বেশি অদ্ভুত লাগে কি জানেন, ওরা তারই বোনপো-বোনঝি। লোকটা যে নিজেকে গুলি করেছে, আমার মনে হয় প্যাট্রিকই মতলবটা তাকে দিয়েছিল।
সব ব্যাপারটা যখন ভাবি, আমার কেমন তালগোল পাকিয়ে যায়। দরজাটা নিয়েই এখন পড়েছে সবাই। আমিও ভেবেছি। ইনসপেক্টর তো বললেন দরজায় নাকি তেল দেওয়া হয়েছে। আমি দেখেছিলাম–সেদিন প্যাট্রিককে ঝোপের মধ্যে দেখেছিলাম। হাতে একটা কাপ আর পালক ছিল, কাপটা তেল মাখার। দাঁড়িয়ে কিছু করছিল। আমাকে দেখতে পেয়েই অপরাধীর মত মুখ করে চমকে উঠে বলে উঠেছিল, ওটা কি দেখছিল। আমি ওর মিথ্যাকথা ধরতে পেরেছিলাম ঝোপের মধ্যে কাপটা যাবে কি করে?
আর একদিন জুলিয়ার সঙ্গে ওকে ঝগড়া করতে শুনেছিলাম। কি সব কালোবাজারিতে না কিসের সঙ্গে জড়িত না থাকার জন্য জুলিয়াকে শাসাচ্ছিল। জানেন, আমার ধারণা, প্যাট্রিকই ড্রইংরুমের ল্যাম্পটা নিয়ে কিছু করছিল যার জন্য আলো নিভে যায়।
ঠিক এমনি সময়েই দরজা খুলে ব্লুবার্ডে ঢুকলেন হাঞ্চ হারমন। টেবিলে ওদের দেখতে পেয়েই সোল্লাসে এগিয়ে এলেন।
-হ্যাল্লো, কফি কি সবই শেষ করে ফেলেছ?
–এসো, এককাপ নাও। খুশি হয়ে বললেন মিস মারপল।
-আপনারা বসুন। আমাকে একবার কেমিস্টের দোকানে যেতে হবে কটা অ্যাসপিরিনের জন্য।
বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন মিস ডোরা বানার।
-তোমাদের কি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল? জিজ্ঞেস করলেন হাঞ্চ।
–সেদিনের সেই ঘটনার কথাই হচ্ছিল–অনেকেই তো রয়েছে সন্দেহ করার মতন বললেন মিস মারপল।
–সন্দেহ করার মত? হাতে গুণে বলা যায়, শোন, এই ভোর বানার, প্যাট্রিক সিমন্স, মিসেস সোয়েটেনহ্যাম আর এডমণ্ড আর ফিলিপিয়া হেমস, কর্নেল আর ইস্টারব্রুক। এছাড়া আমাকেও ইচ্ছে করলে এদের মধ্যে ফেলতে পার।
একটু থেমে হাঞ্চ ফের বললেন, তবে তুমি ঠিকই বলেছিলে, মিসেস ইস্টারব্রুকের মিস ব্ল্যাকলককে খুন করার কারণ আছে মনে হয় না।
-তা হতে পারে না। কোন কারণ নেই।
–খুনটা কে করেছে, তুমি বুঝতে পেরেছ, জেন মাসি?
অন্যমনস্কভাবে মিস মারপল বললেন, কিছুই জানি না…সময় বড় কম…খুবই কম… ।
কম মানে?
–সেই বৃদ্ধা মহিলা, যিনি স্কটল্যাণ্ডে আছেন যে কোন সময় মারা যেতে পারেন।
-তুমি তাহলে, অবাক হয়ে বলল হাঞ্চ, বিশ্বাস কর পিপ আর এমা বলে সত্যিই কেউ আছে? ওরাই তাহলে বলছ কাজটা করেছিল?
করেছিল, আবারও চেষ্টা করতে পারে। কাউকে খুন করার চেষ্টা করে কেউ ব্যর্থ হলে সে বসে থাকে না আবারও চেষ্টা করে। বিশেষ করে যদি বুঝতে পারে, কেউ সন্দেহ করেনি। বললেন মিস মারপল।
একটু কি চিন্তা করল হাঞ্চ। পরে মিস মারপলের মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, যদি পিপ আর এমারই এই কাজ হয়, তাহলে দুজন আছে যাদের সন্দেহ করা যেতে পারে। ওদের কথা ভেবেছ–প্যাট্রিক আর জুলিয়া। এরাও দুই ভাইবোন, বয়সটাও প্রায় একই।
-না হাঞ্চ, হাসলেন মিস মারপল, হিসেব অত সহজে মিলবে না। নানান ফ্যাকরা রয়েছে। তাছাড়া সরাসরি টাকা পাবার মালিক না হলেও তাদের মাও আছেন। ত্রিশ বছর আগে মিস ব্ল্যাকলক তাকে দেখেছেন, এখন দেখলেও তাকে চিনবেন কিনা সন্দেহ। আর সেই খারাপ লোকটি পিপ-এমার বাবাও রয়েছেন।উনি তো বিদেশী।
-তাতে কি, সেই অ্যাংলো ইণ্ডিয়ান কর্নেলের ভূমিকায় তার অভিনয় করতে অসুবিধা কোথায়?
-তুমি তাহলে এদিক থেকেই এখন ভাবছ?
–যেখানে অনেক টাকার প্রশ্ন জড়িত সেখানে অনেক অভাবিত কাণ্ডই ঘটতে পারে। টাকার জন্য মানুষ কি না করতে পারে।
-হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ। আমিও তাই ভাবি। কিন্তু এরা শেষ পর্যন্ত আদৌ লাভবান হয় কিনা সন্দেহ।
-সেটা বুঝবার মত অবস্থা তাদের থাকে না। হাঞ্চ বললেন, কিন্তু টাকাওয়ালা মানুষের কত কি কাজ করার সুযোগ থাকে। আমার তো নানা পরিকল্পনা মাথায় আসে–অসহায় স্ত্রীলোকদের জন্য বৃদ্ধাবাস, অনাথ শিশুদের জন্য আশ্রম…
মিস মারপল হাঞ্চের দিকে তাকিয়ে হাসলেন। কোন মন্তব্য করলেন না।
–তবে এটা ঠিক জেন মাসী, এজন্য আমি কাউকে খুন করতে পারব না। কেননা ত জানি, সবাই বেঁচেবর্তে থাকতে চায়–সব প্রাণীই বাঁচতে চায়। আমি কোনও কিছুর জন্য কাউকে খুন করব না।
.
০৯.
মিসেস গোয়েডলার-লণ্ডনের অভিজাত এলাকায় তার চমৎকার বাড়ি রয়েছে, জমিদারী হ্যাঁন্সসায়ারে, দক্ষিণ ফ্রান্সেও রয়েছে একটা ভিলা। এই বৃদ্ধা, এখন স্কটল্যাণ্ডে শয্যাশায়ী হয়ে মৃত্যুর দিন গুনছেন। আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গেও নিশ্চয় তার যোগাযোগ নেই।
এসব কথা ভাবতে ভাবতেই রাতটা ট্রেনে কাটিয়ে দিয়েছেন ডিকেটটিভ ইনসপেক্টর ক্র্যাডক।
হাইল্যাণ্ডসের একটা ছোট স্টেশনে তার জন্য গাড়ি অপেক্ষা করছিল। সেই গাড়িতে চেপে তিনি এসে পৌঁছলেন ধূসর রঙের পুরনো আমলের একটা বাড়ির সামনে।
দেখলে মনে হয় বিগত অতীত যেন এখানে সজীব হয়ে আছে।
একজন বয়স্ক বাটলার তাকে অভ্যর্থনা জানিয়ে ভেতরে নিয়ে গেল। এরপর কিছুক্ষণের মধ্যেই স্নান সেরে পোশাক পাল্টে তিনি নিজেকে চাঙা করে নিলেন। বিরাট একটা ঘরে তাকে প্রাতরাশের জন্য নিয়ে আসা হল।
প্রাতরাশের পর তার সঙ্গে দেখা করতে এল নার্সের পোশাক পরা সপ্রতিভ এক মহিলা। তিনি তার নাম বললেন মিস ম্যাকলয়েড বলে।
তিনি জানালেন, রোগিণী ইনসপেক্টর ক্র্যাডকের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য উৎসুক হয়ে আছেন।