ক্র্যাডক তার প্রশ্নটি আবার মিসেস গোয়েডলারকে ধরিয়ে দেবার চেষ্টা করলেন।
–আপনার স্বামী তার সব অর্থ মিস ব্ল্যাকলককে দিয়ে গেছেন। কিন্তু, তার তো নিজের এক বোন ছিল?
–হ্যাঁ। আপনি সোনিয়ার কথা বলছেন, কিন্তু বহু বছর আগেই দুই ভাই বোনে ঝগড়া হয়ে আলাদা হয়ে গিয়েছিল।
–বোধহয় তিনি বোনের বিয়েটা মেনে নেননি?
-ঠিক বলেছেন। সোনিয়ার স্বামীর নাম দিমিট্রি স্ট্যামফোরডিস। কিন্তু র্যাণ্ডাল তাকে একদম সহ্য করত না। বলত সে শঠ, প্রতারক। কিন্তু সোনিয়া তাকেই ভালবেসেছিল আর বিয়ে করবে বলে মনস্থির করে ফেলেছিল। সোনিয়ার তখন পঁচিশ বছর বয়স। নিজের ভাল মন্দ বোধ তার ভালই জন্মেছিল।
আমিও বিশ্বাস করতাম লোকটা ভাল ছিল না। শুনেছি তার পুলিসের খাতায় নামও ছিল। র্যাণ্ডাল ভাবত তার নামও আসল ছিল না। কিন্তু সে মেয়েদের কাছে ছিল দারুণ আকর্ষণীয়। আর সোনিয়াকেও খুব ভালবাসত। তাই আমি বলতাম, সে যাকে ভালবেসেছে কেন তাকে বিয়ে করবে না। সে খুব সুন্দরী ছিল। তার প্রচুর অর্থও ছিল। তাদের সুখী না হবার কোন কারণ ছিল না।
-ভাইবোনের ঝগড়া কোনদিনই মেটেনি?
–না। তাদের আর কোনদিন বনিবনা হয়নি। বিয়ের পরই ভাইয়ের সঙ্গে সব সম্পর্ক মিটিয়ে দিয়ে সোনিয়া চলে গিয়েছিল।
আঠারো মাস পরে বুদাপেস্ট থেকে তার একটা চিঠি পাই। ও লিখেছিল, র্যাণ্ডালকে জানাতে যে সে খুব সুখী আর সবেমাত্র তার যমজ সন্তান হয়েছে। তার চিঠিতে কোন ঠিকানা ছিল না।
–সোনিয়া আপনাকে তার সন্তানদের নাম জানিয়েছিলেন?
–হ্যাঁ, পিপ আর এমা।
–তারপর?
–ও চিঠিতে জানিয়েছিল স্বামীর সঙ্গে আমেরিকায় চলে যাচ্ছে। র্যাণ্ডালকে জানিয়েছিলাম। ও বলেছিল ওই লোকটাকে বিয়ে করার জন্য সোনিয়াকে একদিন অনুতাপ করতে হবে। ব্যস। তারপর ওই পর্বের ওখানেই ইতি পড়েছিল। ওদের আর কোন খবর পাইনি।
পরে একসময় উইলের প্রসঙ্গ তুলে আমিই র্যাণ্ডালকে বলেছিলাম, মানুষের জীবনের কথা কিছুই বলা যায় না। দুর্ঘটনাতেও অকাল মৃত্যু হয় মানুষের। ব্ল্যাকি তখন টগবগে ঘোড়ার মত; কিন্তু দৈবাৎ যদি আমার আগে মারা যায়? কথাটা এভাবে ও ভাবেনি, তাই অবাক হয়ে গিয়েছিল। বলেছি, তাহলে আর কি হবে, আর কেউ নেই। আমি বলেছিলাম, সোনিয়াকে তুমি না হয় বঞ্চিত করতে পার, কিন্তু পিপ আর এমা তো কোন দোষ করেনি। তুমি সবকিছু ওর সন্তানদের দাও। হয়তো পরে আরও কেউ হতে পারে। ও প্রথমে অমত করলেও পরে আমার। কথামতই কাজ করেছিল। কিন্তু ওরা যে কোথায় কোন দেশে আছে কিছুই জানি না।
আদৌ বেঁচে আছে কিনা তাই বা কে বলবে। যদি–ক্র্যাডকের চোখের ওপর দৃষ্টি ফেললেন মিসেস গোয়েডলার। শান্ত স্বরে বললেন, ব্ল্যাকি বড় ভাল…ওর কোন ক্ষতি না হয় দেখবেন।
কথা থেমে গেল তার। কেমন ঝিমিয়ে পড়লেন। চোখে মুখে ক্লান্তির ছায়া পড়ল।
ক্র্যাডক বুঝতে পেরে বললেন, আপনি ক্লান্ত, আমি এখন যাচ্ছি-
-শিথিল ভাবে মাথা নোয়ালেন মিসেস গোয়েডলার। ফিসফিস স্বরে বললেন, ম্যাককে পাঠিয়ে দিন। বড্ড ক্লান্তি লাগছে…দেখবেন…ওরা যেন…ব্ল্যাকির ক্ষতি করতে না পারে।…আমার মৃত্যু হওয়ার আগে পর্যন্ত ওর বড় বিপদ…ওকে দেখবেন
–আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব মিসেস গোয়েডলার।
ক্র্যাডক দরজার কাছে এসেই সিস্টার ম্যাকলেল্যাণ্ডকে দেখতে পেলেন। বিচলিত স্বরে বললেন, আশা করি ওঁর কোন ক্ষতি হয়নি।
–মনে হয় না। এমনই হয়।
-একটা কথা কিন্তু জানা হল না, বললেন ক্র্যাডক, পুরনো কোন ফটো ওঁর কাছে আছে। কিনা–
সিস্টার বাধা দিয়ে বললেন, দুঃখিত ইনসপেক্টর, সবই নষ্ট হয়ে গেছে। যুদ্ধের সময় লণ্ডনের বাড়িতে বোমার আগুনে সবই পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। অনেক ব্যক্তিগত স্মৃতিচিহ্ন নষ্ট হয়ে যায় বলে মিসেস গোয়েডলার অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন।
.
তার এই ভ্রমণ শেষ করে ক্র্যাডক অনেকটাই আশান্বিত হলেন। একটা ছক তার চোখের সামনে পরিষ্কার ফুটে উঠল।
মিসেস গোয়েডলার যাই অনুমান করে থাকুন, এক ভাই আর এক বোন ইউরোপের কোথাও হয়ত বড় হয়েছে। তাদের মা সোনিয়া অর্থবতী ছিলেন। কিন্তু তার স্বামী দু-ভাইবোনের জন্মদাতা পিতার অপরাধী হিসেবে পুলিসের খাতায় নাম ছিল। একদিন হয়তো কপর্দকশূন্য অবস্থায় তারা ইংলণ্ডে এসেছিল। ভাইবোন সবার আগে এখানে যা করতে চাইবে তা হল, ধনী কোন আত্মীয় আছে কিনা তার খোঁজ করা।
সামারসেট হাউসে গিয়ে মিসেস ব্ল্যাকলকের কথা জানতে পারা তাদের পক্ষে অসম্ভব নয়। সেই সূত্রে র্যাণ্ডাল গোয়েডলারের বিধবা স্ত্রীর খোঁজ পেয়ে যেতে পারে তারা। যখন ওরা বুঝতে পারবে লোটেসিয়া ব্ল্যাকলক তার আগে মারা গেলে তাদের অর্থের অভাব চিরদিনের মত মিটে যেতে পারে…তারপর…তারপর…তারা একা অথবা একসঙ্গে…চিপিং ক্লেগহর্নে তাদের থাকা কি একেবারেই অসম্ভব?..
.
১০.
লিটল প্যাডকসের রান্না ঘরে মিৎসি কাজ করছিল। মিস ব্ল্যাকলক ঘরে ঢুকে বললেন, মিৎসি, আজ মিসেস বানারের জন্মদিন, কয়েকজন লোক আসবেন।
-তাই বুঝি! মিৎসির ভ্রূ উঁচু হল।
–তোমার সেই ছোট বিশেষ কেক বানাবে; যেরকম সুন্দর করে বানাও।
–কিন্তু সেই কেক বানাতে হলে আমার যে চকোলেট, বেশি মাখন আর চিনি চাই।
-আমেরিকা থেকে মাখনের যে টিন এসেছে সেখান থেকে নিতে পার। আর কিসমিস বড়দিনের জন্য রাখা আছে, চকোলেট আর চিনিও দরকার মত নিয়ে নিও।