টেবিলের ওপরে রুপোর বাক্সটা দেখিয়ে বললেন মিস ব্ল্যাকলক।
-ধূমপানের সময় লোকজন বড্ড বেখেয়ালি হয়ে পড়ে, সেটাই মারাত্মক ব্যাপার। দেখুন, এত সুন্দর টেবিলটাতে কি বিশ্রী দাগ পড়েছে। এ বরদাস্ত করা যায় না। বললেন মিস মারপল।
আমার ভাল লাগা জিনিস দু-পাঁচটাই ঘরে আছে–এসবের সঙ্গে কত স্মৃতি জড়িত।
–ওহ, স্মৃতির অ্যালবাম। স্মৃতি সততই সুখের। ঘরের আসবাবের মত ফটোগ্রাফের ব্যাপারও তাই। আজকাল ওসব আর দেখতে পাই না লোকের ঘরে। আমার ভাইপো ভাইঝিদের পর্যন্ত, একেবারে বাচ্চা বয়সের ছবি রেখে দিয়েছি।
-ওহ, ছবির কথায় মনে পড়ে গেল, আমার তিন বছর বয়সের একটা বিচ্ছিরি ছবি তোমার কাছে আছে জেন মাসী। হাঞ্চ বলল।
প্যাট্রিককে উদ্দেশ্য করে মিস মারপল বললেন, আমার মনে হয় আপনার মাসীর কাছে আপনাদেরও অনেক ছবি আছে।
প্যাট্রিক তাকাল মিস ব্ল্যাকলকের দিকে। বলল, আমরা অনেক দূর সম্পর্কের।
–তোর বাচ্চা বয়সের একটা ছবি এলিনর মনে হয় আমাকে পাঠিয়েছিল। মিস ব্ল্যাকক বললেন, তবে সেটা আর নেই, এখন খুবই খারাপ লাগছে। ও চিঠি না লিখলে তো তোদের কথাও জানতে পারতাম না।
-আজকাল পারিবারিক বন্ধন ক্রমশই কেমন শিথিল হয়ে আসছে। আগেকার দিনের মত পারিবারিক মেলামেশাও আর নেই। বললেন মিস মারপল।
–প্যাট আর জুলিয়ার মাকে শেষ দেখেছিলাম ত্রিশ বছর আগে একটা বিয়ের সময়। ও খুব সুন্দরী ছিল। বললেন মিস ব্ল্যাকক।
–সেদিন, লেটি মাসী মনে আছে, তোমার একটা পুরনো অ্যালবাম দেখছিলাম। কেবল টুপি আর টুপি। বলল জুলিয়া।
মিস ব্ল্যাকলক আতুর দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
.
ফিরে আসার মুখে হাঞ্চ বলল, জেন মাসী, ওটা তুমি ইচ্ছে করেই করেছিলে, তাই না? ওই ফটোগ্রাফের কথাটা।
-হ্যাঁ। বোঝা গেল মিস ব্ল্যাকলক তার দুই তরুণ বোনপো বোনঝিকে আগে চিনতেন না, দেখেননি কথাটা ইনসপেক্টর ক্র্যাডককে জানাতে হবে।
.
লিটল প্যাডকসের বাড়িটা আজ সার্জেন্ট ফ্লেচারের এক্তিয়ারে চলে এসেছিল। তার ওপর বাড়ি সামলানোর দায়িত্ব চাপিয়ে সকালেই মিস ব্ল্যাকলক মিস বানারকে নিয়ে গ্রামে চলে গেছেন।
মিৎসির আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিন। সেও এগারোটা নাগাদ বাসে চেপে মেডেনহ্যাম ওয়েলসে চলে গেল।
ফ্লেচার এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলেন। দ্রুত কাজে নেমে পড়লেন।
তেল লাগানো দরজাটা আবার দেখলেন। যেই তেল লাগিয়ে থাকুক, এই পথেই সে আলো নিভে যাবার পর চুপিচুপি ড্রইংরুম থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। মিৎসি ছাড়া এ দরজা আর কারো ব্যবহার করার দরকার হওয়ার কথা নয়।
পড়শীদের মধ্যে কারো পক্ষে বাড়ির লোকের অলক্ষ্যে দরজায় তেল দেওয়া সম্ভব নয়। বাড়িতে যারা আছে–প্যাট্রিক, জুলিয়া, ফিলিপিয়া হেমস আর ডোরা বানার এদের মধ্যেই কারোর কাজ।
বাড়িটা আঁতিপাতি করে খুঁজে দেখলেন ফ্লেচার। কিন্তু কোথাও কোন গোপনীয়তা তার নজরে পড়ল না।
ফিলিপিয়া হেমসের ঘরে কেবল পাওয়া গেল ছোট একটা ছেলের ছবি, কিছু সাধারণ চিঠি। দক্ষিণ ফ্রান্সে তোলা কিছু ছবি ছিল জুলিয়ার ঘরে। প্যাট্রিকের ঘরেও ছিল কয়েকটা ছবি–তার নৌবাহিনীতে কাজ করবার সময়ের।
মিস ডোরা বানারের ঘরে ছিল তার ব্যক্তিগত সাধারণ কিছু জিনিস।
এমন সময় নিচের সিঁড়িতে শব্দ হল। কেউ উঠে আসছে সম্ভবত ফ্লেচার সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত ওপরে উঠে গিয়ে নিচে তাকালেন।
দেখা গেল মিসেস সোয়েটেনহ্যাম হল ঘরে ঢুকে আবার বেরিয়ে এলেন। ড্রইংরুমের দিকে তাকালেন।
ফ্লেচার এবারে একটু শব্দ করে এগিয়ে এলেন।-ওহ, মিসেস সোয়েটেনহ্যাম
উঃ। বড় চমকে গিয়েছিলাম। বললেন মিসেস সোয়েটেনহ্যাম, ভাবলাম আবার চোর এল বুঝি।
ফ্লেচার নিচে নেমে এলেন।
-আমি মিস ব্ল্যাকলকের জন্য কিছু নাসপাতি এনেছিলাম, ড্রইংরুমের টেবিলে রেখেছি। ফ্লেচারের কৌতূহলী দৃষ্টি লক্ষ্য করে তিনি আবার বললেন, আমি ওই পাশের দরজা দিয়ে ঢুকেছি। এখানে আমরা সবাই সকলের বাড়িতে ঢুকি সার্জেন্ট। এই দরজা কেউ অন্ধকার হবার আগে বন্ধ করি না।
মিসেস সোয়েটেনহ্যাম এর পর চলে গেলেন। কিন্তু সার্জেন্ট ফ্লেচারের সব কিছু তালগোল পাকিয়ে গেল।
তিনি ভেবেছিলেন, বাড়ির লোক ছাড়া দরজায় অন্য কারো তেল লাগানো সম্ভব নয়। কিন্তু এখন বুঝতে পারলেন, বাড়িতে যখন কেউ থাকে না সে সময় যে কেউই এ কাজটা করতে পারে।
কর্নেল ইস্টারব্রুকের বাড়িতে হুলুস্থুলু বেঁধে গেল। তিনি চিৎকার করে ডাকলেন, লরা–কি বলছ ডার্লিং। মিসেস ইটারব্রুক এগিয়ে এলেন।
-আমার রিভলভারটা তোমাকে দেখিয়েছিলাম মনে আছে?
–বিচ্ছিরি সেই কালো জিনিসটা–হ্যাঁ, দেখিয়েছিলে, কি হয়েছে?
–ড্রয়ারে রাখা ছিল, দেখেছিলে তো?
–হ্যাঁ তাইতো।
–কিন্তু সেটা পাওয়া যাচ্ছে না। তুমি কোথাও সরিয়ে রাখনি তো?
–ওহ না–না, ওই সাংঘাতিক জিনিসে হাত দিতে আমার ভয় করে।
–ওই বুড়ি–কি যেন নাম, সে কিছু করেনি তো?
–মিসেস বাট? না, না, ও ধরবে কেন?
–তাহলে,…তোমাকে কবে দেখিয়েছিলাম বলতো? মনে আছে?
আগের সপ্তাহেই তো, ড্রয়ার খুলেছিলে তখন দেখিয়ে বলেছিলেন হুনদের জিনিস।–হ্যাঁ হ্যাঁ–ঠিক একসপ্তাহ আগে। তারিখটা মনে নেই?
-তারিখ–আমরা ছবি দেখতে যাচ্ছিলাম–শেষে যাওয়া হল না-হা শনিবারেই তো-৩০ তারিখে। ভাল ভাবে মনে পড়েছে এবারে, মিস ব্ল্যাকলকের বাড়ির সেই ডাকাতির ঘটনার ঠিক পরের দিন। আগের দিনের গুলি চালানোর কথায় রিভলভারের কথা মনে পড়ল।