-হ্যাঁ, বুঝতে পারছি, মেজরের মৃত্যুর পর সবাই তার ব্লাডপ্রেসারের ব্যাপার নিয়েই আলোচনা করছে। তাহলে ব্যাপারটা আমি কি গোয়েন্দা দপ্তরকে জানাব? তাহলে মেজরের দেহ বের করে তদন্ত করা যায়।
করতে হবে খুব গোপনে।
-কিন্তু এখনো ভেবে দেখো–গোটা ব্যাপারটাই একটা কল্পনার প্রাসাদ বলে প্রমাণ হয়ে যাবে না তো?
–তেমন হলে তো আমিও স্বস্তি পাই।
২. ডাইনিং রুমে টুকিটাকি কাজ
১১.
ডাইনিং রুমে টুকিটাকি কাজ সেরে নিয়ে বারান্দায় বেরিয়ে এল মলি। পানভোজন গানবাজনা হৈ হট্টগোলের আর একটা সন্ধ্যা এগিয়ে আসছে। হোটেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা চিন্তা তার মাথায়। টিম আর মলি দুজনে মিলে অনেক স্বপ্ন দেখে চলেছে।
এই সময় মিঃ ডাইসন যেন আচমকা সেখানে উপস্থিত হলেন।
-খুব দুঃখিত, চমকে দিলাম বোধহয়?
–ওঃ মিঃ ডাইসন। সত্যিই, আপনি এসেছেন একদম টের পাইনি।
আশপাশে তখনো কেউ এসে পৌঁছায়নি। মলিকে নিভৃতে পেয়ে খুব আন্তরিক স্বরে মিঃ ডাইসন কথা বলতে লাগলেন। পরে বললেন, ভাবছি তুমি আর আমি একদিন পিকনিক করব।
-মন্দ কি করা যাবে।
বলে মিষ্টি হেসে মলি মিঃ গ্রেগরীকে এড়িয়ে বারে গিয়ে ঢুকল। টিম কাছেই ছিল। এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, ওখানে মনে হল কার সঙ্গে কথা বলছিলে?
–গ্রেগরী ডাইসন। একটু রঙ্গরস করতে চাইছিল।
–লোকটা মেয়েদের দেখলেই নানারকম প্রস্তাব করে। একটু কড়কে দেওয়া দরকার।
ভেবো না, সময় বুঝে আমিই ব্যবস্থা করতে পারব।
এই সময় টিম কি কাজে সেখান থেকে আবার সরে গেল। মলি রান্নাঘরে ঢুকে অন্য দরজা দিয়ে বেরিয়ে তীরের দিকে চলতে লাগল।
.
গ্রেগরী ডাইসন আপন মনে হাঁটতে হাঁটতে নিজের বাংলোর কাছাকাছি আসতেই অন্ধকারে ঝোপের ভেতর থেকে ভূতের ছায়ার মত ভিক্টোরিয়া তার সামনে এসে দাঁড়াল।
মিঃ ডাইসন, একটা কথা বলব আপনাকে।
–অ তুমি। কি হয়েছে?
–দেখুন তো, এটা আপনারই তো?
ট্যাবলেট ভর্তি একটা শিশি সে এগিয়ে ধরল।
-ওঃ, আমার সেরেনাইটের বোতল। এটা আমারই। কোথায় পেলে তুমি?
–সেই মেজর ভদ্রলোকের ঘরে–যিনি এখন কবরে শুয়ে আছে।
–মেজর প্যালগ্রেভের বাংলোতে?
-হ্যাঁ। ওরা আমাকে ঘরের সব জিনিস ফেলে দিতে বলেছিল-টুথপেস্ট, মালিশ, এই ওষুধটাও। এটা আপনি পাচ্ছিলেন না বলে খুঁজে দেখতে বলেছিলেন, তাই নিয়ে এলাম।
–হ্যাঁ, মনে পড়েছে বলেছিলাম। কোথায় রেখেছি মনে করতে পারছিলাম না।
-আপনি কোথাও রাখেননি। আপনার বাংলো থেকে নিয়ে মেজরের বাংলোতে রাখা হয়েছিল।
-তুমি জানলে কি করে?
–আমি দেখেছি, ঝকঝকে সাদা দাঁত বার করে হাসল ভিক্টোরিয়া, একজন শিশিটা মেজরের ঘরে রেখেছিল। এবার আপনাকে বোতলটা ফিরিয়ে দিলাম।
–কি বলছ তুমি? কাকে দেখেছিলে?
একথার কোন জবাব দিল না ভিক্টোরিয়া। অন্ধকার জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে গেল।
দাঁড়াও যেও না।
গ্রেগ দুপা এগিয়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন।
-কার সঙ্গে কথা বলছ গ্রেগ?
মিসেস ডাইসন বাংলোর রাস্তায় দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন।
–ওই কালো মেয়েটা–ভিক্টোরিয়া না যেন কি নাম—
কি বলছিল ও?
–আমার সেরেনাইটের বোতলটা খুঁজে পাচ্ছিলাম না বলেছিলাম না, মেয়েটা শিশিটা আমাকে দিয়ে গেল।
-ও সরিয়েছিল নাকি?
–না, কোথায় যেন পেয়েছে বলছিল।
–চল, রাতের খাওয়ার সময় হতে চলল।
.
তীরে গিয়ে মিসেস ইভিলিন হিলিংডনের সঙ্গে দেখা হল মলির। দুজনে দুটো চেয়ারে পাশাপাশি বসল। মলির বুকটা হুহু করছিল। চোখ ঠেলে জল আসতে চাইছিল। কিন্তু কারণ বুঝতে পারছিল না মলি।
–কি হল, মুখ অমন থমথমে কেন তোমার? জানতে চাইলেন ইভিলিন।
–না, কিছু না।
–নিশ্চয়ই টিমের সঙ্গে কিছু হয়েছে?
–না, না–সেসব নয়-
-শুনে সুখী হলাম। তোমাদের দেখলেই সুখী মনে হয়।
–তোমাদের চেয়ে নয়; যাই বলল। এডওয়ার্ড আর তোমাকে দেখে মনেই হয় না তোমাদের মধ্যে কখনো খিটিমিটি হয়।
–আমাদের কথা ভেবে লাভ নেই মলি। গত তিনবছর আমাদের মধ্যে আড়ালে কোন কথাবার্তা নেই।
–কি বলছ, আমিতো বিশ্বাসই করতে পারছি না।
–কি করে করবে। বাইরে যে আমরা মুখোশ পরে থাকি।
–গণ্ডগোলটা কি নিয়ে?
আবার কি, আর একজন–তুমিও তাকে জান—
তুমি কি মিসেস ডাইসন মানে লাকির কথা বলছ? ইভিলিন নীরবে মাথা নেড়ে সায় দিল।
-ওদের দুজনকে প্রায় সময়ই খোলাখুলি ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।
–ওতেই কি আর শেষ? লাকির ব্যাপারে এডওয়ার্ড একেবারে পাগল।
–তোমাকে ছেড়ে যেতে চায় নাকি?
–দুটো বাচ্চা আছে বলে আমরা কেউই পরিবার ভেঙে দিতে চাই না। গ্রেগের প্রথম স্ত্রী প্রচুর টাকা রেখে গেছে। সে সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করে চলেছে। আর আমি আর এডওয়ার্ড বন্ধুর জীবন কাটাচ্ছি।
-বুঝতে পারছি না কি করে তুমি সহ্য করছ!
–অভ্যেস হয়ে গেছে। মাঝেমাঝে অবশ্য ওই নচ্ছার মেয়েমানুষটাকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছা হয়। যাক ওসব বাদ দাও। তোমার কথা বল।
মলি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। পরে বলল, জান আমার কেন যেন মনে হয়, কোথাও কোন গোলমাল রয়েছে। কেবলই মনে হয়, কারা যেন ঝোপের আড়াল থেকে আমাকে লক্ষ্য করছে, পায়ের শব্দ, ফিসফাস এসব যেন শুনতে পাই। কেবলই এরকম মনে হয়। আর ভয় পাই।
-কিসের ভয়? ইভিলিন জানতে চায়।
–তা বলতে পারব না।
–কতদিন এরকম হচ্ছে?
–তা জানি না। তাছাড়াও অন্য একটা ব্যাপার ঘটছে।