল লাগে না।
রান্না ঘর থেকে বাইরে এসে মিসেস ডোরা বানারের সঙ্গে দেখা হলো তার। তিনি হেসে বললেন। জান লেটি, রেমণ্ড সোয়েটেনহ্যাম ফোন করেছিল। ও বিকেলে উপহার হিসেবে আমার জন্য একবোতল মধু নিয়ে আসবে। আর মিস হিঞ্চক্লিফ? বলেছেন আমার জন্য ডিম নিয়ে আসবেন।
–তোমার জন্মদিন উপলক্ষে চমৎকার সব হচ্ছে ডোরা। মধু, ডিম, তারপর জুলিয়া দিচ্ছে
–তোমার এই সুন্দর ব্রুচটাও তো রয়েছে।
গর্বিত আনন্দে বুকে ঝোলানো হীরের হারটা হাত দিয়ে দেখালেন মিসেস ডোরা বানার।
–গহনাটা তোমার পছন্দ হয়েছে বলে আমার ভাল লাগল।
বিকেলে সকলে ডাইনিং রুমের টেবিলে সাজানো ভাল জিনিসগুলো সানন্দে সকলে সদ্ব্যবহার করলেন। সকলেই কামনা জানালেন এমন জন্মদিন বারবার আসুক।
প্যাট্রিক একবার অবশ্য মিৎসির তৈরি জন্মদিনের কেকটাকে সোল্লাসে মধুর মরণ বলবার চেষ্টা করেছিল। মিস ব্ল্যাকলক তাকে চোখের শাসনে চুপ করিয়ে দিয়েছেন।
সকলে ড্রইংরুমে ফিরে আসার পর মিসেস হিঞ্চক্লিফ মিস ব্ল্যাকলককে বললেন, জেন মাসী এল না?
–না, কেন? বললেন মিস ব্ল্যাকলক।
–একজন লোককে দেখলাম মুরগীর খাঁচার কাছে ঘুরঘুর করছে, সৈনিকের মত সুন্দর চেহারা।
জুলিয়া বলল, উনি আমাদের ডিটেকটিভ। ঘুরে ঘুরে বাড়ির ওপর নজর রাখছেন। লেটি পিসির জন্যই।
–পুলিস কি এখনো সন্তুষ্ট হতে পারেনি? বললেন মিসেস ইস্টারব্রুক।
–পুলিস সন্তুষ্ট নয়, সেই কারণেই ইনকোয়েস্ট পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন কর্নেল ইস্টারব্রুক।
-আসলে আমাদের সবার ওপরই পুলিসের নজর রয়েছে। বলল এডমণ্ড সোয়েটেনহ্যাম।
–ওসব খারাপ কথা মিঃ সোয়েটেনহ্যাম, বললেন মিসেস ডোরা বানার, এখানকার কেউ আমার প্রিয় লেটির ক্ষতি চায় না আমি জানি।
জুলিয়া প্যাট্রিককে ফিসফিস করে কিছু বলল।
–কি ব্যাপার, তুমি কি কোন ভাবনায় পড়েছ ফিলিপা? বললেন মিসেস ব্ল্যাকল।
–ভাবনা? কেন? বিস্মিত হল ফিলিপা হেমস।
–কিছু হয়েছে নাকি? ইদানীং দেখছি কেমন আনমনা।
–ওহ, না, মিস ব্ল্যাকলক।
–যাক…ভাবছিলাম তুমি আর প্যাট্রিক বুঝি–তোমাদের দুজনকে খুব মেলামেশা করতে দেখছি তো
–প্যাট্রিক?
-হ্যাঁ। দেখ প্যাট্রিক আমার আত্মীয় বটে, কিন্তু তবু বলছি ভাল স্বামী হবার উপযুক্ততা তার নেই।
–আমি বিয়ে করব না। কঠিন স্বরে বলল ফিলিপিয়া।
-তোমার বয়স কম, বিয়েটা দেখে বুঝে করার সুযোগ পাবে। ও প্রসঙ্গ এখন থাক। আর কোন যেমন টাকাকড়ি–কোন অসুবিধা নেই তো?
-না, মিস ব্ল্যাকলক। আমি ভাল আছি।
ছেলেদের লেখাপড়ার ব্যাপারে তোমার ভাবনা থাকা স্বাভাবিক, আমি বুঝতে পারি। তাই একটা কথা বলছি শোন, কদিন আগে মিলচেষ্টারে আমার উকিল বেডিংফেণ্ডের কাছে গিয়েছিলাম। একটা নতুন উইল করবার কথা কদিন থেকে মনে হচ্ছিল–নানান কথা চিন্তা করেই। আমি ব্যবস্থা করেছি ফিলিপা, বনির মাসোহারা ছাড়া বাকি সবকিছুই তুমি পাবে।
ফিলিপা যেন ভয়ার্ত স্বরে বলে উঠল, আমি তা চাই না…কেন…আমি কেন নেব… তাছাড়া…প্যাট্রিক আর জুলিয়া রয়েছে…ওরা আপনার আত্মীয়।
দূর সম্পর্কের। আমার টাকায় ওদের কোন দাবী নেই। অদ্ভুত স্বরে বললেন মিস ব্ল্যাকলক।
–তবু আমি চাই না।
-তোমাকে আমার ভাল লেগেছে ফিলিপা, বনি ছাড়া আমার আর কেউ নেই। তোমার ছেলে রয়েছে। অবশ্য আমি মারা গেলে খুব বেশি কিছু পাবে না…আবার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অন্য রকমও হয়ে যেতে পারে। মিসেস হারমন আর মিস মারপল এখানে আসতে পারেননি, ভালই হয়েছে। দুজনেরই ছোঁক ছোঁক করা স্বভাব। সবেতেই বাঁকা চোখ।
একসময় গৃহকর্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে জন্মদিনের পার্টি শেষ হল।
শেষ অতিথি বিদায় নেবার কিছুক্ষণ পরে মিসেস ডোরা বানার বললেন তার ভয়ানক মাথা ধরেছে। প্যাট্রিক বলল, ও কিছু না, কেকের জন্য অমন হয়েছে, আমারও পেট কেমন করছে।
–সারাদিন উত্তেজনার মধ্যে কাটল–এবার একটু শুয়ে পড়িগে। কটা অ্যাসপিরিন খেয়ে ঘুমুবার চেষ্টা করব।
-হ্যাঁ, সেটাই ভাল। বললেন মিস ব্ল্যাককক।
মিস বানার ওপরে উঠে গেলেন। কিন্তু একটু পরেই আবার নিচে নেমে এলেন।
-কি হল বনি। জিজ্ঞেস করলেন মিস ব্ল্যাকলক।
–আমার অ্যাসপিরিনগুলো কোথায় রেখেছি, খুঁজে পাচ্ছি না।
-তাহলে আমার বোতল থেকে নিয়ে নাও, বিছানার কাছে আছে। বললেন মিস ব্ল্যাকল।
–আমার ড্রেসিংটেবিলের ওপরেও আছে। ফিলিপিয়া হেমস বলল।
–ধন্যবাদ। দেখি আমারটা পাই কিনা। একটা নতুন বোতল।
–কথাটা বলতে বলতে মিসেস ডোরা বানার আবার ওপরে চলে গেলেন।
-সারা দিনটা ধকলে গেছে। বেচারী কাল না আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে। বললেন মিসেস ব্ল্যাকক। ফিলিপার বিস্মিত ভীত দৃষ্টি স্থির হয়ে রইল মিস ব্ল্যাকলকের মুখের ওপরে।
–কিন্তু…কিন্তু আপনি মারা যাচ্ছেন না। বলল সে।
–হ্যাঁ, ঠেকাতে পারব যদি উপযুক্ত সাবধানতা নিতে পারি। ভাবলেই বুঝতে পারবে। কথা শেষ করেই মিস ব্ল্যাকলক ঘর ছেড়ে হঠাৎ চলে গেলেন।