-আহ, বাঁচা গেল। কর্নেল ব্রুক বললেন।
–ওকথা কেন বলছ আন্টি?
-বুঝতে পারছ না, ওই ঘটনার আগে যদি রিভলভারটা হারাত তাহলে ওই সুইস ছোকরা হাতিয়েছে বলেই মনে হত।
–কিন্তু সে তোমার রিভলভারের কথা জানল কি করে?
–ওসব লোক সব খবর রাখে। আসলে ওটার জন্য কোন লাইসেন্স নিইনি। যুদ্ধ শেষ হলে স্মৃতি হিসেবে রেখে দিয়েছি।
–তাই বলো।
–কিন্তু জিনিসটা গেল কোথায় বলতো?
-তাহলে মিসেস বাটকে একবার জিজ্ঞেস করে দেখব। ওই ডাকাতির ঘটনার পর হয়তো ভেবেছেন বাড়িতে একটা রিভলভার রাখা উচিত
–তাকে জিজ্ঞেস করে কাজ নেই, তার মনে লাগবে। অত বড় বাড়িতে থাকেন—
বলে অন্য কাজে মন দিলেন কর্নেল ইস্টারব্রুক।
.
০৮.
ভিকারেজের গেট থেকে বেরিয়ে মিস মারপল গলি ধরে বড় রাস্তার দিকে এগিয়ে চললেন। তার হাতে রেভারেণ্ড জুলিয়ান হারমনের শক্ত বেতের ছড়ি।
শীতের সকালের ঠাণ্ডা ঠেকাতে অনেকেই ব্লুবার্ড কাফেতে এসে কফির কাপ নিয়ে বসেছেন মিস মারপলও সেখানে এসে ঢুকলেন।
একটা টেবিলে বসতে যেতেই মিস ডোরা বানারের কণ্ঠস্বর তার কানে এলো।
সুপ্রভাত মিস মারপল। চলে আসুন এপাশে, একাই আছি।
–ধন্যবাদ।
মিস মারপল এগিয়ে গিয়ে মুখোমুখি চেয়ারে বসলেন।
দুই বৃদ্ধার মধ্যে এর পর কিছুক্ষণ যে সব কথাবার্তা হল তার বিষয় ছিল গেঁটে বাত, নিউরাইটিস ইত্যাদি।
কাফের একটা মেয়ে তাদের কফি আর কেক পরিবেশন করে গেল।
এখানকার কেক খুব ভাল হয়। বললেন মিস বানার।
–সেদিন আপনাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার সময় বাগানে কাজ করছিল যে মেয়েটি-ভারি মিষ্টি দেখতে, কি যেন নাম
-হ্যাঁ, ফিলিপা হেমস–ভাল মেয়ে, আমাদের বাড়িতেই থাকে।
-এক কর্নেল হেমসকে আমি জানতাম, ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন, ওরই বাবা হয়তো।
মেয়েটি হল মিসেস হেমস, বিধবা। ওর স্বামী ইতালিয়ন, কোথায় মারা যায়, আপনার কর্নেল হেমস তার বাবা হতে পারেন।
–ওই মেয়েটির মনে হয় রোমান্স গড়ে উঠেছে ওই লম্বা চেহারার তরুণটির সঙ্গে
–কার কথা বলছেন!
চশমাপরা তরুণটির কথা বলছি।
-ওহ বুঝেছি, এডমণ্ড সোয়েটেনহ্যাম। আস্তে, ওপাশে কোণের দিকে ওর মা রয়েছে–মিসেস সোয়েটেনহ্যাম। ফিলিপাকে ও ভালবাসে বলছেন?
কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে মাথা নাড়লেন মিস মারপল।
–আপনি মিস ব্ল্যাকলকের স্কুলজীবনের বন্ধু শুনে আমার খুব ভাল লেগেছিল। এমন কেউ কাছে থাকলে ফেলে আসা জীবনের মধুর ছোওয়া পাওয়া যায়।
–ওর তুলনা হয় না, দীর্ঘশ্বাস ফেললেন মিস বানার, মিস ব্ল্যাকলকের মত এমন বন্ধুবৎসল খুব কম লোকই হয়। এমন সুন্দর মেয়ে জীবনকে এত ভালবেসেছে, কিন্তু সবই কেমন দুঃখময়
–সত্যিই জীবন বড় দুঃখের। সহানুভূতির সুরে বললে মিস মারপল।
–দুঃখের আঘাত সহ্য করার শক্তি ওর অপরিসীম। তার জীবনে ভাল কিছু এলে সে তারই যোগ্য।
মিস ব্ল্যাকলকের ভবিষ্যতের প্রাচুর্যের কথা ভেবেই যে মিস বানার কথাটা বলছেন বুঝতে পারলেন মিস মারপল।
-হ্যাঁ অর্থ মানুষের জীবনকে সহজ করে তোলে। বললেন মিস মারপল।
মিস বানার কেমন অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলেন। অতীতের ফেলে আসা দিনগুলিতে বুঝি ফিরে গিয়েছিল তার মন।
কেমন গভীর স্বরে বললেন, মিনচেস্টার হাসপাতালের সাহায্যের একটা খবর বেরিয়েছিল কাগজে। তাতে লেটির নাম দেখেছিলাম। ও ছিল বিরাট ধনী গোয়েডলারের সেক্রেটারি। দেখতে তেমন কিছু ছিল না। কিন্তু জানতাম খুব দৃঢ় চরিত্রের মেয়ে ছিল ভাবলাম, আমার কথা হয়তো মনে আছে তাহলে ওর কাছে সাহায্য চাওয়া যেতে পারে। সবার কাছে তো তা চাওয়া যায় না। তাছাড়া স্কুলের বন্ধুদের কে আর অত মনে রাখে
মিস ডোরা বানারের কণ্ঠস্বর ভারী হয়ে এসেছিল। চোখে অশ্রু টলমল করছে।
–চিঠি লিখলাম। আশ্চর্য, লেটি এসে আমাকে নিয়ে গেল। বলল বাড়িঘর নিয়ে ব্যতিব্যস্ত, সাহায্য করার জন্য ওর একজন দরকার। কী দয়ার্দ্র মন, আর সহানুভূতি। পুরনো দিনের কথা কিছুই ভুলে যায়নি।
এই যে এখন…মাঝে মাঝে কেমন সব গোলমাল করে ফেলি…সবকিছু আগের মত মনে রাখতে পারি না। কিন্তু ধৈর্য রক্ষা করে ও সব সহ্য করে। ভাব করে যেন সত্যিই আমি ওকে সাহায্য করছি। এছাড়া সত্যিকার দয়া আর কি হতে পারে।
-হ্যাঁ, তাই তো। শান্ত স্বরে বললেন মিস মারপল।
লিটল প্যাডকস আসার পর খুব চিন্তা হত, ব্ল্যাকলকের কিছু হলে আমার কি হবে। এক অদ্ভুত ভাবনা।
লেটি বোধ হয় বুঝতে পেরেছিল, তাই একদিন আমাকে ডেকে বলল, আমার জন্য কিছু মাসোহারার ব্যবস্থা করে রেখেছে। সেই সঙ্গে বাড়ির আসবাবপত্রগুলোও আমারই থাকবে।
হঠাৎ চুপ করে যান মিস ডোরা বানার। পরে বলেন, লেটির জন্য বড় কষ্ট হয় আমার। দুনিয়াটাকে একদম জানে না ও। বড় বেশিরকম বিশ্বাস করে ফেলে সবাইকে। এই সুযোগ নিয়ে কেউ কেউ ওর ওপর চাপ সৃষ্টি করে। স্বচ্ছল হওয়ায়, ও মানুষের ভেতরটা নিয়ে, অত বেশি মাথা ঘামায় না।
একটু থেমে আবার তিনি বললেন, ওই প্যাট্রিক, পয়সার টানাটানি বলে অন্তত দুবার এর কাছ থেকে টাকা নিয়েছে।
কথা শেষ করেই মিস বানার সামনে ঝুঁকে বসলেন। বললেন, কাউকে বলবেন না, একটা কথা আপনাকে বলছি, সেদিনের ওই রহস্যময় ঘটনাটার সঙ্গে আমার মনে হয় প্যাট্রিক জড়িত। ও কিংবা জুলিয়া সুইস লোকটাকে চিনত। এসব কথা লেটিকে বলতে সাহস পাইনি আমি।