-কিন্তু, একটা প্রশ্ন মিস ব্ল্যাকলক, মিসেস গোয়েডলারের আগে যদি আপনি মারা যান তাহলে কি হবে?
–এ নিয়ে কখনও ভাবিনি…তবে সম্ভবত পিপ আর এমাই সব পাবে
ক্র্যাডক জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে তাকালেন। মিস ব্ল্যাকলক হেসে বললেন, পিপ আর এমা কে বুঝতে পারছেন না, তাই না?
আমার ধারণা, মিসেস গোয়েডলারের আগে আমার মৃত্যু হলে সব অর্থের আইনত উত্তরাধিকারী হবে মিঃ গোয়েডলারের একমাত্র বোন সোনিয়ার দুই ছেলেমেয়ে। ওরা যমজ ভাইবোন।
গোয়েডলারের সঙ্গে বোনের সুসম্পর্ক ছিল না। সোনিয়া যাকে বিয়ে করেছিল, গোয়েডলার তাকে পছন্দ করতেন না। লোকটিকে প্রতারক আর শঠ বলেই তিনি মনে করতেন।
–সে কি সত্যিই তাই ছিল?
–গোয়েডলার লোকচরিত্র ভাল বুঝতেন। তিনি ভুল করেননি নিশ্চয়ই। ভদ্রলোক একজন গ্রীক বা রোমানিয় ছিল, নামটা…হা মনে পড়েছে–ডিমিট্রি স্ট্যামফরডিস।
–ওই লোককে বিয়ে করার জন্যই র্যাণ্ডাল গোয়েডলার তার উইলে বোনকে বঞ্চিত করেছিলেন?
গোয়েডলার আগেই বোনকে প্রচুর অর্থ দিয়েছিলেন, তবে সেই অর্থে তার স্বামীর হাত দেবার সুযোগ ছিল না।
যাই হোক, আমার ধারণা গোয়েডলারের উকিল তাকে পরামর্শ দিয়েছিল। আমার আগে মৃত্যু হলে উত্তরাধিকারী হিসেবে অন্য কারও নাম দেওয়া দরকার। গোয়েডলার তখন হয়তো অনিচ্ছার সঙ্গেই সোনিয়ার সন্তানদের নাম করেন।
–পিপ আর এমা সেই বোনেরই সন্তান?
-হ্যাঁ। আমার স্মরণ আছে, সোনিয়া বেলকে একবার চিঠিতে জানিয়েছিল তার দাদাকে জানাবার জন্য যে তার যমজ সন্তান হয়েছে। তাদের নাম পিপ আর এমা। এরপর সে আর চিঠি দেয়নি। তবে এসম্পর্কে যদি খোঁজখবর নিতে চান তাহলে আপনাকে বেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। আমার ধারণা সে আপনাকে সাহায্য করতে পারবে।
ক্র্যাডককে চিন্তিত দেখাল। তিনি বললেন, তাহলে এটা পরিষ্কার হচ্ছে যে আপনি খুন হলে এমন দুজন রয়েছে যারা বিপুল অর্থের মালিক হতে পারে। অর্থাৎ আপনাকে খুন করার মোটিভ রয়েছে। যে ঘটনা ঘটে গেছে তার সঙ্গে দুজন ভাইবোনের জড়িত থাকার সম্ভাবনা পাওয়া যাচ্ছে। তাদের বয়স এখন কত হতে পারে?
দাঁড়ান, হিসেবে করে দেখতে হবে…১৯২২ ঠিক মনে করতে পারছি না…যাই হোক পঁচিশ ছাব্বিশ ধরে নিতে পারেন।
–আমার মনে হয়, সেদিন গুলি ছোঁড়া হয়েছিল আপনাকে মারার জন্যই। সৌভাগ্যক্রমে আপনি বেঁচে গেছেন। তবে সে বা তারা আবারও একবার চেষ্টা করবে। সে কারণেই আপনাকে আমি সতর্ক করে দিতে চাই।
.
ফিলিপিয়া হেমসকে সতর্ক দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করে সুন্দরী বলেই মনে হল ইনসপেক্টর ক্র্যাডকের। মাথা জুড়ে হাল্কা ধূসর সোনালী চুল, তীক্ষ্ণ চিবুক ও ঠোঁট। নীলাভ চোখ। আঁটোসাঁটো চেহারা।
একগুচ্ছ চুল মুখের ওপর থেকে সরিয়ে ফিলিপিয়া বলল, বলুন, ইনসপেক্টর?
চাঁচাছোলা আবেগহীন গলা। উদ্বেগ বা ভয়ের লেশমাত্র নেই।
-আমি দুঃখিত, কাজের সময় আপনাকে বিরক্ত করতেহচ্ছে। অবশ্য, লিটল প্যাডকসের বাইরেই আপনার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম। এখন কথা হচ্ছে, আজ সকালে এমন কিছু কথা শুনলাম যার সঙ্গে আপনি জড়িত।
ফিলিপিয়া কৌতূহলী হল। ভ্রূ তুলে তাকাল।
-আপনি বলেছিলেন ওই রুডি সার্জ আপনার অপরিচিত?
-হ্যাঁ, বলেছিলাম।
–তাকে কি আপনি সেদিনই প্রথম দেখেন?
–হ্যাঁ, সেইদিনই। আগে তাকে কখনও দেখিনি।
–আপনি কি লিটল প্যাডকসের সামার হাউসে কোন সময় তার সঙ্গে কথা বলেননি?
–সামারহাউস?
ক্র্যাডকের মনে হল ফিলিপিয়ার কণ্ঠস্বর সামান্য কেঁপে উঠল।
-হ্যাঁ, মিসেস হেমস।
–একথা আপনাকে কে বলেছে?
–রুডি সার্জকে আপনি বলেছিলেন, সে কোথায় লুকিয়ে থাকতে পারে আপনি দেখিয়ে দেবেন–সময়টা বলেছিলেন সোওয়া ছয়টা–এমন কথাও আমি শুনেছি। আমরা জেনেছি সার্জও ওই সময় বাসে করে এসেছিল।
ক্র্যাডকের কথা শেষ হতেই মিসেস ফিলিপা হেমস হেসে উঠল।
–আপনাকে এসব কথা কে বলেছে আমি আন্দাজ করতে পারছি। এসব কথা অত্যন্ত ঈর্ষাপীড়িত, সত্যতা বিন্দুমাত্র নেই। আমি বুঝি না মিৎসি কেন আমাকে একদম সহ্য করতে পারে না।
-এসব কথা সত্যি নয় আপনি বলছেন?
–একেবারেই না। আমি রুডি সার্জকে আগে কখনও দেখিনি। তাছাড়া যেদিন সকালে সে আসে, আমি বাড়ির কাছাকাছিও ছিলাম না। এখানে কাজ করছিলাম।
ক্র্যাডক শান্তস্বরে জিজ্ঞেস করলেন, কোনদিন সকালে?
জবাব দিতে গিয়ে ইনসপেক্টরের চোখের দিকে তাকাল ফিলিপা। একটু থমকে গেল। পরে বলল, প্রতিদিন সকালে। এখান থেকে একটার আগে কোথাও যাই না। মিৎসি কি বলেছে তা নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। সবাই জানে ও মিথ্যা কথা বলে।
ফেরার পথে ক্র্যাডক সার্জেন্ট ফ্লেচারকে বললেন, এই দুই তরুণীর কার কথা তোমার বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয়?
ফ্লেচার বলল, দুজনের কথাই পরস্পরবিরোধী। তবে ওই বিদেশী মেয়েটা যে মিথ্যা কথা বলে একথা এখানে প্রত্যেকেই বিশ্বাস করে। তাছাড়া এটাও বোঝা যাচ্ছে ও মিসেস হেমসকে যে কোন কারণেই হোক হিংসা করে।
–তুমি বলতে চাইছে, মিসেস হেমসকেই বিশ্বাস করা উচিত?
–আপনার হয়তো অন্য কিছু ভাবনা থাকতে পারে, স্যর।
ক্র্যাডকের অবশ্য তেমন কিছু ভাবনা ছিল না। সেদিন সামার হাউসে রুডি সার্জের সঙ্গে মিসেস হেমসের আদৌ সাক্ষাৎ ঘটেছিল কিনা তা তিনি বুঝতে পারছিলেন না।